Back

গর্ভাবস্থায় রমাদান

রমাদান মহা বরকতের মাস, আত্মশুদ্ধির মাস, আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। আর আপনি যদি হোন—একজন গর্ভবতী মুসলিমাহ নারী—এই বিশেষ মাসে শুধু নিজের জন্যই নন, বরং আরেকটি নতুন প্রাণের বাহক হয়ে আপনি এই বরকতের ভাগ পাচ্ছেন! সুবহানআল্লাহ! এটি কত বিশাল নিয়ামত, কত বড় সৌভাগ্য!
আপনি যখন নিজের ভেতর আরেকটি প্রাণকে ধারণ করছেন, তখন এটি কেবল একটি শারীরিক প্রক্রিয়া নয়; এটি এক মহান ইবাদতও বটে।
তবে গর্ভাবস্থার কারণে কিছু শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকে, যা রমাদানের ইবাদতে প্রভাব ফেলতে পারে। এই সীমাবদ্ধতাগুলোকে বোঝা ভাববেন না। একে‌ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন। এবং হতাশ না হয়ে বিকল্পভাবে ইবাদত করুন—এটাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা। কিছু টিপস্ —
 
◼ ১. প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা, তাই নিজেকে কারও সাথে তুলনা করবেন না
কেউ সহজে রোযা রাখতে পারেন, কেউ পারেন না। কেউ এনার্জি পান, কেউ খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝে, দ্বীনি আলেমদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ কারও ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব চাপান না।” (সূরা বাকারা ২:২৮৬)
গর্ভাবস্থায় রোযার বিষয়ে ইসলাম আমাদের জন্য সহজ করেছে। যদি রোযা রাখা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে রোযা ভাঙার অনুমতি রয়েছে, এবং পরবর্তীতে কাজা বা ফিদিয়া দেওয়ার বিধান রয়েছে। (ইবনে মাজাহ ১৬৬৭)
তাই আগে থেকেই গর্ভাবস্থায় রোযার ফিকহ জেনে নিন, আলেমদের পরামর্শ নিন, এবং আপনার শরীরের বার্তা শুনুন।
 
◼ ২. ইবাদতের জন্য বিকল্প পথ খুঁজুন
যদি শারীরিক অবস্থার জন্য দীর্ঘ সালাত, দীর্ঘ কিয়াম সম্ভব না হয়, তাহলে হতাশ হবেন না। ইবাদতের অনেক পথ আছে:
 
📌 কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ: বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন বা তিলাওয়াত শুনুন।
 
📌 দোয়া: রাসূল ﷺ বলেছেন, “দোয়া হল ইবাদতের মজ্জা।” (তিরমিজি) গর্ভবতী মায়ের দুয়া কবুল করার মালিক আল্লাহ। আল্লাহর কাছে দুয়া করুন নিজের ও সন্তানের জন্য।
 
📌 যিকর: আপনি শুয়ে-বসে, কাজ করতে করতেও ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলে সময়কে বরকতময় করতে পারেন।
 
📌 সদকা: কোনো অসহায়কে সাহায্য করা, খাবার বিতরণ করা—এগুলোও রমাদানের বিশেষ আমল।
 
◼ ৩. নিজের প্রতি সদয় হন, হতাশাকে দূরে রাখুন
হয়তো আগে যেভাবে তারাবি পড়তেন, দীর্ঘ দোয়া করতেন, সেটি এখন সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি এমন একটি আমল করছেন যা জান্নাতের পথে চলার কাজ—একটি প্রাণকে লালন করছেন, যা নিজেই ইবাদত।
এখন যদি আপনার ক্লান্তি লাগে, বিশ্রাম নিতে চান, তাহলে নিজেকে দোষারোপ করবেন না। কারণ, আপনার বিশ্রামও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় ইন শা আল্লাহ।
 
◼ ৪. হালাল, পুষ্টিকর খাবার ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন
গর্ভাবস্থায় খাবারের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। শরীরের চাহিদা পূরণ না হলে ইবাদতে মনোযোগ রাখা কঠিন হবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
স্বাস্থ্যকর ও সুন্নতি খাবার খান (যেমন খেজুর, মধু, দুধ)।
অনিয়মিত ঘুম ও উল্টো পাল্টা রুটিন এড়িয়ে চলুন।
জিহ্বার অপব্যবহার (গীবত/পরনিন্দা/ চিল্লাচিল্লি) এড়িয়ে চলুন।
 
◼ ৫. আত্মিক সংযোগ আরও গভীর করুন
রমাদান শুধু বাহ্যিক ইবাদতের নয়, বরং আত্মিক পরিশুদ্ধির মাস।
আপনার ভেতরে বেড়ে ওঠা ছোট্ট প্রাণটির জন্য ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা অনুভব করুন।
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য বেশি বেশি তাওবা করুন।
নবজাতকের জন্য সুন্দর দুয়া শিখুন এবং প্রতিদিন তাকে নিয়ে একটি করে নতুন দুয়া করুন।
 
◼ ৬. আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখুন ও সন্তুষ্ট থাকুন
প্রতিটি গর্ভবতী মা আলাদা, প্রতিটি রমাদান আলাদা। আপনি শুদ্ধ নিয়তে যা করতে পারছেন, সেটাই যথেষ্ট ইন শা আল্লাহ। রোযা রাখা বা না রাখা, দীর্ঘ ইবাদত করা বা না করা—আল্লাহ আপনার নিয়ত দেখেন, আপনার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন।
আল্লাহ বলেন:
“আর যারা আমার পথে চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য আমার পথসমূহ সহজ করে দেব।”
(সূরা আনকাবুত ২৯:৬৯)
 
শেষ কথা: এই রমাদান অন্য দশটা রমাদানের‌ মতন না—এটি এমন এক রমাদান, যেখানে আপনি একটি নতুন প্রাণের বাহক হয়ে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ। তাই অস্থির বা দুশ্চিন্তাগ্ৰস্ত হবেন না। হতাশ হবেন না!
রমাদানের প্রতিটি মুহূর্তকে সুন্দরভাবে কাজে লাগান, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ইবাদত করুন, এবং আল্লাহর অপার দয়ায় আশাবাদী থাকুন।
আপনি আপনার ভবিষ্যৎ সাদাকায়ে জারিয়ার একটি টুকরো গর্ভে ধারণ করছেন—এটি কি কম সৌভাগ্যের বিষয়?
দুয়া করুন,
“হে আল্লাহ! আমার গর্ভাবস্থায় বরকত দিন, এবং আমার শিশুকে আপনার নেক বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন।”
আল্লাহ আপনার জন্য সহজ করে দিন, আপনার গর্ভধারণকে বরকতময় করুন, এবং আপনাকে ও আপনার শিশুকে রমাদানের খাঁটি নেয়ামত দান করুন—আমিন!
 
শারিন সফি অদ্রিতা
প্রিনেটাল ইন্সট্রাক্টর, রৌদ্রময়ী স্কুল
মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর

Leave A Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *