প্রেগন্যান্সিতে সহবাস
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Dr. Nusrat Jahan Proma
- Date November 25, 2023
- Comments 0 comment
প্রেগন্যান্সি তে ১ম ৩ মাস ও শেষ ৩ মাস ইন্টারকোর্স থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন আসে –
১। কেন এই নিয়ম
২। একেবারেই কি করা যাবে না?
৩। করলে কি কি হতে পারে?
৪। মানসিক অবস্থার সাথে শারীরিক অবস্থার ব্যালেন্স কিভাবে সম্ভব?
প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে বুঝানো একটু কঠিন। প্রত্যেকটি প্রেগন্যান্সি ভিন্ন তাই তার রুলস ও ভিন্ন। এই নিয়মের কারণ হল ইন্টারকোর্সে জরায়ু এক্সাইটেড হয়ে অনেক সময় জরায়ুমুখ খুলে যায় তাতে বাচ্চা সময়ের পূর্বে বের হওয়ার ঝুকি থাকে। এরপর বাচ্চার নিউট্রিশন সাপ্লাইয়ার প্লাসেন্টা তথা গর্ভফুল যদি জরায়ুমুখের কাছে থাকে তাহলে তাতে সামান্য আঘাত লেগে ব্লিডিং হতে পারে। তাই ১ম ৩ মাসে এই ধরনের ঘটনা এবরশন করতে পারে আর শেষ ৩ মাসে প্রিম্যাচিউর লেবার।
এখন একেবারেই কি এটা নিষিদ্ধ? উত্তর হল, না। দম্পতিরা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংএ ধীরে ধীরে, সাবধানতা বজায় রেখে করতে পারেন তাহলে পুরো প্রেগন্যান্সিতেই ইন্টারকোর্স সেইফ। কিছু ব্যতিক্রম কেইসে নিষিদ্ধ। যেমন –
১। প্লাসেন্টা জরায়ুমুখের কাছে হলে যা আল্ট্রাসাউন্ড করে আপনি জেনে নিতে পারবেন।
২। কোন কারণ ছাড়াই আগের স্পন্টেনিয়াস এবরশন বা মিসক্যারেজের ঘটনা থাকলে।
৩। ৫/৬/৭/৮ মাসে লেবার পেইন উঠে বাচ্চা হয়ে যাওয়ার হিস্ট্রি থাকলে
৪। মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত গেলে বা স্পটিং হলে (থ্রেটেন্ড এবরশন বলে অর্থাত ঝুঁকিপূর্ণ প্রেগন্যান্সি)
৫। অসময়ে পানি লিক করলে (amniotic fluid)
এই কয়েকটি কেইস বাদে বাকি সব ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সিতে ইন্টারকোর্স সেইফ। আর এই ব্যতিক্রমী ঘটনা আপনার আছে কিনা সেটা এই নিয়ে জানা থাকলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন সেইফ কী সেইফ না। কিংবা ডাক্তারও বলে দিতে পারেন। এবং ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলাটা আবশ্যক।
করলে বিপদ কী হতে পারে তা বললাম। আবার একই থিওরিতে জেনারেল স্মুদ নরমাল প্রেগন্যান্সিতে ইন্টারকোর্স একটা প্লাস পয়েন্ট। এই সময় স্বামীর সাথে বেশ একটা গ্যাপ আসে। মন মানসিকতা ভালো না থাকায় খিটখিট করা, অকারণে ঝগড়া করা,কান্নাকাটি করা হবু মাদের জন্য কমন। ইন্টারকোর্স মুডকে কিছুটা স্ট্যাবিলাইজ করে। স্বামীর সাথে গ্যাপ কমায়। বাচ্চা হওয়ার পর শারিরীক অবস্থার জন্য ১.৫ মাস( নরমাল ডেলিভারিতে ৪০ দিন সিজারিয়ান সেকশনে ৬ সপ্তাহ) ইন্টারকোর্স নিষিদ্ধ এটা তো ফিক্সড, তার উপর পরেও হয়ে উঠে না। ভয় কাজ করে, বাচ্চা রাখতে রাখতে ক্লান্তিতে হয়ে উঠে না কিংবা বাচ্চা জেগে থাকে, তাকে কোলে রাখতে হয় ইত্যাদি কারণে এই গ্যাপ বাড়তেই থাকে। তাই প্রেগন্যান্সির ৯ মাসই যদি দুজন দুইপ্রান্তে ঘুমায় তো কেমিস্ট্রি কিছুটা তো কমে। সবার ক্ষেত্রে না কিন্তু বেশিরভাগের এটা হয়। তাই যদি আপনার ঝুঁকি না থাকে তাহলে অনিয়মিতভাবে হলেও ধীরে ধীরে সাবধানতার সাথে ইন্টারকোর্স করুন।
৩৭ সপ্তাহে যখন বাচ্চা সম্পূর্ণভাবে ম্যাচিউরড, যখন শরীর লেবারের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে তখন ইন্টারকোর্সকে অনেক দেশের ডাক্তার বরং উৎসাহিত করে। ধারণা করা হয় এতে লেবার শুরু হয়, প্রগ্রেস হয় ভালো। প্রতি ২০ দম্পতির মধ্যে ১২ জনই প্রেগন্যান্সিতে ইন্টারকোর্স করে কোন সমস্যা অনুভব করেননি আর এদের মধ্যে অনেকেই ডেলিভারি ব্যাথা উঠার আগের দিনও ইন্টারকোর্স করেছেন সেইফলি। অনেক নারীর এই সময়ে মন থেকে আসে না, আবার অনেকে বেশ উদগ্রীব হন, আগ্রহী হন এর প্রতি৷ তবে যেটাই হোক কন্টিনিউ করাটাই সাজেস্টেড৷ এতে মনও প্রফুল্ল থাকবে, স্বামীর সাথে সম্পর্কটা আগের মত রাখার টেন্ডেন্সি কাজ করবে আর ভাগ্যে থাকে তো ৩৭ সপ্তাহের পর ইন্টারকোর্স লেবার ইনিশিয়েট করতে পারে ইনশাআল্লাহ। এই সময় ভ্যাজাইনা বা
যৌনপথ ড্রাই থাকে অনেক সময়। এতেও অনেকে নিরুৎসাহিত হন। তবে এর সমাধান আছে। ওয়াটার বেইজড লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করে ড্রাইনেস কাটানো সম্ভব। KY Jelly নামে ফারমেসিতে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে ডাক্তাররা স্ট্রিক্টলি ১ম ও শেষ ৩ মাস মানা করেন। কারণ তারা রিস্ক নিতে চান না। অনেক রোগীকেই এই কথাগুলো বুঝিয়ে বলার পরও বুঝতে না পারার ব্যাপার আছে, আর বুঝানোর পর অনেক রোগী মাথা ব্যাথার চেয়ে মাথা কেটে ফেলাই ভালো ভাবেন। তাই সব মিলিয়ে উনারা মানা করেন। রোগীরা ও তাদের স্বামী যদি একটু বিস্তর পড়াশোনা করেন, কী করবেন আর কী করবেন না সেটা নিয়ে ভালো ধারণা রাখেন তাহলে এই স্ট্রিক্টনেসের প্রয়োজন কম। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষিত মেয়েদের অধিকাংশই প্রিন্যাটাল স্টাডি করেন আগের দিনের দাদি নানিদের কাছে। তাই বাংলাদেশের ডাক্তাররা স্ট্রিক্টলি মানা করেন। আপনার যদি যথেষ্ট জ্ঞান থাকে এই ব্যাপারে তাহলে যদি দেখেন আপনার কেইস সেইফ তখন আলাপ করলে আপনার কথা শুনে ডাক্তার বুঝে নিবেন আপনি ব্যাপারগুলো জানেন এবং তখন তিনি সুপরামর্শটাই দিবেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি ২৮-৩৪ সপ্তাহে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে বলব, তবে একেবারেই বিরত থাকতে বলব না। সবার জন্য শুভকামনা।
ডা: নুসরাত জাহান প্রমা
প্রিনেটাল ইন্সট্রাক্টর, রৌদ্রময়ী স্কুল
রৌদ্রময়ী অনলাইন ক্লিনিক
Other post
You may also like
নতুন মায়েদের জন্য কার্যকর ব্রেস্টফিডিং টিপস
নবজাতকের সুস্থ ও মজবুত শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের দুধ সবচেয়ে উপকারী। তবে নতুন মায়েদের জন্য ব্রেস্টফিডিং শুরুতে একটু কঠিন মনে হতে পারে। মায়েদের জন্য কিছু কার্যকর ব্রেস্ট ফিডিং টিপস দেওয়া হলো, যা মায়ের ও শিশুর দুজনের জন্যই সহায়ক …
মুবাশশিরার লেড উইনিং
মুবাশশিরার বয়স যখন ৫ মাস ২৫ দিন, তখন থেকেই আমি ওকে সলিড দেওয়া শুরু করি। কারণ সলিড শুরু করার সব সাইন আলহামদুলিল্লাহ তার মধ্যে দেখা গিয়েছিলো। সে বসতে পারতো, খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখাতো, ঘাড় ডান থেকে বামে ঘুরাতে পারতো, মুখের …
মা হওয়ার পরের দিন গুলোতে ভালো থাকা
১)প্রথম সন্তানের মা হওয়া সবার জন্য কতই আকাঙ্খিত। ৩৭ সপ্তাহ শেষে ইডিডির বেশ আগেই হঠাৎ পেইন উঠে নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছিল আমার মেয়ে। হাসপাতালে যখন যাই তখন ৩ সেমি জরায়ু মুখ খুলেছিল। তারপরও রুটিন অনুসারে সেলাইন, পিটোসিন, ডেলিভারির সময় এপিসিওটমি দেওয়া …