প্রেগন্যান্সিতে দাঁতের যত্ন
প্রেগনেন্সি জিনজিভাইটিস কি?
জিনজিভাইটিস হলো মাড়ির একটি প্রদাহজনিত রোগ যা দাঁতের প্ল্যাক আহরনের কারণে সৃষ্টি হয়।প্ল্যাক হলো স্বাভাবিকভাবে রংহীন,দাঁতের উপরিভাগে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গঠিত চটচটে পাতলা পর্দা(বায়োফিল্ম)।গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন,প্রোজেস্টেরন সহ বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় । হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে এ সময় মায়েদের দাঁত ও মাড়িতে কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।এ প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রায় ৫০-৭০% গর্ভবতী মা মাড়ির প্রদাহে আক্রান্ত হন।মাড়ির এ প্রদাহকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় প্রেগনেন্সি জিনজিভাইটিস বলে।
কেনো হয়?
আগেই হরমোনাল পরিবর্তনগত কারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে যে সকল মায়েরা মর্ণিং সিকনেস এ আক্রান্ত হন তাদের অনেকেই নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে চান না কারণ টুথপেষ্টের গন্ধে অনেকেরই এ সময় বমির উদ্রেক হয়।আর এ সুযোগে দাঁতে প্ল্যাক জমতে থাকে।প্ল্যাকে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মাড়িতে আক্রমণ করে,প্ল্যাক আরো শক্ত হয়ে ডেন্টাল ক্যালকুলাস বা দাঁতের পাথর তৈরি করে এবং মাড়িতে প্রদাহ ও রক্তপাত সৃষ্টি করে। সাধারণত যে সকল মায়েরা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের দূর্বল ইমিউনিটিজনিত রোগে ভোগেন এবং যারা এন্টি-এপিলেপটিক ড্রাগ,স্টেরয়েড ইত্যাদি গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
কখন হয়?
অন্য যে কোনো সময় হলেও গর্ভাবস্হায় ২য় থেকে ৮ম মাসে এটি বেশি দেখা যায়।
লক্ষণসমূহ
মাড়ির রং লাল হয়ে যাওয়া
দু দাঁতের মাঝের অংশের মাড়ি ফুলে যাওয়া
মাড়ি ব্যাথা করা
মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
দূর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস (হ্যালিটোসিস)
ঠান্ডা বা গরম খাবারে দাঁত শিরশির করা
দাঁত নড়ে যাওয়া
প্রতিকারের উপায় কি?
গর্ভাবস্থায় যেমন নিয়মিত একজন স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন তেমনি একজন দন্ত চিকিৎসকের কাছ থেকেও দাঁত ও মুখ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা করা যাবে না এমনটা ভেবে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বন্ধ রাখবেন না।কারণ কিছু কিছু দাঁতের সমস্যার প্রভাব ফিটাসের উপরও পড়ে থাকে।তাই আপনার ডাক্তার আপনাকে চেকআপ করেই জানাতে পারবেন আপনার দাঁতের কন্ডিশন। আর একটা কথা দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় আপনার প্রেগনেন্সির মেডিকেল ফাইলগুলো সাথে নিয়ে যাবেন যাতে সেসব দেখে ডাক্তার আপনার দাঁতের চিকিৎসার ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।মাড়ির প্রদাহের ক্ষেত্রে স্কেলিং করলে প্রদাহজনিত সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং পাশাপাশি কিছু মেডিকেশনও প্রেসক্রাইব করা হয়।তবে কোন পেশেন্ট এর ক্ষেত্রে কি ট্রিটমেন্ট বা মেডিসিন দিতে হবে সেটা ডাক্তারই নির্ধারণ করবেন।সর্বোপরি দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে নিচের পরামর্শগুলো ফলো করা যেতে পারে–
বছরে ১-২ বার স্কেলিং
প্রতিদিন ২ বার ব্রাশ করুন
দুই দাঁতের মাঝে আটকে থাকা খাবার পরিষ্কার করার জন্য সুতা টাইপ ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন।
খাওয়ার পর জিহবা পরিষ্কার রাখুন ( টাং ক্লিনার বা সফট ব্রিসলের ব্রাশ ইউজ করা যেতে পারে)
মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন
যেকোনো ধরনের তামাক ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকুন।
ডা. নিগার বিনতে আতাউর,
চীফ কনসালট্যান্ট,
স্পেশালাইজড ডেন্টাল কেয়ার