ডিউ ডেট সবাইকে জানাবেন?
“আসসালামু আলাইকুম আপু। আমার EDD জানুয়ারির ১৬ তারিখ। ডক্টর পেইন ওঠা পর্যন্ত ওয়েট করতে বলেছেন। … খুব টেনশন হচ্ছে পেইন উঠছে না দেখে। এদিক দিয়ে আত্মীয়রা ফোন করে অবাক হচ্ছে যে এখনো কেনো ওয়েট করছি। সি সেকশন কেনো করিয়ে ফেলছি না।”
ইনবক্সে পাওয়া মেসেজ। কেন সরাসরি সিজারে না গিয়ে নরমাল ডেলিভারির জন্য ওয়েট করা উচিত সেই দীর্ঘ আলোচনার জন্য এই পোস্ট না। অল্প কথায় বলতে চাই শুধু, প্রেগন্যান্সির থার্ড ট্রাইমেস্টার এমনিতেই একটা কঠিন সময়, ডেট যত কাছে আসে মায়ের মেন্টাল স্ট্রেসও তত বাড়তে থাকে। অথচ খুব কম মানুষই বোঝে যে এই শেষের সময়টা মেন্টালি রিল্যাক্স থাকা মায়ের জন্য খুব দরকার।
“বাচ্চা কেন হচ্ছে না?” এমন প্রশ্ন করা যে উচিত না এটা যেমন মানুষ বোঝে না, আবার “বাচ্চা কেন বের হচ্ছে না?” ডিউ ডেটের কাছাকাছি সময় এসে এই প্রশ্নও করা উচিত না। আমরা নিজেদের ইচ্ছায় বাচ্চা পেটে আনতে পারি না, বাচ্চা বের করতেও পারি না। সব সময় মতো হবে।
আমার প্রথম বাবু হয়েছিল ডিউ ডেটের দশ দিন পর। অনেক পরে জেনেছিলাম, ডিউ ডেট ক্রস করলেই যে সবার মুখ চিন্তায় অন্ধকার হয়ে যায় সেটার আসলে প্রয়োজন নাই। কিন্তু আশপাশের সবার এই চিন্তিত মুখ মায়ের মনের উপর ভীষণ প্রভাব ফেলে। আমি এই সময়টা বিদেশে থাকায় তাও সহজ হয়েছিল মানুষের সাথে কমিউনিকেশন বন্ধ রাখা। আমি শেষ দিকে নিজের আম্মুর সাথেও কথা বলতাম না। সেই একই দুশ্চিন্তা ভরা কথা আমার মনের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করছিল।
একজন সেলিব্রিটির কথা পড়েছিলাম যাকে ডিউ ডেট জিজ্ঞেস করা হলে বলত,”অন সামার।” আমিও পরের দুই প্রেগন্যান্সিতে এরকম অস্পষ্ট উত্তর দিয়েছি সবাইকে।
বোনেরা, ১ম বাচ্চা হওয়ার সময় সবাই যখন “ডেট কবে?” জিজ্ঞেস করবে তখন আল্ট্রায় পাওয়া ডেটটা বলতে পুরো প্রেগন্যান্সিতে খুব মধুর লাগলেও, সেই ডেটের কাছে যখন চলে আসবেন আর তখনও যদি লেবার পেইন শুরু না হয়, তখন কিন্তু এই আশপাশের মানুষদের “কবে হবে বাচ্চা”, “কেন হচ্ছে না এখনো” এসব প্রশ্ন মনের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। তাই সবাইকে ডিউ ডেট বলবেন কি না এটা ভেবে দেখবেন।
আর এই প্রশ্নকারী আপুর প্রতি পরামর্শ দিয়েছি, কেউ ফোন দিলে বলতে বাবু হলে জানানো হবে। এখন যেন সবাই শুধু দুয়া করে।
কারো প্রেগন্যান্সির শেষ দিকে এসে বার বার তাকে বাচ্চা হয়ে গেছে কিনা, কবে হবে, সিজার কেন করছে না এইসব প্রশ্ন করা অনুচিত। সিজার করবে নাকি নরমালের জন্য ওয়েট করবে এটা যার শরীর তার চিন্তার বিষয়।
– রাবেয়া রওশীন,
প্রিনাটাল ইন্সট্রাক্টর, রৌদ্রময়ী স্কুল
Bottom of Form