Back

রমাদানঃ মায়েদের গল্প

রুমানা ফজরের নামাজ শেষ করে দু’হাত তুলে দোয়া করল— “হে আল্লাহ, এই রমাদান যেন আমার জন্য সত্যিকারের বরকতের মাস হয়!” কিন্তু পরক্ষণেই চোখ গেল পাশে ঘুমন্ত ছোট্ট মেয়েটার দিকে। ওর মুখের নিষ্পাপ প্রশান্তি দেখে রুমানা হাসল, আবার মনে হল— “বাচ্চাকে নিয়ে প্রোডাক্টিভ রমাদান কাটানো কি সম্ভব?”
সেই সকাল থেকেই শুরু হল রুমানার রমাদান রুটিন। ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই নিয়ত করল—এই মাসে যতটুকু সম্ভব ইবাদাত করবে, কিন্তু নিজের দায়িত্ব থেকেও পিছু হটবে না।
 
১. নিউবর্ন নিয়ে রমাদান
রুমানার ছোট্ট সন্তান মাত্র দুই মাসের। সারাদিনই ওর যত্ন নিতে হয়, মাঝে মাঝে ঘুমের অভাবে ক্লান্ত লাগে। কিন্তু তবুও সে মন খারাপ করল না।
➤ ইবাদাতের পরিকল্পনা:
✅ বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় কুরআন তেলাওয়াত শোনা।
✅কুরআন এপ থেকে কুরআন পড়া৷
✅ ঘুম পাড়ানোর সময় জিকির করা— সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার।
✅ ফজর ও মাগরিবের পর সংক্ষিপ্ত দোয়ার বই পড়া।
✅ ছোট ছোট দান করা— হয়তো প্রতিদিন এক টাকা হলেও!
রুমানা বুঝল, বাচ্চা ছোট হলেও, ইবাদাত থেমে থাকবে না; বরং নতুনভাবে গড়ে উঠবে!
 
২. টডলার (২-৪ বছর) নিয়ে রমাদান
খাদিজার ছেলের বয়স তিন বছর।
সারাদিনই দৌড়াদৌড়ি, সবকিছুতেই কৌতূহল! কিন্তু খাদিজা ভাবল, একে নিয়েই সুন্দর রমাদান কাটাব।
 
➤ ছোটদের জন্য রমাদানের আমল:
✅ বাচ্চার সাথে বসে কুরআন তেলাওয়াত শোনা।
✅ ছোট ছোট দোয়া যিকির মুখস্থ করানো— যেমন “বিসমিল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, মাসনুন দু’আ মুখস্থ করানো৷
✅ ইফতারের সময় সুন্দর করে দোয়া করা— বাচ্চার হাত ছোট্ট করে তুলেই বলবে, “ইয়া আল্লাহ, আমাদের সবার জন্য বরকত দাও!”
খাদিজা বুঝল, টডলারদের সাথে সময় কাটানো মানেই ইবাদাত শেখানো!
 
৩. স্কুলগামী বাচ্চা (৫-৯ বছর) নিয়ে রমাদান
রায়হানার দুই সন্তান। বড়টি সাত বছরের মেয়ে, ছোটটি চার বছরের ছেলে। দু’জনের আগ্রহ রমাদান নিয়ে অনেক বেশি!
 
➤ প্রোডাক্টিভ রমাদানের প্ল্যান:
✅ রমাদান ক্যালেন্ডার বানানো— প্রতিদিন নতুন একটা দোয়া শেখা।
✅ সাদকাহ চার্ট— বাচ্চারা নিজেদের খেলনার মধ্যে কিছু গরিব বাচ্চাদের দেবে।
✅ নফল রোজার অভ্যাস— দুপুর পর্যন্ত রোজা রাখার চেষ্টা (বাচ্চাদের সামর্থ্য অনুযায়ী)।
✅ একটি ছোট্ট খতমের পরিকল্পনা— প্রতিদিন ৫ আয়াত হলেও কুরআন পড়বে!
রায়হানা বুঝল, এই বয়সে শিশুরা যা শিখবে, তা সারাজীবন মনে রাখবে।
 
৪. তিন বাচ্চার মা—ব্যস্ততার মাঝেও বরকত
মারইয়ামের তিন সন্তান। ঘর সামলানো, ইবাদাত করা, সন্তানদের খেয়াল রাখা— একসাথে সবকিছু করতে গিয়ে কিছুটা হাঁপিয়ে ওঠে মাঝে মাঝে। কিন্তু সে বুঝেছে, রমাদান মানেই ‘পারফেকশন’ নয়, বরং বরকত খোঁজা!
➤ তার রমাদান স্ট্র্যাটেজি:
✅ স্মার্ট রুটিন— রাতের খাবার সহজ করা, ইফতার আয়োজন কমিয়ে দেওয়া।
✅ স্বপরিবারে ইবাদাত— ঘুমানোর আগে সবাই মিলে এক পৃষ্ঠা কুরআন তেলাওয়াত।
✅ স্বামীকে যুক্ত করা— বাচ্চাদের গল্প শুনানো বা তাহাজ্জুদের সময় একসাথে ওঠা।
✅ আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু’আ করা৷
মারইয়াম বুঝল, সংসার ও ইবাদাত আলাদা কিছু নয়— বরং একে অপরের পরিপূরক!
রমাদানের শেষ রাতে মারইয়াম সিজদায় গিয়ে কেঁদে ফেলল। “হে আল্লাহ, হয়তো আমি পারফেক্ট ইবাদাত করতে পারিনি, কিন্তু তোমার দিকে আসার চেষ্টা করেছি। তুমি আমার এই চেষ্টাকে কবুল করো!”
সে বুঝতে পারল—একজন মা যদি ইচ্ছা করে, তবে তার প্রতিটি কাজই ইবাদাত হয়ে যায়! বাচ্চাদের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি কুরআনের আয়াত— সবই আল্লাহর পথে গৃহীত হবে।
 
আপনিও কি মা? তাহলে হতাশ হবেন না! আপনার ইবাদাত, আপনার ধৈর্য— সব আল্লাহর কাছে গণনা করা হচ্ছে! এই রমাদান আপনার জন্য সত্যিকারের বরকতের মাস হোক! আমিন!
 
তাসনিম সুশান আজাদ
দৌলা ইন্টার্ন, রৌদ্রময়ী স্কুল
চাইল্ড বার্থ এডুকেটর ও দৌলা ট্রেইনি, আমানি বার্থ

Leave A Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *