বাচ্চার স্ক্রিন এডিকশন কমানোর গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Others, Parenting
- Date June 19, 2024
- Comments 0 comment
শিশু খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল দেখে খাওয়া একটা বড় ধরনের সমস্যা । যখন কোন কিছুতেই আর আর খাওয়ানো যায় তখন অনেক বাবা মার কাছে এটা একটা সহজ পদ্ধতি। অনেকে আবার না পারতে দেন। দিতে চান না, সন্তানের জেদের কাছে হার মেনে একটা সময় দিতে বাধ্য হন। যেই দাদী নানীরা নিজেদের সময় টিভি দেখতে চাওয়ার অপরাধে নিজের সন্তানকে দু ঘা লাগিয়ে দিতেন তারাও এখন নমনীয়। আচ্ছা, দুষ্টুমি না করে বসে তো আছে, থাক! তাও তো কিছুটা খাচ্ছে!
বেশী সমস্যায় পড়েন সেই অভিভাবকরা যারা আসলে স্ক্রিন টাইম দিতে চাচ্ছেন না। কোন কারণে দেওয়া হয়েছে এখন আর কোন ভাবেই এই বদঅভ্যাস ছাড়ানো যাচ্ছে না। আমার মেয়েটা এমন ছিল৷ ওর এখন ৩ বছর বয়স আলহামদুলিল্লাহ। ১.৫ বছর বয়স পর্যন্ত ওকে কোন রকম টিভি বা মোবাইলে কিছু দেখতে দেওয়া হয়নি। ও মাঝে মাঝে খাওয়া দাওয়া একরকম বন্ধ করে দিত। এরপর ওজন কম, এনিমিয়া এই সমস্যাগুলো ছিল।
আমি একজন চাইল্ড স্পেশালিষ্টের সাথে পরামর্শ করে ওকে ১৫ মিনিটের জন্য, দিনে তিনবার ট্যাবে বা টিভিতে আগে থেকে ডাউনলোড করা বাংলা কিছু কন্টেন্ট যেমন সিসিমপুর, আব্দুল বারী, ইসলামী গান ছেড়ে দিতাম। এগুলো দেখে আমার মেয়ে খাওয়া শেষ করতো। কিছুূদিন পর দেখা গেল ও আর পুরানো ভিডিওগুলো দেখতে চাচ্ছে না। নিত্যনতুন কনটেন্ট না দেখলে আর খাওয়া হচ্ছেনা।
সেই ধারাতে ওয়াইফই অন করে কোকোমেলন থেকে শুরু করে চুচু টিভি সহ নানা রকম দেশী বিদেশী ভিডিওগুলো দেখতে লাগল। কিছু শিক্ষা মুলক বিষয় থাকলেও না চাইতেই অনেক বিজাতীয় সাংস্কৃতি সে শিখে যাচ্ছিল যেমন দীপাবলি, ক্রিসমাস, হ্যালোইন। ওর ২ বছর বয়সে আমি ২য় বার কনসিভ করি আলহামদুলিল্লাহ ৷ তখন আমার শরীর খারাপ, ট্যাব দেখে খাওয়ার এই অভ্যাস আরও পাকাপোক্ত হয়ে গেল। ও ভাত খাওয়াকে ট্যাবের সাথে একদম জুরে দিয়েছিল। যেহেতু শুধু ভাত খাওয়ার সময় ট্যাব দেখতে দিতাম। ট্যাব দেখতে ইচ্ছা করলে বলত মা, ভাত খাব। না দেওয়ার চেস্টা করলে শুধুই কাঁদত । কোন ভাবেই আর খাওয়াতে পারতাম না৷ আমার শুধু কান্না পেত। ওর এই ছোট মস্তিষ্ক আজেবাজে কনটেন্ট দিয়ে ভরে যাচ্ছে মনে হলেই কষ্ট পেতাম৷
আমি আল্লাহর কাছে অনেক দোআ করতাম। মাঝে মাঝে ওয়াইফাই অপশন অফ করে আবার সেই ডাউনলোড করা ভিডিওতে নিয়ে যেতাম। কিন্তু বেশী দিন রাখতে পারতাম না। আবার সেই কান্নাকাটির কাছে পরাজিত হতাম।
বাবু হওয়ার পর আমি কঠিন ডিসিশন নিলাম। আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দোআ করলাম। ওকে আর এই সব দেখতে দিব না। তাহলে ছোটজনেরও একই অভ্যাস হবে। ওয়াইফাই অপশন একবারে বন্ধ করে দিলাম।
একই ভিডিও বার বার দেখে ও বিরক্ত হয়ে ট্যাব বন্ধ করে খেলতে চলে যেত। ওর অনেক খেলনা আর বই ছিল। সেগুলো নিয়ে ওর ভালো সময় কাটতো। কম ভাত খেলেও ব্যাপারটা আমার ভালো লাগতো। ওকে অন্যান্য নাস্তা হাতে নিয়ে খেতে দিতাম।
এই সময় আমার বাসায় একটা ফিডিং চেয়ার আনা হয়। এটা আমাকে অনেক বেশী সাহায্য করেছে। ও ফিডিং চেয়ারে বসে খেতে চাইত। ওর মনোযোগ ধরে রাখতে আমি ছবির গল্পের বই নিয়ে বসতাম। ওর পছন্দের বিষয়ের নতুন কতগুলো বই কিনলাম। এভাবে আস্তে আস্তে ওর ট্যাব দেখে খাওয়ার বদঅভ্যাসটা বদলাতে পেরেছি। এখন খাওয়ার সময় ছুটাছুটি করে, আগের চেয়ে কম খায়। আগে ট্যাবের সামনে খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকতো, চিবাতো না, গিলতো না আমি বিরক্ত হয়ে যেতাম, বকা দিতাম৷ এখন আর এইসব ঝামেলা হয় না।
আমি আসলে কাউকে কোন পরামর্শ দিতে আসিনি। এক একজনের পরিস্থিতি একেক রকম। আমার বাবুর স্ক্রীন এডিকশন কিভাবে ছাড়ালাম সেই গল্পটা বলতে এসেছি৷ পুরো প্রক্রিয়াতে আমার ৬ মাসের মত সময় লেগেছে। অনেক বেশী মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়েছে। কারন বকা ঝকা করলে এমন কান্নাকাটি করত ট্যাব না দিয়ে আর থামানো যেত না। আমি আস্তে আস্তে খাবারটা টেবিলে বসে সবার সাথে খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। যাতে খাওয়ার সময় অন্য কিছুর সাহায্য না লাগে। এমন অনেক মা আছেন যারা শিশুর এই বদঅভ্যাস দূর করতে চাচ্ছেন তাদের হয়ত এই গল্পটা উৎসাহিত করবে। আর আমাদের জন্য বারাকাহর দোআ করবেন।
ফারইয়াব হাসান
দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …
যেভাবে সন্তানকে ভালো রাখা যায়
আমার বাচ্চাটাকে কানাডাতে আলহা’মদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত রব্বুল আ’লামীন হিফাজতে রেখেছেন। আমি সাধারণত আমার বাচ্চাকে নিয়ে কখনও গর্ব করি না, তার ছবি পোস্ট করি না, খুব একটা কিছু লিখিও না। আল্লাহর আমানত, আমার অহংকার করার কিচ্ছু নাই। আজকে লিখছি, একটা বাচ্চা …