নবজাতকের পটি সমাচার
নতুন মা মাত্রই এই বিষয়ে জানতে নড়েচড়ে বসবে। আর বাকিরা হয়তো হা হা হি হি করবে। তো যা ই হোক। বাচ্চা জন্মের পর তার পটি নিয়ে নানান সমস্যা চলে। পটি রং কালো কেন, পটি এমন তরল কেন, এতবার পটি করে কেন, ৩ দিন ধরে পটি করেনা কেন , একটু একটু পটি কেন, এত বেশি পটি কেন?? নানা প্রশ্ন মায়ের মাথায়। মা হিসেবে প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। বাচ্চা যখন মোচড় দেয়, মায়ের বুকও আরো বেগে মোড়চ দেয়।
তাই আসুন কিছু জিনিস ক্লিয়ার হই।
• বাচ্চা হওয়ার পর প্রথম ৩-৭ দিন পটির রং কালো থাকে। পরে হলুদ বা কিছুটা সবুজ, কখনও একদম সবুজ বর্ণ ও হতে পারে।
• প্রথম ৩ মাসে বাচ্চা প্রতিদিন ১২-১৬ বার পর্যন্ত ও পটি করতে পারে। এটা স্বাভাবিক। ভয়ের কিছু নেই। ধীরে ধীরে বাচ্চার খাওয়ার পরিমাণ বাড়বে এবং পটির ফ্রিকোয়েন্সী কমে আসবে ইনশাআল্লাহ।
• বাচ্চার পটি একদম তরল হতে পারে। তরল হলেই তা ডায়রিয়া না। ডায়রিয়া তাহলে বুঝব কিভাবে? ডায়রিয়া হলে বাচ্চা দুর্বল হয়ে যাবে। স্বাভাবিক মুভমেন্ট থাকবে না। নিস্তেজ মনে হবে। এরকম মনে হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
• বাচ্চা একটু একটু করে বায়ুর সাথে পটি ছাড়তে পারে। ছোট বাচ্চার বার্প / ঢেকুর ঠিকমত তোলা না হলে গ্যাসের কারণে এমন হতে পারে।
• অনেক বাচ্চা শরীর মোচড়ায় বেশি। মোচড়ামুচড়ি করাও বাচ্চার একটা স্বাভাবিক শারীরিক ভঙ্গিমা। মোচড়ানো দেখে অনেকে খুব চিন্তায় পড়ে যান।
অথচ শুয়ে থাকা অবস্থায় কাঁদতে হলে,পায়খানা করতে হলে এত ছোট শরীর না মুচড়িয়ে উপায় নেই।
• এক্সক্লুসিভলি ব্রেস্ট ফিড বেবি ৭ দিন পর্যন্ত পটি না করলেও চিন্তার কিছু নেই ইনশাআল্লাহ। এটাও স্বাভাবিক। ৭দিন পরও পটি না করলে তারপর ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
• বাচ্চা পটি করেনা বলে বাচ্চার পায়ুপথে সরিষার তেল দিয়ে পানের বোঁটা দেয়া যাবে না একদম। এতে ভবিষ্যতে বাচ্চার পায়ুপথে পাইলস বা অন্য সমস্যা হতে পারে। এবং বাচ্চা পানের বোঁটা বা সাপোজিটরির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে৷
দেরি হচ্ছে মানেই কোষ্ঠকাঠিন্য না৷ সলিড খাবার শুরুর আগে বাচ্চার সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। বাচ্চাকে ন্যাচারালি বড় হতে দিন।
পটি সংক্রান্ত এসকল সমস্যা বাচ্চাদের প্রথম তিনমাসে হয়ই। মায়ের মনকে শক্ত করে এসব মেনে নিতেই হবে। বাচ্চা একটু মোচড় দিলেই ডাক্তারের কাছে দৌড় দেয়া বা ওমুক তমুকের কথা শুনে ওষুধ খাওয়ানো/ উল্টাপাল্টা কাজ করা/ বিভিন্ন টোটকা ব্যবহার করা এসব একদমই উচিত না। অযথা ওষুধ খাওয়ালে ভবিষ্যতে বাচ্চার মেটাবলিজম সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসবে বাচ্চার কষ্টই শুধু বাড়ে। তাই শুধু একটু ধৈর্য রাখুন। মা দের ঘাবড়ে যাওয়া থেকে এখন অনেক ডাক্তার বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে দেন। কিন্তু মা হিসেবে বাচ্চাকে ভালো রাখতে চাইলে প্রাকৃতিক ভাবে তাকে বড় হতে দেওয়ার কোন বিকল্প নেই৷ এসব কোন সমস্যা না। এগুলো তার বেড়ে ওঠার অংশ যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে৷
নিজের সন্তানকে আবিষ্কার করুন৷ আপনার বাচ্চা ৩-৪ দিন পর পর পায়খানা করলে এটাই তার পটি করার প্যাটার্ন।
কিংবা দিনে ১২ বার একটু একটু করলে এটাই তার পটির প্যাটার্ন।
তবে যদি এরকম হয় যে, বাচ্চা পটি করছে না, পায়ুপথে বাতাসও ছাড়ছে না এবং পেট ফুলে গিয়ে একদম শক্ত হয়ে আছে। সাথে বমি করছে, খাচ্ছে না৷ খেলেই কাঁদছে, কান্না করতে গিয়ে নীল বা কালচে হয়ে যাচ্ছে।
এমন কিছু দেখলে তাহলেই শুধু মাত্র জরুরি ভাবে ডাক্তার দেখানো দরকার। এছাড়া উপরিউক্ত বাকিসবই স্বাভাবিক।
বাচ্চার এসকল সমস্যায় কিছুটা আরাম দিতে নিয়মিত খাওয়ার পরপরই ঢেকুর তোলাতে হবে। বাচ্চার পেটে ম্যাসাজ এবং সাইক্লিং এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। বাচ্চাকে টামি টাইম দিতে হবে। অর্থাৎ পেটে ভর দিয়ে কিছু সময় রাখতে হবে।
নিজের অভিজ্ঞতা এবং পড়াশোনা থেকে অর্জিত জ্ঞান থেকে লিখলাম। আশা করি নতুন মায়েরা উপকৃত হবেন।
আমাদের মা দের আরো জানতে হবে, নিজেদের জ্ঞান বাড়াতে হবে, সেগুলো ইমপ্লিমেন্ট করা শিখতে হবে। প্যানিকড হয়ে, কেঁদে কোন লাভ হবে না৷ বাচ্চার উত্তম তারবিয়াতের জন্যই আমাদের এত এত পুরস্কার আল্লাহ দিবেন।
শুরুটা তাহলে শুরু থেকেই হোক৷
Tag:potty