নরমাল ডেলিভারির প্রচেষ্টার গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Birth Story, Others
- Date June 19, 2024
- Comments 0 comment
এটা ছিল আমার প্রথম প্রেগন্যান্সি। যখন প্রথম জানতে পারলাম আমার ভিতরে আরেকজন আছেন তখন আনন্দের সাথে বেশ উদ্বিগ্নও ছিলাম। একজন ডাক্তার দেখাই, অন্য সব রিপোর্ট নরমাল থাকলেও হাইপোথাইরয়েডিজম ধরা পড়ে আমার। এছাড়া পুরো প্রেগন্যান্সিতে আমার মেজর কোন সমস্যা ছিল না আলহামদুলিল্লাহ।
রৌদ্রময়ীর Mother and Child Care BD গ্রুপে অনেক আগে থেকেই ছিলাম বিধায় আপুদের পোস্ট পড়ে এই বিষয়ে অনেকটা ধারনা ছিল। মার্চ মাসে প্রিনাটাল রেকর্ডেড ব্যাচে এনরোল করি। এই ক্লাসগুলো করে অনেক অজানা বিষয় জানতে পেরেছি। কিভাবে প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে বাচ্চার যত্ন এবং পোস্টপার্টাম টাইমে নিজের যত্ন নিতে হবে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি যা এখন হেল্প করছে। প্রথম থেকেই খাবার নিয়ে আমার খুব বেশি সমস্যা ছিল না আলহামদুলিল্লাহ।
ঢাকায় এসে আরেকজন ডাক্তার দেখাই। উনি নরমাল সাপোর্টিভ ছিলেন না। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই ডাক্তার পরিবর্তন করার। এই গ্রুপ থেকে ফারহানা পারভীন নিপা ম্যাম সম্পর্কে জানতে পারি তাই ২৯ সপ্তাহে ম্যামকে দেখাই। ম্যাম সব রিপোর্ট দেখে পরামর্শ দিলেন কার্বহাইড্রেট কম খেতে যেন বেবির ওজন খুব বেশি বেড়ে না যায় কারন বেবির ওজন সপ্তাহ অনুযায়ী ঠিক ছিল। আর প্রতিদিন ১০ বার করে ২ বেলা স্কোয়াট করতে বলেন।
এর মাঝে ৩৪ সপ্তাহ থেকে আমার ফলস পেইন শুরু হয়। তখন ম্যামের সাথে যোগাযোগ করলে একটা ওষুধ খেতে বলেন, যদি ফলস পেইন হয় তাহলে চলে যাবে। যেটা ৩৫ সপ্তাহেও হয়েছিল। ৩৭ সপ্তাহে আবার ম্যামকে দেখাই তখন পিভি চেক করে দেখেন বেবির হেড পেলভিসে -২ স্টেশনে আছে। আমাকে রেগুলার ব্যায়াম করতে বলেন। আমি প্রিনাটাল কোর্স থেকে যা যা ব্যায়াম করতে বলা হয়েছে সেগুলো শুরু করি।রেগুলার সিড়ি বেয়ে উঠা নামা ৪ তলা থেকে দিনে ২/৩ বার, স্কোয়াট, বাটারফ্লাই, পেলভিক রক, কেগেল এক্সারসাইজ – মোটামুটি সবই করেছি। রেগুলার খেজুর খাওয়া, ডাকওয়াকও করেছি।
৩৮ সপ্তাহ থেকে পেলভিসে হেড এনগেজ হওয়ার ব্যায়াম করেছি। কিন্তু আমার পেইনের কোন লক্ষনই ছিল না। যেহেতু আমার EDD ছিল অক্টোবরের ১৩ তারিখ। ম্যাম বলছিলেন পেইন না উঠলে ১০ তারিখ চেকআপে যেতে, আমি ১১ তারিখ যাই।
তখন আবার চেক করে দেখেন যে জড়ায়ুর মুখ খোলেনি, বেবির মাথাও বেশ উপরে। ম্যাম তখন একটা আল্ট্রা করতে বলেন। বাবুর ওজন আসে ৩৫৩৫ গ্রাম, সেই সাথে BPD 9.5 cm। তখন ম্যাম বলেন স্যালাইন দিয়ে পেইন উঠাতে চান। পর দিন ভর্তি হয়ে যেতে বলেন। আমার ভরসার জায়গা থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নেই ভর্তি হওয়ার।
১১ তারিখ ডাক্তার দেখিয়ে এসে সারারাতে ২/৩ ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি কী হবে তা চিন্তা করে। ১২ তারিখ সকালে হসপিটালে যাই ভর্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে। ডিউটি ডাক্তার পিভি চেক করলেন, অন্যান্য রিপোর্ট দেখলেন, প্রেশার মেপে দেখা গেল ১৪০/১০০, যেখানে আমার সব সময় প্রেশার নরমাল ছিল। তাই ডিউটি ডাক্তার ম্যামকে কল করে জানালেন। ম্যাম আমার সাথে কথা বলে বলেন যে তোমার বাসা তো কাছেই তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও। প্রেশার বেশি থাকলে কিছু করা যাবে না। পরে আমরা বাসায় চলে আসি।
১২ তারিখ রাতেই ম্যাম আমাকে কল দিয়ে রিলাক্স থাকতে বলেছেন, আমাকে অনেক সাহস দিয়েছেন যে তোমারও নরমাল ডেলিভারি হবে ইনশাআল্লাহ। তারপর ১৩ তারিখ গিয়ে যথারীতি ভর্তি হই, ওইদিন বিপি ভালো ছিল। আমরা ৮ টায় হসপিটালে যাই, তার কিছুক্ষণ পর ম্যাম আসেন। আমাকে ৯:২০ এ স্যালাইন দেয়া হয়।
ম্যাম আবার ২ টার পর আসেন পিভি চেক করে দেখেন জড়ায়ু ২ সে.মি. ওপেন কিন্তু টাইট, পরে সুইপ করে দেন। তারপর সাড়ে ৩ টার দিকে স্যালাইন অফ করা হয়। এর মাঝে হালকা পেইন ছাড়া তেমন কোন পেইন ছিল না। মাঝে দেড় দুই ঘন্টা পর পর ডিউটি ডাক্তার এসে ফেটাল হার্টবিট চেক করেছিল। আলহামদুলিল্লাহ হার্টবিট ভালো ছিল।
সারাদিন অপেক্ষায় থাকি কখন পেইন আসবে। স্কোয়াট করছিলাম, হাঁটাহাঁটি করছিলাম, হিপ রোটেট করছিলাম। রাতে ডিউটি ডক্টর এসে আবার সুইপ করে দেন তবুও পেইনের কোন অগ্রগতি ছিল না। এর মাঝে ৪-৫ বার পিভি চেক করা হয়।
তার পর দিন সকাল ৬:৩০ এ আবার স্যালাইন দেয়া হয়, আবারও একই অবস্থা। ক্র্যাম্প হয়, মাজা ব্যাথা হয় কিন্তু ব্যথা বাড়ে না। ডাক্তার নার্সরা এসে দেখে আমি সুন্দর মতো হাঁটা চলা করছি, আমাকে দেখে ওনারা হতাশ হয়ে চলে যায়। সেদিন সুইপ করা হয় কিন্তু পেইন আর বাড়ে না।
সন্ধ্যায় যখন ডিউটি ডাক্তার এসে পিভি চেক করলেন তখনও জড়ায়ু মাত্র ২ সে.মি. ওপেন কিন্তু লুজ। ম্যামকে ফোনে জানানো হলে ম্যাম পানি ভেঙে দিতে বলেন। তখন আমি আসলে ভয় পাই। ১৪ তারিখেও ২ বার সুইপ করে দেন তখন মিউকাস প্লাগ দেখা যায়। আমার ফ্যামিলি আর অপেক্ষা করতে চাচ্ছিল না। সন্ধ্যায় আমার পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেয় যে সিজার করে ফেলবে। আমার খুব মন খারাপ হয় এটা শুনে। আমি কোন ভাবেই মানতে পারছিলাম না।
অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার পর ম্যামের সাথে কিছুক্ষণ গল্প হয়। আসলে ম্যাম আমাকে নরমাল করার চেষ্টা করছিলেন, কারন খুব কান্না পাচ্ছিল তখন। রাত পৌনে ৮ টার দিকে আমার সিজার হয়। ম্যাম আমার মেয়েকে বের করেই বলছিলেন তোমার মেয়ের মাথা তো অনেক বড় আর মাথা একটু বাঁকা হয়ে ছিলো। তারপর মেয়েকে দেখাল একঝলক। আলহামদুলিল্লাহ ও তখন কান্না করছিল।
ও নাকি হওয়ার পর পর বমি করছিল। তাই শিশু ডাক্তার ওকে পর্যবেক্ষন করছিল। তারপর ও সাক করছিল দেখে দুধ খাওয়ানোর জন্য আমার কাছে আবার নিয়ে আসে। দুধে টান দেয়ার পরই ও আবার বমি করে দেয়। কয়েকবার বমি করাতে ম্যাম ওকে NICU তে রাখতে বলেন।
ওইদিন থেকে পরেরদিন ১১ টা পর্যন্ত ওকে অক্সিজেন দিতে হয়, পরে আর লাগেনি। তারপরও বেবির সব টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট না দেখে ডাক্তাররা রিলিজ দিচ্ছিলেন না। আলহামদুলিল্লাহ ওর সব রিপোর্ট ভালো ছিল। ইনফেকশনের চান্স থাকায় ৭ দিনের এন্টিবায়োটিক দিয়ে আমাদের রিলিজ করে দেয়।
পুরো প্রেগ্ন্যাসিতে দু’আ করেছি আল্লাহ যেন আমাকে একটা সুস্থ সন্তান দান করেন। সেটা হোক নরমাল ডেলিভারি বা সিজার। নরমাল ডেলিভারি হয়নি তাই আমি একটুও মন খারাপ করি না, কারণ এটা আমার একটা গোল ছিল, একমাত্র চাওয়া ছিল না। আলহামদুলিল্লাহ আমরা মা-মেয়ে ভালো আছি।
দোলন
রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল কোর্স, রেকর্ড ব্যাচ
Other post
You may also like
রংধনু রঙের খেলনাগুলো
ছোটবেলায় আমাদের নিকট প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বস্তুটি ছিলো, তা হলো সাত রঙের রংধনু। কারণ অধিকাংশ সময় বৃষ্টির দেখা মিললেও, বৃষ্টির পরের রংধনুর দেখা মিলতো খুবই কম। তাই যে জিনিস খুব কম দেখা যায়, সে জিনিসের প্রতি আকর্ষণও থাকে সবচেয়ে …
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …