বাচ্চাদের জন্ডিস
বাচ্চাদের জন্ডিসকে আমরা দুইটা ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারি আলোচনার সুবিধার্থে।
১/নিউবর্নদের জন্ডিস।
২/বাচ্চাদের ভাইরাল হেপাটাইটিস।
শুরুতে আমরা নিউবর্ন জন্ডিস নিয়ে আলোচনা করবো।
নিউবর্নদের জন্ডিসের দুইটা টাইপ আছে।
ফিজিওলজিকাল/সাধারণ জন্ডিস।
প্যাথোলজিকাল/রোগজনিত জন্ডিস।
ফিজিওলজিকাল জন্ডিস
কখন বুঝবো
√ জন্মের ২য়-৩য় দিনে দেখা দিবে।
√ জন্ডিসের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে।
√ ৫ম-৬ষ্ঠ দিনে সবচেয়ে বেশি থাকবে।
√ সাধারণত চোখের সাদা অংশ,মুখ,বুক,পেট এসব পর্যন্ত যেতে পারে,কিন্তু কখনোই হাত/পায়ের তালুতে যাবে না।
√ ৭ম-৮মদিনের মধ্যে সাধারণত কমে যায় (টার্ম বেবিদের ক্ষেত্রে) আর ১০ম-১১তম দিনে কমে যায় প্রিম্যাচুর বেবিদের ক্ষেত্রে।
করণীয়
√ এটা খুব সাধারণ জন্ডিস।ঘাবড়ানোর কিছু নেই ।
√ ফিজিওলজিকাল জন্ডিসের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা বাচ্চাকে ঘন ঘন ব্রেস্ট ফিডিং /ফিডিং করনো।
√ আগে রোদে দেওয়ার কথা বলা হলেও,রিসেন্টলি রোদের সাথে এর মাত্রা কমার তেমন সংযোগ নেই বলে জানা যায়।চাইলে সকালের মোটামুটি হালকা রোদে রাখা যেতে পারে।খেয়াল রাখতে হবে,শীতকাল হলে বাচ্চার জন্য কিন্তু ভোর/সকালের বাতাস টা আরও ক্ষতিকর হতে পারে।
প্যাথোলজিকাল/রোগজনিত জন্ডিস
-এটি কিছুটা সিরিয়াস ধরনের। অবশ্যই অবশ্যই দেরী না করে বাচ্চাকে হাস্পাতালে নিতে হবে।
কারণ
প্যাথোলজিকাল জন্ডিসের বেশ কিছু কারণ রয়েছে।এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে বাচ্চা ও মায়ের ব্লাড গ্রুপ এর অমীল।যেমন –
√বাচ্চার গ্রুপ “এ/বি”, মায়ের গ্রুপ” ও”।
√বাচ্চার গ্রুপে পজিটিভ,মায়ের গ্রুপ নেগেটিভ
এছাড়াও গর্ভাবস্থার কিছু ইনফেকশান,বাচ্চার লিভার জনিত সমস্যা,বাচ্চার লোহিত রক্তকনিকার সমস্যা ইত্যাদি কারণ ও বিদ্যামান।
কিভাবে বুঝবো
√জন্ডিস জন্মের ২৪ঘন্টার মধ্যেই দেখা দিবে।
√জন্ডিসের মাত্রা খুব দ্রুত বাড়তে থাকবে।
√সমস্ত শরীর,এমনকি হাতের তালু,পায়ের পাতা পর্যন্ত হলুদ হয়ে যাবে।
√বাচ্চা খুব অসুস্থ থাকবে।খেতে অনীহা হবে,ঝিমিয়ে থাকবে,অতিরিক্ত জ্বর এসব লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
√বাচ্চার প্রস্রাব অতিরিক্ত হলুদ থাকবে,পায়খানা একদম ফ্যাকাশে।
√টার্ম বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১৪দিনের বেশি আর প্রিম্যাচুরদের ২১দিনের কাছাকাছি জন্ডিস থাকবে।।
করণীয়
√কোন ধরণের দেরী না করে অতি দ্রুত হাস্পাতালে নিতে হবে।বাসায় বসে কমার অপেক্ষা করা বোকামি হবে।
√দুই ধরণের ট্রিটমেন্ট অপশান থাকে-
~ফটোথেরাপি(বাচ্চাকে বিশেষ ধরনের লাইটের নিচে রেখে এই ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।)
~এক্সচেনজ ট্রান্সফিউশান।(সংক্ষেপে বলতে গেলে যেসব বাচ্চার জন্ডিস রক্তজনিত জটিলতায় হয়ে থাকে তাদের এ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।এই পদ্ধতিতে বাচ্চার দুষিতে ব্লাড সম্পূর্ণ বের করে ডোনারের ব্লাড শরীরে দেওয়া হয়)।
প্যাথোলজিকাল জন্ডিস ১০০% ভালো হবে যদি সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।চিকিৎসার সামান্য দেরীতে বাচ্চার ব্রেইন ডিফেক্ট সহ অন্যান্য অনেক পারমানেন্ট ডেমেজ করতে পারে।তাই মা হিসেবে এই বিষয়ে নলেজ রাখা এবং সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
বাচ্চাদের জন্ডিসের অন্যতম কমন কারণ ভাইরাল হেপাটাইটিস। মূলত হেপাটাইটিস এ, বি ভাইরাস দিয়ে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া হেপাটাইটিস সি, ই ও বিদ্যমান।
লক্ষণ
√শরীরে হলদে ভাব আসার আগেই কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাবে। যেমন-জ্বর, গা ব্যাথা, উপরের পেট ব্যাথা,বমি,খুধামন্দা ইত্যাদি
√চোখের সাদা অংশ প্রথমে হলুদ হবে। এরপর জন্ডিসের তীব্রতা অনুযায়ী শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যাবে।
√প্রস্রাব হলুদ হবে, পায়খানা হবে ফ্যাকাশে।
করণীয়
√বেশির ভাগ কেসে বাসায় চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব। তবে অবশ্যই একজন ডাক্তার এর সাথে কন্সাল্ট করে জন্ডিসের মাত্রা বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।
√ভাইরাল হেপাটাইটিস এর জন্য কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। বরং এই রোগে রোগীকে প্যারাসিটামল সহ অন্যান্য ওষুধ ব্যবহারে রেস্ট্রিকশান দেওয়া হয়।
√বডিতে ফ্লুইড ব্যালেন্স অবশ্যই ঠিকঠাক মেন্টেইন করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি সহ অন্যান্য তরল খাবার খেতে দিতে হবে।
√সব ধরনের খাবার খাওয়া যাবে(হাই ক্যালোরি ডায়েট মাস্ট)।
√পায়খানা যেন নরম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
√অবশ্যই অবশ্যই পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। এটাই আসল চিকিৎসা।
√কোন ধরনের হারবাল, হোমিও বা অন্য কোন কবিরাজী টোটকা নেওয়া যাবে না। এতে সাধারণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
কখন হাস্পাতালে ভর্তি হতে হবে?
√অতিরিক্ত জ্বর,বিলিরুবিন মাত্রা অনেক বেশি।
√অতিরিক্ত বমি, মুখে কোন কিছু খেতে না পারা।
√প্রচন্ড পেট ব্যাথা, পেট ফুলে যাওয়া।
√ স্বাভাবিক সেন্সে না থাকা/আবোল তাবোল বলা ইত্যাদি।
– ডাঃ মায়িশা সামিহা
গ্রুপ মডারেটর, প্রিনাটাল কোর্স