সন্তান আশরাফুল মাখলুকাত
“হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন; আমার জন্য আমার সন্তান সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করুন, আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম”। (সূরা আহক্বাফ,১৫)
কে আছে ‘শিশু প্রতিপালন’ বিষয়ে গুছিয়ে সাহায্য করবে, ভাববে ও আমাকে ব্যস্ত সময়ে গাইড করবে?
জাযাকুমুল্লাহ খইর ক্লাস মেন্টর আপুদের, রৌদ্রময়ী টিমকে ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবন ঘনিষ্ট এ কোর্সের আয়োজনের জন্য।
নারীর জীবনের চরম আকাঙ্ক্ষিত ও আনন্দের মুহূর্ত হলো মাতৃত্বের ক্ষণ। কিন্তু ‘সঠিক মাতৃত্ব’ বিষয়ক জ্ঞান হাতড়ে ফেরানোর মতো অন্ধকার।
নারীরা প্রচলিত শিক্ষায় অনেক দূর এগিয়েছে এবং নানা গুণে গুণান্বিত হচ্ছেন কিন্তু প্যারেন্টিং দক্ষতা না থাকলে মায়েদের সেসব গুন ও যোগ্যতা ঘর আলো করা বাচ্চাদের মধ্যে সঞ্চারিত হবে না।
সন্তান আমানত। সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব আল্লাহর দেয়া এবং জিজ্ঞাসিত হতে হবে।
তাই প্যারেন্টিংয়ে অবহেলার কোন সুযোগ নেই।প্যারেন্টিংয়ে কখনো জ্ঞান দরকার, কখনো উৎসাহ প্রয়োজন,কখনো সহমর্মিতা- সহযোগিতা, কাউন্সিলিং, কোথাও মায়েদের গেট টুগেদার প্রয়োজন হয়। প্রজ্ঞা মুমিনের হারানো সম্পদ -এ নীতিতে আপনিও হতে পারেন সহযোগী।
বারবার শুনছি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর নোট করছি কারণ বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত দরকারি।
একজন সালিহাত ও কনফিডেন্ট মা হতে চাই আমরা সবাই।
আমাদের প্যারেন্টিং হতে হবে পরিকল্পনামূলক, প্রতিক্রিয়ামূলক না। যেকোনো বিষয়ে বাচ্চাকে আগে থেকেই সতর্ক করতে হবে, বোঝাতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা কেউ নিঁখুত না, আমাদের শিশুটিও নয়।
এবিষয়ে আমরা যেন কোন প্রেসার না নেই।
ড. নাঈমা আপুর কথা কানে বাজছে, আমার প্যারেন্টিং চলে দোয়ার উপরে। এটা একটি ম্যাজিক নয় বরং DIY (Do it yourself).
সন্তান যত ছোটই হোক আশরাফুল মাখলুকাত। তাকে সে সম্মান দিতে হবে। সেজন্য আমাদের দ্বীনি পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তাদের কথা শোনা (মিরর ম্যাচিং) ও শোনানো, টেম্পার-ট্যানট্রাম কন্ট্রোল, বন্ধন তৈরি, কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট , দায়িত্বশীল বানানো ইত্যাদি ছিল এ কোর্সটিতে । পাঁচটি ক্লাসে সন্তানের খাওয়া-ঘুম, স্বাস্থ্য, হোমস্কুলিং, আর্লি লিটারেসি আলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছুই কভার করেছেন( Attention bucket, power bucket, colourful brain, role model, induction method, growth mindset, VVP technique etc. )
মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাওয়া ও সঠিক নিয়মে ঘুমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Discipline, feedback, connection building, self-confidence, confirm, rule of two, rule by time span ইত্যাদি জীবন সাজাতে সাহায্য করবে।
বাচ্চাদের কন্ট্রোল করতে চাওয়া ও কনসিসটেন্সি বজায় না রাখা, ব্রেইন ডেভলপমেন্ট না জানা, পাওয়ার স্ট্রাগল ইত্যাদি অভিভাবকদের নানা সমস্যার সমাধান জেনেছি।
হোমস্কুল হলো আনন্দের সাথে এক্টিভিটির মাধ্যমে খেলতে খেলতে বাচ্চাদের শিখানো। এতে ৪ টি স্কিল বাড়বে, ভাবা যায়!কম্যুনিকেশন যার অন্যতম।কালারিং, প্লে ডো, রান্নাঘরের জিনিস, আউটডোরে যাওয়া তা সে হোক মাঠে, সলাতে বা আত্মীয়ের বাসায় এসব দিয়ে শিশুর অনন্য বিকাশ হতে পারে।
গল্প বলা, বই পড়া, হাতের লেখার সুন্দর নির্দেশনা পেলাম।
অসুখের হোম ম্যানেজমেন্ট, ইমিউনিটি, এলার্জি, ফিভার ও ডায়রিয়া, বিপদ চিহ্ন, দাঁতের যত্ন, ফার্স্ট এইড, অরুচি আরো নানা বিষয়ে ভরপুর প্রমা আপুর ক্লাস।
অথোরিটেটিভ, ইন্ডাকশন পদ্ধতির পজিটিভ প্যারেন্টিং না জেনে অজান্তেই সাইকোলজিকাল ও পানিশমেন্ট টেকনিক ফলো করেছি।
এতে নিজেদেরই ক্ষতি।আমাদের আরো দুটি ভুল হলো বাচ্চাকে কন্ট্রোল করতে চাওয়া ও কনসিসটেন্সি বজায় না রাখা।
এ কোর্সটি যেমন থিউরি শিখিয়ে কনফিডেন্স বাড়িয়েছে, তেমনি প্র্যাকটিক্যাল শিখিয়ে মায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে।
সূরা লুকমান ও সূরা ইউসুফ এর মাধ্যমে প্যারেন্টিংকে মূলধারার সাথে যুক্ত করেছে।
ঈমানের বীজ ও আখলাকের ভিত্তির কথা বলতে গিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ হাদীসটির কথা মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস (রা.) কে বললেন, হে বালক! আমি তোমাকে কিছু কালেমা শিখিয়ে দেই– (তুমি) আল্লাহ তাআলার বিধানের হেফাজত করবে। তাহলে তিনিও তোমার হেফাজত করবেন।- আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়ে সর্বদা খেয়াল রাখবে। তাহলে তুমি তাঁকে (আল্লাহকে) তোমার সামনে পাবে।- যখন সাহায্যের প্রয়োজন হবে। তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে।(হে বালক! মনে রাখবে, গোটা দুনিয়ার) সব মানুষ যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়, তবে আল্লাহ তকদিরে যা লিখে রেখেছেন, ততটুকু ছাড়া কেউ তার কোনো উপকার করতে পারবে না।আর সব মানুষ যদি একত্রিত হয়ে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে তবে আল্লাহ তোমার তকদিরে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা ব্যতিত অতিরিক্ত কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। কেননা কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কাগজগুলো শুকিয়ে গেছে। (তিরমিজি)
“It takes a village to raise a child”. সন্তানের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করা আসলেই কঠিন -তা কেউ স্বীকার করুন আর নাই করুন। শুধু মা না, পুরো গ্রামের মতই মানুষ লাগবে বৈকি সন্তান মানুষ করতে।
সন্তান বড় করা আর মানুষ করা কিন্তু এক কথা নয়।
আসুন দেখি কতটুকু পারা যায়?
যা পারি তাই আমাদের উপকৃত করবে ইনশাআল্লাহ।
আজকের শিশু সন্তান আগামীতে কারো জীবন সঙ্গী, কারো পিতা মাতা, দেশের নাগরিক।
আসুন তাদের গড়ে তুলতে আমরা চেষ্টা শুরু করি।
FAIL মানে হলো first attempt in learning।
প্যারেন্টিং আজীবনের সাধনা। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ ও উম্মাহ। মনে রাখতে হবে আমরা উম্মাহকে প্রতিপালন করছি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দিন।
আজিজা,
ব্যাচ-১