কোর্স থেকে পাওয়া নলেজের কারনে সি-সেকশন স্মুথলি হয়
আমি আমার প্রেগন্যান্সির শুরুর দিকেই প্রিনেটাল কোর্সটা করি, প্রেগন্যান্সির দুই কি তিন মাসের সময়। শুরুর দিকে কোর্স করার ফলে পুরো প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড নিয়ে একটা ধারণা পেয়ে যাই, এতে করে যে কোন দুর্বলতাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পেরেছি। একটা পজিটিভ মাইন্ডসেট ছিলো। তাই দুর্বলতাগুলোকে চ্যালেঞ্জ মনে হয়নি।
যেহেতু নিউট্রিশন পরিমাপ শেখানো হয়েছে আমাদের, যেমন কতটুকু প্রোটিন ইনটেক করতে হবে, কতটুকু ক্যালোরি নিতে হবে, তাই প্রতিদিন খাতা কলমে মাপা না হলেও খুবই আইডিয়া করে খেতাম। আর আমি বায়োটেকনোলজির স্টুডেন্ট হওয়ায় এগুলোর সাথে খুব রিলেইট করতে পারতাম। আমি খুবই ভাগ্যবান নিউট্রিশনের এরকম একটা গাইডলাইন পেয়ে।
তারপর ডাক্তার এর খোঁজ নিয়ে বলব, ডাক্তার আসলে আমার খোঁজ করতে হয়নি, ডক্টর আমার নেইবার, উনিও পজিটিভ ছিলেন শুরু থেকেই। আমার সবকিছু নরমাল দেখে উনি আমাকে এক্টিভ থাকার, খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করার পরামর্শ দিতেন আর নরমালে হবে সবকিছু, এমন মাইন্ডসেট রাখতে বলতেন। আমি খুবই রেগুলার ডাক্তার এর কাছে যেতাম, প্রতিমাসে একবার দেখাতাম। যে সাপ্লিমেন্ট গুলো দিতো, সবগুলো নিয়মমতোই খেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। একদম লাস্ট ডে পর্যন্ত আমার মানসিকতা ছিলো নরমালের জন্য, সিজার নিয়ে একেবারেই স্টাডি করি নাই।
কিন্তু একদম শেষ সময় আমার একটা এক্সিডেন্ট হয়। আমার ডিউ ডেইট ছিলো ১১ তারিখ, আমি ৬ তারিখে আলট্রাসাউন্ড করাতে যাই, একইসাথে বিভিন্ন রকম ব্লাড এবং ইউরিন টেস্ট করার কথা ছিলো। হসপিটালে আমাকে অনেকক্ষণ ওয়েট করতে হয় টেস্টগুলো করানোর জন্য, আল্ট্রাসাউন্ড করতেই ওয়েট করতে হয় ৪/৫ ঘন্টা। তখন কোনো ভাবে আমার পানি ভেঙে যায়। বাসায় আসার পর দেখি একটু একটু পানি ভাঙে। আমার ডক্টর এর সাথে কনসাল্ট করলাম। উনি বললেন, যেহেতু ডেইট একদম কাছে, তুমি হসপিটালে যেয়ে চেক করাতে পারো। ওখানে গেলে কী করতে হবে, ডাক্তাররা দেখে বলবে, আমাকে জানাবে।
হসপিটালে যেতে যেতে আমার এই পরিমাণে পানি ভাঙতে থাকে যে হসপিটালে যাওয়া পর্যন্ত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা। একদম হান্ড্রেড পার্সেন্ট পানি ভেঙে যায়। অথচ ততক্ষণে আমার জরায়ু মুখ এক সেন্টিমিটার ও খুলে না, পিভি চেক করে দেখা হয়। বাচ্চা খুবই রিস্কে চলে যায়, যেহেতু কোনো পানি অবশিষ্ট ছিলো না।
তখন আমার বাসা থেকে এবং ডিউটি ডাক্তার, সবার ডিসিশন এর সাথে মিলিয়ে আমিও সি সেকশন এর ডিসিশন নেই, যেহেতু পানি একদমই নেই এবং জরায়ু মুখ এক সেন্টিমিটারও খোলেনি, তাই এক মিনিটও বাচ্চা যাতে রিস্কে না থাকে, এজন্য দ্রুত সি সেকশন এর ডিসিশন নেই। ডাক্তার চলে আসে, আমি সি সেকশনে চলে যাই।
রাত ২ টায় আমার সি সেকশন হয়। বাচ্চার পজিশন সবসময়ই সেফালিক ছিলো। নরমাল প্রেগন্যান্সির প্রতিটা লক্ষ্মণ আমার ছিলো, তাই সি সেকশন আমি টেরই পাইনি, সব খুব দ্রুত হয়। পানি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাওয়াতে বাবুর একটু শ্বাসকষ্ট হয়, এজন্য দুই ঘন্টা বাবুকে অক্সিজেন দেয়া হয়, পরে এন আই সি ইউতে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাবু ঘন্টাখানেকের মধ্যেই রিকভার করে। আমি সকালের মধ্যেই বাবুকে পেয়ে যাই আমার কাছে।
৭ তারিখ রাত দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে আমার ডেলিভারি হয়, ৮ তারিখ দুপুর ১২ টার মধ্যেই আমাকে ছেড়ে দেয়। আমার স্টিচ ঠিক ছিলো, টয়লেট ঠিক ছিলো, আমি হাঁটাচলা করতে পারছি, একটু কষ্ট হয়, কিন্তু পারি।
আমার আল্লাহর রহমতে এক ফোঁটা দুঃখ নাই যে আমার সি সেকশন হয়েছে। আমার এক ফোঁটা কোনো রকমের হতাশা বা অন্য কিছু নাই, বরং আমি খুবই খুশি, কারণ আমার প্রেগন্যান্সি জার্নি ডে ওয়ান থেকে খুব সুন্দর এবং সহজ ছিলো এই কোর্স থেকে পাওয়া নলেজের কারণে। যদিও নরমাল ডেলিভারি আমার একটা গোল ছিলো, এটা হয়নাই, আল্লাহর হুকুমেই হয়নাই। এই কোর্স এবং কোর্সের সাথের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, এই জ্ঞান আমার অনেক উপকারে লেগেছে, এমনকি আমার সি সেকশন খুব স্মুথলি হয়েছে। সবাই আমার এবং আমার বাচ্চার জন্য দোয়া করবেন।
হুমায়রা,
প্রিনাটাল কোর্স, ব্যাচ ৬