নরমাল ডেলিভারি নিয়ে ভয় কমে গিয়েছিল
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Birth Story, Others
- Date October 18, 2023
- Comments 0 comment
আসসালামু আলাইকুম। আমি প্রিনেটাল কোর্স এর দ্বিতীয় ব্যাচ এর student। আমি সেলাই কোর্সের ও একজন studentন্ ছিলাম। আমার নরমাল ডেলিভারির অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। জাযাকাল্লাহ খায়ের, কোর্সগুলোর মাধ্যমে আমি উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
পুরোদমে শ্রাবণ হলেও বাইশে জুলাই সকাল বেলাটা ছিল চোখ ধাঁধানো। ফজর সালাত পড়ে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে বাইরে ঝকঝকে নীল আকাশ দেখে ভাবলাম, আল্লাহ চাইলে মুহাম্মাদ পৃথিবীতে আসার জন্য আজকের দিনটা সুন্দর একটা দিন হতে পারে!
জমজমের পানি দিয়ে ভালভাবে গোসল করে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করলাম এবং দোয়া করলাম আল্লাহ যেন সবকিছু সহজ করেন। হস্পিটাল ব্যাগ আগেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। তাও আরেকবার চেক করে দেখলাম। মুহাম্মাদ কে প্রথমবার নেওয়ার জন্য কাঁথা, ন্যাপি,জামা সব আলাদা করে ব্যাগে সবকিছুর উপরে রেখে হাজব্যান্ডকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিলাম যেহেতু হস্পিটালে শুধুমাত্র আমরা দুজন ই যাচ্ছি।
ভাত খেয়ে রেডি হয়ে নিলাম। যদিও তখন ও আমার কোন পেইন নেই। মুহাম্মাদ এর বাবা বাবুর তাহনীক এবং আমাকে খাওয়ানোর জন্য বেশ কিছু খেজুর আলাদা করে বিচি ছাড়িয়ে নিল আর মাল্টার জুস করে দিল। জমজমের পানি এবং আলাদা করে নরমাল পানি নিলাম সাথে করে।
ঈদুল আজহার পরের দিন সেই সাথে লকডাউন হওয়ায় কোন উবার পেলাম না। বাসা থেকে বের হয়ে বেশ কিছুদূর হেঁটে যেতে হল। সিএনজি পেলাম একটা আলহামদুলিল্লাহ। লেবার রুমে বিসমিল্লাহ বলে ঢুকলাম আর মনে মনে নিয়তটা ও ঠিক করে নিলাম। “রাব্বি, আমি নরমাল ডেলিভারি চাই, যেন উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারি, যেন দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারি।”
লেবার রুমে খেজুর এবং পানি সাথে করে নিলাম। তখনো আমার কোন পেইন নেই। কর্তব্যরত ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন কি খেয়ে এসেছি। তারপর এনেমা দেওয়া হল। এনেমা দেওয়ার পাঁচ মিনিট পরেই প্রবল বেগে বাথরুম হয়। এরপর স্যালাইন দেওয়া হল। সময় তখন সকাল দশটা। স্যালাইন দেওয়ার কিছু সময় পরেই ধীরে ধীরে পেইন শুরু হয়। একঘন্টা পরে ডাক্তার এসে পিভি চেক করলেন।
জিজ্ঞেস করে জানলাম এক আংগুল পরিমাণ খুলেছে। প্রিনেটাল এর নোটস গুলো ভালভাবে পড়া ছিল। সময় হিসেব করে দেখলাম ইনশাআল্লাহ সন্ধ্যা ছয়টা বা সাতটায় মুহাম্মাদ কে দেখতে পাব। যদিও তখনো জানতাম না ছেলে নাকি মেয়ে। এর মধ্যেই চলছে খেজুর খাওয়া, জমজমের পানি খাওয়া, সাধারণ পানি খাওয়া, হাঁটাহাঁটি। জিকির আর দোয়া করছিলাম। তখনো ব্যাথা সহনীয় পর্যায়ে।
দুপুর দেড়টার দিকে প্রথমবার ব্যাথার তীব্রতায় নিজের অজান্তেই শব্দ করে কেঁদে ফেলি। লেবার রুমে আমি সহ মোট চারজন ছিলাম ডেলিভারি পেশেন্ট। পাশের বেডের আপুটা বললেন দোয়া ইউনুস পড়তে। উনার এটা চার নাম্বার বাচ্চা। হাজব্যান্ড বাসায় এসে দুপুরের খাবার নিয়ে গেলো।
আমার বোন লেবার রুমে ঢুকে আমাকে ভাত খাইয়ে দেয়। পানি আর গরম দুধ ও খাই। ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তখন “আল্লাহ ” ছাড়া আর কোন দোয়া বা জিকির করা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। এর মধ্যে আরো কয়েকবার পিভি চেক করা হয়। আসরের পরে ব্যাথা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়।
“আল্লাহ ” ভুলে তখন আমি রীতিমতো চেঁচাচ্ছি। শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে চিৎকার করছি। আমি সচেতনভাবেই চেষ্টা করছি অন্তত “আল্লাহ ” বলতে কিন্তু চিৎকার ছাড়া আমার মুখ দিয়ে আর কিছুই বের হচ্ছিল না। তখন উপলব্ধি করতে পারলাম মৃত্যুর সময় যেন কালিমা পড়তে পারি, এই দোয়া কেন করতে হবে। সম্পূর্ণ দশ সেন্টিমিটার ডায়ালেশন হওয়ার পরে আমাকে ডেলিভারি বেডে তোলা হল।
আমাকে হাঁটু ভাঁজ করে পুশ করতে বলা হল। তখন আমার আর চিৎকার করার শক্তি অবশিষ্ট নেই। চোখ বন্ধ করে হাঁটু ভাঁজ করে দুইহাত দিয়ে পায়ের গোড়ালির উপর চেপে ধরতে বলা হল। তারপর মাথা বেড থেকে তুলে থুতনি বুকের কাছে এনে সব শক্তি একত্র করে পুশ করছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল আর পারছিনা, এক্ষুনি সি সেক করাতে বলি। এর মধ্যে এপিসিউটমি করা হয়।
পেইনের তীব্রতায় এপিসিউটমির ব্যাথাকে ছোট একটা চিমটি মনে হয়েছিল। অবশেষে প্রায় দশ ঘন্টা লেবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ সন্ধ্যা সাতটা বিশে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমাদের মুহাম্মাদ জন্মগ্রহণ করে। ওর ওজন হয়েছিল সাড়ে সাত পাউন্ড আলহামদুলিল্লাহ। এটা ছিল পরিক্ষার দিন। এবার পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে বলি। আলহামদুলিল্লাহ আমার ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারেই রৌদ্রময়ী স্কুলের প্রিনেটাল কোর্স করার সুযোগ পাই।
এবং শুরু থেকেই বাম কাত হয়ে শোয়াটা প্র্যাক্টিস করি। আলাদা করে স্কোয়াট করতাম না। কিচেনে কাজ করতে গিয়ে যতবারই উঠবস করতে হত, নিশ্চিত করতাম যেন স্কোয়াট পজিশন এ হয়। কেগেল এক্সারসাইজ করেছি। শুরুতে পারিনি। শেষে এসে ডীপ ব্রিদিং এবং রিলাক্সেশন প্র্যাক্টিস করি।
এটা লেবার পেইন ম্যানেজমেন্ট করতে আমার কাজে লেগেছিল। মুখে শব্দ করা বা চিৎকার করেও আরাম পেয়েছিলাম। কঠিন কন্ট্রাকশনের শুরুতে কিছুটা জোর আওয়াজে জিকির করাটা আরামদায়ক ছিল আমার জন্য। প্রচুর পরিমাণে খেজুর এবং পানি খাওয়াতে শক্তি পেয়েছিলাম। নরমাল ডেলিভারি নিয়ে অনেক ভয় কাজ করত। ভাবতাম পারব কিনা।
প্রিনেটাল কোর্স করে ভয়টা অনেকাংশেই কেটে যায় আলহামদুলিল্লাহ। শুরু থেকেই মাইন্ডসেট করে রাখি নরমাল ডেলিভারির জন্য। জ্ঞান হল শক্তি। আমার জ্ঞানটা আলহামদুলিল্লাহ আমার জার্নিটা সহজ করেছে। এবং লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, দোয়া। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিজদা দিতামা শুকরিয়া আদায় করতে।
আমার কাছে এটা যুদ্ধই ছিল। প্রচন্ড গন্ধ, বমি আর খেতে না পারার কষ্ট পেয়েছি। হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল। চারটা আইরন ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরেও বাড়েনি। শেষে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে হয়। পুরোটা সময় জুড়ে আমার হাজব্যান্ড শারীরিক এবং মানসিকভাবে আমার সবচে বড় ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়ায় আলহামদুলিল্লাহ।
উম্মে মুহাম্মাদ
২য় ব্যাচ, প্রিনাটাল কোর্স
Other post
You may also like
রংধনু রঙের খেলনাগুলো
ছোটবেলায় আমাদের নিকট প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বস্তুটি ছিলো, তা হলো সাত রঙের রংধনু। কারণ অধিকাংশ সময় বৃষ্টির দেখা মিললেও, বৃষ্টির পরের রংধনুর দেখা মিলতো খুবই কম। তাই যে জিনিস খুব কম দেখা যায়, সে জিনিসের প্রতি আকর্ষণও থাকে সবচেয়ে …
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …