একজন বন্ধ্যা মায়ের গল্প
১ম পর্ব
বিবাহিত জীবনে বছরের পর বছর গড়িয়ে যেতে লাগলো। বিবাহ বার্ষিকী পালন না করলেও, ক্যালেন্ডারের পাতা যখন ফেব্রুয়ারী স্পর্শ করতো, তারিখ দেখে শুধু মনে হতো, ব্যার্থতা ও একাকীত্বের আরো একটি বছর পার হলো।
মা হতে না পারার বেদনা ততদিনে আমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিলো, যদিও এতে আমার কোন হাত ছিলোনা। কিন্তু তারপরেও নিজেকে অত্যন্ত অপাংক্তেয আর রিক্ত লাগতো। ছলে ছুতোয় নির্লজ্জের মতো সমাজের সবাই চোখে আংগুল দিয়ে সারাক্ষণ দেখিয়ে দিতো, “তুমি কিসের নারী! মা হতেই পারলেনা!”
যেনো মা হবার মাঝেই নারীত্বের পূর্ণতা। নারী জীবনে মা হওয়াটাই কি সব? একজন মুসলিমাহ হিসেবে সফল হতে হলে, মা হতেই হবে, এমন কোন শর্তের কথা তো কোথাও শুনি নি!
তবে কেনো সবাই আমাকে খুঁচিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে আনন্দ পেতো?
উপরের স্বাভাবিক চেহারার আড়ালে কত অশ্রু জমা ছিলো, তা কি কেউ জানতো?
তখন আমি মোটামুটি প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম, কখনোই কাওকে “বিয়ে করছোনা কেনো?”, “বাচ্চা নিচ্ছোনা কেনো” অথবা কোনরকম ব্যাক্তিগত বিষয়ে অবান্তর প্রশ্ন করবোনা।
হ্যাঁ, গল্পটা আমার সেই সব দিনের, যে দিনগুলো আমাকে গড়েপিটে হয়তোবা অন্য এক ‘আমি’ তে পরিণত করেছে৷ যে দিন গুলো না দেখলে জীবনের অনেক নিয়ামতকে চিনতে পারতাম না।
বিয়ের প্রথম দু বছর পড়াশোনা এবং স্বামীর পোস্টিং এর চাকরিতে এক জায়গায় থিতু হওয়ায় কেটে গেছে। ধীরে ধীরে দু জনে স্বপ্নের জাল বোনা শুরু করলাম, ছোট্ট এক মানবশিশুর নরম শরীরকে বুকে জড়িয়ে ধরার আশা দিন কে দিন বাড়তে লাগলো।
এর মাঝে আমার হাজব্যান্ডের ভারতে পোস্টিং হলো। সেখানে গিয়েই বলা যায় সত্যিকারের একসাথে থেকে পুরোদস্তুর সংসার শুরু করলাম।
তখনো আমরা চাইলেই “বাচ্চা নেয়া যায়” এর মতো হাস্যকর কথায় বিশ্বাস করতাম। অল্প দিনেই সৃষ্টিকর্তা বুঝিয়ে দিলেন, অন্য সবকিছুর মতোই এটাও তাঁরই এখতিয়ারের বিষয়। মূর্খ মানুষেরা ভাবে, এতে বুঝিবা তাদের হাত আছে।
ভারতে প্রথম ডাক্তার দেখালাম। উনি একরকম হেসেই উড়িয়ে দিলেন, অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে বললেন। আমার কেনো যেনো মনে হতো, সহজে মা হতে পারবোনা, অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তখনো জানতাম না, আল্লাহ এর প্রতি সু ধারণা রাখা উচিৎ সবসময়, উনি সহজে আমাকে দেবেন না- এমন কখনোই ভাবা উচিত না।
কত জন কে দেখেছি, কতরকম সমস্যা, তাও কনসিভ করে ফেলেছে, সেখানে আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কোন সমস্যা ছিলোনা, অথচ unexplained infertility র তকমা লেগে গেলো কপালে।
ভারতের পাট গুটিয়ে দেশে আসলাম, আরো নানা শহরে বন্দরে ঘর সাজালাম, ৬/৭ বছর কেটে গেলো, সাজানো সংসার সেই শূন্যই রয়ে গেলো। আত্মীয় স্বজন এক সময় হাল ছেড়ে দিলো, ধরেই নিলো সবাই এদের আর ছেলে মেয়ে হবেনা। অনেকে করুনা মিশ্রিত চোখে তাকানো শুরু করলো।
আমার পরে যতো চাচাতো ফুপাতো ভাই বোনের বিয়ে হয়েছিলো, একে একে তাদের ঘর আলো করে সন্তান আসা শুরু হলো। বান্ধবীদের অনেকে ২য় বাচ্চার মা হয়ে গেলো৷
অনেকে আমাকে তাদের বাচ্চাদের ছবি দেখাতো না, পাছে আমি নজর দিয়ে দেই! বুঝেও না বোঝার ভান করতাম। আবার খুব বড় মনের কিছু মানুষ ছিলো, যারা নিজে থেকেই তাদের বাচ্চাকে আমার কোলে এনে দিতো…. এসব ছোটখাট ঘটনা খুব দাগ কাটতো তখন মনে।
একদিন মনে আছে, এক ননাশ বাসায় এসেছিলো নতুন বাবু নিয়ে…. আমি সে রাতে আমার রুমে দরজা বন্ধ করে খুব করে কেঁদেছিলাম। নিজের কলিজা চিরে বের করে ফেলতে ইচ্ছা করতো, মা হতে না পারার যন্ত্রণা কুরে কুরে খেতো আমায়। প্রায়ই এমন কান্নাকাটি করতাম। আমার জামাই অসহায় চেহারা নিয়ে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে।
তার দিকে তাকালে আমার কষ্ট আরো বেড়ে যেতো… শুধু মনে হতো আমার জন্যই মানুষটা বাবা হতে পারছেনা। যদিও এতে আমার তো কোন দোষ ছিলোনা, তবুও নিজেকেই দোষী মনে হতো।
ও সব সময় এমন ভাব দেখাতো যে, ছেলে মেয়ে হচ্ছেনা এই বিষয় একদমই bother করেনা। ওদিকে আত্মীয় থেকে শুরু করে যারা কাজ করতো ঘরে, তাদের বাচ্চা দেখলেও কোলে তুলে নিতো। বাবা হবার তীব্র আকাংখা তার চোখে মুখে স্পষ্ট দেখা যেতো।
এর মাঝে আমরা ছাড়া ছাড়া ভাবে বেশ কয়েক ডাক্তারকে দেখিয়েছি, নানারকম ওষুধ, ইঞ্জেকশন, বিদঘুটে সব টেস্টের ভেতর দিয়ে গেছি, কিন্তু ফলাফল সেই শূণ্যই রয়ে গেছে।
অনেকে বলা শুরু করেছে, সন্তান দত্তক নেবার কথা। কেউবা বলছিলো টেস্ট টিউব বেবির কথা। মন সায় দিতোনা, ভয় হতো নানারকম। মনে হতো আমি পারবোনা…
২য় পর্ব
২০১৬ সালে অনেক বছর পর ঢাকায় পোস্টিং হলো। জামাই একটা কোর্স করছিলো, পড়াশোনার প্রচণ্ড চাপ। ২৬০০ স্কয়ার ফিটের বিশাল বাড়িতে, ও এক রুমে দরজা বন্ধ করে দিন রাত পড়াশোনা করতো। পুরনো দিনের বাড়িটাকে শতবার গুছিয়ে, রান্না, ঘরের কাজ করেও দিনের অর্ধেক পেরোনোর আগেই সব কাজ শেষ হয়ে যেতো।
কবরস্থানের পাশে লম্বা বারান্দাওয়ালা বাড়িটায় আমি যেনো আরো একাকিনী হয়ে পরলাম। এই ক’বছর বাচ্চা হচ্ছেনা কেনো, এই দুশ্চিন্তায় পার করতে করতে, ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম। প্রতিনিয়ত যতটা না নিজের দুঃখে কষ্ট পেতাম, সকলের অযাচিত উপদেশ ও প্রশ্নবানে তার চেয়ে বেশি জর্জরিত হতাম।
যখন মন বিষন্নতার কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে যেতো, তখন ভাবতে চেষ্টা করতাম, আমার জীবনে কি কৃতজ্ঞ হবার মতোন কিছুই নেই? আমি কি এতোটাই রিক্ত, ব্যার্থ? আমার নারী জীবনের সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি কি মা হওয়া?
আমার জীবনে এখন যা আছে, তাও যদি না থাকতো! তাহলে আমি কি করতাম?
এবার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে নিলাম, অনেক ব্যস্ত করে ফেললাম নিজেকে।
নানারকম কাজে জড়াতে লাগলাম। বিয়ের পর বাচ্চা পালার আশায় কোন চাকরিতে ঢুকিনি। স্বপ্ন দেখতাম, অনেক গুলো বাচ্চা হবে আমার। অপেক্ষায় অপেক্ষায় কতগুলো বছর পার করে দিলাম। এতো বছর পর চাকরির আর ইচ্ছেও ছিলোনা, ততদিনে মানসিকতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে চাকরির কথা আর ভাবতেও পারতাম না।
তাই ভাবলাম নিজের শখ মেটাবো। এতোবছর যা যা ইচ্ছা করতো, সব করবো। খুশি থাকবো…. কিংবা বলা যায় সব কিছু ভুলে থাকার চেষ্টা করবো।
প্রথমেই ভর্তি হলাম একটি ইন্সটিটিউটের আরবী ভাষা শিক্ষার কোর্সে। সপ্তাহে দু দিনের এই ক্লাসের জন্য চাতক পাখির মতো বসে থাকতাম। আল্লাহ এর কথা এতো সুন্দর করে বলা হতো.. সহপাঠীরা এতো এতো ভালো ছিলো, তাদের ধার্মীকতায় আমি ক্রমাগত মুগ্ধ হতাম। এই একটা গ্যাদারিং এ বাচ্চা হচ্ছেনা কেনো ধরণের খোঁচাখোঁচি কেউ করতোনা আমাকে।
বরং কেউ যদি শুনতো আমার সমস্যার কথা, সাথে সাথে এসে জড়িয়ে ধরতো, দুয়া করে দিতো, নিজেদের জীবনের পরীক্ষার আর দুয়া কবুলের কথা শেয়ার করে, আমাকে আশ্বাস দেবার চেষ্টা করতো।
সারা সপ্তাহের সবচেয়ে আনন্দময় সময়টুকু কাটাতাম এরাবিক ক্লাসে। এমন পবিত্র একটা পরিবেশ ছিলো… সব বোনেরা সত্যিই আল্লাহ এর জন্য একে অপরকে ভালোবাসতো। অসম্ভব অবস্থাপন্ন থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ছাত্রীরা একসাথে পড়তো, কিন্ত বিন্দুমাত্র অহংকার অথবা হীনমন্যতা দেখিনি কারো মাঝে। সবাই একে অপরকে সম্মান করতো, একেবারে অন্তর থেকে। সালাতের ব্রেকে আমরা জামাত করে সালাত আদায় করতাম। বাসায় ফিরে বাচ্চাদের মতো করে হোমওয়ার্ক করতাম। ইসলামের অন্যরকম এক সৌন্দর্যের দেখা পেয়েছিলাম তখন।
সে সময় বাসার পাশে খুব সুন্দর হালাকা হতো। হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম হালাকায়। সময় বাঁচানোর জন্য রিকশা বা কোন যানবাহনে চড়ার চেয়ে হাঁটতেই ইচ্ছা হতো বেশী। কারন সময় বাঁচিয়ে কি করবো? সময় কাটানোর জন্যেই তো এতো বন্দোবস্ত….
তখন ফেসবুকে ইচ্ছামতোন লিখতাম, হজ্জ এর ওপর একটা গোটা বই এর পান্ডুলিপি লিখে ফেলেছিলাম, ব্লগ হিসেবে অনেকে পড়েছিলো, কিন্তু বই আকারে আনার সময় এখনো পাইনি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেনো সেই তৌফিক দেন।
এতো কিছু করার পরেও হাতে সময় রয়ে গেলো….
অঢেল সময়….
শুরু করলাম সপ্তাহে তিন দিন সাঁতার শেখা। দুপুর তিন টা বাজলেই চলে যেতাম পুলে..
তারপর শুরু করলাম ড্রাইভিং শেখা, প্রায় ভোরেই সুর্যোদয়ের পর হাঁটতে বের হয়ে যেতাম। পার্কে যেতাম..
এতো এতো ব্যাস্ত হয়ে গেলাম যে নিজের কষ্টগুলোর কথা মনে করার ‘সময়’ কমতে লাগলো।
কিন্তু একেবারে কি ভুলতে পেরেছিলাম!!
জীবনের প্রতি দৃষ্টিভংগী বদলে ফেললাম। কুরআনের একট আয়াত খুব আশা যোগাতো।
“যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাদের আমি আরো দেই….
জীবনে কৃতজ্ঞ হবার মতো কি কি আছে খুঁজতে লাগলাম। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, আরে… আমার এতো কিছু আছে! আপনজন, নিরাপদ ঘর, আরো কত কি!!
এই ক বছরে কত কিছু পেয়েছি, তারও হিসেব মেলাতাম আর ভাবতাম, আল্লাহ আমাকে এতো দিয়েছেন, এগুলো যদি না থাকতো, তবে!!
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ অনেক কৃতজ্ঞ মনের অধিকারী ছিলাম তখন, অথচ নিজের বর্তমান ঈমানের অবস্থা দেখলে করুণা হয় শুধু।
২০১৭ সালের জুন মাসে সিদ্ধান্ত নিলাম আবারো ডাক্তার দেখাবো। তখনো জানতাম না, শীঘ্রই জীবনে আমূল পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। অকল্পনীয় কিছু একটা ঘটতে চলেছে…
৩য় পর্ব
২০১৭ সালের জুন মাসে সিদ্ধান্ত নিলাম আবারো ডাক্তার দেখাবো। আম্মু হজ্জ থেকে ফিরে আমাকে খুব জোরাজোরি করতে লাগলেন, ডাক্তার দেখানোর জন্য। এবার মোহাম্মদপুর এর একজন খ্যাতিমান ইনফার্টিলিটি স্পেশালিস্টকে দেখালাম। ভিষণ ব্যস্ত তিনি,ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা সিরিয়ালে বসে থাকতে হয়৷
আমাদের অনেক রকম টেস্ট দিলেন, সব রিপোর্ট নরমাল আসলো আলহামদুলিল্লাহ। ৬ মাসের জন্য ওষুধ দিলেন, এ ধরণের ওষুধ আগেও বহুবার খেয়েছি।
চেম্বার থেকে বের হবার সময় জিজ্ঞেস করলাম, নেক্সট ভিসিটে কখন আসবো? উনি বললেন, ৬ মাসের মাঝে যদি প্রেগনেন্ট না হই, তাহলে আবার যেতে। আমি মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম। কত ছ মাস জীবনের চলে গেলো, কিছুই হলোনা, আর এই ছয় মাসের মাঝে আমি প্রেগ্নেন্ট হয়ে যাবো! কি হাস্যকর কথা,…
নানারকম কোর্স, ব্যস্ততা ইত্যাদির মাঝে ওষুধও চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ততদিনে ফ্রাস্ট্রেশনের চুড়ান্তে চলে গিয়েছি। কনসিভ করতে পারার জন্য যে যা বলতো, সবই করার চেষ্টা করতাম, শুধু শীরকী তাবিজ কবজ নেই নি কখনো।
মন কে অন্য দিকে ডাইভার্ট করার জন্য নানান কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম
হাঁটাহাঁটি করতাম, ফিজিকালি একটিভ থাকার জন্য
একজন শুভাকাংখী প্রি নেটাল ভিটামিন আনিয়ে দিয়েছিলেন দেশের বাইরে থেকে, সেটাও খাওয়া শুরু করলাম।
ডাক্তারের ওষুধ চলতে লাগলো
একজনের কাছে শুনলাম হিজামা করার কথা। সেটাও করলাম। সবচেয়ে বেশি করতাম দুয়া। উঠতে বসতে, সিজদায়, রামাদানের রাতগুলোয়, সব সময় পাগলের মতো দুয়া করতাম, পাগলের মতো সন্তান চাইতাম আল্লাহ এর কাছে। পাগলের মতো চাওয়া যে কি জিনিস, যার জীবনে এরকম সিচুয়েশন আসেনি, সে বুঝবে না।
আমার সমগ্র স্বত্ত্বা, ‘মা’ ডাক শোনার জন্য মরুভূমির তপ্ত বালুর মতো তৃষ্ণার্ত হয়ে গিয়েছিলো। বহু বছর আগে একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, নরম, তুলতুলে একটি মানবশিশুকে জড়িয়ে ধরে আছি। সেই স্বপ্ন আমি কোনভাবেই ভুলতে পারতাম না। ছোট্ট মানুষটার উষ্ণতা মনে হতো, যেনো আমার গায়ে লেগে রয়েছে।
নিজের কলিজাটা যদি দু ভাগ করে দেখানো যেতো, কি তীব্র ভাবে আমি মা হতে চাইতাম! হিজামা করার সময় আমাকে সব সময় সকল সন্ধ্যার দুয়া আর সূরা বাকারা পড়তে ও শুনতে বলেছিলেন। আরো বলেছিলেন রুকিয়ার পানিতে গোসল করতে।
সকাল সন্ধ্যার দুয়া নিয়মিত পড়তাম, সারাদিনে কত অসংখ্যবার যে, নেককার সন্তান চাওয়ার কুরআনিক দুয়াগুলো পড়তাম, তার কোন ইয়ত্তা নেই।
এভাবে ৬ মাসের ওষুধের কোর্স এর চার মাস শেষ হয়ে গেলো, পঞ্চম মাসের ওষুধ শুরু করলাম। ওদিকে আমার হাজব্যান্ড এর হঠাৎ করে এক বছরের জন্য মালয়েশিয়ায় পোস্টিং হলো। এবার মনস্থির করলাম, দেশের বাইরে যখন যাচ্ছি, টেস্ট টিউব বেবি ট্রাই করে দেখবো। অনেক বছর তো অপেক্ষা করলাম, আর কতো…
ঠিক একই সময়ে অনেক কিছু ঘটলো। দেবরের বিয়ের আয়োজন শুরু হলো, বিদেশ যাবার জন্য বাসা ছাড়ার প্যাকিং চলতে লাগলো, একসাথে একাধিক কাজের চাপে আমাদের অবস্থা তথৈবচ!
এতো পরিশ্রম শরীরে কুলোচ্ছিলোনা। শরীর টেনে টেনে সব কিছু করতে লাগলাম। ফ্লাইটের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই প্রতিদিন নিয়ম করে রাতের বেলা বমি বমি লাগতো, দুশ্চিন্তা আর পরিশ্রমের জন্যেই এমন হচ্ছিলো, ধারণা করলাম।
ফ্লাইটের দিন পুরোটা সময় প্লেনে বমি করতে করতে, বেহুশের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম মোশন সিকনেস হয়তোবা!
নতুন দেশে সরকার থেকে যে বাসা দিলো, তা আমার ঢাকার বাসার চেয়েও বিশাল, পাঁচ বেডরুমের বিশাল বাড়ি। বাসার একপ্রান্ত থেকে চিৎকার করলে, অপর প্রান্তের লোকে শুনতে পারবেনা।
সারাদিন ও অফিসে থাকতো, নতুবা পড়াশোনা করতো। আমি একা থেকে আরো আরো একা হয়ে গেলাম এই আত্মীয় পরিজনহীন দেশে।
রান্নাঘরে যখন কাজ করতাম, উপর তলা, নিচ তলা থেকে বাচ্চাদের হৈচৈ এর শব্দ ভেসে আসতো। অফিস থেকে বাবারা বাসায় আসলে, আরো এক দফা বাচ্চাদের হৈ হুল্লোড় শোনা যেতো। শুধু আমার বাসাতেই সব সময় বিরাজ করতো পিন পতন নীরবতা। আমার দম আটকে আসতো। কান্না পেতো, কিছুই ভালো লাগতো না।
ও দেশে বাইরে গেলেই দেখতাম, চারদিকে কচিকাঁচার মেলা। মালয় সরকার জনগণকে অধিক সন্তান গ্রহণে উৎসাহ দেন, তাই ওখানে সবারই ৪/৫ টা আবার কারো ৮/৯ টি করে সন্তান। যেদিকে যেতাম, আমার চোখে পরতো শুধু প্রেগন্যান্ট মেয়েদের।
সেই দিনগুলো ছিলো আমার ডিপ্রেশনের সবচেয়ে সাংঘাতিক সময়। একা একা কাঁদতাম, একদিন আক্ষরিকভাবেই ইচ্ছা হচ্ছিলো জানালার গরাদে মাথা কুটি। এতোটাই হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, আল্লাহ যেনো মাফ করে দেন আমাকে।
দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায়, সহ্যের শেষ সীমার যখন মানুষ পৌঁছে যায়, তখনই দেখা যায় আলোর রেখা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর বান্দাকে কখনো ফেলে দেন না। অন্তর থেকে নিঃসৃত দু’আ কখনো ফিরিয়ে দেন না। যিনি দু’আ করার তৌফিক দিয়েছেন, নিশ্চয় কবুল করবেন বলেই দিয়েছেন। কতজন তো দু’আ করার তৌফিকও পায় না।
আমি সাধারণত খুব ছোটাছুটি করে কাজ করতে পছন্দ করি। অথচ মালয়েশিয়ায় এসে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনা। প্রচণ্ড দূর্বল লাগে। ওদের ক্লাসের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে গিয়ে, গন্ধে কিছুই ঠিক মতো খেতে পারিনি। কোন রেস্টুরেন্টে গেলেও একই অবস্থা। আমি শুধু ভাবি, এ কোন দেশে আসলাম, এখানে খাবারের স্বাদ এতো ভয়াবহ কেনো! তবুও মাথায় আসেনি, অন্য কোন সম্ভাবনার কথা।
এভাবে নতুন দেশে বেশ কিছুদিন পার হলো, আমার শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি নেই দেখে আবু মুহাম্মদ বারবার বলতে লাগলো প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার কথা। ওর কথা হেসেই উড়িয়ে দিলাম। এও কি সম্ভব! এরপর একদিন জোর করে দোকান থেকে কিট নিয়ে আসলো। সেটাও আমি ফেলে রাখলাম, প্যাকেট থেকে বের করলামনা।
আসলে, আমার সাহসে কুলোচ্ছিলোনা… আবারো স্ট্রিপে নেগেটিভ দেখে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো না। এতোবছরে কম তো টেস্ট করিনি…..
মহান রবের কাছে দু’আ করতে হয় পূর্ণ ইয়াক্বিনের সাথে…. কেনো আমরা তা বুঝিনা?
শেষ পর্ব
প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ বেশ কিছুদিন ফেলে রাখলাম ড্রয়ারের কোনে। সাহস হচ্ছিলো না ব্যবহার করার। আবারো আশাহত হবার মানসিক শক্তি পাচ্ছিলাম না। শেষে একদিন, জানুয়ারির ১২ তারিখ রাতে ইশার সালাত পড়তে যাবার আগে ভাবলাম, টেস্ট করেই দেখি।
মুহুর্তের মাঝে স্ট্রিপে দুটো গোলাপি রেখা ভেসে উঠলো। ও আল্লাহ.. আমি আমার রবের কোন নিয়ামত অস্বীকার করবো? আমার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। চিৎকার করে আমার হাজব্যান্ড কে ডাকলাম। আমার কান্নার যেনো বাঁধ ভেঙে গেলো। সেদিন কিভাবে যে ঈশার সালাত শেষ করেছিলাম…
পরদিন সকালে উঠেই ডাক্তারের কাছে ছুটলাম, যদি ঘরের টেস্টে কোন ভুল আসে? ওরা যখন শুনলো আমার দীর্ঘ ইনফার্টিলিটির কথা, তখন তারাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো, টেস্টের রেজাল্টের জন্য৷ আলহামদুলিল্লাহ রেজাল্ট পজিটিভ আসলো। আল্ট্রা সাউন্ড করতে বলা হলো। তখনো আমার বুক ধুকপুক করছিলো, সব ঠিক আছে তো?
পাহাড়ি এলাকার একটু ঢালুতে ফ্যামিলি ক্লিনিক। সেখানে গেলাম আল্ট্রাসাউন্ড করতে। বেলা প্রায় শেষ হয়ে আসছিলো৷ দূরের পাহাড়ের গা ঝলমল করছিলো সূর্যের নরম সোনালী রোদে। ক্লিনিক বন্ধ হবার সময়, কারো ভীড় নেই। কর্মীরা সবাই বাড়ি যাবার তোরজোড় করছে।
ভাগ্যিস ডাক্তার তখনো বের হন নি। আল্ট্রা সাউন্ড করতে করতে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবুর হার্টবিট শুনবো কিনা? তারপর স্পিকারের সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে, আমার হাজব্যান্ডকেও ডাকলেন।
লাউড স্পিকারে ঘর গমগম করে উঠলো ছোট্ট একটা হৃদপিন্ডের শব্দে… আমি পাগলের মতো কাঁদতে লাগলাম, পাশের রুম থেকে একজন দৌড়ে এলো… তারা কখনো মনে হয় এরকম রোগী দেখেনি।
আমি পুরো রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এলাম। কিছু কান্না হয়, ভালোবাসার, কৃতজ্ঞতার, অবিশ্বাস্য অনুভূতির। আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
এরপর নতুন যায়গায় একাকী শুরু হলো আমার প্রেগন্যান্সির স্ট্রাগল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই অতি কাংখিত সময়ে আমাকে সবার থেকে দূরে রেখেছিলেন, অবশ্যই এতেই কল্যান ছিলো।
একাকী থাকায়, নিয়ামতের গুরত্ব আরো বেশি অনুধাবন করতে পেরেছিলাম হয়তো। এমনও দিন গেছে, বাবুর আব্বু শহরের বাইরে চলে গেছে, আমি ঐ শরীরে দিনের পর দিন একা কাটিয়েছি।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে উনিই একমাত্র ভরসার স্থল। একমাত্র রক্ষাকারী।
প্রেগনেন্ট অবস্থায় সে যাবৎকালের সবচেয়ে অসাধারণ রামাদান পেয়েছিলাম আমি। আমাদের সমাজের সামাজিকতা থেকে দূরে, রবের সান্নিধ্যে…
মালয়েশিয়ায় পুরো রামাদান মাসই যেনো এক অনন্য উৎসব। আমরা মাঝে মাঝে একেক মসজিদে চলে যেতাম তারাবী পড়ার জন্য। সুরেলা তারাবীর মূর্ছনায় নিমিষেই মিলিয়ে যেতো সারাদিনের সিয়ামের ক্লান্তি।
প্রথম দিকে লো লায়িং প্লাসেন্টা, এরপর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ইত্যাদি নানা রকম চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে জিলহজ্জ মাস শুরু হলো৷ ডেট ছিলো ঈদের এক সপ্তাহ পর। কিন্তু প্রচণ্ড ইচ্ছা হচ্ছিলো, আমার সন্তান যেনো জিলহজ্জের বরকতময় দশ দিনের মাঝে পৃথিবীতে আসে। আমার রব সেই আশাও পূর্ণ করলেন।
বছরের সর্ব শ্রেষ্ঠ দিনে, জিলহজ্জের দশ তারিখ ঈদুল আজহার দিন সকালে আমার বাবা টার জন্ম হয় কিংবা ওর আগমনের মধ্য দিয়ে আমার নতুন জন্ম হয়।
সকল প্রশংসা, শুকরিয়া ও সেজদা শুধুই আমার রবের জন্য।
——————————————————————————————————————
আমার গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো, কিন্তু আরো কিছু কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আচ্ছা, বলুন তো লেখাটির নাম, একজন “বন্ধ্যা মায়ের গল্প” – কেনো রাখা হলো?
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, যেদিন থেকে কোন মেয়ে মনে মনে মা হবার স্বপ্ন দেখা শুরু করে, সেদিন থেকেই সে একজন মা। তার সন্তান কোলে কখনো আসুক, না আসুক- তবুও সে মা। যতদিন বন্ধ্যা ছিলাম- যে আকুতি ভরা অন্তরে সন্তান চাইতাম, সেই আকুতির কি কোন দাম নেই? মাতৃত্বের অনুভূতি তো সেই তখন থেকেই প্রোথিত হয়েছিলো হৃদয়ের গভীরে।
আমার রব এর প্রতিটি সিদ্ধান্তের পেছনেই থাকে কোন না কোন উদ্দেশ্য বা হিকমাহ। যার পুরোটা হয়তো আমরা কখনোই বুঝিনা, আবার কিছু কিছু অনুভব করতে পারি।
আমার মা খুব অল্প বয়সে বিধবা হয়েছিলেন, এখন তিনি বলেন, এর মাঝেও নিয়ামাহ লুকিয়ে ছিলো। যখন জিজ্ঞেস করি, কি ছিলো সেই নিয়ামত?
তিনি অকপটে জবাব দেন, তোমার বাবাকে হারিয়ে আমি আল্লাহ কে চিনেছি। যে কারণে ইনশা আল্লাহ আখিরাতে তোমার বাবাকে অনন্তকালের জন্য পাবার আশা রাখি। এই আশা টুকু না থাকলে কবেই বিলীন হয়ে যেতাম।
আমার দীর্ঘ ইনফার্টিলিটি কি আমাকে কিছু দেয় নি?
-অবশ্যই এই “দীর্ঘ সময়” আমাকে গড়েপিটে এক অন্য ‘আমি’ তে পরিণত করেছে। জীবনের প্রতি দৃষ্টিভংগী পরিবর্তিত করেছে। বিয়ের সাথে সাথেই যদি সন্তান পেয়ে যেতাম, দু’আ করতে পারার তৌফিক, উনার সৃষ্টির অলৌকিকত্ব, অপার অনুগ্রহ কখনোই এভাবে বুঝতে পারতাম না।
গর্ভকালীন সময়েও অন্য একটি প্রাপ্তি তখন বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝতে পারি। তা হলো- আত্মীয় পরিজনের থেকে দূরে থাকা। এতো কাঙ্ক্ষিত প্রেগন্যান্সিতে সদাই শংকিত থাকতাম। প্রতি মুহুর্তেই ভয়ে থাকতাম, যদি অনাগত সন্তানের কিছু হয়ে যায়!
কেউ ছিলো না জিজ্ঞাসা করার মতো, যে কিনা সব উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারবে। তখন শুরু করেছিলাম পড়াশোনা, অনেক অনেক পড়েছিলাম তখন। সেই সাথে রিয়েলাইজ করেছিলাম, জানার আসলেই কোন বিকল্প নেই। যে জানে এবং যে জানেনা উভয়ে কখনো সমান নয়।
মালয়েশিয়াতে প্রতিটি চেকাপের সময়, নার্স লম্বা সময় নিয়ে আমাকে অনেক কিছু বোঝাতেন, বলতেন। তার সাথে নিজের পড়াশোনা যোগ হওয়াতে অনেক ভয়ই কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম, এতো ভ্যালুয়েবল প্রেগনেন্সিতেও নরমাল ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করার সাহস পেয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ৷
সমসাময়িক সময়ে আমার যেসব পরিচিতরা তখন দেশে প্রেগনেন্ট ছিলো, তাদের সাথে কথা বলে অবাক হতাম, আমাদের দেশে একটা মেয়ে মা হবার সময়টা কি অবিশ্বাস্য অন্ধত্বের মাঝে পার করে। অনেকটা চোখ বন্ধ করে সেতু পার হবার মতো করে, যার নিচে বহমান খরস্রোতা নদী!
আমার রব যখন কোন পরীক্ষা করেন তার ভেতর অনুগ্রহ লুকিয়ে থাকে, আবার যখন নিয়ামতে ডুবিয়ে দেন, তখন সে নিয়ামতের আড়ালেও থাকে পরীক্ষা।
যেমন ইনফার্টিলিটি ও প্রেগনেন্সিকালীন কষ্ট, অভিজ্ঞতা এক সময়ে পরিণত হয় অদ্ভুত এক মোটিভেশনে। দেশে ফিরে আসার পর সমমনা কয়েকজন মিলে শুরু করি এক প্রজেক্ট।
বাংলা ভাষাভাষী গর্ভবতী ও নতুন মা দের কে প্রশিক্ষিত করার প্রজেক্ট। পশ্চিমা দেশে বা ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে প্রি নেটাল এডুকেশন সরকারীভাবেই provide করা হয়। কিন্তু আমাদের মতো থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে, আপামর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এমন উদ্যোগ এটাই প্রথম।
প্রি নেটাল এডুকেশনের মূল উদ্দেশ্যটা কি জানেন?
একজন মা, যেনো তার এই নাজুক সময়, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার ক্ষমতা অর্জন করেন, নিজের ও সন্তানের জন্য কি করলে ভালো হবে ও কিসে বিপদ হবে তা যেনো বোঝেন। যেনো নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন, অপ্রোয়জনীয় সিজারিয়ান এর অপসংস্কৃতি যেনো বন্ধ হয়।
আলহামদুলিল্লাহ গত এক বছরে শত শত মা এবং তাদের স্বামীরাও অংশ নিয়েছেন আমাদের প্রজেক্টে। যাদের মাঝে রয়েছেন অনেক চিকিৎসকও! তারা নিজেরা জ্ঞান অর্জন করেছেন, নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করেছেন ও এক একজন আলোকবর্তিকা হয়ে সে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্যদের মাঝে।
কুরআনে সন্তান সন্ততিকে পার্থিব জীবনের শোভা বলা হয়েছে। সন্তান না পাওয়া যেমন পরীক্ষা, আবার সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করতে পারাও কঠিন চ্যালেঞ্জ। জীবনের কোন অধ্যায়ই নিষকণ্টক নয়।
হতে পারে আপনার মা হতে দেরি হচ্ছে, আল্লাহ চাচ্ছেন, আপনি উনার আরো বেশি ইবাদত করেন, উনার আরো নিকটে যান। ইনশা আল্লাহ আপনার দু’আ কবুল হবে। যতদিন কবুল হচ্ছেনা, সময়টা কে কাজে লাগান। অবসরকে ব্যাবহার করুন। বিশ্বাস করুন, এই কঠিন সময়টায় আপনাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে, পরবর্তী কোন সুন্দর সময়ের জন্য।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেনো আমাদের সকলকে উনার সন্তুষ্টি অর্জনের ও সন্তানদের উনার পথে বড় করার তৌফিক দেন।