ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Birth Story, Others
- Date June 23, 2024
- Comments 4 comments
১।
আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন।
আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। যেহেতু ৩ নং, সবাই ধরেই নিয়েছিল যে অনেক আগে বাবু হয়ে যাবে। যাই হোক, অপেক্ষা শুরু হলো। এর মধ্যে টুকটাক এক্সারসাইজ, হাটাহাটি শুরু করলাম। বড় দুইটা খুব মজা নিয়ে দেখতো। অনেক অনেক খেজুর খেতে থাকলাম। সুরা ফাতিহা পড়ে পানি খেতাম। ৩৯ উইক্সের আল্ট্রাতে সব ঠিকঠাক আসে। দেখতে দেখতে ২২ তারিখ ও চলে এল। কিন্তু আমার পেইনের কোন নাম গন্ধ নাই। কোন সিম্পটম ও না!!! চিন্তা হওয়া শুরু হলো। আগের দুইটাও যদিও একেবারে ইডিডির আগে দিয়ে হয়েছিল।
যাই হোক, ২৩ তারিখ গেলাম ডাক্তারের কাছে। ম্যাডাম পিভি করে সব ফ্যাভেরেবল পেলেন। মেম্ব্রেন সুইপ করে দিলেন। বলে দিলেন পেইন উঠে গেলেই চলে আসতে। আর না হলে এডমিট হয়ে যেতে, ট্রায়াল দিবেন। আমি ডিসিশান নিলাম আগেই এডমিট হবো না। সব ঠিক থাকলে এট লিস্ট ৭-১০দিন ওয়েট করবো। বাসায় গিয়ে এক্সাইটেড ছিলাম। মেম্ব্রেন সুইপের জন্য হয়তো পেইন উঠে যাবে। রাবেয়া আপুকে নক দিয়ে জেনে নিলাম কী কী এক্সারসাইজ করবো। আরেক আপুকেও নক দিলাম, উনার ও ডেট ওভার হয়ে বেবি হয়েছিল। রাত যায়, আমার কেমন ডিস্কম্ফোর্ট লাগা শুরু করে, ভাবতে লাগলাম হয়ত পেইন উঠে যাবে। খুব খুশি লাগছিল।
২।
খুব খুশি ছিলাম পেইন উঠে যাবে ভেবে। রাতে হালকা এক্সারসাইজ করে ঘুমাতে গেলাম। ওমা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি একেবারে ফুরাফুরা লাগছে!!! মন খারাপ হয়ে গেল। হাজবেন্ডকে জানালাম আমি এখনই এডমিট হবো না। আরও ওয়েট করবো। উনি রাজি হলেন। এদিকে সবাই তো কন্টিনিউয়াস খোঁজ নিচ্ছে কী খবর। সবাইকে কনফিডেন্টলি বলছি সময় হলেই আসবে কিন্তু মনে মনে টেনশান!!
কন্টিনিউয়াস রাবেয়া রওশীন আপু, নুসরাত জাহান প্রমা, আয়েশা সিদ্দিকা হোমায়রা আপুর সাথে কন্টাক্টে থাকলাম সাহসের জন্য। উনারা এই সময়টাতে অনেক সাহস দিয়েছেন আমাকে। যাই হোক, ৪০ সপ্তাহ ৩ দিনে আরেকটা আল্ট্রা করাই, ফ্লুইড, ওয়েট সব পারফেক্ট ছিল। আরও কনফিডেন্স আসে। ওয়ার্ক আউট বাড়িয়ে দিলাম। যদিও আল্ট্রা করার সময় আপু বলছিলেন হেড অনেক নিচে, বাট এনগেজড হয়নি। সেদিন বাসায় গিয়ে Forward leaning inversion টা প্রপারলি করলাম। আমি রাতেই ফিল করলাম হেড এনগেজড। এছাড়া miles circuit, walking, deep sqautting এগুলো তো করছিলামই। অল্প অল্প সিড়ি দিয়ে উঠানামা করছিলাম। সুরা মারইয়াম তিলাওয়াত করা, তিলাওয়াত শোনা রেগুলার রাখলাম। এত কিছু করছিলাম, তাও একেবারে কোন সিম্পটম নেই। মনে মনে খুব অসহায় লাগছিল। আমি পিটোন( মানে স্যালাইন দিয়ে) ইন্ডাকশনে যেতেই চাচ্ছিলাম না মন থেকে। আল্লাহর কাছে মন থেকে দুয়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম যেন উনি সব অনেক সহজ করে দেন। ৪০ সপ্তাহ ৭ দিনের দিন সকালে আমার অস্থির লাগছিল। ডিসিশান নিলাম একবার গিয়ে চেকাপ করিয়ে আসি। ভাবিকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম চেকাপে।
৩।
২৯ তারিখ সকালে ভাবিকে নিয়ে হস্পিটালে গেলাম চেকাপের জন্য। সকালে অন্য একজন ডাক্তার চেম্বার করছিলেন। উনাকে দেখালাম। উনি আবার চেক করলেন। বললেন সব কিছুই খুবই ভালো। উনি আরেকবার মেমব্রেন সুইপ করে দিলেন। বললেন আজকেই পেইন উঠে যাবে। তাও না হলে নেক্সটদিন একদম সকালে এসে স্যালাইনে ড্রিপ শুরু করলেই ইন শা আল্লাহ বিকালের মধ্যেই ডেলিভারি হয়ে যাবে।
আমার ৪০ সপ্তাহ ৭ দিন চলছিল। বেশি করে স্কোয়াট, হাটাহাটি করতে বললেন। বাসায় এসে রেস্ট নিয়ে শুরু করলাম হাটাহাটি, ব্যায়াম। টানা হাটতেই থাকলাম। অনেক দুয়া করতে থাকলাম, যেন পিটোনে না যেতে হয়। রাতে ইশার নামায পড়ে অনেক্ষণ সিড়ি উঠানামা করলাম। বাসায় এসে চেক করে দেখলাম একদম ব্লাডি শো যাচ্ছে। খুব খুশি হলাম যে লেবার শুরু।
কিছুক্ষণ পর থেকেই হালকা পেইন শুরু হলো। আগের দুইটার এক্সপেরিয়েন্স থেকে বুঝতে পারলাম এটাই লেবার পেইন। রেস্ট নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে আবার হাটলাম, স্কোয়াট করলাম। এরপর ২ ঘন্টার মতো ঘুমালাম। পেইন বাড়ছিল। আবার হাটলাম। এরপর ফজর আদায় করে একটু ঘুমাতে গেলাম। ঘুম থেকে উঠার পরে দেখি একদম পেইন গায়েব!!
আবার হাটলাম, সিড়ি দিয়ে উঠানামা করলাম। কিন্তু কোন ইম্প্রুভ হলো না। শুধু মাইল্ড একটা পেইন আসছিল অনেকক্ষণ পরে পরে। অনেক মন খারাপ হলো। এদিকে বাসায় আর কেউ ওয়েট করবে না। হাজবেন্ডের সাথে পরামর্শ করে ম্যাডামকে ম্যাসেজ দিলাম। ম্যাডাম ভর্তি হতে বললেন। মন খুব খারাপ ছিল। যাই হোক দুই বাচ্চাকে রেখে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আম্মু, হাজবেন্ডকে নিয়ে হস্পিটালে গেলাম।
পেইন ওরকম মাইল্ডই আছে। এডমিশানের পরে কেবিনে গেলাম। ম্যাডামের সাথে ফোনে কথা হলো। উনি সন্ধ্যায় আসবেন জানালেন। এর মধ্য CTG, পিভি করা হলো। সব ভালো ছিল কিন্তু জরায়ু মুখ ২.৫সেমি এর মতোই ওপেন, যেটা বিগত দিনই ছিল। আমি তাও দুয়াই করে যাচ্ছি, যেন আল্লাহ ইজি করে দেন। আসর সালাত পড়ে আবার হাটতে শুরু করলাম। এর মধ্যে ৬টার দিকে ম্যাডাম আসলেন। নার্স আমাকে লেবার রুমে নিয়ে গেলেন। তখনই আমি ব্যাপারটা প্রথম জানতে পারলাম। ম্যাডাম শুরুতেই পিটোন দিয়ে ইন্ডিউস করেন না। উনি এখন ক্যাথেটার ম্যাথোড ইউজ করে জরায়ু মুখ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
লেবার রুমে ম্যাডাম চেকাপ করে বললেন আমাকে ক্যাথেটার দিতে হবে না। ম্যাডাম ম্যানুয়ালি জরায়ু মুখ যতটা পারা যায় খুলে দিলেন, মেমব্রেন সুইপ করে দিলেন। বলে দিলেন অনেক হাটাহাটি করতে। ম্যাডামের ওটি ছিল, উনি ওটিতে চলে গেলেন। আমি আবার কেবিনে গিয়ে হাটাহাটি করা শুরু করলাম। মাগরিব পড়ে সুরা মারইয়াম পড়লাম। আল্লাহ যেন সহজ করেন দুয়া করছিলাম। প্রায় ১ ঘন্টা পরে আমাকে লেবার রুমে নিয়ে গেল। ওখানে হাটতে বলে দিল। আমার ব্যাথা বাড়ছিল। ব্যাথা আসলেই স্কোয়াট করছিলাম। প্রচুর পানি খাচ্ছিলাম, আর ব্লাডার খালি করছিলাম পাশাপাশি। এরপর প্রায় রাত ৮/৮.৩০টার দিকে পানি ভেঙে গেল।
চেক করে দেখা গেল তখনও ৩সেমি ওপেন মাত্র। কিন্তু আমার ব্যাথা এরপর থেকে অনেক বাড়ছিল। ম্যাডাম বললেন বেশি স্কোয়াট করো। আমার আর হাটার ইচ্ছা করছিল না। তাই স্কোয়াট করতে লাগলাম। পেইন আসলেই হিপ রোটেশান। অনেক অনেক ব্যাথা। বালিশ কামড় দিয়ে ব্যাথার সাথে মানানোর ট্রাই করে যাচ্ছিলাম শাউট না করে।
এরপর আবার পিভি করলো প্রায় ১ ঘন্টা পরে। ৭সেমি ওপেন। কিন্তু ম্যাডামের মনে হচ্ছিল যে বাচ্চা ঘুরে যাচ্ছে নাকি। তখন বললেন একদম লো ডোজ দিয়ে পিটোন চালু করতে, ইন শা আল্লাহ হয়ে যাবে। পিটোন দেয়ার আগেই কেমন হালকা টয়লেট হবে মনে হচ্ছিলো। পিটোন চালু করা হলো। ৫ মিনিটেরও কম সময়ে আমার খুব টয়লেট প্রেসার আসলো। যেভাবেই হোক যেতে হবে। আমাকে নিয়ে গেল। বসানোর পরে খুব আরাম লাগছিল। সাডেনলি অনেক পুশিং আর্জ আসলো। তাড়াতাড়ি বের হয়ে বললাম লেবার রুমে নিতে। ম্যাডাম বসেই ছিলেন। ম্যাডাম বললেন কোন এপিশিওটমি দিবো না। আমাকে সাহস দিতে লাগলেন। ৩/৪টা সুন্দর পুশের পরেই আমার কলিজা দুনিয়াতে চলে আসলো।
ম্যাডাম চেক করে বললেন, সুপারফিশিয়াল টিয়ার।স্টিচ লাগবে না। খুব সুন্দর ডেলিভারি হয়েছে। আমাকে অনেক প্রেইস করলেন সাহসের জন্য। আমিও উনাকে ধন্যবাদ জানালাম। আসলে ধন্যবাদ কম হয়ে যায় উনার জন্য। উনি আমার জন্য ওটির পরেও বসে ছিলেন। ইভেন চেম্বারে না গিয়ে চেম্বারের রোগীদের ওটি রুমের পাশে এনে চেকাপ করছিলেন। উনি ডিটারমাইন্ড ছিলেন আমার নরমাল করায় তবেই বাসায় যাবেন। গতানুগতিক পিটোন দিয়েই ইন্ডাকশান শুরু না করে উনার নলেজ বেস্ট কাজে লাগিয়ে ডেলিভারি করিয়েছিলেন। এছাড়াও হস্পিটালে নার্স, মিড ওয়াইফ সবাই খুব হেল্পফুল ছিল। সবাই নরমালের জন্য স্কিল্ড। আল্লাহ আসলেই অনেক ইজি করে দিয়েছিলেন।
আমার আর বাবুদের জন্য দুয়া করবেন সবাই!
উম্ম যাইনাব
রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল টিম মেম্বার
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
যেভাবে সন্তানকে ভালো রাখা যায়
আমার বাচ্চাটাকে কানাডাতে আলহা’মদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত রব্বুল আ’লামীন হিফাজতে রেখেছেন। আমি সাধারণত আমার বাচ্চাকে নিয়ে কখনও গর্ব করি না, তার ছবি পোস্ট করি না, খুব একটা কিছু লিখিও না। আল্লাহর আমানত, আমার অহংকার করার কিচ্ছু নাই। আজকে লিখছি, একটা বাচ্চা …
VBAC- একটু আশার আলো
আপনার যদি আগে সিজার হয়ে থাকে তবে এখন আপনি নরমাল চান তাহলে আপনার ডক্টরের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে নিন। এর রিস্ক আর বেনিফিট নিয়ে বিস্তর আলোচনা করুন। একটি সফল VBAC হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করে আপনার কেন একটি সি-সেকশন incision …
4 Comments
SubhanAllah. Which hospital was it apu? and also can you give me the doctor’s name?
ডা: রুবাইয়া মেহবিন
আর রাহা হাসপাতাল
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল
May we know the name of the hospital and the doctor please?
ডা: রুবাইয়া মেহবিন
আর রাহা হাসপাতাল
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল