জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মাতৃত্ব
রৌদ্রময়ী স্কুলের পেইজে প্রি-নেটাল কোর্সের প্রথম পোষ্ট দেখে এক নিমিষেই যেন চলে গিয়েছিলাম ২০১৬সালের জানুয়ারীতে। সেই বছরের জানুয়ারীতে প্রথম প্রেগন্যান্সীর থার্ড ট্রাইমেস্টারে এন্টিনাটাল ক্লাসে জয়েন করি।
সেদিন মনে হয়েছিল “ইশ! আমার বাংলাদেশের বোনদের জন্য যদি এমন কিছু করতে পারতাম”। আলহামদুলিল্লাহ রৌদ্রময়ী স্কুলের মাধ্যমে এই স্বপ্ন এখন একটু একটু করে যেন বাস্তব রুপ নিচ্ছে।
সেই প্রি-নেটাল কোর্সের প্রথম ক্লাসের প্রথম লেসন ছিল “সুস্থ মা মানে সুস্থ বাচ্চা”। এই কথাটা শুনে আমি এতই অবাক হয়েছিলাম; কারণ বাংলাদেশে প্রেগন্যান্সীতে মাকে যতটুকু যাও যত্ন নেওয়া হয়, বাচ্চা জন্মের সাথে সাথেই যেন মায়ের সুস্থতা কিংবা ভালো থাকার গুরুত্বটুকুও কেউ অনুভব করেনা।
বাচ্চা হওয়ার পর একজন মায়েরও যে নতুন জন্ম হয় তারও যে অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক যত্নের প্রয়োজন হয় তা জেনেছিলাম সেই কোর্স থেকেই। এমনকি ক্লাসে মিডওয়াইফ আমাদেরকে বলেছিল নতুন বাচ্চা দেখতে গেলে বাচ্চার জন্য কিছু না নিয়ে বরং মায়ের জন্য গিফট নাও। আর যদি বাচ্চার জন্য গিফট নিয়েই যাও সাথে অন্তত মাকে এপ্রিশিয়েট করে একটা কার্ড হলেও গিফট দিয়ো। কি সুন্দর চিন্তা মাশাল্লাহ।
বিদেশ বিভূঁইয়ে প্রথম প্রেগন্যান্সীতে এই কিছু না জানা আমি প্রিনেটাল ক্লাস থেকেই জেনেছিলাম কিভাবে লেবারের জন্য প্রস্তুত হবো, কিভাবে পেইন ম্যানেজ করবো, বাচ্চা জন্মের সাথে সাথে স্কিন টু স্কিন কন্টাক্ট কি, কিভাবে বাচ্চাকে র্যাপ করবো কিংবা গোসল দিবো এমন অনেক অনেক বিষয়।
এছাড়াও ব্রেস্টফিডীং নিয়েও যে কত ভুল ধারণা আছে তাও জেনেছিলাম। মজা পেয়েছিলাম বাচ্চার কান্নার রহস্য বুঝার ক্লাস করে।
মায়ের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক যত্ন নিয়েও এত সুন্দর করে ডিসকাশন করা হয়েছিল। সেই ক্লাসেই প্রথম জেনেছিলাম Baby Blue আর Post Natal Depression যে এক জিনিস না। এরপর নিজের আগ্রহ থেকেই এই বিষয়ে আরো পড়াশুনা করা এবং সেই সাথে অনলাইনেও লেখালেখির সূচনা।
নিজে প্রিনেটাল ক্লাস করেই বুঝেছিলাম আসলে এর গুরুত্ব কি। আমাদের মধ্যে এক অদ্ভুত ট্যাবু আছে আর তা হলো প্রেগন্যান্সী, নিউবর্ন বাচ্চাকে বোঝা, কিংবা প্যারেন্টিং নিয়ে এত পড়াশুনার কিছু নেই। এগুলো সবাই এমনি শিখে যায়।
আচ্ছা এখন আপনাকে যদি বলি এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য ট্রেইনিং এর কি দরকার? চলেন রওনা দেই আর সামনে চ্যালেঞ্জ আসলে তখন ইন্সট্যান্ট ডিসিশান নিয়ে তা মোকাবেলা করবো। আপনি কি এমন ভাবে কোন জ্ঞান ও ট্রেইনিং ছাড়া যেতে রাজী হবেন? তাহলে প্রেগন্যান্সী আর মাদারহুডের মতো এমন একটা রোমাঞ্চকর অনিশ্চিত জার্নিটা কেন কোন জ্ঞান ছাড়াই এমনি এমনি পার করবেন?
নিজের দুই প্রেগন্যান্সী থেকে এটুকু বুঝতে পারি মায়েদের মনে কত প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায়। গর্ভের সন্তান ঠিকমতো বেড়ে উঠা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসে মনে, ঠিক তেমনি বাচ্চা জন্মের পর বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা কিংবা কেন মায়ের নিজের এত কান্না পায় কিংবা কারণে অকারণে মনের কোণে মেঘ জমে – এমন অজস্র প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমরা আসছি ইনশাল্লাহ।
নিজের যতটুকু জ্ঞান আছে সেটাই আমার বোনদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে স্বপ্ন দেখি এক আলোকিত মাতৃত্ব যাত্রার।
ডঃ নাঈমা আলমগীর (পিএইচডি)
প্রিনেটাল, প্যারেন্টিং এবং সলিড ইন্সট্রাক্টর
রৌদ্রময়ী স্কুল।