গর্ভবতীর সিয়াম: বেসিক গাইডলাইন
গর্ভবতীর সিয়াম: বেসিক গাইডলাইন
রমাদানে রোজা রাখা নিয়ে গর্ভবতী মায়েদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। রমাদান আমাদের সবারই ভালোবাসার একটা মাস। সারাবছরই আমরা অপেক্ষা করে থাকি এই মাসটির জন্য আর রোজা রাখতে না পারলে আসলেই খুব কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও মাদের জন্য তো আল্লাহ সহজতা দিয়েছেন। যার যার পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি ইন শা আল্লাহ। প্রত্যেকেই যার যার ডাক্তারের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে কথা বলে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়।
আমি আপনাদের একটা বেসিক গাইডলাইন দিতে পারি। সেটা হচ্ছে এই যে, যারা সুস্থ আছেন, ভালো আছেন, ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া করতে পারছেন আলহামদুলিল্লাহ তারা চেষ্টা করে দেখবেন রোজা রাখতে পারছেন কিনা। রোজা রেখে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। যদি দেখা যায় যে রোজা রেখে খুব দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন অথবা অনেক বেশি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাচ্ছেন অথবা এসিডিটি হচ্ছে অনেক বেশি, কারো কারো ইউরিনে ইনফেকশন হয় অনেক বেশি বা লক্ষণ চলে আসে। অনেক লম্বা সময় রোজা থাকার জন্য বমি ভাব বেড়ে যেতে পারে, এ জাতীয় যে কোন সমস্যা যদি কেউ ফেইস করেন তাহলে রোজা না রাখাটাই ভালো হবে।
আরেকটা বিষয় যাদের এডভান্স প্রেগ্ন্যাসি তারা দেখবেন বেবীর মুভমেন্ট ঠিক আছে কিনা। যদি এইগুলো কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে অবশ্যই রোজা রাখতে পারেন।
এবার খাবারের বিষয়টা অর্থাৎ আপনার ডায়েটটা কেমন হবে। আপনার সারাদিনে যে ক্যালরি নেয়ার কথা চেষ্টা করতে হবে যেন আপনি ইফতার থেকে সেহরীর মাঝে সেটা পূরণ করতে পারেন। ভাজাপোড়া খাবার অবশ্যই কম খেতে হবে। প্রচুর পরিমানে পানি অর্থাৎ ২.৫-৩ লিটার পানি যেটা আপনার খাওয়ার কথা সেটা আপনাকে এই সময়ের মাঝেই খেতে হবে। সাথে শক্তিবর্ধক খাবারগুলো বেশি করে খেতে হবে। প্রোটিন-ক্যালসিয়ামজাতীয় খাবার, কার্বোহাইড্রেট মানে সবকিছুই আপনার সারাদিনের যে চাহিদা সেটা ইফতার, সেহেরি এবং রাতের খাবার এর মাঝেই ভাগ করে নিতে হবে এবং সেভাবেই খেতে হবে।
যেসব খাবার অল্প খেলেই বেশি ক্যালরি পাওয়া যাচ্ছে সেই ধরণের খাবারগুলো সিলেক্ট করবেন যেন কম খেলেও আপনি ভালো এনার্জি পান এবং আপনার ক্যালোরির চাহিদাটা পূর্ণ হয়ে যায়। এই হলো মেইন ডায়েটের ব্যাপারটা যা খেয়াল রাখতে হবে এবং এসিডিটি যেন কম হয় তেমন ধরণের খাবার খেতে হবে। তারপর মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এইগুলো সবকিছুই যেন মোটামুটি আপনার ডায়েটে থাকে সেই জিনিসগুলো খেয়াল করতে হবে।
এটা মেনটেইন করতে আপনাকে রাতে একটু বেশি জেগে থাকতে হতে পারে, রাতে একটু কম রেস্ট নিয়ে দিনে একটু বেশি রেস্ট নিতে হবে এমন ধরণের একটা রুটিনে চলে যেতে পারেন রমাদানে। এভাবে করে আপনি যদি ডায়েট মেইনটেইন করে আপনার নিজের এবং আপনার বেবীর কোন ধরনের সমস্যা অনুভব না করেন তাহলে ইন শা আল্লাহ রোজা রাখা যাবে।
এমনকি যাদের একদম ঈদের পরেই ডেলিভারি ডেট বা রোজার শেষের দিকে ডেলিভারি ডেট তারাও কিন্তু চাইলে রাখতে পারেন যদি আপনি কোন রকম অসুবিধা বোধ না করেন। সেই সাথে তো আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেই হবে আল্লাহ যেন সহজ করেন। ইন শা আল্লাহ যদি আল্লাহ সহজ করেন তাহলে রাখতে পারবেন। যদি রেখে ফেলতে পারেন তাহলে অবশ্যই তা আপনার জন্য ভালো। যিনি অসুবিধা বোধ করেন, আগে থেকেই দুর্বল আছেন বা খেতে পারছেন না তিনি বাদ দিতে পারেন পরবর্তীতে রোজাগুলো কাযা করে নিবেন ইন শা আল্লাহ।
ডাঃ ফাতেমা ইয়াসমিন,
প্রিনাটাল ইন্সট্রাক্টর, রৌদ্রময়ী স্কুল