দৌলা ডায়েরী – ৭
মে ২০২২
৩০শে মে ব্যাচ ৬-এর ফাহমিদা তামান্না আপুর নরমাল ডেলিভারিতে বাবু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। 🌷
আপুর মা নেই, কে উনাকে এইসব ব্যাপারে জানাবে ভেবে বেবি ট্রাই করতেই ভয় পাচ্ছিলেন। প্রিনাটাল কোর্স করে তাই অনেক খুশি ছিলেন মাশাল্লাহ। দৌলা সার্ভিসটা পাওয়ার জন্য অনেক আগ্রহী ছিলেন, এমনকি উনার হাজব্যান্ডও নাকি দুয়া করেছিলেন যেন এই সার্ভিসটা পাওয়া যায়!! সার্ভিসটা কনফার্ম হওয়ার পর একদিন আমাকে মেসেজ করে বলেছিলেন প্রিনাটাল কোর্স থেকে জেনে এখন নিজের রিপোর্ট দেখে নিজেই বুঝতে পারেন কী সমস্যা আর কী করতে হবে, মাশাল্লাহ।
যাই হোক, আপুর ডিউ ডেট ছিল ৩০শে মে। ২৯শে মে উনার মাস্টার্স ফাইনালের শেষ পরীক্ষা!! ২৭শে মে রাত ২টার দিকে উনার মিউকাস প্লাস রিলিজ হয়, সাথে ওয়াটারি ডিসচার্জ। যথারীতি ঘাবড়ে যান, পরীক্ষাটা দিতে পারবেন কি না ইত্যাদি টেনশনে পরে যান। বললাম, যেটা রিলিজ হচ্ছে পানি কি না সেটা বুঝতে চেষ্টা করেন, পানি হলে এডমিশন নেয়া লাগবে। ২৮শে মে সন্ধ্যার দিকে জানান, পানি মনে হচ্ছে না। এর ১ ঘন্টা পর আবার জানান খুব হালকা পিরিয়ডের মতো পেইন হচ্ছে। আমি বললাম পেইনের ফ্রিকোয়েন্সী, ডিউরেশন দেখতে, স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে, টিচারদের সাথে কথা বলে রাখতে, হাসপাতালে যাওয়ার ব্যাগ আর গাড়ি রেডী রাখতে যেন প্রয়োজনে যাওয়া যায়। কয়েক ঘন্টা পরে জানালেন পেইন বেশ গ্যাপে আসছে, অনিয়মিতভাবে, ম্যানেজেবল আর টিচার বলেছেন কষ্ট করে হলেও ১/১ঃ৩০ ঘন্টার জন্য উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দিতে, নাহলে পরের বছর আবার ফর্ম ফিলাপ করতে হবে।
আপু স্বাভাবিক কাজ কর্ম করলেন, পরীক্ষার প্রিপারেশনও নিলেন। পরদিন ২৯শে মে ল্যাটেন্ট ফেইযের লেবার নিয়ে ৪ঘন্টা ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে আসলেন!!!!
পরীক্ষা শেষে আমাকে খুব এক্সাইটেড হয়ে মেসেজ দিলেন যে পরীক্ষার মাঝে মাত্র ৩/৪ বার পেইন এসেছিল, পরীক্ষাও খুব ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, সব কমন ছিল। বললাম, আপনি মেন্টালি এখন লেবারের জন্য প্রিপেয়ার না তাই প্রগ্রেস স্লো হয়ে গিয়েছিল! বিকালে রেস্ট নিয়ে উঠে বার্থ বলের এক্সারসাইজ করতে পরামর্শ দিলাম।
সেই রাতেই আস্তে আস্তে আপুর পেইন বাড়ে। একসময় ৫ মিনিট পর পর পেইন এসে ১ মিনিটের মতো স্থায়ী হচ্ছিল। আমার সাথে ফোনে কথা বলার মাঝেই একবার পেইন আসে, আমি এপাশ থেকেও বুঝতে পেরেছিলাম যে অনেক পেইন হলেও আপু ভালোই সামলাতে পারছেন মাশাল্লাহ। কোন চিৎকার, চেঁচামেচি নেই, প্যানিক হওয়া নেই, শান্তভাবে ডিপ ব্রিদিং করছিলেন। বললাম এমনটা ১/১:৩০ ঘন্টা ধরে হলে হাসপাতালে যাওয়া উচিত। মাশাল্লাহ এতক্ষণ পর্যন্ত পুরো সময় উনার হাজব্যান্ড উনাকে সাপোর্ট দিচ্ছিলেন। তাই আপু ভয় পাচ্ছিলেন হাসপাতালে যাওয়ার পর হাজব্যান্ডকে পাশে পাবেন না হয়ত। সাহস দিয়ে বললাম, হাজব্যান্ড পাশে না থাকলেও আপনি পারবেন ইনশাআল্লাহ। (আল্লাহ এই সময় মায়েদের মাঝে বাচ্চাকে বের করার জন্য একটা শক্তি দিয়ে দেন।)
হাসপাতালে আপু বার্থ বলও নিয়ে গিয়েছিলেন। মূলত সেটা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। তবে হাসপাতালে যাওয়ার পর সাধারণত যা হয়, রুটিন প্র্যাকটিস হিসাবে পিটোসিন দেয়া, নড়াচড়া করতে না দিয়ে শুয়ে থাকতে বলা, ডেলিভারির সময় এপিসিওটমি দেয়া ইত্যাদি এড়ানো সম্ভব হয়নি। ভোরের দিকে বাবু হয়। বাবুর ওজন হয়েছে ৩.৮ কেজি মাশাল্লাহ।
৩য় দিন বুকের দুধ আসে। মা ও বাবু ভালো আছে, আলহামদুলিল্লাহ! ডেলিভারির পর আপু বলছিলেন উনার আত্মবিশ্বাস এখন আরো দৃঢ় হয়েছে, মাশাল্লাহ।
রাবেয়া রওশীন
ভার্চুয়াল দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল