Back

নতুন মায়েদের প্রোডাক্টিভ রমাদান

এবারের রমাদানটা যেন অন্য কোনো বারের মতো না। নিজের শরীর-মননে এসেছে বিরাট পরিবর্তন, সাথে যোগ হয়েছে নরম তুলতুলে আরেকটা প্রাণের বাড়তি যত্ন নেয়ার দায়িত্ব। বছরের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ মাসে সাধ্যমতো সর্বোচ্চ সাওয়াব লুফে নেয়া, ব্রেস্টফিডিং সহ বাচ্চার যত্ন নেয়া, সাথে নিজের ও পরিবারের অন্যদের খেয়াল রাখা সব মিলিয়ে যেন একটা টালমাটাল অবস্থা। তবে যদি ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস এন্ড টিকস মেনে চলতে পারেন তাহলে ইনশাআল্লাহ এই রমাদানটা আপনার জন্য হবে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ এবং সহজ।
 
প্রথমেই যদি আমরা আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করে নেই এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই যে সাওম পালন করছি এই বিশ্বাস অন্তরে শক্তভাবে গেঁথে নেই তাহলে বাকি পথটা অনেক সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আসলে মুমিনের এই হচ্ছে এক চমৎকার ব্যাপার; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা-ই করবে তা-ই ইবাদাত বলে গণ্য হবে। বাচ্চা লালন পালন সহ ঘরকন্নার যাবতীয় কাজ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা যায় তবে তা-ও ইবাদাত বলে গণ্য হবে। পরিবারের অন্যান্য রোজাদারের সাহায্য করাও তো সাওয়াবের কাজ তাইনা।
 
যদি শারীরিক অক্ষমতার কারণে সাওম পালন করতে না-ও পারেন তবে অন্য কোন কোন ইবাদাতে ফোকাস করা যায় তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখলে পরিস্থিতি অনেকটা সহজ হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি প্রতিদিন আর কি কি আমল কোন কোন সময় করা যায় তার একটা খসড়া যদি তৈরি করে রাখেন এবং আগে থেকেই পরিবারের লোকদের একটু জানিয়ে রাখা যায় তবে সেসময়ে তাদের হেল্প পাওয়াটা আরো সহজ হবে।
ব্রেস্টফিডিং বা অলস সময়ে মাসনুন জিকির আজগার করা যেতে পারে। দোয়া কবুলের সময়গুলো একটু খেয়াল করে দোয়া করা ও দরূদ পড়া যেতে পারে। সাধ্যমতো কিয়ামুল লাইল আপনার আমলের পাল্লাকে করবে আরো ভারি। কাজ করতে করতেও যদি মুখস্থ থাকা কোরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করা যায় তা-ই বা কম কিসে। আসলে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাই ইবাদাতের প্রাণ। তাই আমলের পরিমাণ কম হলেও যেন ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি না থাকে। আল্লাহ কিন্তু বিচারের দিন আমাদের আমলের পরিমাণ গণনা করবেন না বরং ওজন মেপে দেখবেন।
 
এবার আসি নিজের আর বাচ্চার যত্নের প্রসঙ্গে। যেহেতু এখনো বাচ্চাকে ব্রেস্টফিডিং করাতে হচ্ছে আর তারওপর গরমের দিন তাই হাইড্রেশনের দিকে রাখতে হবে বিশেষ দৃষ্টি। ইফতারের পর থেকেই একটু পর পর পানি খাওয়া যেতে পারে। পানি ভালো না লাগলে ফলের জুস বা শরবতও কিন্তু বিকল্প হতে পারে। ইফতারে অতিরিক্ত চিনি বা ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলাই ভালো। ক্যালরি গেইনে খেজুর কিন্তু দারুণ উপকার দেয়। ইফতারে আর সাহরিতে যদি খেজুর খাওয়া যায় তাহলে পুষ্টির পাশাপাশি আলাদা একটা সুন্নাহও পালন করা হয়ে যাবে। অলসতার জন্য কোনোভাবেই কিন্তু সাহরি বাদ দেয়া চলবে না। যেহেতু সাহরিতে বেশি খাওয়া যায় না তাই পরিমাণে অল্প কিন্তু বেশি পুষ্টি পাওয়া যাবে এমন খাবার খেতে হবে। ইফতার আর সাহরির মধ্যকার সময়ের মধ্যেই সব ধরনের পুষ্টিউপাদান সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করা জরুরি। মনে রাখবেন বাচ্চা দুধ পাবে কি পাবে না তা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার খাদ্যাভাসের ওপর। অন্যদিকে বাচ্চা ঠিকমতো প্রস্রাব করছে কিনা তা খেয়াল রাখুন। উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হলে কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে ভাবুন। বেশি দুধ উৎপাদন হয় এমন খাবার নিয়মিত খান। ইনশাআল্লাহ আপনার বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ পাবে।
 
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুমের কিন্তু কোনো বিকল্প নেই। পরিমিত বিশ্রাম না হলে দুধ উৎপাদনের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। রাতে ঘুমের পাশাপাশি দিনের বেলায়ও বাচ্চার ঘুমের সময় একটু ন্যাপ নেয়া যেতে পারে। তুলনামূলক ভারি কাজ বা ঈদের শপিং রমাদান শুরু হওয়ার আগেই করে রাখতে পারেন। বেশি করে ইফতার তৈরি করে ফ্রোজেন করে কয়েকদিন চালাতে পারেন। পরিবারের সাথে বসে কাজ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। সাহরির রান্নাটা আগরাতেই করে রাখতে পারেন। একটু চিন্তা করলে আপনি নিজেই আরো চমৎকার চমৎকার আইডিয়া বের করতে পারবেন।
যদি এতোকিছুর পরেও কোনো কারণে সাওম পালনে সক্ষম না হয় তাহলে হতাশ হবেন না বা লো ফিল করবেন না। আল্লাহর সকল সিদ্ধান্তের ওপর সবসময় খুশি থাকাটাই একজনে মুমিনের থেকে কাম্য। একজন আলেমের সাথে কথা বলে পরবর্তীতে কিভাবে কাজা আদায় যায় তা জেনে নিতে পারেন। সবসময় মনে রাখা জরুরি আল্লাহ কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।
সবশেষে বলতে চাই, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বাচ্চা লালন পালন করাও একটা স্বতন্ত্র ইবাদাত। সর্বাবস্থায় আপনার নিজের ও বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।
 
এই রমাদানকে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ করতে আপনারাও আপনাদের দারুণ দারুণ আইডিয়াগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। দোয়া করি এই রমাদানে আমার প্রতিটা বোনকে আল্লাহ ক্ষমা করে তাদের নেক দোয়াগুলো কবুল করে নিক। আমিন।
নতুন মায়েদের প্রোডাক্টিভ রমাদান
 
রেজওয়ানা রাজ্জাক
রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল এসোসিয়েট ও পার্টিসিপ্যান্ট, ব্যাচ ১৫

Leave A Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *