দৌলা ডায়েরী – ৮
জুন ২০২২
৫ম ব্যাচের মারওয়া আপু। আপু থাকেন চিটাগাং এ, বয়স বেশ কম, ১ম প্রেগন্যান্সি। প্রথমবার আপুর সাথে আলাপে বুঝতে পারলাম আগে একটা মিসক্যারেজ আছে তাই আপু এক্সারসাইজের প্রতি একটু ভয় পেতেন, যদিও এই প্রেগন্যান্সিতে সুস্থ ছিলেন। আমি উনাকে জানাই যে বর্তমান প্রেগন্যান্সিতে সুস্থ থাকলে উনি এক্সারসাইজ করতে পারেন। তবে উনি যেহেতু একটু ভয় পেতেন তাই কবে থেকে আরেকটু একটিভলি এক্সারসাইজ করবেন সেটা অনেকটা উনার উপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ডায়েট চার্টটা দেখে দিয়েছিলাম উনার।
আপুর সবকিছু আলহামদুলিল্লাহ ভালোই ছিল। তাই ৩৭ সপ্তাহ থেকে ব্যায়ামের প্রতি আরেকটু জোর দিতে বলি, খেজুর খেতে বলি। এবার মাশাল্লাহ আপু সিরিয়াসলি সব ব্যায়াম ও হাটা শুরু করেন।
শেষ দিকে এসে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন হওয়া, বিভিন্ন রকম অস্বস্তি হওয়া ইত্যাদি কমন ব্যাপারগুলো ছিল। এর মাঝে ডিউ ডেটের ২দিন আগে থেকে আপুর মিউকাস প্লাগ রিলিজ হতে থাকে, ব্র্যাক্সটন হিক্স চলছে। এভাবে ডেট পার হয়ে যায়। এই সময় সবাই একটু কনফিউশানে পড়ে যায়, আলহামদুলিল্লাহ আমি কৃতজ্ঞ আপুর ডাক্তারের প্রতি, উনি ডিউ ডেট সম্পর্কে কিছু বলেননি। শুধু বলেছেন লেবারের সিম্পটম দেখা দিলে যেতে।
আমি আপুকে বলি বেবি মুভমেন্ট খেয়াল রাখতে, সবর করতে ও নিউট্রিশন, ব্যায়াম যা করছেন সব করে যেতে। এভাবে ডিউ ডেটের দুই দিন পার হওয়ার পর আপু নক দেন যে পরিচিতরা বলছে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে। আমি তখন বললাম যোগাযোগ করতে তবে একই সাথে ডাক্তারের মনোভাব বোঝার জন্য যে উনি তাড়াহুড়ো করেন নাকি অপেক্ষা করার কথা বলেন সেটা খেয়াল করতে।
আলহামদুলিল্লাহ আপুর ডাক্তারের প্রতি আমি আবারও কৃতজ্ঞ যে উনি জানান আরো ৩ দিন দেখার পর পেইন না উঠলে আল্ট্রা করে দেখা করতে। আপু উনার সাথে ফোনে কথা বলেন। আলহামদুলিল্লাহ যে উনি বলেননি তখনি ইন্ডাকশন দেয়ার কথা বা সিজারের কথা।
আপু লাস্ট আল্ট্রা করেছিলেন ৩৬ সপ্তাহে এবং ফ্লুইড লেভেল ছিল ১১ এর মতো। হাইড্রেশন ঠিক মতো মেইনটেইন করে সবরের সাথে অপেক্ষা করতে বললাম, যেহেতু মিউকাস প্লাগ রিলিজ হয়েছে, ব্র্যাক্সটন হিক্স হচ্ছেই, এর মাঝে ঘন ঘন টয়লেটও হয়েছে। সব ভালো সাইন মাশাল্লাহ।
ডিউ ডেট পার হওয়ার ৪দিন পর সকাল থেকে আপুর পেইন অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি স্ট্রং হয়ে আসে। এবার নির্দিষ্ট গ্যাপে আসতে থাকে। বর্ণনা শুনে বুঝলাম তখনও ল্যাটেন্ট ফেইজ চলছে। এরপর রাত দশটার দিকে জানান ৫/৬ মিনিট পর পর পেইন আসছে, ৪০-৫০ সেকেন্ড থাকছে। রাতটা দেখবেন কিনা। বললাম, এখনো একটিভ ফেইজ শুরু হয়নি, গাড়ি রেডি রেখে বাসায় থাকতে পারেন। মাশাল্লাহ আপু নিজেই বলেন যে লেবার তো সময় লাগে, রাতটা দেখি। এর মাঝে আমাকে ফ্রিকোয়েন্সী, ডিউরেশন এর ছবি দিতেন আপডেট রাখার জন্য।
সকালে আপু হাসপাতালে যান। ১০টার দিকে ফুল ডাইলেশন হয়ে যায়। কিন্তু আপুর পুশিং স্টেজ একটু লং হয়। সাড়ে ১২টার দিকে বেবি ডেলিভারি হয়, আলহামদুলিল্লাহ। বিকাল ৪টার দিকে আপু নিজেই আমাকে জানান।
আলহামদুলিল্লাহ কোন ইন্ডাকশন ছাড়া ডিউ ডেটের পর ন্যাচারালি লেবার শুরু হয়। আপুও খুব সাহসিকতার সাথে প্রায় একদিন বাসায় থেকে পেইন ম্যানেজ করেন। উনার হাজব্যান্ডও বেশ একটিভ রোল নিয়েছিলেন। ডেট পার হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের মানুষদের বোঝানোর প্রয়োজন হয়, লেবার পেইন নিয়ে ঘরে থাকার জন্যও সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। হাজব্যান্ডের প্রিনাটাল নলেজ রাখা এই জন্য খুব দরকার।
রাবেয়া রওশীন
ভার্চুয়াল দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল