মা হওয়ার গল্প – আমার আত্মোপলব্ধি ও আত্মউন্নয়নের গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Birth Story, Blog, Course, Others
- Date November 29, 2023
- Comments 0 comment
মা হওয়ার অনুভূতি তো কমবেশি সবাই ফিল করতে পারেন যারা মা হয়েছেন। এজন্য আমি আজ আমার প্রেগন্যান্সির অন্যদিক গুলা নিয়ে লিখব।
বিয়ের অল্প কিছুদিনের মাথায়, দেহে নতুন একজনের অস্তিত্ব অনুভব সুখকর ছিলো আলহামদুলিল্লাহ। নতুন বিয়ের পর একটা যৌথ পরিবারে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছু ফেস করা লাগে। অনেক নতুন পরিস্থিতিতে হয়তোবা হরমোনাল চেঞ্জের কারণে খুব ধীর স্থির শান্ত মেজাজের মেয়েটা খুব অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম।
স্বামীর সাথে হৃদ্যতা বাড়বে, নাকি শ্বশুরবাড়ির সাথে নিজেকে মানাবো নাকি নিজের যত্ন নিব! এটা ফিল করতে পারি, সেসময় যে একটু সহানুভূতি দেখাতো তার প্রতি যে কত কৃতজ্ঞ থাকতাম ভাইস ভার্সা যে একটু খারাপ আচরণ করতো তাকে ক্ষমা করতে পারতাম না। আমার এটা মনে আছে আমার ননদ নিজে না খেয়ে ভাবি খেতে পারেনা তাই ভাবির পচ্ছন্দের জিনিস রেখে দিয়েছিলো আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু যাদের উপর রাগ ছিলো সেটা ডেলিভারিরও কয়েক মাস পর্যন্ত ছিলো।
সেকেন্ড প্রেগন্যান্সি ছিলো ১০ মাস পর, আলহামদুলিল্লাহ। এইসময়ও একই ঘটনা। ঠিক একইভাবে ফিরে এলো পুরানো ক্ষোভ। যাদের উপর রাগ ক্ষোভ হয়েছিলো সেটা একইভাবে আবার ফিরে এলো। খুব পেইন দিত জিনিসগুলা।
আল্লাহর রহমতে এই প্রেগন্যান্সিতে দু’আর বিষয়টি সম্পর্কে জানলাম। প্রেগন্যান্সিতে দু’আ কবুল হয়। প্রথম প্রেগন্যান্সিতে দু’আ করতাম, বাবুর দুধের যেন অভাব না হয়। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন। সেকেন্ড বাবুর সময় বাবুর রিজিকের সাথে সুস্থতা চাইতাম। বাবু হওয়ার পর জানলাম প্রেগন্যান্সিতে যদি মা অশান্তিতে থাকেন তবে সেই বাচ্চার সাথে নাকি ১০-১৫ বছর পর্যন্ত সম্পর্ক ভালো থাকে না, মানে বাচ্চা সবার কথা শুনলেও মা থেকে দূরে থাকে, জিয়াউল হক স্যার এর একটা লেকচার থেকে জেনেছিলাম।
এবার একটু টনক নড়লো। আমি খেয়াল করলাম আমার প্রথম বাবুটা আসলেই আমার থেকে দূরে থাকতো। দ্বিতীয় বাবু হওয়ার পর আমার বড় বাবুটা আমি ছাড়া সবার কাছে থাকতে ভালোবাসতো। এটা যে আমাকে কি পরিমাণ পেইন দিয়েছে! এবার আল্লাহর রহমতে নিজের আমল এর উপর জোর দিতে পারলাম। অনেক দু’আ করতাম যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।
ঠিক এ সময় আমার হাজবেন্ডের চাকরির সুবাদে যৌথ পরিবার ছেড়ে আমার একটা সংসার হলো, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু ছোট দুইটা বাচ্চা, হেল্পিং হ্যান্ড নেই, আর এক পরিস্থিতি! আলহামদুলিল্লাহ এসময় থেকে অনেক সেল্ফ ডেভলপমেন্ট হল। আল্লাহ আমাকে নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করতে দিলেন। কয়েকমাস পর হাজবেন্ড এর হেল্প ছাড়া সবকিছু সামলে নিতে পেরেছিলাম।
বড় বাবু তখন ৩ এবং ছোটটা ১.৫ বছর। তখন মনে হতো কারোর উপর ক্ষোভ পুষে থাকা মানে নিজের + বাচ্চার ক্ষতি। অনেক বেশি সময় দিতাম বাবুদেরকে, আলহামদুলিল্লাহ। আমার বড় বাবু আমার কাছে থাকতে পচ্ছন্দ করা শুরু করলো। সেসময় রৌদ্রময়ীর বাচ্চাদের দু’আ কম্পিটিশন এবং নিশাত তাম্মিম আপুর ছোটদের ৫০ হাদিস প্রোগ্রাম দুইটাতেই আমার মেয়ে প্রথম সারির দিকে ছিলো, আলহামদুলিল্লাহ আলাহদুলিল্লাহ। আমার জীবনের অনেক খুশির একটা উপলক্ষ।
এরপর আল্লাহর রহমতে আবার কন্সিভ করলাম। এবার আবার একই সমস্যা গুলা ফিরে আসতে লাগলো। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কিংবা বেবি ব্লুজ। এই প্রেগন্যান্সিতে আল্লাহ আমাকে প্রিনেটাল কোর্স করার তৌফিক দিলেন। আগের দুইটা সিজার, এবারও নরমালের আশা নেই জেনেও কোর্স করলাম। এবার শারিন আপুর ক্লাস করে আমার নিজের অনেক সমস্যা ধরতে পারলাম। যে আমি অনেক ইন্ট্রোভার্ট হওয়াতে আমার নিজেরই অনেক কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিলো যেটার জন্য অনেক সমস্যা তৈরী হতো। এদিকে শারিন আপুর রাইটিং থেরাপির লেখা+ ইমাম নববী রহ: ৪০ হাদিস ক্লাসের একটা কথা খুব মনে ধরলো যে ইমাম নববী রহ: এর মা যখন প্রেগন্যান্ট ছিলেন তখন তিনি হাদিস শিক্ষার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন। তো এটা একটা অনেক বড় জিনিস ছিলো। ইমাম নববী রহ: ছোট বেলা থেকে অনেক জ্ঞান পিপাসু ছিলেন, উনার বয়সী ছোট ছেলে মেয়ে যেখানে খেলতে না পারলে মন খারাপ করতো, তিনি পড়তে না পারলে মন খারাপ করতেন।
নাইমা আপুর পোস্টনেটাল কেয়ার ক্লাস আমাকে পুরাই চেঞ্জ করে দিলো, আলহামদুলিল্লাহ। সকল নেগেটিভ জিনিস এভয়েড করা শিখে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। এভরিডে মুসলিমাহ লার্নিং এর একটা প্রজেক্টও খুব হেল্প করলো, আলহামদুলিল্লাহ। ইস্তগেফার আর দু’আ। এরপর রৌদ্রময়ীর প্রোডাক্টিভ মুসলিমাহ কোর্স। আলহামদুলিল্লাহ সবকিছুর জন্য। আল্লাহ আমার জন্য রহমত করে দিলেন অনেক কিছু। আলহামদুলিল্লাহ যখন নেগেটিভ কিছু ঘটে তখন বুঝি যে আল্লাহর কাছে দু’আ করলে আল্লাহ সমাধান করে দেন, সহজ করে দেন। আর বর্তমান সময়ে গা-যা তে বিভিন্ন ঘটনা দেখে তাদের ঈমানের তুলনায় নিজের ঈমানের অবস্থা দেখলে নিজের কোন বিপদ আর অনেক কিছু মনে হয় না আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সব কিছুর জন্য যথেষ্ট।
আমার ব্যক্তিগত সমস্যা গুলা তুলে ধরলাম এজন্য যে যারা আমার মত সমস্যায় আছেন তারা যেন বের হওয়ার পথ খুঁজে পান। আল্লাহ আমার পরিবারকে দুনিয়া আখিরাতের সকল বিপদ, তাঁর সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন।
আমিন।
জাকিয়া ফাতেমা
পার্টিসিপ্যান্ট, রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল কোর্স
Other post
You may also like
হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব: একজন মায়ের অনুপ্রেরণামূলক গল্প
আমি একজন দৌলা হিসেবে আজ একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প শেয়ার করতে চাই। আমার ক্লায়েন্ট আফরোজা আপুর ডেলিভারির অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক প্রস্তুতি ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব।আফরোজা আপু ন্যাচারাল বার্থের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। তার স্বামীও …
নরমাল ডেলিভারি: খুবই ভালো অভিজ্ঞতা
গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মত পুত্রসন্তানের মা হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। নরমাল ডেলিভারি ছিল, এক্সপেরিয়েন্স খুবই ভাল ছিল আল্লাহর রহমতে।গ্রুপের পোস্ট ফলো করতাম কনসিভ করার পর থেকেই। গ্রুপের পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। দায়িত্বশীল এবং সবার জন্য অনেক অনেক দু’আ।আমি দেশের …
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে নরমাল ডেলিভারির গল্প
সেপ্টেম্বর এর ১৪ তারিখ আলহামদুলিল্লাহ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমার প্রথম রাজকন্যার মা হলাম। আমার বার্থ স্টোরি শুরুর আগে আমি আমার কনসিভ করার আগের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই যাতে আমার মতো যারা একটু মোটা তারা কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত হোন ইনশাআল্লাহ। আমি …