Back
মুবাশশিরার বয়স যখন ৫ মাস ২৫ দিন, তখন থেকেই আমি ওকে সলিড দেওয়া শুরু করি। কারণ সলিড শুরু করার সব সাইন আলহামদুলিল্লাহ তার মধ্যে দেখা গিয়েছিলো। সে বসতে পারতো, খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখাতো, ঘাড় ডান থেকে বামে ঘুরাতে পারতো, মুখের সামনে কিছু দিলে মুখ খুলতো।
শুরুতে একটা বুস্টার সিটের জন্য আমি বাংলাদেশে অনেক খোঁজাখুঁজি করি, যেটা আমার জন্য বাজেট ফ্রেন্ডলি হবে। পরে পেয়েও যাই আলহামদুলিল্লাহ। আমি সলিড শুরু করার আগেই ওকে ফিডিং চেয়ারে বসাতাম, যেনো ওর কাছে এটা পরিচিত মনে হয় যখন আমি খাবার দেবো। যখন আমি ওর সলিড শুরু করি তখন এমনও দিন আছে আমি ৪০ মিনিট শুধু ওর খাবার নাড়াচাড়া দেখেছি বসে বসে। ওর বেলায় একটা প্রবলেম খুব ফেস করেছি। খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে হিসি দিয়ে দিতো। হিসি দিয়েই তার ক্ষুধা লেগে যেতো। আমি কখনোই ওকে ৪০ মিনিট এর গ্যাপে খাওয়াতে পারি নাই। তার আগেই ওর ক্ষুধা লেগে যেতো। পরে তো শুরু করতো কান্না আর বসবে না। পরে তুলে ফেলতাম(মনে রাখা ভালো যে প্রতিটা বাচ্চা আলাদা)। এভাবে অনেক দিন গেছে আমার।
এইখানে ওর বেশি সময় লাগার কারণ হলো ওর অনেকটা সময় গেছে শুধু বিছানায়। ওর হাতের নাগালে তেমন কিছুই পায় নাই যে ওটা নিয়ে মুখে নেওয়ার চেষ্টা করবে। আমি মৃগীরোগী তাই ডাক্তার নিষেধ করে দিয়েছিল বিছানা ছাড়া আর কোথাও বাবুকে না নিতে। পরে আমি বুঝেছি যে ওর হাতের নাগালে এটা ওটা রাখা দরকার ছিল।
প্রথম ২ মাস শুধু খাবার নষ্টই হয়েছে। ও শুধু খেলেছে খাবার দিয়ে। অনেক নোংরা পরিস্কার করেছি আমি। কখনোই বিরক্ত হইনি। কখনোই চাপ প্রয়োগ করে খাওয়াইনি। সে এনাফ বিএম পেতো। আমি ওকে ফিড করানোর কিছুক্ষণ পর আবার বসাতাম। কারণ পেট একটু ভরা খাবার নিয়ে খেলতে খেলতে ওর পেট খালি হয়ে যায়। খেলতে খেলতে হাত মুখে দিতো। যখন টেস্ট বুঝতে পারলো সে হাতে খাবার লাগাতো আর চেটে খেতো আলহামদুলিল্লাহ। এত খুশি হয়েছিলাম।
পরে একদিন ওর‌ নানু ওকে খাইয়ে দেয়। দেওয়ার পরে থেকে ওর হাতে ফিঙ্গার ফুড দিতে গেলেই হাত দিয়ে না ধরে মুখ খুলতো খাওয়ার জন্য। সে আর হাত দিয়ে খাবার খাবে না। কান্না শুরু করে দিতো। পরে আমি টেবিলেই খাবার দিয়ে বসিয়ে দিতাম। খাবার মুখে দিতে গিয়ে পরে গেলেই আবার শুরু করতো কান্না।
তারপর থেকে আমি তাকে খাইয়ে দিতাম। কিন্তু সেই আগের মতোই আমি ওকে টেবিলে খাবার দিয়ে বসাতাম। খাবার নাড়াচাড়া করতে দিতাম। ওভাবে বসিয়েই খাওয়াতাম। কিছুদিন যাওয়ার পর সে আবার নিজে থেকে খাবার মুখে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি ওর বয়স অনুযায়ী সব সময় খাবার কেটে দিতাম যাতে ও সহজেই ধরে মুখে নিতে পারে। এখন ওর বয়স আলহামদুলিল্লাহ ১০ মাস ৫ দিন। সে নিজেই খেতে পারে। সে আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি সব খাবারই খেয়েছে। দাঁত না থাকলেও যে সব খাওয়া যায় তা মুবাশশিরাকে না দেখলে বুঝতাম না। এইখানে ওর যে খাবার বেশি পছন্দ আমি সেটাই একটু বেশি দেই খাবারের আগ্রহ ধরে রাখতে। এখনো মাঝে মাঝে সারাদিন ও কিছুই খেতে চায় না। খাবার নিয়ে খেলে, শেষে আর খাবে না।
বাচ্চা লালন পালনে দরকার অনেক অনেক অনেক সবর। সবর না করতে পারলেই ফেইল
বারাকাহর দোয়া করে যাবেন আমার মেয়ের জন্য। মাশাআল্লাহ বলতেও কেউ ভুলবেন না।
বারাকাল্লাহু ফিকুম।
আর যেটা না বললেই না। Mother & Child Care BD রৌদ্রময়ীর সলিড কোর্স আমাকে এত এত হেল্প করেছে। আমি কোর্স না করলে হয়তো এত সবর রাখতে পারতাম না। সবকিছু জানা না থাকলে হয়তো হাল ছেড়ে বসে থাকতাম। ভাই আপনারা যার তার ব্লগ দেখে বাচ্চাকে খাওয়াতে যাবেন না প্লিজ। অনেক কিছু জানার আছে….
 
সুমাইয়া আক্তার সোনালী
সলিড কোর্স পার্টিসিপ্যান্ট