পেলভিক প্রলাপ্স-জরায়ু কি নিচে নেমে গেছে?
প্রেগ্ন্যাসিতেই আমাদের পেলভিক এরিয়ার গঠন সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়, এখানে যে মাসল গুলো থাকে, এখানে যে উঁচু নিচু জায়গা বা কার্ভ গুলো থাকে, এগুলো খুব অন্যরকম হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে, বাচ্চাটা বের হওয়ার জন্য জায়গা করে দেয়া। ও-ই চেঞ্জ ধরে বা হাত দিয়ে অনেকে মনে করে জরায়ু মুখ খুলেছে, অনেকে মনে করে জরায়ু বের হয়ে গেছে। এই চেইঞ্জ বাচ্চা হবার পরেও কন্টিনিউ থাকে, ও-ই জায়গাটা বড় হয়ে যায়, কার্ভের নেচারগুলো চেইঞ্জ হয়ে যায়। এগুলো আবার নরমাল পজিশনে আগের মতো আসতে আপনার দুই বছর সময় লাগবে। সুতরাং আপনি ৬ মাস আগেই যদি ওখানে হাত দিয়ে খুব টেনশন করতে থাকেন, এটার গঠন এরকম কেন হচ্ছে, আগে তো এরকম ছিলো না, তাহলে এটা পুরোপুরি ভুল একটা ধারণা হবে। তাই ওখানে আপনি হাত দিয়ে ধরে এধরণের কিছু চিন্তা করবেন না। তাহলে আপনি কখন চিন্তা করবেন আপনার এটা নেমে গেলো কিনা, কি কি লক্ষণ আসলে এই জিনিসটাকে ডিটারমাইন করবে?
লক্ষণ
প্রথমত: আপনি যখন হাঁটছেন, অর্থাৎ হাঁটাচলার সময় মনে হবে পেলভিক এরিয়ায় কিছু একটা নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে, ভারী ভারী হয়ে আছে।
দ্বিতীয়ত: আপনি যদি লো কমোড ইউজ করেন, তাহলে কমোডে বসলে মনে হবে যেন কিছু একটা বের হয়ে আসছে। যেমন বাচ্চা বের হবার সময় যে ধরনের ফিলিংস, ওইধরনের কিছু একটা ছোট খাটো জিনিস বের হয়ে আসছে। সো এটা পুরোটাই অনুভবের বিষয়, হাত দিয়ে ধরার বিষয় না।
তৃতীয়ত: পেলভিক এরিয়াতে বেশি বা অল্প পেইন হতে পারে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সহবাসে সমস্যা হওয়া। যেহেতু জরায়ুটা নিচে নেমে আসবে, স্বাভাবিকভাবেই সহবাসের সময় আঘাত লাগবে, অস্বস্তি তৈরি হবে, ব্যাথা তৈরি হবে।
আরও কিছু সিম্পটমস থাকে, যেমন প্রস্রাব আটকে আটকে যায়, সহজে বের হতে চায়না, একটু বের হওয়ার পরে আবার আটকে যায়, ব্যাথাও হতে পারে।
আবার পায়খানা ও আটকে যেতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য না, নরমাল পায়খানাই আটকে যাচ্ছে, এটাও হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এই ধরনের সমস্যা গুলো আরও বেশি বেড়ে যায়, সেকারণে আমরা বলি, ডেলিভারির পরে অবশ্যই কোষ্ঠকাঠিন্য এভয়েড করতে হবে। প্রয়োজনে ঔষধ খেতে হবে, এবং এমন খাবার খেতে হবে যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়।
প্রতিকার
প্রথমেই দেখবো, কিভাবে যাতে প্রলাপ্স না হয়। আমার ডেলিভারি যদি খুব স্মুথ যায়, কিন্তু ডেলিভারি পরবর্তী কেয়ার, যেমন খাবার দাবার সম্পর্কিত, যেমন প্রোটিন যদি না থাকে, সেলাই টা যদি ভালো না হয়, ডেলিভারির পর পর খুব দ্রুত যদি আমি কাজে ফিরি, ভারী কাজ করা, ভারী জিনিস উঠানো, নিচে বসে স্কোয়াট পজিশানে বসে অনেক বেশি কাজ করা, কোষ্ঠকাঠিন্য যদি হয়, ডেলিভারির পর ২ বছরের মধ্যেই আবার কন্সিভ করে ফেললে, সেক্ষেত্রে জরায়ুর উপর যে এক্সট্রা প্রেসার আসে, সেটার কারণে ও প্রলাপ্স হতে পারে।
এখন, আমি যখন বলবো, পিঠাপিঠি বা কম গ্যাপে বাচ্চা হলে প্রলাপ্স হতে পারে, তখনই একদল মানুষ এসে বলবে, আমার পিঠাপিঠি হয়েছে, আমার কিছু হয়নি। দেখুন, আপনারা হচ্ছেন একজন ইন্ডিভিজুয়াল, একজনের এক্সপেরিয়েন্স কিন্তু দশ কোটি মানুষকে রিপ্রেজেন্ট করেনা। সুতরাং এই ধরনের কথা বলাটা পুরোপুরি জ্ঞানহীন। কারণ আমরা যখন কথা বলি, রিসার্চ বেইজড কথা বলি, আপনারা যেটা বলছেন, সেটা নিজেদের এক্সপেরিয়েন্স এর ভিত্তিতে, কোনো ধরনের রিসার্চ ছাড়া। সেটা সবার জন্য সারাংশ হবেনা।
আগের কথায় ফিরি। প্রলাপ্স প্রিভেন্ট করতে পোস্ট ডেলিভারি মায়েদের আমরা কেগেল এক্সারসাইজ করতে বলি, গুগল থেকে জেনে নিতে পারেন যে কিভাবে কেগেল এক্সারসাইজ টা করে।
আর যদি প্রলাপ্সের যে লক্ষণগুলো বললাম, এগুলো দেখা যায়, তাহলে আপনার কাজ হচ্ছে অবশ্যই আপনার গাইনি ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করা। যদি সেটা ফার্স্ট অথবা সেকেন্ড ডিগ্রিতে থাকে, তাহলে আমরা এক ধরনের ম্যানেজমেন্ট দিবো, আমরা চেষ্টা করবো ন্যাচারালি কিছু জিনিসের মাধ্যমে সেটাকে টেনে সাময়িক ভাবে উপরে রাখার। কিন্তু যদি থার্ড ডিগ্রি হয়, বা এমন হয় যে বের হয়ে এসেছে, এটাকে আর আগের জায়গায় পাঠানো সম্ভব না, তাহলে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সার্জারি আছে, চেষ্টা করা হয় সার্জারি করে আগের জায়গাতে রাখতে। আর যদি সেটাও সম্ভব না হয়, তাহলে অনেক সময় জরায়ু ফেলে দেয়ার মতো অবস্থা চলে আসে। সুতরাং এটা খুবই সিরিয়াস একটা বিষয়।
এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে, এটা নিয়ে বাসায় বসে থাকা একেবারেই উচিত হবেনা। এক্ষেত্রে অন্যের পরামর্শ যেমন হোমিও খাওয়া বা এই সেই ঔষধ খাওয়া যথাসম্ভব এভয়েড করা। কারণ, অমুক তমুকের হোমিও এলোপ্যাথি তে ভালো হয়ে গেছে, ব্যাপার টা এমন, কারো যদি ফার্স্ট ডিগ্রিতে থাকে, তাকে কোনো সার্জিক্যাল ম্যানেজমেন্ট দেয়া হয়না, সে হোমিও খাক বা না খাক, কিছু এক্সারসাইজ বা পদ্ধতি অবলম্বন করলে এমনিতেই তারটা জায়গায় চলে যাবে। কিন্তু আপনি আরেকজনের পরামর্শে হোমিও খেলেন কিন্তু আপনার টা ধীরে ধীরে থার্ড ডিগ্রির দিকে চলে গেলো, তখন আপনাকে সার্জারির দিকে কিন্তু যেতেই হবে। তাই মাঝখানের অংশে সময় নষ্ট করে কোনো লাভ নেই।
এখানে কোনো ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে খারাপ বলা হচ্ছেনা। অনেকে বলতে পারেন হোমিওর ইফেক্ট আছে। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, এটা একটা সিরিয়াস ইস্যু, এখানে এর ওর কথা ধরার কোনো মানে নেই। আমার উল্লেখিত লক্ষণগুলো আপনার মনে হলে, আপনাকে অবশ্যই গাইনি ডাক্তার এর কাছে গিয়ে জানতে হবে এটা কত ডিগ্রি হয়েছে, কি করতে হবে। এটা যথেষ্ট সিরিয়াস একটা বিষয়, বিভিন্ন রকম ভাবে পরীক্ষা করতে হয়।
আশা করি, প্রলাপ্স নিয়ে আপনাদের ধারণা এখন একটু ক্লিয়ার হবে।
আমি আবারো সামারাইজ করে বলবো, নিচে হাত দিয়ে কোনো কিছু বুঝা সম্ভব না যে, প্রলাপ্স হয়েছে কিনা, যদি পুরোপুরি বের হয়ে যায়, সেটা আপনি চোখেই দেখতে পাবেন।
আর যদি সেকেন্ড বা ফার্স্ট ডিগ্রি হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার কিছু সিম্পটমস আসবে, হাঁটাচলার সময়, স্কোয়াট পজিশানে বসলে কিংবা লো কমোডে বসলে, একটা কিছু নেমে আসার অনুভূতি হবে, ভ্যাজাইনা ব্লক করে আছে মনে হবে।
প্রস্রাব এবং পায়খানা রিলেটেড কিছু সমস্যা হবে, সহবাসে সমস্যা হবে, একধরনের পেইন আসবে পেলভিক এরিয়াতে।
ভালো করে বুঝার জন্য পোস্ট টা আবার পড়বেন, গুগল, ইউটিউবে অনেক ডক্টররা বুঝিয়েছেন, সেগুলো দেখবেন। জানার কোনো বিকল্প নেই।
ডাঃ নুসরাত জাহান প্রমা,
রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্স ইন্সট্রাকটর
–