শিশুর ইমিউনিটি গঠনে মাইক্রোবায়োমের ভূমিকা এবং নরমাল ডেলিভারি ও ব্রেস্টফিডিং-এর গুরুত্ব (শেষ পর্ব)
- Posted by mnccbd_admin
- Categories Blog, Course, Rabeya Rowshin, Writer
- Date May 25, 2023
২য় পর্ব দেখুন এখানে
বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম
একটি বাচ্চা অপরিপক্ক ইমিউন সিস্টেম নিয়ে জন্মায়। তার ইমিউন সিস্টেমের দ্রুত শিখে নিতে হয় কে তার বন্ধু এবং কে তার শত্রু। ইমিউন ট্রেনিং হয় বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা। বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রের ‘সঠিক প্রকৃতির’ ব্যাকটেরিয়া ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে:
- বন্ধু (যার সাথে মানিয়ে নেওয়া যাবে)
- শত্রু (যাকে আক্রমণ করতে হবে)
সর্বোচ্চ ইমিউন ট্রেনিংয়ের জন্য ‘সঠিক প্রকৃতির’ ব্যাকটেরিয়াকে বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রে আসতে হবে
- সঠিকভাবে
- সঠিক সময়ে
কর্নেল ইউনিভার্সিটির ইমিউনোটক্সিকোলজির প্রফেসর রডনী ডায়েটার্ট বলেন, “সর্বোচ্চ ইমিউন ট্রেনিংয়ের জন্য একটাই সুযোগ। একটাই সরু পথ। যদি এটা পরিপক্কতা না পায় তাহলে সম্ভবত বাকি জীবনের জন্য ইমিউন সিস্টেম ভারসাম্যহীন ও অপরিপক্ক হবে এবং এলোমেলোভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে।”
তাহলে সি-সেকশন এবং ফর্মুলা খাওয়ানো?
সি-সেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক অথবা ফর্মুলা শিশুর মাইক্রোবায়োমের “বীজ বপন ও খাওয়ানোতে” সম্ভাব্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর ইমিউন সিস্টেমের সর্বোচ্চ গঠনে এটা প্রভাব ফেলতে পারে। পরবর্তীতে বাচ্চার জীবনে অসংক্রামক রোগের (non-communicable disease) ঝুঁকি বাড়তে পারে।
শিশুর স্বাস্থ্যে ফর্মুলা বা কৌটার দুধের প্রভাব
এই নিয়ে প্রফেসর রডনী ডায়েটার্ট বলেন, “অনেক সময় ফর্মুলা খাওয়ানোকেই বেছে নিতে হয় কিন্তু সত্যি হচ্ছে ওই নিউট্রিয়েন্টগুলো মাইক্রোবদের সহায়তা দেয়ার উপযোগী করে, তাদের পরিপক্ক হতে দেয়ার জন্য এবং বিশেষভাবে বাচ্চার জন্য উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর হওয়ার জন্য তৈরি না। তাই আমরা এখন এটা বুঝতে পারি যে বাচ্চা হয়তো বেড়ে উঠবে ফর্মুলা দুধ খেয়ে কিন্তু ৯০% মাইক্রোবই খুব একটা ভালো অবস্থায় থাকবে না। বাচ্চা যদি দীর্ঘসময় বুকের দুধ না খায় তাহলে নবজাতক অবস্থায় মাইক্রোবগুলো পরিপক্ক হতে পারে না। বুকের দুধ খাওয়া ও ফর্মুলা দুধ খাওয়া বাচ্চাদের পরিণত বয়সে মাইক্রোবিয়াল উপাদানে বেশ পার্থক্য দেখা গিয়েছে। পার্থক্যটা অর্থবোধক যেহেতু ফর্মুলা খাওয়া বাচ্চারা নানা ধরনের অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে বেশি রয়েছে।”
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োম এবং হেলথের প্রফেসর মারিয়া গ্লোরিয়া বলেন, “মায়ের ভ্যাজাইনা থেকে আসা যে মাইক্রোবগুলো শিশুর মাঝে বাসা বাঁধে বুকের দুধ সেগুলোর বৈচিত্র্যতা কমিয়ে দেয়। তাই বাচ্চা যখন মায়ের দুধ না পায় এবং ফর্মুলা খায় এই বৈচিত্রতা সামান্য বেড়ে যায়। এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া বাচ্চার জীবনে খুব দ্রুতই চলে আসে যেগুলো আসা উচিত না। এই বিষয়টা ইমিউন সিস্টেমের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এর পরিণাম কত সুদূর প্রসারী হতে পারে আমরা জানি না। আমরা যদি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাঁধা সৃষ্টি করি তাহলে আমরা হয়তো বাচ্চার ইমিউন সিস্টেমের গড়ে ওঠার সাথে আপোষ করতে সাহায্য করছি।”
আজীবনের জন্য সম্ভাব্য সেরা স্বাস্থ্য পেতে:
১. গর্ভাবস্থায় মায়ের মাইক্রোবায়োমকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
২. যখন সম্ভব ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি করতে হবে।
৩. জন্মের সাথে সাথে বাচ্চাকে মায়ের ত্বকের স্পর্শে (skin-to-skin) রাখতে হবে এবং এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করতে হবে।
প্রফেসর রডনী ডায়েটার্ট আরও বলেন, “একটি স্বাস্থ্যবান বাচ্চার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা আমরা করতে পারি সেটা হচ্ছে, (যখন সম্ভব হবে) ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির মাধ্যমে মাইক্রোবের বীজ বপন নিশ্চিত করা, বাচ্চা জন্মের সাথে সাথে মায়ের ত্বকের সাথে বাচ্চার ত্বকের সংস্পর্শ ঘটানো এবং পর্যাপ্ত সময়কাল ধরে বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সেই মাইক্রোবদের সহায়তা দেয়া। প্রতিটা গর্ভবতী মায়ের বার্থ প্ল্যানে এটা থাকা উচিত।”
তথ্যসূত্রঃ টোনি হারমান (পুরস্কার জেতা ফিল্ম Microbirth এর পরিচালক এবং মাইক্রোবার্থ স্কুলের ফাউন্ডার) অফার করা ইনফ্যান্ট মাইক্রোবায়োমের উপর মিনি কোর্স
(লেখিকা ‘আমানি বার্থ’ চাইল্ড বার্থ এডুকেটর)
Other post
You may also like
নতুন মায়েদের জন্য কার্যকর ব্রেস্টফিডিং টিপস
নবজাতকের সুস্থ ও মজবুত শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের দুধ সবচেয়ে উপকারী। তবে নতুন মায়েদের জন্য ব্রেস্টফিডিং শুরুতে একটু কঠিন মনে হতে পারে। মায়েদের জন্য কিছু কার্যকর ব্রেস্ট ফিডিং টিপস দেওয়া হলো, যা মায়ের ও শিশুর দুজনের জন্যই সহায়ক …
মুবাশশিরার লেড উইনিং
মুবাশশিরার বয়স যখন ৫ মাস ২৫ দিন, তখন থেকেই আমি ওকে সলিড দেওয়া শুরু করি। কারণ সলিড শুরু করার সব সাইন আলহামদুলিল্লাহ তার মধ্যে দেখা গিয়েছিলো। সে বসতে পারতো, খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখাতো, ঘাড় ডান থেকে বামে ঘুরাতে পারতো, মুখের …
মা হওয়ার পরের দিন গুলোতে ভালো থাকা
১)প্রথম সন্তানের মা হওয়া সবার জন্য কতই আকাঙ্খিত। ৩৭ সপ্তাহ শেষে ইডিডির বেশ আগেই হঠাৎ পেইন উঠে নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছিল আমার মেয়ে। হাসপাতালে যখন যাই তখন ৩ সেমি জরায়ু মুখ খুলেছিল। তারপরও রুটিন অনুসারে সেলাইন, পিটোসিন, ডেলিভারির সময় এপিসিওটমি দেওয়া …