নারী জীবনের এই সুন্দর সময় নিয়ে জানুন
মাথা ঘুরানো, বমি ভাব, খাবারে গন্ধ, সবকিছু একজোট হয়ে জানান দিচ্ছে যে, আমি মা হতে চলেছি! যদিও এটা আমার ২য় প্রেগনেন্সি কিন্তু বিগত প্রায় দুই মাস যাবত আমি বুঝতেই পারিনি যে, আমার ভিতর বেড়ে উঠছে ছোট্ট একটা প্রাণ!
১৮ মাস বয়সী ছোট্ট মেয়েটার জ্বালা যন্ত্রণায় অতিষ্ট হওয়া আমি মানসিক ও শারীরিক ভাবে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম যে, প্রেগনেন্সির বহু উপসর্গ আমার শরীরে দেখা দেওয়ার পরও আমি ভেবেছি এগুলো বহুদিনের রাত জাগা আর ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার।
ডাক্তার যখন জিজ্ঞেস করলো এবং টেস্ট করতে বললো তখন আমার হুঁশ ফিরল।
ইশ! বিগত দুই মাস ধরে না জেনে নিজের প্রতি এবং আমার অনাগত সন্তানের প্রতি কত অবহেলা টাই না করেছি!
তবে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে আবার মা হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন।
কত মানুষ একটা সন্তানের জন্য হাহাকার করছে! আর আমি না চাইতেই আল্লাহ আমার ভিতর আর একটা প্রাণ দিয়ে দিয়েছেন! আলহামদুলিল্লাহ।
প্রথম প্রেগনেন্সিতে ইন্টারনেট ঘেঁটে অনেক কিছুই জেনেছি। অনেক নতুন এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে। কিন্তু মনের কোণে বেশ কিছু প্রশ্ন উকি দিয়ে যেত। নারী জীবনের এতো সুন্দর সময় সমন্ধে আরো জানতে ইচ্ছা হতো। আমার ভিতর কখন কি পরিবর্তন হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, জানার ইচ্ছা ছিল প্রবল।
বেশ কয়েক বছর আগে কোন একটা ছবিতে প্রি নেটাল কোর্সের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছিল। তখনই মূলত প্রি নেটাল কোর্স সমন্ধে জেনেছিলাম।
বাইরের বেশিরভাগ দেশেই প্রি নেটাল কোর্স চালু আছে এবং ওরা এ ব্যাপারে বেশ সচেতন। কিন্তু বাংলাদেশে এ সমন্ধে মানুষের ধারণা নেই বললেই চলে।
প্রথমবার এরকম একটা কোর্স খুব মিস করেছি আর ভেবেছি, আমাদের দেশেও যদি এমন কোর্স চালু থাকতো কতইনা ভালো হতো! যেহেতু তখন অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাই এবার আমি মনে মনে একটু হতাশই হয়েছিলাম! সংসার আর ছোট বাচ্চা সামলে এ বিষয়ে স্টাডি করা বা ইন্টারনেট ঘেঁটে ইম্পরটেন্ট জিনিসগুলো খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ।
এরই মাঝে একদিন রৌদ্রময়ী স্কুলের একটা পোস্টে চোখ আটকে গেলো। প্রি নেটাল কোর্স করানো হবে। আমার তখন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু হাত যে এক্কেবারে খালি! আল্লাহর অশেষ রহমত ব্যাবস্থা হয়ে গেলো। একদম লাস্ট ডেট এ এপ্লাই করলাম! অবশেষে কোর্স টা করার সুযোগ পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
কোর্স এর ব্যাপারে কি আর বলবো? আমি ভেবেছিলাম প্রেগনেন্সি বিষয়ে অনেক কিছু জানি। কিন্তু কোর্স টা করার পর বুঝতে পারছি যে, কত কিছু অজানা! খুব আফসোস হচ্ছে, ইশ! প্রথম প্রেগনেন্সিতে যদি এমন একটা কোর্স করার সুযোগ পেতাম, কতইনা ভালো হতো! কিছু বিষয়ের সাথে কত সুন্দর কোপ আপ করা যেতো!
অবশ্য আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। প্রথমবার কোনো জটিলতা না থাকলে এবার হয়তো কোর্স টাই করা হতনা! আলহামদুলিল্লাহ।
কোর্স থেকে যে অত্যাবশ্যকীয় এবং নতুন বিষয় সমন্ধে জেনেছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়….….
১। প্রেগনেন্সির কমন কিছু সমস্যা (যেগুলো নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই টেনশনে পড়ে যায়, আবার অনেকে ডাক্তারের কাছে দৌড়ায়)
২। গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন।
৩। সহজ কিছু ব্যায়াম যা পুরো প্রেগন্যান্সি এবং পরবর্তী সময়েও উপকারী।
৪। নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারির এ টু জেড।
৫। নতুন বাবুর জন্য কেনাকাটা+আনুষাঙ্গিক বিষয়।
৬। বাচ্চার কান্না রহস্য, সেকেন্ড নাইট সিনড্রোম, ডায়পার বিত্তান্ত।
৭। বেবি ব্লু, মায়ের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন, পোস্ট নেটাল ডিপ্রেসন।
আর যারা ক্লাস গুলো করিয়েছেন? তাদের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। এতো অমায়িক আর আন্তরিক ভাবে বুঝিয়েছেন যে, আমি তাদের ফ্যান হয়ে গিয়েছি।
ড.নাঈমা আলমগীর, রাবেয়া রওশীন, ডা: নুসরাত জাহান প্রমা এবং সিনিওর গাইনোকলজিস্ট ডা: ফাতেমা ইয়াসমিন আপু….. প্রতিটা মানুষকে আল্লাহ উত্তম জাজা দান করুন আমীন।
এই মানুষগুলোর কথা শুনতে শুনতে মানুষগুলোকে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি যে, মনে হচ্ছে ইশ! এদের সাথে একটু দেখা হতো! কিন্তু আমি চাইনা দুনিয়ার জীবনে তাদের সাথে আমার দেখা হোক। কোনো এক সময় জান্নাতের বাগানে আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে দেখা করিয়ে দিবেন ইং শা আল্লাহ
এই আশা রাখি।
আর এই মহৎ উদ্যোগ এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটা মানুষকে আল্লাহ উত্তম জাজা দান করুন আমিন।
আর সবশেষে হবু মা এবং যারা বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা করছেন তাদের কাছে একটা অনুরোধ….সবাই অবশ্যই এ বিষয়ে পড়াশোনা করুন। নারী জীবনের এতো সুন্দর একটা সময় সমন্ধে জানুন, বুঝুন এবং উপভোগ করুন।
জাযাকিল্লাহু খাইরান।
– শেফাত-ই সুলতানা মেঘলা,
শিক্ষার্থী, প্রি নেটাল কোর্স, প্রথম ব্যাচ