নিজেদের অধিকার আদায় করুন
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Doula Service, Others
- Date November 20, 2023
- Comments 0 comment
ছোট এই সময়ে দৌলা হিসাবে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। কিছু অভিজ্ঞতা সুখের, কিছু কষ্টের। কিছু কিছু ঘটনা আছে যা হয়তো কখনো কাউকে বলা হবে না, তবে আজকে মুনতাহা আপুর গল্প শেয়ার করবো।
মুনতাহা আপু থাকেন ওমানে। হাজব্যান্ডের চাকরিসূত্রে সেখানে থাকা। চাইলে ফ্যামিলির সাথে থাকতে পারতেন তবে সেখানে কিছু সমস্যার জন্য মেন্টাল প্রেশার পড়তে পারে – এই চিন্তা থেকে উনি ওমানে ডেলিভারীর ডিসিশন নেন, যেখানে উনার হাসব্যান্ড ছাড়া কেউ থাকতে পারবে না, যার কারণে দৌলা সাপোর্ট নেয়া।
বুঝতেই পারছেন খুব ডিটারমাইন্ড একজন মানুষ। তাছাড়া আপুর সবচেয়ে স্ট্রাইকিং দিক, নিজেকে ঠিকঠাক এক্সপ্রেস করতে পারা, কি চাচ্ছেন তা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলার এবিলিটি। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম থেকেই দেখতাম উনি প্রেগনেন্সি আর ডেলিভারি নিয়ে ভীষণ পজিটিভ ছিলেন। উনার একটা মেসেজ:
“আমার মনে হইসে always, from the day I conceived, যে আল্লাহ্ তো আমাদের এই ক্ষমতা দিয়েই পাঠাইসে। আল্লাহ্ সব পরিস্থিতি অনুকূলে রাখলে আমিও পারবো ইন শা আল্লাহ্। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। এটা তো ডেফিনিটলি অনেক বড় ফেজ বাট ইম্পসিবল তো না। তাইলে তো আল্লাহ্ দিত না।”
আপুকে epidural, নাইট্রাস অক্সাইড, ইত্যাদি পেইন মেডিকেশন কিভাবে কাজ করে এবং এসবের সাইড এফেক্ট বুঝানোর পর ডিসিশন নিলেন যে কোনোটাই নিবেন না, এমনকি নাইট্রাস অক্সাইড ও না – যেটার কোনো সাইড এফেক্ট নাই – যেহেতু এটা উনাকে কেবলমাত্র লেবারের কাজ থেকে distract করবে।
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতেন। নিউট্রিশন নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলেন। সমস্যা হোল, উনার কোনোভাবেই আয়রন বাড়ছিল না। পরে আলহামদুলিল্লাহ কিছু ট্রিক বলার পর কাজে দেয়।
উনার ডাক্তার বাইরে প্র্যাক্টিস করলেও বাংলাদেশী অরিজিনের। প্রথম থেকেই ন্যাচারাল সাপোর্টিভ। ব্যায়াম শিখিয়ে দিয়েছিলেন, ন্যাচরাল ইনডাকশনের কিছু উপায়ও বলে দিয়েছিলেন। আপুর বার্থ প্ল্যান অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় এপিসিওটমি না দিতে, ফ্লেক্সিবল পুশিং পজিশন, এবং ডিলেইড কর্ড ক্ল্যাম্পিং – সব কিছুতেই রাজি ছিলেন।
৩৭ উইকে মেমব্রেন swipe করে দিলেন যেহেতু আপুর পেলভিস উনার চাপা মনে হয়েছিল, এবং বেবির ওয়েট ভালো ছিল।
এর মধ্যে আপু হসপিটাল ব্যাগ থেকে ধরে আগামী কয়েক সপ্তাহের চিন্তা করে খাবারদাবার – তাবৎ জিনিস গুছিয়ে ফেললেন।
কয়েকদিন পর আপুর খারাপ লাগাতে ডক্টরের কাছে গেলে উনি চেক করে আবার বাসায় পাঠিয়ে দিলেন ন্যাচারাল পেইন এস্টাবলিশ হওয়ার জন্য।
অবশেষে সেই দিন এল। ৩৯তম সপ্তাহ। আপুর পানি ভাঙ্গে। আপু হসপিটালে যাওয়ার পর উনারা low dose এ পিটোসিন দিয়ে পরে বন্ধ করে দিলেন। পরদিন আপুর বেবি হল। বেবি বের হতে সময় নেয়ায় ডাক্তার ধারণা করলেন যে আপুর পেলভিস চাপা হওয়ায় এমন হচ্ছে তাই এপিসিওটমি দিলেন। ইন্টারেস্টিং জিনিস হল বেবি বের হওয়ার পর আপু tired হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আপুর চোখে পড়ল বাবুর কর্ড clamp করতে যাচ্ছেন ডাক্তার (রুটিন প্র্যাক্টিস হওয়ায় সম্ভবত মনে ছিল না) , এবং তৎক্ষণাৎ আপু ডাক্তারকে নিষেধ করলেন এবং ডাক্তার উনার কথা শুনলেন।
আপুর ডেলিভারি শেষ করার পর মুহূর্তেই যে ডাক্তারের হাতের দিকে চোখ গেল এবং উনি যে উনার দাবী স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সামান্যতম কালবিলম্ব করেন নি – এটা আমার কাছে এখনো অবাক লাগে। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ্ মাদেরকে কত কষ্টসহিষ্ণু, কত সতর্ক করে বানিয়েছেন।
বোনেরা আমার! My fellow mothers! একটা কথা আপনাদের বলতে চাই। আপনার বেবি আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার কাছে একটা আমানত। এই আমানতের, এবং আপনাদের হকের রক্ষা করুন ঠিক সেভাবে যেভাবে সিংহী তার ডেরা পাহারা দেয়। নিজের অধিকার নিজেকেই আদায় করে নিতে হয়। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানুন, নিজেকে এবং বাচ্চাকে প্রায়োরিটি করুন। অন্যরা কে কি ভাবছে, লেবার ওয়ার্ডের আয়া/নার্স/ডাক্তারের/হাজব্যান্ডের কার কি সমস্যা হচ্ছে এসব আপনার অন্তত লেবারের সময় ভাবতে হবে না। লেবার ঠিক ডিপ্লোম্যাটিক হওয়ার সময় নয়। মেডিকেল টিম পক্ষে থাকলেও উনাদের ভুল হতে পারে। হয়তো সব সময় সফল হবেন না, মজলুম হবেন, তবে যে জুলুম করল, তার মনে দাগ কেটে তো রাখবেন অন্তত।
সালসাবিল কাওসার
দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
রংধনু রঙের খেলনাগুলো
ছোটবেলায় আমাদের নিকট প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বস্তুটি ছিলো, তা হলো সাত রঙের রংধনু। কারণ অধিকাংশ সময় বৃষ্টির দেখা মিললেও, বৃষ্টির পরের রংধনুর দেখা মিলতো খুবই কম। তাই যে জিনিস খুব কম দেখা যায়, সে জিনিসের প্রতি আকর্ষণও থাকে সবচেয়ে …
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …