লেবার ইন্ডাকশন
- Posted by mnccbd_admin
- Categories Blog, Course, Others, Writer
- Date May 14, 2023
আমাদের অনেক বোনের ক্ষেত্রে লেবার ইনডিউস করার প্রয়োজন হয়। অনেকে এটা সম্পর্কে জানেন না বা কী করনীয় বুঝে উঠতে পারেন না। এই লেখায় ইনডিউস সম্পর্কে সব রকম তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রথমে জেনে নেই, লেবার ইনডিউস করা বলতে কী বোঝায়?
লেবার সাধারণত ৩৭-৪২ সপ্তাহের যে কোন সময় স্বাভাবিকভাবে শুরু হতে পারে। প্রথমে সার্ভিক্স নরম হয় এবং ডায়ালেট হতে শুরু করে, ব্যাথা শুরু হয় এবং পানি ভেঙে যেতে পারে। ইন্ডাকশনের ক্ষেত্রে লেবারের এই প্রসেসগুলো কৃত্রিম ভাবে শুরু করানো হয়। ইন্ডাকশনের বিভিন্ন রকম পদ্ধতি রয়েছে। এসব পদ্ধতি নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, স্বাভাবিক লেবার এবং ইনডিউস লেবারের মধ্যে পার্থক্যটা কী?
ইনডিউসড লেবার স্বাভাবিক লেবারের চেয়ে একটু বেশী কষ্টকর হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে যখন লেবার শুরু হয় হালকা ব্যাথা থেকে কন্ট্রাকশনগুলো আস্তে আস্তে বাড়ে এবং কিছুটা সময় নিয়েই ব্যাথা বাড়ে, এভাবে কন্ট্রাকশনগুলো তীব্রতর ও জোরালো হয়। ব্যাপারটা শরীরের সাথে এডজাস্ট হয়ে যায়, সহ্য করাটা তুলনামুলক কম কষ্টকর হয়।
আর ইনডিউসড লেবারের সময় যেটা হয় প্রথম থেকে ব্যথা বেশি হয় এবং কন্ট্রাকশনগুলো বেশ জোরালোভাবে শুরু হয়। এই ব্যাথা সহ্য করা কষ্টকর হয়ে পরে এবং এজন্য ব্যাথানাশক ওষুধ লাগতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে, মায়ের জন্য বেশী সময় ধরে ব্যাথা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে যার কারনে পরবর্তীতে ফোরসেপ বা ভ্যাকুয়াম ডেলিভারির প্রয়োজন হয়। কিছু ক্ষেত্রে ইনডিউসড লেবারের সময় মাকে মনিটর করা হয়। তখন আর স্বাভাবিক হাটাচলার স্বাধীনতা দেওয়া হয় না।
লেবার কখন ইনডিউস করা হয়?
মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি এড়াতে লেবার ইনডিউস করা হয়। এখন আমরা জেনে নিব কোন কোন ক্ষেত্রে এটা করা হয়।
– ৪১ সপ্তাহের পরও যদি পেইন না উঠে
– যদি প্ল্যাসেন্টা ঠিকভাবে কাজ না করে
– মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়বেটিস ইত্যাদি।
– শিশুর বয়সের তুলনায় গ্রোথ কম হলে।
– পানি ভেঙে যাওয়ার পরও ব্যাথা শুরু না হলে।
– টুইন বা ট্রিপলেট হলে।
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে লেবার ইনডিউস করা হয় না, যেমন পূর্বে পেটের মেজর কোন অপারেশন, প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া এবং বেবী যদি ব্রিচ পজিশনে থাকে।
গর্ভকালীন সময়ে ৩৬ সপ্তাহ থেকে সাধারণত সবাই লেবারের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় এই কাঙ্খিত সময় আসে না, ইডিডি পার হয়ে যায়। একজন মা তখন নিজ থেকে, পরিবার ও আত্মীয়দের থেকে এক প্রকার চাপ অনুভব করেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ডাক্তার হয়ত আরও কিছুটা সময় দেন এবং লেবার ইন্ডাকশনের ব্যাপারে পরামর্শ দেন। অনেক মায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইডিডির আগে ইনডাকশনের প্রয়োজন হয়। লেবার ইন্ডাকশনের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত আছে। সঠিক ইনডাকশন পদ্ধতির জন্য আপনাকে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। তিনি পিভি চেক করে সার্ভিক্সের অবস্থা এবং শারীরিক অবস্থা বুঝে আপনার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতির পরামর্শ দিবেন। নিচে লেবার ইন্ডাকশনের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে:
মেমব্রেন সুইপিং
পিভি চেক করার সময় ডাক্তার সার্ভিক্স এর চারপাশে বৃত্তাকারে আঙ্গুল ঘুরিয়ে দেন। এটাকে মেমব্রেন সুইপিং বলা হয়। এর মাধ্যমে প্রোস্টাগ্লানডিনস নামক হরমোন তৈরী হয়। এই পদ্ধতির সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এটায় কোন ঝুঁকি নেই এবং এটা করতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে না। ডাক্তার ভিসিটের সময় চেম্বারে করা হয়। লেবার শুরু হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট হতে পারে তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সব সময় সবার জন্য কাজ করে না।
অক্সিটোসিন
কৃত্রিম অক্সিটোসিন হরমোন শরীরে আইভির মাধ্যমে দেওয়া হয়। ব্যাথা শুরু না হওয়া পর্যন্ত ডোজ বাড়ানো হয় এবং রেগুলার কন্ট্রাকশন শুরু হয়ে গেলে শরীরের অবস্থার সাথে এডজাস্ট করে ডোজ নিদিষ্ট করে দেওয়া হয়। অনেক সময় সামান্য অক্সিটোসিনে কাজ হয় এবং লেবার শুরু হয়ে যেতে পারে। আইভি ক্যানুলা করে হাতে লাগানো থাকে সেইসাথে মায়ের পেটে লাগানো ফেটাল মনিটরের ব্যবস্থা থাকে যা দিয়ে শিশুর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এজন্য মা স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না।
আমাদের দেশে কিছু জায়গায় সব সময় মনিটর লাগানো থাকে না এবং মায়েদের হাঁটাচলা করতে দেওয়া হয়। এভাবে লেবার ইনডিউস করা হলে ব্যাথা স্বাভাবিক ডেলিভারির চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি হয় এবং সহ্য করা কষ্টকর হয়। এজন্য তাদের ব্যাথানাশক ওষুধ দরকার হয় অনেকসময়। কনট্রাকশন বেশী হলে সেটা শিশুর হৃদস্পন্দনকে এফেক্ট করতে পারে। এরকম হলে ডোজ কমানো হয় বা ওষুধ পরিবর্তন করা হয়।
পানি ভেঙে দেওয়া/ মেমব্রেন র্যাপচার:
স্বাভাবিক ভাবে পানি ভাঙ্গার আগেই যে থলিতে এমনিউটিক ফ্লুইড থাকে তা একটা হুকের মাধ্যমে ফুটা করে পানি ভেঙে দিয়ে লেবার ইনডিউস করা হয়। এভাবে পানি ভাঙলে সার্ভিক্সে শিশুর মাথার চাপ লাগে এবং অনেক সময় লেবার শুরু হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে এর সাথে অক্সিটোসিনেরও প্রয়োজন হয়।
পানি ভেংগে দিলে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে।
প্রোস্টাগ্লান্ডিনস:
কৃত্রিম প্রোস্টাগ্লান্ডিনস হরমোন ভ্যাজাইনার মাধ্যমে দেওয়া হয় যাতে শরীর লেবারের জন্য প্রস্তুত হয় এবং লেবার শুরু হয়। এটা জেলের মত হতে পারে এবং সাধারণত ৬-৮ ঘন্টা পর পর কয়েক ডোজে দেওয়া হয়। আবার টেমপনের মতোও হতে পারে যা প্রবেশ করালে ১২-২৪ ঘন্টা পর্যন্ত হরমোন রিলিজ করে। প্রোস্টাগ্লান্ডিন পদ্ধতির জন্য আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং শুয়ে থাকতে হবে। অনেক সময় ব্যাথা উঠানোর জন্য এর সাথে অক্সিটোসিনেরও প্রয়োজন হতে পারে। এটা লেবার ইনডাকশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পছন্দনীয় পদ্ধতি কারন এর কার্যকারীতা অনেকটা স্বাভাবিক লেবারের মতোই হয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে , প্রোস্টাগ্লান্ডিন ইনডিউসড লেবারে স্বাভাবিক লেবারের মতো ব্যাথা থাকে, এর চেয়ে বেশী কষ্টকর হয় না। এই পদ্ধতিতে কিছু সাইড এফেক্ট কারও কারও হতে পারে যেমন ভ্যাাজাইনাতে অস্বস্তি, বমি, মাথা ঘোরানো বা ডায়রিয়া। তবে খুব কম ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়।
(আমাদের দেশে সব জায়গায় এই প্র্যাকটিস আছে কিনা জানা নেই। কারও কাছে এই পদ্ধতির ব্যবস্থা থাকলে বিবেচনা করতে পারেন।)
সার্ভিক্স নরম করার জন্য বেলুন ক্যাথেটার ব্যবহার
একটা টিউবের সাথে বেলুন সংযুক্ত থাকে। বেলুনটা ভ্যাজাইনা দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। বেলুনে স্যালাইন দিয়ে ফুলানো হয় যা সার্ভিক্স এ চাপ সৃষ্টি করে, সার্ভিক্সকে খুলতে সাহায্য করে। এটা ১৫ ঘন্টা পর্যন্ত রাখা হয় এবং এরপর পরীক্ষা করা হয়।
এই পদ্ধতির সাথে মেমব্রেন র্যাপচার এবং অক্সিটোসিন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
এরপর আমাদের প্রশ্ন থাকতে পারে লেবার ইনডিউস করা হলে কোন রকম ঝুঁকি আছে কি না?
লেবার ইনডিউসের সাথে কিছু ঝুঁকি থাকে।
ইনডাকশন সবার ক্ষেত্রে কাজ করে না। ৪ জনের মধ্যে ১ জনে দেখা যাবে ইনডাকশন কাজ করছে না এবং সি সেকশনের মাধ্যমে ডেলিভারী করতে হবে।
শিশু ঠিকমত অক্সিজেন পায় না বা হার্ট রেট স্বাভাবিক থাকে না। এজন্য ইনডাকশনের সময় ফেটাল মনিটর দিয়ে শিশুকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে।
জরায়ু টীয়ার এবং ডেলিভারির পর রক্তক্ষরণ বেশী হতে পারে।
যেহেতু ইনডাকশন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ডাক্তার দিয়ে থাকেন এবং সর্বক্ষন পর্যবেক্ষণ করা হয় এই সব ঝুঁকির জন্য তারা সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। ইনডাকশনের প্রয়োজন হলে অবশ্যই হাসপাতালে করাবেন। হোম বার্থ বা খুব বেশী সুযোগ সুবিধা নেই এমন ক্লিনিকে এভাবে লেবার ইনডিউস করাটা আপনার ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ফারইয়াব হাসান
আমানী বার্থ এডুকেটর এন্ড দৌলা ইন ট্রেনিং
রৌদ্রময়ী দৌলা ইন্টার্ন
Other post
You may also like
রংধনু রঙের খেলনাগুলো
ছোটবেলায় আমাদের নিকট প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বস্তুটি ছিলো, তা হলো সাত রঙের রংধনু। কারণ অধিকাংশ সময় বৃষ্টির দেখা মিললেও, বৃষ্টির পরের রংধনুর দেখা মিলতো খুবই কম। তাই যে জিনিস খুব কম দেখা যায়, সে জিনিসের প্রতি আকর্ষণও থাকে সবচেয়ে …
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …