কিভাবে করবেন লেবার পেইন ম্যানেজমেন্ট
নরমাল ডেলিভারির প্রসঙ্গ আসলে অবশ্যই লেবার পেইনের কথা চলে আসে। অনেকে এই লেবার পেইনের কথা ভেবে ভয় পেয়েই নরমাল ডেলিভারি বেছে নিতে চান না। আবার অনেকে নরমাল ডেলিভারিতে আগ্রহী কিন্তু পেইন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে বিভ্রান্ত বোধ করেন। তাহলে কিভাবে করা যায় লেবার পেইন ম্যানেজমেন্ট?
লেবার যদিও কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিনের ব্যাপার কিন্তু এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় প্রেগন্যান্সি থেকেই। আপনি যত আগে থেকে প্রস্তুতি নেবেন তত প্রস্তুত থাকবেন। এই প্রস্তুতি হচ্ছে তিন ধরণের – শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক।
১। শারীরিক প্রস্তুতির মাঝে পরে সুষম পুষ্টি গ্রহণ। সুষম পুষ্টি গ্রহণ আপনার ও আপনার বাচ্চার সুস্থতায় সাহায্য করবে, অনেক রকম গর্ভকালীন ও লেবার-ডেলিভারিজনিত কমপ্লিকেশন এড়াতে আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি যত সুস্থ ও কম ঝুঁকির মাঝে থাকবেন আপনার নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা তত বেশি হবে। সুষম পুষ্টির পাশাপাশি আছে গর্ভকালীন ব্যায়াম। ব্যায়াম আপনাকে শারীরিক ফিটনেস এনে দিবে যা সিজারের সম্ভাবনা কমিয়ে আনবে ও লেবার পেইন সামলাতে আপনার যে শক্তি ও সহিষ্ণুতা প্রয়োজন তার জন্য আপনাকে প্রস্তুত করবে।
২। মানসিক প্রস্তুতির মাঝে পরে নরমাল ডেলিভারি ও লেবার পেইনের প্রতি আপনার ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা। আপনি এই প্রক্রিয়ার প্রতি যত ইতিবাচক মনোভাব রাখবেন তত এর সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য রিল্যাক্স থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। নেতিবাচক মনোভাব আপনার মাঝে লেবার পেইনের বিরুদ্ধে লড়াই করার তাড়না এনে দিবে এবং আপনার ব্যাথার অনুভূতি বাড়িয়ে দিবে। এই জন্য আপনাকে জানতে হবে লেবারের প্রতিটা ধাপের বিস্তারিত বর্ণনা এবং কখন কেমন লাগতে পারে ও আপনার প্রতিটি ধাপে কী করা উচিত।
৩। আত্মিক প্রস্তুতির মাঝে পরে লেবার পেইনকে আল্লাহর নির্ধারিত প্রক্রিয়া হিসাবে মেনে নিয়ে এর কাছে আত্মসমর্পন করা। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে একে নিজ গতিতে এগিয়ে যেতে দেয়া।
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন লেবার পেইন ম্যানেজমেন্টের জন্য আপনার প্রেগন্যান্সি থেকেই এই তিন ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই তিন ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে এরপর আপনি যখন লেবার পেইন ফেইস করবেন তখন আপনি থাকবেন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। এই আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার প্রয়োজন সহজ কিছু টেকনিক অনুসরণ করা যাতে লেবার পেইনে ব্যাথার অনুভূতি আপনার জন্য সহনীয় হয়ে ওঠে। এর মাঝে সেরা তিনটি টেকনিক হচ্ছে গভীরভাবে ব্রিদিং করা, সামনের দিকে ঝোঁকা পজিশন নেয়া ও হিপ রোটেশন করা।
লেবার পেইনের সময় গভীরভাবে ব্রিদিং করা আপনাকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রেখে রিল্যাক্স থাকতে সাহায্য করবে। এর ফলে ব্যাথা লাগার অনুভূতি প্রায় ৫০% কমে যায়!
সামনের দিকে ঝোঁকা পজিশন নেয়া প্রতিবার পেইনের সময় জরায়ুর প্রাকৃতিকভাবেই সামনের দিকে আসাকে সহজ করে দেয় ও আপনার ব্যথার তীব্রতা কমিয়ে দেয়।
হিপ রোটেশন করা আপনাকে নড়াচড়া করে পেইনের সময় কম্ফোর্টেবল হতে সাহায্য করে।
আল্লাহ যখন লেবার পেইনের মাধ্যমে মানব শিশুর জন্ম প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছেন তখন নিশ্চয়ই এর মাঝে আমাদের জন্য কল্যাণ আছে। মা ও শিশুর জন্য শারীরিক কল্যাণের পাশাপাশি রয়েছে মানসিক কল্যাণও যেখানে আত্মবিশ্বাসের সাথে লেবার পেইন মোকাবেলা করতে পারা মাকে ভবিষ্যৎ জীবনে চলার জন্যও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সেই সাথে এই পেইন ম্যানেজ করার উপায়ও আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। তাই সময় হয়েছে এই কল্যাণকর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে আমাদের জানা ও একে ম্যানেজ করতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার।
রাবেয়া রওশীন,
প্রিনাটাল ইন্সট্রাকটর, রৌদ্রময়ী স্কুল