শিশুর ইমিউনিটি গঠনে মাইক্রোবায়োমের ভূমিকা এবং নরমাল ডেলিভারি ও ব্রেস্টফিডিং-এর গুরুত্ব (২য় পর্ব)
মাইক্রোবায়োম এবং ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি
নরমাল বা ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে অ্যামনিওটিক স্যাক র্যাপচার হয়ে পানি ভাঙ্গার সময় বাচ্চা মায়ের মাইক্রোবের সংস্পর্শে আসে। এ সময় বাচ্চা মায়ের স্বতন্ত্র মাইক্রোবায়োম অর্জন করে। এরা বাচ্চার ত্বক, চোখ, কান, নাক, মুখ দিয়ে প্রবেশ করে এবং কিছু মাইক্রোব বাচ্চা গিলে ফেলে। জন্মের সময়, বাচ্চা আরও মাইক্রোব পায় মায়ের পরিপাকতন্ত্র থেকে (মায়ের মলের সাথে সংস্পর্শে আসা থেকে। বাচ্চা সাধারণত মায়ের মলদ্বারের দিকে মুখ করে জন্মায় এবং ডেলিভারির সময় অনেক সময় কিছু মল বের হয়ে আসে।), বাতাস থেকে, সব ধরনের স্পর্শ থেকে, ত্বকের সাথে ত্বক মেলানো (skin-to-skin) থেকে এবং ব্রেস্টফিডিং থেকে।
প্রসব পরবর্তী মা’র সাথে বাচ্চার প্রথম স্পর্শ কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা ধারণা করতে পারি এ থেকে। এছাড়াও নবজাতককে কোন তাকওয়া ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি কর্তৃক তাহনীক করানোর যে ইসলামী রীতি সেটার যৌক্তিকতাও সহজেই অনুমেয়।
বুকের দুধের বিস্ময়কর দিক
বাচ্চার বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য যা কিছু প্রয়োজন বুকের দুধ তার যোগান দেয়। বুকের দুধের কমপ্লেক্স উপাদানগুলো হচ্ছে:
- নিউট্রিশন
- ইমিউন কম্পনেন্ট
- এন্টি বডি
- এন্টি-ইনফ্লেমেটরি
- হরমোন
- মাইক্রোব
- অপাচ্য “বিশেষ সুগার”
অপাচ্য “বিশেষ সুগার” কী?
অপাচ্যই যদি হয় তাহলে এগুলো আছে কেন?
কারণ এগুলো বাচ্চার জন্য নয়, এগুলো তার মাইক্রোবের জন্য।
ডেলিভারির সময় যে মাইক্রোবগুলো বাচ্চার শরীরে এসেছে, এই বিশেষ সুগার মূলত এসব অতিথি মাইক্রোবের খাদ্য। বুকের দুধের অপাচ্য বিশেষ সুগারকে বলা হয় হিউম্যান মিল্ক অলিগোস্যাকারাইডস (Human Milk Oligosaccharides – HMOs)। বিশেষ সুগার থেকে খাবার খেয়ে ‘সঠিক প্রকৃতির’ মাইক্রোব বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রে বাসা বাঁধে। এই ‘সঠিক প্রকৃতির’ মাইক্রোব ক্ষতিকর মাইক্রোবের জায়গা দখল করে নেয়। তারা বাচ্চার ইমিউন সিস্টেমের সর্বোচ্চ গঠনেও সাহায্য করে। ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির মাধ্যমে মায়ের থেকে বাচ্চার কাছে যে মাইক্রোবগুলো আসলো বুকের দুধের মাধ্যমে সেগুলোকেই খাইয়ে লালন পালন করা হচ্ছে। বিস্ময়কর ও ভীষণ সুন্দর এক প্রক্রিয়া!
সংক্ষেপে মাইক্রোবের বীজ বপন ও খাওয়ানোর (Seed and Feed) প্রক্রিয়া:
১. গর্ভাবস্থায় মায়ের ভ্যাজাইনা এবং পরিপাকতন্ত্রে ‘সঠিক প্রকৃতির’ মাইক্রোব গড়ে ওঠে।
২. ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে ‘সঠিক প্রকৃতির’ মাইক্রোব মায়ের ভ্যাজাইনা এবং পরিপাকতন্ত্র থেকে বাচ্চার শরীরে যায়।
৩. ব্রেস্টফিডিং এর সময়, বুকের দুধের বিশেষ সুগার বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রের ‘সঠিক প্রকৃতির’ মাইক্রোবকে খাওয়ায়।
৪. বুকের দুধের মাঝে থাকা বিশেষ সুগার খেয়ে ‘সঠিক প্রকৃতির’ মাইক্রোবায়োম বাচ্চার ইমিউন সিস্টেমকে সর্বোচ্চ গঠনে সাহায্য করে। এটা বাচ্চাকে আজীবনের জন্য সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির মিডওয়াইফারির প্রফেসর হানাহ ডালেন বলেন, “ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির সময় বাচ্চা যে ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে, সেটা যখন মায়ের ত্বকের সাথে বাচ্চার ত্বকের স্পর্শ ও বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ও বাচ্চা পায়, তখন একটা প্রায় বিশাল মাইক্রোবিয়াল অর্গানিজম প্রতিষ্ঠিত হয় যা আজীবনের জন্য শুধুমাত্র বাচ্চার হয়ে থাকে। এটা যদি ভুলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে বাচ্চার নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা থাকবে। আর এটা যদি ঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আপনি বাচ্চাকে তার বাকি জীবনের জন্য সব ধরনের অসুখ থেকে সম্ভাব্য সুরক্ষা দিতে পারবেন।”
মাইক্রোবায়োম এবং বুকের দুধ
উপরে বর্ণিত এই বীজ বপন এবং খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু আমরা মানুষরা অনেক সময় এই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছি।
বুকের দুধ হচ্ছে ভালো ব্যাকটেরিয়াকে চাষ করার একটা পদ্ধতি। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো বাচ্চার প্রথম ইমিউন সিস্টেমের সাথে তাল মেলায়। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে, জীবনের বিভিন্ন ধাপে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো অত্যন্ত উপকারী অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। ফর্মুলা দুধের সমস্যা হচ্ছে সেটা এই কাজটা করে না। ফর্মুলা দুধে সেই নিউট্রিয়েন্ট নেই যা এই মাইক্রোবগুলোকে, এদের পূর্ণতা পাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহায়তা দেবে। ইমিউন সিস্টেমকে সুরক্ষিত করার যে উপাদানগুলো বুকের দুধের সাথে সম্পর্কিত ফর্মুলা সেসবেরও যোগান দেয় না।
বাচ্চার মাইক্রোবায়োমের জন্য সেরা কোনটি?
দীর্ঘায়িত সময়ের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ কারণ বুকের দুধে আছে সেই বিশেষ সুগার যা বাচ্চার মাইক্রোবদের পূর্ণতা পেতে সাহায্য করে। এই বিশেষ সুগার বাচ্চার মাইক্রোবদের জন্যই বিশেষ করে তৈরি এবং এগুলো হচ্ছে সেরা পুষ্টির উৎস। যে মাইক্রোবায়োমের বীজ বপন হয়েছে তাদেরকে আবাদ করার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ পর্ব দেখুন এখানে।