প্রেগনেন্সিতে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব
প্রেগন্যান্সীতে সঠিক পুষ্টি গ্রহণের কথা আসলে ক্যালসিয়াম গ্রহণের কথা অবশ্যই প্রথম দিকে থাকে। ক্যালসিয়াম গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু দৈনিক এক গ্লাস দুধ আর সাথে এক বেলা ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণই কি আপনাকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম দিতে পারে?
প্রেগন্যান্সীতে একজন মায়ের দৈনিক অন্তত ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা প্রয়োজন। যদি এই পরিমাণ বাড়িয়ে ১২০০ মিলিগ্রামে নেয়া যায় তাহলে আরও ভালো হয়। তাই আপনার প্রতিদিনের খাবার ও সাপ্লিমেন্ট মিলিয়ে এই পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণ হচ্ছে কিনা এটা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু কেন আসলে এই সময় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের প্রতি এত জোর দেয়া হয়? মা ও গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের বেশ কিছু প্রভাব আছে।
মা যদি অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেন তাহলে সেটা শরীরে এমন ধরণের পরিবর্তন আনতে পারে যা প্রিএকলাম্পশিয়া হওয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রিএক্লাম্পশিয়া বা উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে গর্ভকালীন এক মারাত্মক অসুখ এবং আমাদের দেশের মায়েদের মাঝে এই জটিলতা ব্যাপক হারে দেখা যায়। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে ইথিওপিয়ার নারীদের মাঝে গর্ভাবস্থায় প্রিএকলাম্পশিয়া হতে কম দেখা গেছে কারণ তাদের খাদ্যাভ্যাসে উচ্চ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব করা বা প্রিটার্ম ডেলিভারি হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের পেশীকে সংকোচন ও শিথিল করতে সাহায্য করে এবং তাই সময়ের আগে পেশীর সংকোচনক্ষমতা কমায় যার ফলে প্রিটার্ম লেবার ও ডেলিভারি প্রতিরোধ করে।
বিশ্বজুড়ে প্রসব পরবর্তী মায়ের অসুস্থতা ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধাণ কারণ হচ্ছে প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ বা পোস্টপার্টাম হেমোরেজ যা বেশিরভাগ সময় ডেলিভারির পর জরায়ু নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার ফলে ঘটে থাকে। এই সময় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি জরায়ু দ্রুত সংকোচন করে প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সেই সাথে, বাচ্চা যদি মায়ের খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম না পায়, তাহলে তার চাহিদা পূরণে মায়ের শরীর থেকে ক্যালসিয়াম চলে যাবে যার ফলে মায়ের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার এবং পরবর্তীতে অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই কারণে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ও মায়ের খাদ্যতালিকায় ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট রাখা আবশ্যক।
এসব ছাড়াও রক্ত জমাট বাঁধতে, নার্ভে সিগনাল পাঠাতে ও গ্রহণ করতে, হরমোন নিঃসরণে ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে ক্যালসিয়াম সাহায্য করে।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের মাঝে আছে দুধ, দই, পনির ইত্যাদি ডেইরী খাদ্য, সবুজ শাক-সবজি (যেমন বাধাকপি, ঢেড়স তবে পালং শাক না কারণ এর মাঝে ক্যালসিয়াম থাকলেও সেটা শরীরে শোষিত হয় না) , কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কমলা, ডুমুর ফল (fig), চিয়া সীড ইত্যাদি। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের অন্তত দুই ঘন্টা আগে বা পরে গ্রহণ করা উচিত কারণ আয়রন ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। সেই সাথে, ক্যালসিয়াম ভালো ভাবে শরীরে শোষণ হওয়ার জন্য ভিটামিন ডি গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়। তাই ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, সূর্যের আলো গায়ে লাগাতে হবে এবং প্রয়োজনে ভিটামিন ডি লেভেল টেস্ট করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করাই সবচেয়ে ভালো। তবে যদি সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হয় তাহলে ভালো হয় উন্নত শোষণের জন্য এমন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেটায় ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে কারণ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম একসাথে কাজ করে।
–রাবেয়া রওশীন
প্রিনাটাল ইন্সট্রাকটর, রৌদ্রময়ী স্কুল