পেরিনিয়াল টিয়ার কী?
পেরিনিয়াল টিয়ার কী?
এই প্রশ্নের উত্তরের আগে জানতে হবে পেরিনিয়াম বলতে ঠিক কোন অংশ বোঝায়। সহজ ভাবে বলতে গেলে ভ্যাজাইনা থেকে শুরু করে এনাস(পায়ুছিদ্র) পর্যন্ত অংশ পেরিনিয়াম এর অন্তর্ভুক্ত। পেরিনিয়াম এর সবচেয়ে বাইরে আছে স্কিন/চামড়া। ভেতর দিকে থাকে মাসেল, রক্তনালি ইত্যাদি সহ আরও কিছু স্ট্রাকচার।পেরিনিয়াল টিয়ার হচ্ছে এই পেরিনয়ামের ছিঁড়ে যাওয়া। এর অন্যতম কমন কারণ হচ্ছে নরমাল ডেলিভারি। এখন কথা হচ্ছে সব পেরিনিয়াল টিয়ারই কি খারাপ?
পেরিনিয়ামে কী কী অংশ ছিঁড়ে যাচ্ছে সেটার উপর ভিত্তি করে পেরিনিয়াল টিয়ার কে ৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়।
১ম ডিগ্রি টিয়ার
এই টিয়ারে শুধুমাত্র পেরিনিয়ামের উপরের স্কিন/চামড়া ছিঁড়ে যায়। এই টিয়ার রিপেয়ারে খুব কম সময় লাগে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কোন সেলাই ও লাগে না। আর হিলিং এর টাইমও অনেক দ্রুত।
২য় ডিগ্রি টিয়ার
এখানে পেরিনিয়ামের স্কিন এর সাথে ভেতরের মাসেল ও টিয়ার হয়। আমরা যে এপিশিওটমির কথা শুনে থাকি, সেটা হচ্ছে এই ২য় ডিগ্রি টিয়ার। তবে ন্যাচারাল টিয়ারে শুধু কোষ/ সেলে টিয়ার হয়, যেখানে এপিশিওটমি তে সেল, মাসল, মিওকোসা তিন লেয়ারেই টিয়ার হয়। এই টিয়ার রিপেয়ার এবং হিলিং এ কিছুটা সময় বেশি লাগে ১ম ডিগ্রি টিয়ার থেকে। তবুও ১ম আর ২য় ডিগ্রি টিয়ারকে আমরা মাইনর টিয়ার ধরি।
৩য় ডিগ্রি টিয়ার
পেরিনিয়াম স্কিন, এরপরের মাসল থেকে শুরু করে, ভিতর দিকের এনাল স্ফিংটার(এনাস / পায়ুছিদ্রের পেশি) পর্যন্ত ছিড়ে যাওয়া হচ্ছে ৩য় ডিগ্রি টিয়ার।
৪র্থ ডিগ্রি টিয়ার
পেরিনিয়াল টিয়ার যখন একদম ভিতর দিকে রেক্টাম/মলাশয় পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, সেটাই হচ্ছে ৪র্থ ডিগ্রি টিয়ার। তার মানে ৩য় ডিগ্রি টিয়ার হয়ে রেক্টাম পর্যন্ত ছিড়ে যাওয়া। ৩য় আর ৪র্থ ডিগ্রি টিয়ার হচ্ছে মেজর ডিগ্রি টিয়ার।
পেরিনিয়াল টিয়ারের কারণ
১/ প্রথম ডেলিভারির ক্ষেত্রে।
২/ যদি লেবার/ডেলিভারি খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়(Precipitate labour)
৩/ বাচ্চার মাথা না এসে মুখ সামনে আসা( Occiputo posterior position) কিংবা ব্রীচ পজিশান।
৪/ বাচ্চার ওজন নরমাল রেঞ্জের চেয়ে বেশি।
৫/পুশিং স্টেজ অনেক সময় ধরে হওয়া
৬/কন্ট্রাকশন / চাপ আসার আগেই পুশ করা, বাচ্চার মাথা নিজ থেকেই বের ন হতে দিয়ে টেনে বের করা।
৭/ ইন্সট্রুমেন্টাল ডেলিভারি।
৮/ শুয়ে থেকে ডেলিভারি।
৯/ এপিশিওটমি এক্সটেনশন।
১০/ বাচ্চার কাধ ডেলিভারির সময় আটকে যাওয়া।
এছাড়াও কারও পেরিনিয়াম নেচারালি দুর্বল হতে পারে। যেটা টিয়ার এর জন্য ঝুঁকি। অনেক সময় পিটোসিন, এপিডুরাল ইউজের জন্যও ইন্ডিরেক্টলি টিয়ার হয়ে থাকে।
পেরিনিয়াল টিয়ার রোধের উপায়
১/ কেগেল(kegel exercise) এর মাধ্যমে পেরিনিয়ামের পেশির স্থিতিশীলতা বাড়ানো। প্রি প্রেগন্যান্সি-প্রেগন্যান্সি -পোস্ট প্রেগন্যান্সি সব সময়ই করা উচিত।
২/ প্রেগন্যান্সিতে পেরিনিয়াল মাসাজ করা। বিস্তারিত জানতে Youtube থেকে দেখে নিবেন। (Perineal Massage)।
৩/প্রেগন্যান্সিতে উপযুক্ত ব্যায়ামের মাধ্যমে বাচ্চাকে সঠিক পজিশানে রাখা।
৪/ সঠিক পদ্ধতিতে পুশ করা। পুশিং স্টেজের সময় পেরিনয়ামকে সাপোর্ট দেওয়া( এটা মিড ওয়াইফ/ নার্স দিবেন)।
৫/ ডেলিভারির প্রপার পজিশান নেওয়া।
৬/ মনকে লেবার পেইন / ডেলিভারি সংক্রান্ত ভয় থেকে দূরে রাখা। পেইন মেনেজমেন্ট করতে জানা।
আশা করি পেরিনিয়াল টিয়ার নিয়ে আপনারা কিছু হলেও জানতে পেরেছেন। আল্লাহ সবাইকে রহম করেন যেন।
ডাঃ মায়িশা সামিহা,
রৌদ্রময়ী প্রি-ন্যাটাল কোর্স মডারেটর