শিশুর ইমিউনিটি গঠনে মাইক্রোবায়োমের ভূমিকা এবং নরমাল ডেলিভারি ও ব্রেস্টফিডিং-এর গুরুত্ব (১ম পর্ব)
মাইক্রোবায়োম কী?
প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম জীবন ছিল সম্ভবত ব্যাকটেরিয়া। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত সমস্ত গাছ, মানুষ ও পশু ব্যাকটেরিয়ার সাথে নিজেদের বিবর্ধন (evolve) করে আসছে। ব্যাকটেরিয়াকে আমাদের একটা অংশ করে নিয়ে আমরা এর সাথে মানিয়ে নেয়া শিখেছি। মানুষের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়ন বা ৩০ লাখ কোটি কোষ আছে এবং মাইক্রোঅরগানিজম (মাইক্রোব) আছে এরও ৩গুন বেশি।
মাইক্রোব আমাদের শরীরের উপরে থাকে, ভেতরেও থাকে – আমাদের ত্বক, মুখ, ফুসফুস, নাক, চোখ, কান সবখানে। যোনি বা ভ্যাজাইনাতেও থাকে, এবং একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাইক্রোব আমাদের নাড়িভুঁড়ির শেষাংশে থাকে। এই সকল মাইক্রোবায়োমকে একসাথে বলা হয় “হিউম্যান মাইক্রোবায়োম”। এর মাঝে আছে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গি, ভাইরাস, প্রোটোযোয়া এবং আরকিয়া।
মানুষের স্বাস্থ্যে মাইক্রোবের ভূমিকা
মানুষের সুস্বাস্থ্যে মাইক্রোবের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
- তারা পরিপাক ক্রিয়ায়, মেটাবলিজমে সাহায্য করে
- তারা ভিটামিন উৎপাদন করে
- নিউরো-কেমিক্যাল উৎপাদন করে
- আমাদের হরমোনের সাথে ক্রিয়া করে
- নার্ভাস-সিস্টেমের সাথে ক্রিয়া করে
- এদের এন্টি-ইনফেক্টিভ গুন আছে
- এরা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের অবিচ্ছেদ্য অংশ
বিজ্ঞানীরা আরও আবিষ্কার করেছেন যে মাইক্রোব আমাদের মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। পরিপাকতন্ত্র ও মস্তিষ্কের মাঝে একটা সম্পর্ক আছে এবং এই সম্পর্কের মাধ্যমে মাইক্রোব আমাদের মনের ভাব এবং আচরণকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও আবিষ্কার করেছেন যে একজন মানুষের মাইক্রোবায়োম তার আঙ্গুলের ছাপের মতই স্বতন্ত্র।
মাইক্রোব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অতিবাহিত হয়। মায়ের মাইক্রোবের স্বাতন্ত্র তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি এবং ব্রেস্টফিডিং এর মাধ্যমে অতিবাহিত হয়।
এই বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যদি আপনার আদি-আদি-আদি মাতামহ থেকে আপনার মা পর্যন্ত সকলে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি করেন এবং এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করেন তাহলে তারা সকলে তাদের মাইক্রোব আপনাকে দিতে পারবে।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে শিশুর ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সর্বোত্তম গঠনে মায়ের মাইক্রোব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেগনেন্সিতে মায়ের ভ্যাজাইনা এবং পরিপাকতন্ত্রের মাইক্রোব সমাজ প্রসব ও ব্রেস্টফিডিং এর প্রস্তুতি হিসেবে পরিবর্তিত হয়। এই সময় মায়ের ভ্যাজাইনা ও পরিপাকতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্যতা কমে যায় এবং ল্যাকটোব্যাসিলি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় যা বুকের দুধের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
বিজ্ঞানীরা আরও জেনেছেন, জরায়ুতে ভ্রুনের বেড়ে ওঠার সময় সেটা সামান্য পরিমাণ ব্যাকটেরিয়ার প্রতি উন্মুক্ত হতে পারে। পেটের ভেতরের শিশু মাইক্রোঅর্গানিজমের জগত থেকে অ্যামনিওটিক স্যাকের দ্বারা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকে, তবে সামান্য পরিমাণ সংস্পর্শে আসতে পারে। মাইক্রোব এমনিওটিক ফ্লুইড, কর্ডের রক্ত, ফেটাল মেমব্রেনের মাধ্যমে শিশুর কাছে পৌঁছাতে পারে কিনা সেটা এখনো বিজ্ঞানীদের অজানা। তাই গর্ভাবস্থায় মাইক্রোবের সাথে শিশুর সংস্পর্শে আসার ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, সামান্য পরিমাণ হতেও পারে।
তাই যখন মায়ের পানি ভাঙ্গে, সেই ঘটনা-ই শিশুর মাইক্রোবায়োম গঠনে প্রধান ‘বীজ বপনের’ কাজটি করে।
(২য় পর্ব দেখুন এখানে।)