নরমাল ডেলিভারি নাকি সুস্থ মা ও শিশু?
প্রিনাটাল কোর্সের ৭ম ব্যাচের একজন আপুর দৌলা ছিলাম আমি। আপুর ৭ই মে ইমার্জেন্সী সিজারে ৩য় সন্তান হয়েছে। আপুর আগের দুইবার কিন্তু নরমাল ডেলিভারি ছিল। অবাক হচ্ছেন?
হ্যাঁ, এমনও হয়! আগের দুইবার নরমাল হলেও অনেক ঘটনাবহুল ছিল লেবার ও ডেলিভারি জার্নি এবং আপুর বিভিন্ন রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। এবার উনার ইচ্ছা ছিল সবকিছু যতটা যম্ভব ন্যাচারাল ভাবে করার। সেভাবে বার্থ প্ল্যান করে মেডিকেল টিমকে জানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, আপুর তিনটা ডেলিভারিই উন্নত বিশ্বের একটি দেশে হয়েছে। তবে, এবার নিজে মোটামুটি সুস্থ থাকার পরও, নিউট্রিশনের প্রতি সচেতন থাকা, সাধ্যানুযায়ী ব্যয়াম করার পরও উনার বাবুটা সেফালিক পজিশনে সেটেল করছিল না। ৩৮ সপ্তাহের শেষে পানি ভেঙ্গে যায়, ধীরে ধীরে লেবার পেইন শুরু হয়ে বাড়তে থাকলেও বাচ্চার পজিশন ছিল আড়াআড়ি (ট্রান্সভার্স) যার কারণে কর্ড প্রলাপ্স (বাচ্চার আগে নাড়ী নেমে আসা) হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল এবং এর ফলে বাচ্চার লাইফ রিস্ক সৃষ্টি হতে পারত বলে মেডিকেল টিম ইমার্জেন্সী সিজারের ডিসিশান নেয়। বাবুটা অপারেশন রুমেই মায়ের থেকে দুধ খায় এবং মা ও বাচ্চা ভালো আছে, আলহামদুলিল্লাহ।
আমাদের প্রিনাটাল কোর্স করা মায়েদের অনেকেই নরমাল ডেলিভারি না হলে একদম ভেঙ্গে পরেন। হ্যাঁ, যদি বুঝতে পারা যায় যে কোন ভুল বা না জানার কারণে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়নি তাহলে সেটা পরের বার শুধরে নেয়ার সুযোগ আছে অবশ্যই, ইনশাল্লাহ। কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে নরমালের জন্য চেষ্টা করলে মা বা বাচ্চার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা বা লাইফ রিস্ক থাকবে তাহলে ভালো ডাক্তারের পরামর্শে সিজার করানোই কল্যাণ বয়ে আনবে।
সব রকম চেষ্টার পরও যদি নরমাল ডেলিভারি কোন যুক্তিযুক্ত কারণে না হয় তার মানে কি মা হিসাবে আপনার সব চেষ্টা বৃথা?
কখনোই না!
প্রেগনেন্সীতে আপনি যখন পুষ্টি গ্রহণের প্রতি সচেতন থাকছেন তখন সেটা আপনাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি আপনার বাচ্চাকেও সুস্থ রাখছে। সেই বাচ্চা সিজারে হলেও তার সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনার প্রচেষ্টা ঠিকই তার কাজে লাগছে। যখন আপনি প্রেগন্যান্সীতে নিয়মিত ব্যায়াম করছেন তখন সেটা আপনাকে শারীরিকভাবে ফিট রাখার পাশাপাশি আপনার বাচ্চাকেও সুস্থ থাকতে সাহায্য করছে। সে সিজারে জন্ম নিলেও আপনার নিয়মিত ব্যায়ামের সুফল সে গর্ভে থাকতেই পেয়েছে এবং আপনাকেও মা হওয়ার পর এই ব্যায়াম ফিট থাকতে সাহায্য করবে।
আমার অনেক ভালো লাগে যখন দেখি সিজার হবে জানা মায়েরাও ক্লাসে ব্যায়ামের সম্পর্কে প্রশ্ন করে জেনে নেন। যদিও প্রিনাটাল কোর্সে মূলত নরমাল ডেলিভারির জন্য সহায়ক ব্যায়াম দেখানো হয়, কিন্তু শারীরিক কর্মকান্ডে বিধিনিষেধ না থাকলে একজন সিজার হবে এমন মা-ও সেগুলো প্রাকটিস করতে পারেন নিজের ও বাচ্চার সুস্থতার জন্য। অতএব, নিজের ও বাচ্চার কল্যাণে নেয়া আপনার প্রতিটা পদক্ষেপ আপনাদের উপকৃত করবে। প্রিনাটাল কোর্স করে অনেক কিছু জেনেছেন, নরমালের জন্য অনেক চেষ্টা ও আশা করেছেন কিন্তু নরমাল ডেলিভারি না হওয়া মানেই কিন্তু ”end of the world” না! আল্লাহর দেয়া এই নিয়ামতের যত্ন নিতে আপনার প্রচেষ্টাগুলোর জন্যই আল্লাহর কাছে আপনি পুরষ্কৃত হবেন ইনশাল্লাহ।
নরমাল ডেলিভারি হোক বা সিজারিয়ান ডেলিভারি হোক, আমরা চাই আমাদের মায়েরা যেন মেডিকেল টিমের সাথে কথা বলে জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাহলেই তারা এম্পাওয়ারড ফিল করবেন, বিষণ্ণতা বা গিলটি ফিলিংস সেখানে থাকবে না, ইনশাল্লাহ!
বি. দ্র. প্রিনাটাল কোর্স নরমাল ডেলিভারিতে মায়েদের উৎসাহিত করে ও প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এই লেখা সেই সকল মায়েদের জন্য যারা নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি নিয়েও অবশ্যম্ভাবী কারণে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন ও এই নিয়ে মনোকষ্টে ভুগছেন।
রাবেয়া রওশীন,
প্রিনাটাল ইন্সট্রাকটর
Tag:normal delivery