দৌলা ডায়েরী –১১
নভেম্বর ২০২২
নভেম্বর মাসে ফেনী থেকে পেয়েছি ব্যাচ ৮ এর ফারজানা ইয়াছমিন আপুকে। আপু ভিব্যাক আশা করছিলেন। এবং ফেনীতেই চাচ্ছিলেন। আপুর নরমাল সাপোর্টিভ ডাক্তার প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না, এবং সেটা যুক্তিযুক্তও বটে কারণ ঢাকার বাইরে সব রকমের ফ্যাসিলিটি থাকে না। কিন্তু আপুর অনেক রিকোয়েস্টে সব ঠিক থাকলে চেষ্টা করবেন বলে জানান।
আপু ভিব্যাকের প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং যথাসাধ্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তবে হিমোগ্লোবিন লেভেলটা আগে থেকেই কিছু কম ছিল, শেষ দিকে আরো কমে যায়। ডাক্তার উনাকে প্রয়োজনে ডেলিভারির পর ব্লাড দেয়া হবে জানান, আমার থেকে পরামর্শ চাইলে আমি রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্সের ডাক্তার ইন্সট্রাক্টরদের সাথে কথা বলে আয়রন ইঞ্জেকশন নেয়ার সাজেশন দেই। আমার নিজেরও এটাই মনে হচ্ছিল যে ভালো হবে। তবে আপু সম্ভবত আর আয়রন ইঞ্জেকশন নেননি।
আপুর ডেটের আগেই ন্যাচারালি পেইন শুরু হয় তবে প্রগ্রেস কম ছিল। বেশ দীর্ঘ লেবার ছিল। অবশেষে যখন আলহামদুলিল্লাহ ভিব্যাক হয় তখন বেশ কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাবুটার ব্রিদিং প্রবলেম হচ্ছিল বলে NICU তে রাখা হয়। এদিকে আপুর ব্লাড যাচ্ছিল বেশি এবং বন্ধ হচ্ছিল না বলে ব্লাড দেয়ার জন্য অন্য হাসপাতালে শিফট করা হয়। কয়েক ব্যাগ ব্লাড দেয়া হয় আপুকে। পরবর্তীতে এক আল্ট্রাসাউন্ড চেকাপে আগের সিজারের সেলাইয়ের কিছুটা খুলে গেছে এমনটা দেখা যায়। হাসপাতাল থেকে একজন ডাক্তার জানান অপারেশন লাগবে আরেকজন বলেন এটা নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। এই কথায় আপু মানসিকভাবে খুবই ভেংগে পড়েন এবং এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে দেখতে চান। এ সময় আমার থেকে সহযোগিতা চান যেন আমি রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্সের ইন্সট্রাক্টর ডাঃ ফাতেমা ইয়াসমিন আপুর থেকে উনার বিষয়টা সম্পর্কে জেনে আপুর মতামত জানাই, যেহেতু দুই জন ডাক্তার দুই রকম বলছেন। ডাঃ ফাতেমা আপুও বলেন এমন ক্ষেত্রে নিজ থেকে ঠিক হয়ে যেতে পারে আবার না-ও পারে। এছাড়াও এনিমিয়া ও প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের মাঝে সম্পর্কটা আপু বুঝিয়ে বলেন যা নিয়ে মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার বিডি পেইজে একটি লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কেউ পড়ে না থাকলে পড়তে পারেন এখানে ক্লিক করে।
ভিব্যাকের জন্য মায়ের নিজের অনেক মানসিক জোর প্রয়োজন হয়। এছাড়াও আশপাশের মানুষের অনেক সহযোগিতা দরকার হয়। কোন কিছু অন্যরকম হয়ে গেলে আমাদের দেশে মাকে দোষারোপ করা হয় সবচেয়ে বেশি৷ ডেলিভারি পরবর্তী সময়টা তাই খুব নাজুক কাটে মায়ের। আপু পরে আর অপারেশন না করে কিছুটা রিস্ক নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। আলহামদুলিল্লাহ দুই সপ্তাহ পরের আল্ট্রাসাউন্ড এ দেখা গেছে সব ঠিক হয়ে গেছে।
রাবেয়া রওশীন,
ভার্চুয়াল দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল