এপিসিওটমি ছাড়া আমার ১ম বার মা হওয়ার গল্প
আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে গতকাল মেয়ে বাবুর মা হবার তৌফিক দিয়েছেন।আলহামদুলিল্লাহ!! আমি এই গ্রুপের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
আমার ইডিডি ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারী। ১৩ ফেব্রুয়ারিতে রাত ৮ টার দিকে হঠাৎ পানি ভেঙ্গে যায়। কিন্তু তখনো আমি ভরসা হারাইনি। ওয়েট করি পেইনের। হাজবেন্ড যেহেতু ডাক্তার তাই হসপিটালে যাইনি। সে নিজেই দোকান থেকে সব কিছু কিনে এনেছিল NVD-র জন্য।
কিন্তু সারারাত পেইনের কোন খবর নাই। হাজবেন্ড পিভি করে দেখলো। সার্ভিস একটুও ডায়ালেট হইনি। তবে সফট ছিল। এরপরও হতাশ হয়নি। নফল সালাত, সদাকা সব করেছি, যাতে আল্লাহ পাক পেইনকে খায়েরের সাথে উঠিয়ে দেন। ফজরের নামাজ পড়ার পরই সিদ্ধান্ত নিলাম ইনডাকশনের। হাজবেন্ড ইন্ডাকশন দিয়ে দিল।
১৫ মিনিটের মাথায় পেইন শুরু হলো। অসহনীয় পেইন! আহা! এই ব্যথার কাছে দুনিয়ার সবকষ্ট যেন মেকি!
আধা ঘন্টা যাবার পর কেবল ১সেমি ডায়ালেটেড। ভরসা হারাইনি। ১ ঘন্টা পর ব্যাথা চরম পর্যায়ে। হাজবেন্ড আবার পিভি করলো। আলহামদুলিল্লাহ তখন ২ ফিংগার ওপেন। এরপর আর সহ্য হচ্ছিল না। আমার আম্মা রুম থেকে বাইরে বের হয়ে চলে গেলো, সহ্য করতে পারছিলেন না। হাতে স্যালাইন ছিল তাই স্কোয়াটিং মনের মত করতে পারিনি। তবে বারবার উঠ-বস করেছি ওইসময়। এরপর চার আংগুল খুলে গেলে আর শক্তি পাচ্ছিলাম না।
হাজবেন্ড সেইসময় বারবার সবর ও সাহস দিচ্ছিলো সেটা অনেকটাই হেল্পফুল ছিল ওই নাজুক পরিস্থিতিতে। কারন ওই সময়ের ভুলভাল কাউন্সেলিং মোড় অন্য দিকে নিতে পারতো যদি আল্লাহ চাইতো। যাই হোক আলহামদুলিল্লাহ বাচ্চার মাথা যখন ২/৫ এর মত ডিসেন্ড হয় তখন আর সহ্য হচ্ছিল না। হাজবেন্ডকে বলি এপিসিওটমি দিতে। তবে ৪/৫ না হলে নাকি এপিসিওটমি দেয়া লাগেনা। এরপর মাথা যখন দেখা যাচ্ছিল একেবারে সামনে তখন কয়েকটা পুশ করতেই কোন এপিসিওটমি ছাড়াই বাচ্চাটা আমার দুনিয়ায় চলে আসে আলহামদুলিল্লাহ।
আমি আমার পুরো প্রেগন্যান্সি জার্নির প্রথম দিকে কিছুই খেতে পারতাম না, হেল্পিং হ্যান্ড ছিল, তিনবেলার রান্না, কাটা, মোছা সব করে দিতো। চারমাস অবধি কোন হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম কিছুই করিনি। পাঁচ মাস থেকে পনের মিনিটের জন্য হাঁটাহাঁটি করতাম। সেইসময় কোন হেল্পিং হ্যান্ড রাখিনি। নিজেই বাসার সব কাজ করতাম। আট মাস থেকে স্কোয়াট, কেগেল, হিপ রোটেশন সব করতাম। খেজুর তেমন খাইনি জিডিএমের আশংকায়। তবে যখন ইন্ডাকশন দেয় তখন খেজুর আর স্যালাইন বারবার খেয়েছি।
৯ মাসে নিচে বসার সময় কোন টুল ব্যবহার করতাম না। লাস্টের দুইমাস আম্মা, খাদেমা থাকলেও রান্না বান্না নিজেই করতাম। সকাল বিকাল একটিভ মুভমেন্টে থাকার চেষ্টা করতাম।বেশি বেশি দোয়া করতাম। রাতে ঘুম ভাঙ্গলেই উঠে বসে একটা দোয়া পড়ে দোয়া করতাম বাচ্চার সুস্থতার জন্য, নরমালের জন্য। আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় সবসময় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতাম এমনভাবে, যে আমার দোয়া কবুল হবেই কখনো হতাশ হইনি। সিজার, এমনকি কোন প্রকার কাটাছেঁড়াও যাতে না লাগে এই দোয়া করতাম। আল্লাহ আমায় নিরাশ করেননি। আলহামদুলিল্লাহ!!
যাই হোক, এই হলো মোটামুটি আমার প্রেগন্যান্সির জার্নি। এই গ্রুপের আপুদের পোস্ট, কমেন্ট এগুলো আমার জন্য অনেক হেল্পফুল ছিল। সবাইকে আল্লাহ পাক উত্তম প্রতিদান দিক।
সবাই আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।
আফরোজ
রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্স, ব্যাচ ১০