সব গল্প সুখের হয় না
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Doula Service, Others
- Date January 7, 2024
- Comments 0 comment
তাসনিম মুশতারী তুবা আপুর সার্ভিস বেশিদিনের ছিল না। কিন্তু উনার ডেলিভারীর ঘটনা আমার মনে সব চেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। আপুর খুব খুব ইচ্ছা ছিল নরমাল ডেলিভারীর। কিন্তু কেন যেনো মনের জোর পাচ্ছিলেন না। সি সেকশনের কথা উঠলে খুব লো ফিল করতেন। হাজব্যান্ড সাপোর্টিভ থাকলেও উনার মা এবং শাশুড়িকে নরমাল ডেলিভারীর জন্য এক্সারসাইজ বা সেভাবে ডাক্তারের সাথে কথা বলা নিয়ে সাপোর্টিভ মনে হতো না।
আপু ৩৬ সপ্তাহে বার্থ প্ল্যান বানিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলেছিলেন। ডাক্তারকে তখন সাপোর্টিভ মনে হয়েছিল তবে এপিসিওটোমির ব্যাপারে আপোস করতে নারাজ ছিলেন।
৩৭ সপ্তাহের শেষের দিক। আপুর হঠাৎ ১০৩ ডিগ্রি জ্বর উঠে গেল। জ্বরের মধ্যেও আপু প্রিন্যাটাল কোর্সের নোট দেখছিলেন, আর কষ্ট পাচ্ছিলেন উনার ন্যাচারাল বার্থের স্বপ্ন নিয়ে। ডাক্তারকে জানালেও উনি গা-ছাড়া ভাব দেখালেন, ঠিক মত কথাও বললেন না। সম্ভবত আপুর লাস্ট ভিজিটে ন্যাচারাল বার্থ নিয়ে কথা বলায় বিরক্ত ছিলেন। তিনি মেডিসিনের ডাক্তার দেখাতে বললেন।
ফ্যামিলির মানুষজন আপুর এই দুর্দশার জন্য আপুকেই দুষলেন। আপুর “মাতব্বরি”তে ভালো ডাক্তার নাকি বিগড়ে গিয়েছেন। আপুর হাসবেন্ডের কানও ভারী করা হলো। সেই সাপোর্টিভ ভাইয়াও আপুর ওপর রাগ করলেন। আরেকজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলো। আল্ট্রাতে বেবির tachycardia (হার্টবিট বেশি) ধরা পড়ল। ডাক্তার বললেন ইমিডিয়েটলি ভর্তি হয়ে জ্বর কমাতে হবে। ভর্তি হলে, বেবির হার্টবিট দেখা গেল ঠিক আছে। ডাক্তার সিজারের জন্য ওটি রেডি করে আসলেও মত বদলালেন, বললেন জ্বর ভালো হলে বাড়ি চলে যেতে, ওয়েট করতে। আপু আবার আশা দেখলেন। কিন্তু ভর্তি হবার পরের দিন ডাক্তার চেক করতে এসে দেখলেন হার্টবিট কম। এবং তখনই আপুকে সিজারের জন্য প্রিপেয়ার করা হল।
ডেলিভারীর কয়েকদিন পর আপু মেসেজ দিলেন:
“আমি আমার পড়াশোনার কোন কিছুই এপ্লাই করতে পারি নি আপু। সব গতানুগতিক নিয়মেই হয়েছে। আমি একজন ব্যর্থ মা। ডাক্তারকে কর্ড দেরিতে কাটতে বললাম শুনলেন না, ক্যাঙ্গারু কেয়ার ত করতেই দেয় নি। আমাকে ওটি থেকে বের করার আগেই সবাই মিলে বাবুকে ফর্মুলা দিয়ে দিয়েছে।”
এটা পড়ার পর আমি আপুকে সান্তনা দিলাম ঠিকই, আশার কথা বললাম ঠিকই, কিন্তু আমার মনটা যেনো দুমড়ে মুচড়ে গেল। বহুদিন লেগেছে আমার এই ঘটনা থেকে হওয়া বিষন্নতা থেকে বের হতে।
কেউ তার পাশে সেদিন ছিলেন না।
গল্পটা এখানে শেষ হতে পারতো।
দেড় মাস পর আপু বললেন আপুর আফসোসের কথা।
কেন আপু দৌলা সাপোর্ট আরো আগে থেকে নিলেন না। ন্যাচারাল ডেলিভারীর ক্লাসগুলো মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল, আর সি-সেকশনের ক্লাসগুলো নামেমাত্র করেছিলেন।
এই ট্রমা থেকে, ফ্যামিলির প্রভাব থেকে হওয়া অপরাধবোধ থেকে বের হয়ে মাতৃত্বের স্বর্গে পদার্পণ করতে ৩-৪ মাসের মত সময় লেগেছে। এ সময় যখন কথা হল, বললেন সেসব ভুলে মেয়ের বেড়ে ওঠাটা উপভোগ করছেন আলহামদুলিল্লাহ। সাথে আরো একটি চমৎকার বিষয় জানালেন। মনে আছে বলেছিলাম মেয়েকে হওয়ার পরপরই সবাই জোর করে ফর্মুলা খাইয়ে দিয়েছিল? টানা দুই মাস লড়াই করে, দুআ করে শেষ পর্যন্ত ব্রেস্টফিডিং এস্টাব্লিশ করতে পেরেছেন।
“ওসব এখন ভুলে গেছি আপু, আপাতত যাইনাবের বেড়ে ওঠাটা এনজয় করছি আলহামদুলিল্লাহ।
জাযাকাল্লাহু খাইর আপু, আপনার দেয়া মানসিক সাপোর্ট গুলো ভুলবো না।
ইনশাআল্লাহ নেক্সট পেগনেন্সিতেও আপনার কাছ থেকে দৌলা সার্ভিস নিব। দৌলার সার্ভিস দেয়া মানে নরমাল ডেলিভারি হবেই হবে এমন না। মানসিক একটা সাপোর্ট যে কত বড় জিনিস।
নেক্সট বার আশা করি আল্লাহ নিরাশ করবেন না আমাকে।
একটা সুখবর আছে আপু,দুই মাস চেষ্টা + দুআর পরে আল্লাহর হুকুমে যাইনাবের ব্রেস্ট ফিডিং টা স্টাবলিস্টড হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
মনে মনে ভাবছিলাম, নরমাল ডেলিভারি হলো না, এখন মেয়েটাকেও কি ফর্মুলা দিতে হবে!
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি।”
এখান থেকে বেশ কিছু শিক্ষা আমার হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
১. ব্রেস্টফিডিং ভালোভাবে শুরু না হলেও লেগে থাকলে পরবর্তীতে ব্রেস্টফিডিং এস্টাব্লিশ করা সম্ভব, তাতে যদি ২ মাস লাগে তাও।
২. দৌলা সাপোর্টের সার্থকতা কেবল ন্যাচারাল বার্থে না। মানসিক সাপোর্টটাও মুখ্য একটা ব্যাপার। যেই মা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, চারপাশে কাউকে পাচ্ছেন না – তার জন্য এই সাপোর্ট আরো বেশি প্রশান্তিদায়ক, আরো বেশি প্রয়োজন।
৩. ডাক্তার ন্যাচারাল বার্থ সাপোর্টিভ কিনা এটা বুঝার জন্য প্রেগন্যান্সির শেষের দিকের জন্য অপেক্ষা করবেন না। প্রথমেই এ বিষয়ে কথা বলবেন। ডাক্তারের মন জয় করলে উনি নরম হতে পারেন, বা প্রশ্নে/অনুরোধে রাগ করবেন না – এ ধারণা ভুল ভুল ভুল!
৪. দুঃসময়ের পর সুসময় আসবেই। No winter lasts forever and no spring skips it’s turn.
৫. প্রথম থেকেই, প্রেগন্যান্সির আগে থেকেই চেষ্টা করবেন ফ্যামিলিকে ন্যাচারাল বার্থ সম্পর্কে বুঝাতে, আপনার পক্ষে নিতে। একেবারেই সম্ভব না হলে আপনার দৌলাকে দিয়ে কথা বলাতে পারেন। ফ্যামিলি সাপোর্ট খুব ইম্পরটেন্ট একটা ফ্যাক্টর
৬. তাক্বদীরে কি আছে আমরা জানি না। আল্লাহ্ আপনার জন্য কি ভালো মনে করছেন আমরা জানি না। সুতরাং ওপেন মাইন্ডেড হবার চেষ্টা করবেন, এবং এ জাতীয় সব বিষয়েই জ্ঞান অর্জন করে রাখবেন। আল্লাহর decree তে বিশ্বাস করবেন।
৭. লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, আপনি যে পড়াশোনা করলেন, এক্সারসাইজ করলেন, বাচ্চার জন্য, নিজের জন্য – এই চেষ্টা কখনো বিফলে যাবে না, বিশ্বাস করেন! আপনি কখনোই ব্যর্থ মা নন। আপনি চেষ্টা ও দুআ করতে থাকেন। হাল ছাড়বেন না! আল্লাহ্ দেখছেন যে আপনি কষ্ট করছেন। আল্লাহ্ আপনাকে নিরাশ করবেন না।
আমার খুব পছন্দের এক শিক্ষক বলতেন:
“No honest effort ever gets unrewarded.”
I have seen this to be true again, and again, and again.
সালসাবিল কাওসার
দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …