ডাক্তার অবাক হয়েছেন আমার পেইন মেনেজমেন্ট দেখে
এবার আমার সেকেন্ড প্রেগন্যান্সি ছিল।এবারের প্রেগন্যান্সি জার্নিটা টোটালি ভিন্ন ছিল প্রথমবারের চেয়ে সাথে কষ্টকরও আলহামদুলিল্লাহ।
রমাদানে দাঁতের ট্রিটমেন্ট নিচ্ছিলাম কেন জানি ব্যাথার ঔষুধ খেতে চাচ্ছিলাম না।এইদিকে পিরিয়ড ডেইট মিস হওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম হঠাৎ দাঁতের ব্যাথা বেড়ে যাওয়ায় ঔষুধ কিনে আনায় তাও কেন জানি খাইনি। পরে টেস্ট করে দেখি পজিটিভ
আমার ডেন্টিস ও আমার কোন সিংগেল এক্স রে নেয়নি।কৃমির ঔষুধ ও খেতে বলেছিল আম্মু আমি সেটাও খাইনি।সব মিলিয়ে জানার পর শুকরিয়া সিজদা দেই আল্লাহ কিভাবে যে সেইফ করছিলেন আমাকে।
কন্সিভ করার পরপরই একজন গাইনি ডাক্তার দেখাই।এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই দেখি স্রাবের সাথে হালকা রক্ত এরপর ব্রাউন ডিসচার্জ।পরের দিনই আবার যাই ডাক্তারের কাছে ইনজেকশন আর মেডিসিন দিয়েছিলেন সাথে আল্ট্রা।
রিপোর্ট ভালো ছিল।হার্টবিট আসেনি তখনও।১০ সপ্তাহে পেট ব্যাথা করছিল পিরিয়ডের মত ইমারজেন্সি আল্ট্রা করাতে যাই। অনবরত আল্লাহকে ডাকছিলাম সাথে ইস্তেগাফর আর দুরুদ পড়ছিলাম আল্লাহর রহমতে হার্টবিট এসেছিল।এত খুশি লাগছিল।
এরপর মোটামুটি ভালো ছিলাম।গ্যাসের সমস্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল কিছু খেয়ে শান্তি পেতাম না।তেলের খারাব, বাইরের খাবার টোটালি অফ করে দিয়েছিলাম। তাও শান্তি পেতাম না সাথে ছিল প্রচুর উইয়িকনেস আর মুড সুইং আর ডিপ্রেশন।
কুরআন তিলাওয়াত শুনতাম,আয়াতে সাকিনাহ শুনতাম কান্না করে দুআ করতাম প্রচুর।আলহামদুলিল্লাহ শেষের দিকে মুড সুইং কমে গিয়েছিল।হাসবেন্ডকে ও ভুল বুঝতাম উনিও বিজনেসের প্রেশারে সময় দিতে পারতো না তেমন।পরে বুঝতে পারলাম আমি উনাকে ভুল বুঝেছি শুধু শুধু। আমার হাসবেন্ড খুবই কেয়ারিং আলহামদুলিল্লাহ।
এনামলি স্ক্যানে আসে কর্ড প্যাঁচানো।খুবই দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিল।যদিও ডক্টর বলেছিলেন মুভমেন্ট ঠিক থাকলে টেনশনের কিছু নেই। ৩৩সপ্তাহে ও আল্ট্রা করে দেখি তখনও কর্ড প্যাচানো। আমার ডাক্তার খুবই সাপোর্টিভ ছিল আলহামদুলিল্লাহ। সাহস দিত।
৩৫ সপ্তাহে শুরু হয় পিরিয়ড হলে যেমন ব্যাথা হয় তেমনি ব্যাথা। ফলস পেইন ভেবে ৪ দিন সহ্য করে পরে ডাক্তারকে কল দিলে এলজিন খেয়ে দেখতে বলে।এলজিন খাওয়ার পর ব্যাথা কমে যেত কিন্তু আবার ফিরে আসত। ডাক্তার দেখাই আবার উনি পিভি চেক করে
লাংগস ম্যাচিউর হওয়ার জন্য ইঞ্জেকশন দেন সাথে ২ সপ্তাহের মেডিসিন।
আর রেস্টে থাকতে বলেন। টেলিগ্রাম প্রি নাটাল গ্রুপে ডিটেলস বললে ডাক্তার আপুরা পরামর্শ দেয় হাঁটাহাটি করতে আর ব্যায়ামগুলো রেগুলার করতে।আমি ও তাই করেছি এক্টিভ ছিলাম কষ্ট হলেও।
৩৬ সপ্তাহ থেকে খেজুর খেয়েছি। সন্ধ্যার পর হাসবেন্ডের সাথে হাটতে যেতাম।সাথে আনারসের ক্রেভিংস ছিল প্রচুর।
৩৭ সপ্তাহের জন্য অপেক্ষা করি।৩৬ সপ্তাহের শেষের দিকে আবার ব্যাথাটা আসতো থেমে থেমে।রাবেয়া আপুর কথামত মাইলস সার্কিট ব্যায়াম করা শুরু করি।সাথে ডাক ওয়াক,বাটারফ্লাই,পেলভিক রক,কেগেল,এগুলো করা হত।
৩৭ সপ্তাহ ২দিনের দিন ফজরের পর ঘুম ভেঙে যায় সর্দি জন্য স্বস্তি পাচ্ছিলাম না উঠে সালাত পরে পা আড়াআড়ি করে বসে দুআ করছিলাম আল্লাহ যাতে সহজ করে।এরপর শুরু করি মাইলস সার্কিট ৩টা স্টেপ ৯০ মিনিট ধরে করি।তখনই কন্ট্রাকশন হচ্ছিল। এরপর ডাক ওয়াক আর হাটাহাটি করে খেজুর খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।এর আগেরদিন রাতে আনারস খেয়েছিলাম।১০টার দিকে ব্যাথায় ঘুম ভেঙে যায় হাসবেন্ডকে ডেকে দিয়ে নাস্তা রেডি করতে বলি।উঠে হাটাহাটি করি সাথে হিপ রোটেশন আর ব্রিদিং এক্সারসাইজ।
পেইন ম্যানেজমেন্টে এটা খুব হেল্প করেছিল।ডাক্তারকে কল দেই সর্দির জন্য কি খাব আস্ক করার জন্য আর বলছে ব্যাথা বাড়লে হসপিটালে যেতে।হাসবেন্ড জুমা পড়ে ঔষুধ এনে দিল।দুপুরের খাওয়া শেষ করে খুব দূর্বল লাগছিল ঘুমাতে চেয়েছিলাম ব্যাথার জন্য পারিনি।উঠে আবার হাটাহাটি হিপ রোটেশন আর ব্রিদিং এক্সারসাইজ করি।এর মধ্যেই ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছিল সাথে সকাল থেকে ৩ বার লুজ মোশন।বুঝতে বাকি ছিল না লেবার পেইন।
আম্মু ও বার বার তাড়া দিচ্ছিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।পরে বিকালে আম্মুকে কল দিয়ে বললাম রেড়ি হতে হাসপাতালে যাব যাওয়ার আগে হাসবেন্ড ভালো একটা রঙ চা করে দেয় মধু দিয়ে খেয়ে আরাম লেগেছিল।রেড়ি হয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে বের হলাম।গাড়ি পাচ্ছিলাম না আম্মু রিক্সা নিতে বললে আমি না বলে দেই।
বলি হাটলে আরও ভালো হবে।পুরো মনোযোগ নিজের দিকে ছিল আশেপাশে কি হচ্ছে কিছুই খেয়াল করিনি।পরে সিএনজি পেয়ে যায় হাসপাতালে গিয়ে পিভি চেক করে দেখে ৫ সেমি ডায়লেশন হয়ে গিয়েছে নার্সরা অবাক হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তারকে কল দিল।
আমাকে শুয়ে থাকতে বলল হাঁটতে দিচ্ছিল না।মন খারাপ হয়ে যায় লেবার প্রগ্রেস করা বন্ধ হয়ে যায়।তারপর সাপোসিটর দেয় এরপর একজন নার্স বললো হাটতে উনার কথা শুনে খুশি লাগছে।এর মধ্যে খেজুর আর জমজমের পানি খাচ্ছিলাম। নার্সরা খুব অবাক ছিল তখনও আমি খুব শান্ত আর এক্টিভ ছিলাম।এরপর বাথরুম হয়।ডাক্তার এসে পিভি চেক করে তখনও ৫সেমি।
পানি ভেঙে দেওয়ার পর দেখে সবুজ কালার।আমাকে বলে তোমার বাচ্চা পটি করে দিয়েছে।আমার হাসবেন্ডকে ডাকতে বলে উনি আমার উপর ছেড়ে দিয়েছিল।এইদিকে আমি অনবরত ইস্তেগাফর,দুরুদ,দুআ ইউনুস পড়ছিলাম।ডাক্তার নার্সদের পিটন আর ও কি কি ইনজেকশন দিতে বলে।এর মধ্যে আম্মু আমাকে দেখতে আসে।
আমার সেই লেভের কন্ট্রাকশন শুরু হয়। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না।আম্মুকে বললাম দুআ করতে আমি সিজার করাতে চাইনা।আম্মুকে ডাক্তার বললো দুআ পড়ে ফু দিতে।আর আম্মুকে বলছিলাম কোমর ম্যাসাজ করে দিতে আম্মু আমার ব্যাথা দেখে নার্ভাস হয়ে যায় ডাক্তার এসে ম্যাসাজ করে দেয়।
আর বলে পুশিং স্টেজে আসলে জানাতে বলে।আমার ডাক্তার খুব অবাক ছিলেন আমি সব জানি! দেখে পরে বলি, আমি প্রি নাটাল কোর্স করেছি।১০ মিনিটের মধ্যেই পুশিং স্টেজে চলে যাই বাচ্চার মাথা দেখা যাচ্ছিল।ডাক্তার আমাকে নিজে ধরে লেবারে সিটে নিয়ে যায়।এরপর সামান্য এপিসিওটমি দেই।উনাকে আমি রিকুয়েষ্ট করেছিলাম প্রয়োজন না হলে না দিতে।বাবু পটি করে দেয়াতে দিয়েছিল।বাবুকে বের করে আমার পেটের উপর রাখে আর বলে ছেলে বাবু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
কর্ড কেটে দিয়ে সাকশন করে ওর পেট থেকে অনেক পানি বের করে সাথে সাথে এনআইসিউতে নিয়ে যায় আমি দেখতে অবধি পারলাম না।
এরপর দুইদিন অবজারভেশনে ছিল আলহামদুলিল্লাহ সব টেস্ট করে সব ঠিকঠাক ছিল।৩দিন পর বাসায় আসি।
সবাই আমার বাবুর জন্য দুআ করবেন।
আমি খুব একটা গুছিয়ে লিখতে পারিনা।
প্রিনাটাল কোর্স আমার জন্য ব্লেসিং
আল্লাহ এই কোর্সের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান দিক।
উম্মু আব্দুল্লাহ
প্রিনাটাল ১০ম ব্যাচ।