প্রেগন্যান্সিতে লেবার নিয়ে ভয়! আর নয়! আর নয়!
প্রথমবারের অভিজ্ঞতা হওয়ায় প্রেগন্যান্সি নিয়ে তেমন কিছুই জানতাম না শুরুর দিকে। বরং অজ্ঞতার কারনেই পুরো জিনিসটা নিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করতো।
মাতৃত্বকে বরণ করার ব্যাপারটি হয়তোবা আমার জীবনে নেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি। তাই প্রেগন্যান্সি-লেবার-প্যারেন্টিং এর পুরো জার্নিটাকে আমি যতটা সম্ভব প্রস্তুত হয়েই আত্মবিশ্বাসের সাথে পার করতে চাই ইন শা আল্লাহ।
সেই সুবাদেই তখন রৌদ্রময়ী স্কুলের মাধ্যমে আমার পরিচয় প্রিনেটাল কোর্স এর সাথে। অনেক নতুন কিছু শিখেছি এখানে নিয়মিত ক্লাস করে।
ডা: তানিয়া আপু শিখিয়েছেন প্রেগন্যান্সিতে কী ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান একজন নারী।সমাজে প্রচলিত নানান ভুল ধারণা ও কুসংস্কারকে ভেদ করে বৈজ্ঞানিক আলোকে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি আমাদের সামনে।
এই সময়ে কী কী সমস্যা ও রোগবালাই সচরাচর দেখা যায় এবং তা প্রতিরোধে কোন খাবার কতটু্কু খেতে হবে, দৈনিক জীবনযাপনে ওঠাবসা চলাফেরায় কী কী মেনে চলতে হবে, কোন ট্রাইমেস্টারে কী কী রুটিন চেকআপ আছে এরকম নানান খুঁটিনাটির বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আপু।
প্রেগন্যান্সির সবচেয়ে জটিলতম সময় লেবারের নানান ধাপ, এসময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, বিভিন্ন জটিলতা ও তা মোকাবেলা করার উপায়, নরমাল ডেলিভারির বিস্তারিত আলোচনা, নানা ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে নরমাল ডেলিভারির জন্য মায়ের প্রস্তুতি – এসব কিছুই ভীষণ যত্নের সাথে বুঝিয়েছেন রাবেয়া রওশীন আপু।
মা ও বাচ্চার জীবনভর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ও শক্তিশালী ইমিউনিটি সিস্টেম গঠনে নরমাল ডেলিভারির যে বিশাল অবদান, তা হয়তোবা কোনদিন জানতাম না আপুর এই ক্লাসগুলো না করলে।
সবচেয়ে মজার ছিল ডঃ নাঈমা আলমগীর আপুর ক্লাসগুলো। জন্মের পর বাচ্চার পরনের কাপড়, খাওয়া, ঘুম, গোসল, পটি, রোগবালাই ইত্যাদি নানা ব্যাপার নিয়ে নতুন মায়েদের প্রশ্নের শেষ থাকেনা। বাচ্চার কান্নার রহস্য, ওর শারীরিক বৃদ্ধি ও ওজন ঠিক আছে কিনা, কী কী বিপদচিহ্ন দেখলে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে – এরকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস গল্পের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন আপু।
এতকিছু নিয়ে হিমশিম খাওয়ার পর মায়ের আর সময় বা শক্তি কোনটাই থাকেনা নিজের যত্ন নেবার। নতুন মায়ের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, মানসিক যত্ন, বেবি ব্লু ও পোস্ট-নেটাল ডিপ্রেশন এবং এই পুরো প্রেগন্যান্সির সময়ে বাচ্চার বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব ইত্যাদি অনেক বিষয় আছে যা আমরা সহজেই এড়িয়ে যাই কিন্তু নাঈমা আপু ভীষণ গুরুত্ব দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বাচ্চার যত্নের পাশাপাশি নতুন মায়ের যত্ন নেয়াও কতটা প্রয়োজন!
এত রকমের প্রস্তুতি নেয়ার পরও হবু মায়ের তাৎক্ষণিক নানান বিপদ সংকেত ও শারীরিক জটিলতার কারনে অনেকের সি-সেকশন করার প্রয়োজন হয়। ডা: ফাতেমা ইয়াসমিন আপু তার বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বিস্তারিত বুঝিয়েছেন সি-সেকশনের ইতিহাস, কখন সি-সেকশন করার প্রয়োজন হয়, অপারেশন পরবর্তী মায়ের ও বাচ্চার যত্নসহ নানা খুঁটিনাটি, যেগুলো ১০-১৫ মিনিটে ডাক্তারের চেম্বারে বসে কখনোই জানার সুযোগ হয়না আমাদের দেশের গর্ভবতী দম্পতিদের।
অথচ পুরো কোর্সের এই ১০টা ক্লাস থেকে শেখা বিষয়গুলো জানা কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেক নতুন বাবা-মায়ের জন্য, সেটা রৌদ্রময়ী স্কুলের এই প্রিনেটাল কোর্স না করলে বোঝার উপায় নেই। এত সুন্দর কার্যক্রম নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পরিচালনা করার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রৌদ্রময়ী স্কুলের প্রতি।
আল্লাহ তাদের ভবিষ্যৎ পথচলায় বারাকাহ দান করুক।
রিভিউ
তাসনিম ইসলাম ডোনা
রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্স, ব্যাচ ১১