প্রেগন্যান্সি থেকে প্রস্তুতি নেয়ায় ডেলিভারিতে কম সময় লেগেছে
আলহামদুলিল্লাহ, আমার ইডিডি ছিল ১৮ তারিখ। ১৬ তারিখ আল্ট্রা করে জানতে পারি ফ্লুইড কম, ৭.১ … ডা: বলে, বেশিদিন অপেক্ষা করা যাবেনা। ১৯ তারিখ ভর্তি হয়ে যেতে। নরমালের চেষ্টা করবে। নাহলে সিজার লাগতে পারে।
পুরো ১ সপ্তাহ ধরে টেনশনের পরে আল্ট্রা করে ডা; দেখাই। ডা: এর কথা শুনে হতাশ হই। আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করেছি যাতে কোন কাটা ছেড়া ছাড়া নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে।
ডেট ঘনিয়ে আসার পর প্রতিদিন কান্না করে করে দোয়া করতাম যাতে সবকিছু সহজ করে দেন আমার জন্যে। ১৭ তারিখ রাত ৯ টায় হঠাত শরীর খারাপ লাগে, মিউকাস প্লাগ যায়। হাল্কা পেইন থাকে। তবে সহনীয়।
পরদিন রাত ৯ টা পর্যন্ত সেইম পেইন। মাত্রা সহনীয়। রাত ১১ টায় পেইন একটু বেশি অনুভব হইলে বাসার সবার সিদ্ধান্তে আমরা ডেলিভারি ডা: এর হসপিটালে চলে যাই রাত ১ টায়। গ্রাম থেকে শহরে গেলাম। এম্বুলেন্সে পানি ভেংগে যায়। এইদিকে পানিও কম আমার! গাড়িতেও ব্যথা আসছে যাচ্ছে।
তড়িঘড়ি করে লেবার রুমে গেলাম। ভেবেছিলাম অনেক কিছু হয়ে গেলো। কিন্তু সারভিক্স মাত্র ১ সে. মি ওপেন। আমাকে বলে, কেন আসছো?!
কিন্তু পানি ভেংগে যাওয়ায় ডা: বলে,এখন হসপিটাল থাকাই সেইফ। তো ন্যাচারালি লেবার প্রগ্রেস করুক এটা চেয়ে নরমাল স্যালাইন দেন আমাকে.. সকাল ৯ টায় এসে চেক করে নার্স দেখে, আগের মতই ১ সে.মি মাত্র। অথচ সারারাত ব্যথা ছিল, ঘুম হয়নাই। আমি হতাশ হলাম। খেজুর আর পানি খাচ্ছিলাম একটু পর পর।
৯ টায় সেলাইনে পিটোন দেয়া হয়। এরপর শুরু আসল ব্যথা। প্রায় ২ ঘন্টা পর ১.৫ সে. মি ওপেন!
চিন্তা করে দেখলাম এতো পেইনের পরেও যদি মাত্র ১.৫ সেমি হয়, ৭-৮ সে.মি হতে আমার অবস্থা কেমন হবে! আমি আর পারিনা। হাজব্যান্ডকে বলি, সিজার করে ফেলে বাসায় চলে যাব। উনি বলে দেখো ১ ঘন্টা, হাটাহাটি করো।
এইদিকে ব্যথার পরিমাণ বাড়ছেই। ডা: ১২ টায় এসে দেখে ৩ সে.মি। বার বার পিভি চেক করা কষ্টকর লাগছিল খুব। কিন্তু কিছু করার ছিল না। খুব অসহ্য ব্যাপার!
তার ১ ঘন্টা পরে নার্স এসে আবার চেক করে। বলে সুইপ করে দিয়েছি। এতোক্ষন কষ্ট করছেন না? আর কত কষ্ট করবেন? উনি বলে এখন ৪ সে.মি। হায়রে…অথচ আমার এতো পেইন লাগছিল। আমি চিৎকার করে উঠলাম উনার চেকের সময়। বললাম আর চেক করবেন না, কেমন? আমাক বলে আর করা লাগবেনা আপনাকে। এর মধ্যে ২ বার অক্সিজেনও দেয়া হয় কারন বাচ্চার হার্টবিট উঠা নামা করছিল, আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
সারাক্ষণ দোয়া ইউনুস পরতাম, শেষের দিকে এসে শুধু দোয়া করছি এই সময় যাতে আমার জন্যে সহজ ও সংক্ষিপ্ত করে দেন!
রাতে বাসা থেকে যা খেয়ে বের হয়েছি তাই-ই.. আর ভারী খাবার খাইনি। খেতে একটুও ইচ্ছা করেনাই। দুপুরেও এক পিস কেক আর পানি খেয়েছিলাম।
ব্যথার তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে, ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আশেপাশে কে কী বলে কানের মধ্যে থেমে থেমে আসছি। মনে হচ্ছে, তারা অন্য জগতে, আমি এক জগতে। তাদের কথা কিছু শুনি, আবার কিছু শুনিনা যেন।
৪ সে.মি বলার পর ৩:৩০ এ হঠাত আমার পায়খানার চাপ পায়। প্রেশার দেবার ইচ্ছা হয়। আমাকে বলে আপনি এখানেই পায়খানা করেন। আমি পারিনা..
এক সময় চাপ বাড়তে থাকে। আমি বললাম আমাকে নিয়ে যান। কোন মতে স্যালাইন খুলে নিয়ে যেতে রাজি হলো।
এতো প্রেশার আসছিল যে মাটিতে বসে পড়লাম। আমাকে বলে আপনি এভাবে আছেন কেন? বাচ্চা নিচে পরে গেলে কিভাবে কী করবো? পরে টেবিলে উঠালো। প্রচন্ড চাপ দিতে থাকলাম সমস্ত শরীর দিয়ে, বাচ্চা যে চলেই আসছে আমি বুঝে গেলাম। ডা: এসে সাইড কেটে দিলো। এরপর আর ২ চাপে ডেলিভারি হলো। আলহামদুলিল্লাহ প্রেশার দিতে আমার সমস্যা হয়নাই, সমস্ত জোর দিয়েই প্রেশার দিয়েছি। প্লাসেন্টা ছিড়ে গেছে বললো। পরে সেটা ক্লিয়ার করতে একটু কষ্ট পাওয়া লেগেছে। মনে হচ্ছিল জান কেউ হাতে নিয়ে খেলছে আমার..প্রেশার দেবার সময় নার্সরা পেটে চাপ দিচ্ছিল। তখন খুব কষ্ট লেগেছে!
আলহামদুলিল্লাহ সেলাই দেবার পরে অন্য রুমে পাঠিয়ে দিল। একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল, বেবি আগে থেকেই নিচের দিকে নামানো ছিল। ডা: ৩৫ সপ্তাহেই বলেছেন, বেবি পেলভিসে চলে আসছে। তারপরেও প্রিন্যাটাল কোর্সে দেখানো ব্যায়াম, হাটাহাটি করি। ইউটিউব ঘেটে ব্যায়াম করি। শেষের দিকে লেবার ইনডিউসের ব্যায়ামগুলো করতাম শরীর যতোটা সায় দেয়।
এসবের জন্যে আমার লেবারের সময় কম লেগেছে বলে মনে করি, নাহলে আশেপাশে অন্য আপুদের দেখে মনে হয়েছে অনেক বেশি কষ্ট সহ্য করছে তারা.. কারন শেষের দিকের সময়গুলো যেন পার হতেই চায় না.. আর আমি সারাক্ষণ শুয়ে ছিলাম স্যালাইন চলাকালীন সময়ে। ক্লান্ত ও ঘুম আসছিল খুব। পানি কম হওয়ায়, পানি ভেংগে যাওয়ায় নার্স হাটতে মানা করছিল। অন্য আপুরা সারাক্ষণ হেটেছে কঠিন ব্যথা নিয়ে!!
ডা: বেবি ডেলিভারির সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি এতো কিছু কিভাবে জানো। আমি রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্সের কথা বললাম। খুশি হলেন,
প্রিন্যাটাল কোর্স করে উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ যারা এই সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে পাশে ছিলেন।
সাইমুন
রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্স, (রেকর্ড) ব্যাচ ৯