Back

প্রেগ্ন্যান্ট মায়েদের জন্য রমাদান এক আশ্চর্য নিয়ামত

২০২১-২০২৩ সাল পর্যন্ত রমাদান ছিলো আমার জীবনের সেরা রমাদান। এই সময় আমি প্রেগন্যান্ট,ল্যাকটেটিং মা ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে দুইজন বাবু আমার। দুই প্রেগন্যান্সিতেই আমার জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস ছিলো।
প্রথম প্রেগন্যান্সিতে রেন্ডম টেস্টে গ্লুকোজ ছিলো ১১ পয়েন্ট। কোনোভাবেই এটাকে ৭ এর ভেতর আনা যাচ্ছিলো না। খাওয়ার পরে ৮+ থাকত বা ৯। তাই সুগার কন্ট্রোল করতে প্রথমে আমাকে খুবই অল্প মাত্রার ইনসুলিন দেয়া হয় ।
ইনসুলিন দিয়েও ৮ ভেতরে সুগার আনা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, ১ মাস মত ইনসুলিন দিতে হয়েছিলো আমাকে, প্রেগন্যান্সি এর আড়াই-সাড়ে তিন মাস এই মধ্যবর্তী সময়ে।
এরপর এলো রমাদান। ডাক্তার পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার প্রিপারেশন নিলাম। তবে বেলা ১২ টার পর থেকে সুগার মনিটরিং এ রাখতে হবে। কোনোভাবে যদি সুগার পয়েন্ট ৪ এর নিচে চলে আসে তাহলে সাথে সাথেই রোজা ভেঙে ফেলতে হবে,এটাই ছিলো ডাক্তারের সাজেশন।
নিয়মতো প্রথম কয়েকদিন বেলা ১২ টা,বেলা ৩ টা,বেলা ৫ টায় সুগার মাপতাম। বাসায় গ্লুকোমিটার দিয়ে। প্রথম ৪ দিনের ডাটা একটা খাতায় লিখে ডাক্তারকে জমা দিতে হয়েছিলো। রোজা রাখার পারমিশন পাক্কা হলো আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু বিপত্তি ঘটল ইফতারে….
আযানের সাথে সাথে পানি দিয়ে রোজা ভেঙ্গে ইনসুলিন দিয়ে খাবার খেতাম, যেহেতু ডায়াবেটিস ছিলো খেজুর খেতে পারতাম না। আর শুধু হালিম খেতে পারতাম,অন্য কিছু খেলেই বমি হতো। এরপর যখন নামাজে দাড়াতাম সারা শরীর এমনভাবে ঘামে ভিজে যেতো, থরথর করে বৃষ্টির মত পানি পরতো,মনে হতো যেনো কেউ পানির মটর ছেড়ে দিয়েছে । আর দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হতো, নামাজ পরতে পারতাম না।
ডাক্তারের কাছে গেলাম, ইনসুলিন বাদ দিয়ে দিলো। আলহামদুলিল্লাহ এরপর পুরো রমাদান খুব ভালো ভাবেই কাটলো।
ঈদের দিন সারাদিনের সুগার মেপে ডাটা জমা দিতে হলো ডাক্তারকে। আমার ডায়াবেটিস আছে জানার পর পরই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পুরো সময় ডায়াবেটিস হাসপাতালেই গাইনোকলজিস্ট দেখাবো, ডেলিভারিও ডায়াবেটিস হাসপাতালেই হয়েছিলো।
মিরাকেল ঘটল এখানেই!! সেই যে ৫ম রোজায় ইনসুলিন নেয়া বন্ধ হলো আলহামদুলিল্লাহ ডেলিভারির আগে পর্যন্ত আমার আর ইনসুলিন নিতে হয়নি। রমাদানে এত ভালোভাবেই ডায়াবেটিস আপনাআপনিই কন্ট্রোল হয়ে গেছিলো,এবং শরীর প্রাকৃতিকভাবেই ডিটক্স হয়েছিলো।
এটা আল্লাহর এক অশেষ নেয়ামত ব্যতীত আর কিছুই না, তাছাড়া রমাদান রহমতের মাস। আল্লাহ রহম করেছিলেন আমার উপর আলহামদুলিল্লাহ!
২য় প্রেগন্যান্সি মাত্র এক বছরের ব্যবধানে। যদিও প্রেগন্যান্সি এর পর আগের বারের জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস ভালো হয়ে গেছিলো। কিন্তু অল্প সময়ের গ্যাপ হওয়ায় এবারো জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হলো।
এবার অবস্থা আরো বেগতিক। ইনসুলিন এর মাত্রা ডাবল , তার মধ্যে আবার ২ ধরনের ইনসুলিন দিতে হলো। রাতের খাবার আগে একবার ইনসুলিন,খাবার পরে আবার আরেকটা ইনসুলিন। কারণ সকালে খালি পেটের সুগার ও কন্ট্রোল হচ্ছিলো না। এছাড়াও কন্সটিপেশন ও যুক্ত হলো সাথে। এভোলাক সিরাপ খেয়েও কষ্ট হতো,এমন কঠিন কন্সটিপেশন ছিল। একবার হাই কমোড,একবার লো কমোড এইভাবে দৌড়াদৌড়ি করতাম কষ্টে!
এবারো প্রায় ১ মাস মত ইনসুলিন নিতে হলো। দেশের নামকরা নিউট্রিশনিস্ট থেকে ডায়েট চার্ট নেয়া হলো, ২৩ দিন পর পর চার্ট চেঞ্জ হতো। ভিজিট আর লম্বা সময় নিউট্রিশনইস্ট এর কাছে ১৩ মাস বয়সের আয়িশাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট তো ছিলোই।
এলো পবিত্র মাহে রামাদান! রহমত,বরকত, মাগফিরাতের মাস। আল্লাহর উপর ভরসা করে রোজা রাখা শুরু করলাম।
মিরাকেল রিপিট! পুরো রমাদান হয়নি কোনো কন্সটিপেশন এর সমস্যা। ঈদের দিন থেকে আবার শুরু হয়েছিলো। ডায়াবেটিস এই যে কন্ট্রোল হলো, ইনসুলিন বাদ পরলো, আলহামদুলিল্লাহ ডেলিভারির আগে পর্যন্ত আর ইনসুলিন নিতে হয়নি। নরমাল ডায়েটেই সুগার কন্ট্রোল ছিলো।
শুধু তাই নয়, সাধারণত সেকেন্ড টাইম জেস্টেশনাল ডায়াবেটিক হলে তা আর ভালো হয় না,টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ পরিণত হয়ে থেকে যায়। আল্লাহর রহমতে আমার ভালো হয়ে গেছিলো। ইভেন এই ঘটনায় আমার ডাক্তার ও আশ্চর্য হয়েছিলো এবং খুব খুশি হয়েছিলো। রিপোর্ট দেখে শুরুতেই উনি আলহামদুলিল্লাহ বলছিলেন।
 
রমাদান এক আশ্চর্য নেয়ামত!
 
জান্নাতুল ফেরদৌস রুমি
প্রিনেটাল কোর্স পার্টিসিপ্যান্ট, ব্যাচ ৩, ১১ ও ১৩
ক্লায়েন্ট, রৌদ্রময়ী দৌলা সার্ভিস

Leave A Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *