মাতৃত্ব যেভাবে আমাকে অন্য মা’দের নিয়ে ভাবতে শেখালো
ন্যাচারাল চাইল্ড বার্থের যে জ্ঞান আমাকে আল্লাহর সৃষ্টির নিপুণতা সম্পর্কে উপলব্ধি করিয়েছে এবং আমার আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে সেটা আমি রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল ক্লাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের মায়েদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য খুবই এক্সাইটেড হয়ে অপেক্ষা করছি।
আত্মসমর্পণ ও আত্মবিশ্বাসের এই অভাবনীয় সুন্দর জগতে সকল প্রেগনেন্ট মায়েদের জানাই স্বাগতম।
জীবনে চাইল্ড বার্থ এডুকেটর হতে চাইব এটা আমার অলীক কল্পনাতেও ছিল না। পড়াশোনা করেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টে। বিয়ের পর হাসবেন্ডের সাথে নিউজিল্যান্ডে যাওয়া।
সেখানে দ্বিতীয় প্রেগনেন্সির সময় ন্যাচারাল বার্থ নিয়ে লেখা বই “আমানি বার্থ” ও সাথে চাইল্ড বার্থ ক্লাসের আরো বেশ কিছু মেটেরিয়ালস পড়ার সুযোগ হয়। আমার সেকেন্ড ডেলিভারির অভিজ্ঞতা অত্যন্ত চমৎকার ছিল, আলহামদুলিল্লাহ।
সেই পড়াশোনা ও ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীতে ২০১৭ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রেগনেন্সি ওয়েবসাইট “মাতৃত্ব”-র সাথে লেখালেখি শুরু করি। মনে সুপ্ত কিন্তু তীব্র একটা ইচ্ছা ছিল যে সুযোগ পেলে আমানি বার্থের সাথে চাইল্ড বার্থ এডুকেটর কোর্সটা করব ইনশাল্লাহ।
প্যানডেমিকের সময় প্রথম আমানি বার্থ অনলাইনে ওদের কোর্স অফার করে, আলহামদুলিল্লাহ। ২০২০ সালের জুন মাসে ‘আমানি বার্থ’ চাইল্ড বার্থ এডুকেটর হিসাবে কোর্স শুরু করি। কোর্সের অংশ হিসাবে ২১ ঘণ্টা ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ড করতে হয়েছে।
বর্তমানে জার্মানিতে আছি, তাই কোর্সের অংশ হিসাবে একজন জার্মান প্রেগন্যান্ট মা’কে ‘আমানি বার্থ’ চাইল্ড বার্থ কোর্সের ১০টি ক্লাস প্র্যাকটিক্যাল করিয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।
ন্যাচারাল বার্থ ও ব্রেস্টফিডিং-এর উপর কয়েকটি বই পড়তে হচ্ছে কোর্সের অংশ হিসাবে। সব বই পড়া শেষ হলে ফাইনাল এক্সাম দিতে হবে ইনশাল্লাহ।
পাঠক নিশ্চয়ই ভাবছেন “আমানি বার্থ” কি?
“আমানি বার্থ” এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন আয়িশা হাজার নামের একজন আমেরিকান রিভার্ট মুসলিমা। তিনি একজন পেশাদার মিডওয়াইফ, প্রাকৃতিক প্রসব বিষয়ের প্রশিক্ষক অর্থাৎ Natural child birth educator ও দৌলা, ব্রেস্টফিডিং কাউন্সিলর, আট সন্তানের জননী- যাদের প্রত্যেকে প্রাকৃতিক প্রসবের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে, মাশাআল্লাহ।
উনি নিজেই আমার জন্য একটি বিশাল অনুপ্রেরণা। ন্যাচারাল বার্থ নিয়ে আমাকে জানানোর জন্য আমানি বার্থ বইটা যে মুসলিম বোন আমার হাতে প্রথম তুলে দিয়েছিলেন তাকেও আমি কখনো ভুলব না ইনশাআল্লাহ।
কোর্সের অংশ হিসেবে ন্যাচারাল বার্থ নিয়ে পড়তে গিয়ে জ্যানেট বালাস্কাসের লেখা ‘একটিভ বার্থ’ বইয়ের ডেডিকেশনের জায়গায় এসে আমি নিজেকে খুঁজে পেলাম- তিনি বইটা সেই সব মেয়েদের প্রতি ডেডিকেট করেছেন যারা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে চাইল্ড বার্থকে পুনরাবিষ্কার করেছে, নিজেরা যা শিখেছে তা অন্যদেরকে জানিয়েছে, গর্ভধারিণী হিসেবে নিজেদের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করতে অন্য মেয়েদের সাহায্য করছে।
প্রেগনেন্সি ও চাইল্ড বার্থের ক্ষেত্রে আরেকজন অভিজ্ঞ মায়ের থেকে পাওয়া প্রজ্ঞার মূল্য অপরিসীম। সর্বোপরি, গর্ভবতী মা যখন নিজের শরীর এবং সন্তানের ব্যাপারে নিজের ইনটুইশনের প্রতি নজর দেন তখন আশপাশের অনেক ডিস্টার্বেন্স এড়িয়ে গিয়ে তিনি নিজের ও নিজের সন্তানের জন্য যে সিদ্ধান্তটা ভালো হবে সেটা নিতে সক্ষম হন।
কিন্তু প্রেগনেন্সি ও চাইল্ড বার্থের সেই নাজুক সময়ে আশপাশের ডিস্টার্বেন্সকে ছাপিয়ে নিজের ইনটুইশনের প্রতি ফোকাস করাটা সত্যিই খুব সহজ না। এই কাজটা মায়ের জন্য তুলনামূলক সহজ হয়ে যায় যখন তিনি প্রেগনেন্সি ও চাইল্ড বার্থের ন্যাচারাল দিকগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।
দুঃখজনকভাবে আমরা এখন সমাজের অভিজ্ঞ মা বা আমাদের কেয়ার প্রোভাইডারদের কারো থেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে জানতে পারি না। সন্তান ধারন, প্রসব এবং খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আল্লাহ মেয়েদের শরীরকে যে নিপুন ডিজাইনে তৈরি করেছেন তার উপর আস্থা রাখতে আমরা ভুলে গিয়েছি। আমাদের আস্থার জায়গাটা আল্লাহ এবং তাঁর তৈরী আমাদের এই নিপুন শারীরিক ডিজাইন থেকে সরে গিয়ে কৃত্রিমতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
এখানেই মূলত চাইল্ড বার্থ ক্লাস করার প্রয়োজনীয়তা চলে আসে, যা আমাদেরকে প্রেগনেন্সি ও লেবারের প্রাকৃতিক দিকগুলো সম্পর্কে জানাবে এবং এর উপর আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে ইনশাআল্লাহ।
রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল ক্লাসে আমি কথা বলব নরমাল ডেলিভারির জন্য শরীরকে উপযোগী করার ও বাচ্চাকে অপটিমাল ফেটাল পজিশনে আনার বিভিন্ন এক্সারসাইজ নিয়ে, লেবার কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে আপনি লেবারের সাথে লড়াই না করে এর সাথে তাল মেলাতে পারেন সেটা নিয়ে, লেবারের সময় হরমোনের গুরুত্ব সহ আরো অনেক কিছু নিয়ে, ইনশাআল্লাহ।
– রাবেয়া রওশীন
Child birth Educator (Trainee), AMANI Birth