ডায়াপার নিয়ে যত কথা
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date January 7, 2024
- Comments 0 comment
ডায়পার নিয়ে অনেকের অনেক ধরনের ভুল ধারণা আছে। নানান কথার ভয়ে, অনেকেই বাচ্চাকে ডায়পার পরাবে কি না; এ নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকে! অথচ ডায়পার তৈরিই করা হয়েছে শিশু ও মা’কে একটু আরাম দেবার জন্য।
একজন নবযাতক শিশুকে তার জন্মের দিন থেকেই ডায়পার পরানো যায়। সারাদিন না পরালেও, রাতের বেলা অন্তত ডায়পার পরালে বাচ্চা আরাম করে ঘুমাতে পারে। আর বাচ্চার ভালো ঘুম মানেই মায়েরও ভালো ঘুম।
ডায়পার পরালেই যে র্যাশ হয়, এ কথাটা ভুল। ডায়পারের কারণে কোন জটিল সমস্যা তৈরি হয় না। তবে কিছু নিয়ম মেনে ডায়পার ব্যবহার করলে ছোট খাটো সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়।
সেগুলো হলো –
ডায়পার বাছাই করতে হবে বাচ্চার ওজন, সাইজ এবং শোষণ ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। আপনার বাচ্চার সাইজ আপনাকেই বুঝতে হবে। এক এক বাচ্চার গ্রোথ এক একরকম হয়ে থাকে। প্রত্যেক ব্র্যান্ডের ডায়পার ওজন এর উপর ভিত্তি করে ক্যাটেগোরাইজ করা হয় এবং সে অনুযায়ী প্যাকেটের গায়ে সাইজ মেনশন করা থাকে।
সবসময় দামী ব্র্যান্ডের ডায়পার ভালো হবে, এমনটি নয়। অনেক মায়েরা সাশ্রয়ী মূল্যের ডায়পার থেকে ভালো সার্ভিস পেয়ে থাকে। ডায়পার ইউজ করার ক্ষেত্রে, আশেপাশে মায়েদের কাছ থেকে এবং মা ও শিশুদের গ্রুপগুলো থেকেও নতুন মায়েরা রিভিউ নিতে পারে। প্রথমে ৪-৫ পিসের প্যাকেট কিনে ব্যবহার করে ভালো রেজাল্ট পাওয়ার পর ৪০-৫০ পিসের প্যাকেট কেনাই ভালো।
বেল্ট অথবা প্যান্ট সিস্টেম যে কোন ডায়পার ব্যবহার করা যাবে। আজকাল ভালো ক্লথ ডায়পারও পাওয়া যায়। বাচ্চা যেটায় কম্ফোর্ট ফিল করে সেটাই ব্যবহার করতে হবে।
০-৫ মাস বয়সী বাচ্চারা খুব ঘন ঘন হিসু এবং পটি করে। তাই এ বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা না করে ডায়পার ভারী হলেই পরিবর্তন করে দেয়া উচিত। তবে ভারী না হলেও ৬-৮ ঘন্টার মধ্যে পরিবর্তন করতেই হবে। একটা ডায়পার এতো লম্বা সময় পরিয়ে রাখা উচিত নয়।
পটি করলে সাথে সাথেই পরিবর্তন করতে হবে। অল্প পটি করলেও পাল্টে দিতে হবে। পটি থাকা অবস্থায় সে ডায়পারে দীর্ঘক্ষণ রেখে দেয়া যাবে না। পটিতে জীবাণু থাকে যা বাচ্চাদের স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই বাচ্চা যতোবারই পটি করুক, প্রতিবার খুব ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে। কিছুক্ষণ পর নতুন ডায়পার পরাতে হবে।
যে সকল বাচ্চারা ঘন ঘন পটি করে দেয়, সেক্ষেত্রে একটু সাশ্রয়ী মূল্যের ডায়পার ব্যবহার করলে ক্ষতি নেই; যেহেতু ডায়পার ঘন ঘন চেন্জ করতে হচ্ছে।
এক ডায়পার পরিবর্তন করে নতুন ডায়পার পরানোর ক্ষেত্রে ১৫-২০ মিনিট গ্যাপ দেয়া উচিত অথবা দিনে কমপক্ষে ১-২ ঘন্টা। এতে করে জায়গাটা একটু রিল্যাক্সও থাকে।পরবর্তীতে বাচ্চার পটি ট্রেনিং করাতেও সুবিধা হয়।
অনেক সময় দেখা যায় ১-২ বছরের বাচ্চাকে একটা ডায়পার পরালে সেটাতে সে হিসু বা পটি, কিছুই করেনি। এ ডায়পারটা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। এতে র্যাশ হবার সম্ভাবনা থাকে। কারণ বাচ্চার শরীরের ঘাম সেখানে লেগেছে। বাচ্চাদের শরীর খুব সেনসিটিভ হয়। অনেকেই পুনরায় ব্যবহার করে থাকে। তাদের বাচ্চার কিছু না হলেও আপনার বাচ্চার হবে না, সে গ্যারান্টি কিন্তু নেই। প্রতিটি বাচ্চার স্কিন এর উপর ইফেক্ট হবে ভিন্ন রকম।
দিনে কমপক্ষে একবার, সম্ভব হলে প্রতিবার ডায়পার চেন্জ এর সময় শিশুর শরীরের ডায়পার এরিয়াতে ভালো ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করে দিতে হবে। যে কোন র্যাশ ক্রিমের চাইতে অলিভ অয়েল ভালো কাজ করে।
ছেলে বাচ্চার মায়েদের একটা অভিযোগ থাকে যে, ভালো ব্র্যান্ডের ডায়পারও নাকি লিক করে। এক্ষেত্রে হিসুর রাস্তা নিচের দিকে রেখে, ডায়পারটা ভালো করে পরাতে হবে। খেয়াল করতে হবে হিসুর পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না! ডায়পারের ভিতরের ম্যাটেরিয়ালস দু’পায়ের ভাজের কারণে চেপে যাচ্ছে কি না! এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে ডায়পার একটু ঘন ঘন চেন্জ করে দিতে হবে।
ডায়পার এর ব্যবহার নিয়ে অনেক কুসংস্কার এখনও আমাদের সমাজে আছে এবং থাকবে।
বাচ্চা এবং নিজের জন্য কোনটা ভালো হবে সেটা যাচাই করা নিজের দায়িত্ব। হতে পারে আগের দিনের মায়েরা ডায়পার ছাড়াই ১০-১২ জন সন্তান মানুষ করেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি, আবহাওয়া, বাচ্চাদের নেচার, মায়েদের ব্যাস্ততা সব মিলিয়ে প্রেক্ষাপট এখন ভিন্ন। তাই নতুন মায়েরা নিশ্চিন্তে আপনার সন্তানদেরকে ডায়পার দিতে পারেন।
সুস্থ থাকুক সকল মা ও শিশু।
ইশরাত জাহান তৃষা
রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল কোর্স
এসোসিয়েট ও পার্টিসিপ্যান্ট
Other post
You may also like
হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব: একজন মায়ের অনুপ্রেরণামূলক গল্প
আমি একজন দৌলা হিসেবে আজ একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প শেয়ার করতে চাই। আমার ক্লায়েন্ট আফরোজা আপুর ডেলিভারির অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক প্রস্তুতি ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব।আফরোজা আপু ন্যাচারাল বার্থের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। তার স্বামীও …
নরমাল ডেলিভারি: খুবই ভালো অভিজ্ঞতা
গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মত পুত্রসন্তানের মা হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। নরমাল ডেলিভারি ছিল, এক্সপেরিয়েন্স খুবই ভাল ছিল আল্লাহর রহমতে।গ্রুপের পোস্ট ফলো করতাম কনসিভ করার পর থেকেই। গ্রুপের পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। দায়িত্বশীল এবং সবার জন্য অনেক অনেক দু’আ।আমি দেশের …
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে নরমাল ডেলিভারির গল্প
সেপ্টেম্বর এর ১৪ তারিখ আলহামদুলিল্লাহ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমার প্রথম রাজকন্যার মা হলাম। আমার বার্থ স্টোরি শুরুর আগে আমি আমার কনসিভ করার আগের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই যাতে আমার মতো যারা একটু মোটা তারা কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত হোন ইনশাআল্লাহ। আমি …