লেবার থেকে বাবু হওয়া পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্ত মনে রাখতে চাই
পিরিয়ড ডেট মিস হওয়ার ১২দিন পর জানতে পারি আমার ছোট্ট সোনা দুনিয়াতে আসতে যাচ্ছে। তবে খুব ভয় পাচ্ছিলাম এক্টোপিক প্রেগনেন্সি, বাচ্চার হার্টবিট না আসা, শুধু পানির থলে আসা এসব নিয়ে! আলহামদুলিল্লাহ সেসব কিছু হয়নি।
এর কিছুদিন পরে প্রিন্যাটাল ক্লাসে জয়েন করলাম। অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। আমার পুরো প্রেগনেন্সিতে আমি নিজেই নিজেকে টেইক কেয়ার করেছি। কারণ আমি জানতাম কখন কী করতে হবে। শুরু থেকেই ওষুধ গুলো ঠিকমত খেয়েছি।
নিউট্রিশানের ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। অযথা ওজন বাড়িয়ে ফেলিনি। এক্টিভ থেকেছি।
রেগুলার চেক আপ এ যেতাম। ড. খুব বেশি কিছু বলতেন না। তারপরেও যেতাম। ৩৬ সপ্তাহ শেষে ড. সি-সেক এর কথা বললেন! আমার প্রথম প্রেগনেন্সি, সব নরমাল তারপরেও! আমি বুঝতে পারছিলাম উনি আমাকে নরমালের জন্য সহযোগিতা করবেন না।
৩৮ সপ্তাহে নতুন একজন ড. এর কাছে গেলাম। সব রিপোর্ট দেখালাম। নরমালের জন্য চেষ্টা করতে চাই, জানালাম। ড. আশ্বাস দিলেন। ৩৮ সপ্তাহ ৫ দিনের দিন পিভি চেকিং এ গেলে ডক্টর সোয়াইপিং করে দেয়। খুব সামান্য করে রক্তের মত যাচ্ছিল সেদিন থেকে।
তার ৩ দিন পর রাত ৯টার দিকে আমার ব্যথা শুরু হয়। সেই অবস্থায় আমি জার্নালে পেপার সাবমিট করেছি, ছাত্রদের এক্সামের খাতা দেখেছি। এক্টিভ অ্যান্ড এংগেইজড থাকার চেষ্টা করেছি। ব্যথা হচ্ছিল আর আমি নিলডাইন করে বালিশে উবু হয়ে ডিপব্রিথিং করছিলাম।
পরের দিন সকালে তারিখ ডক্টরকে কল করে ব্যথার কথা জানালে আমাকে আবার যেতে বলে। পিভি চেকিং হয়। ২সেমি ডায়ালেটেড। ডক্টর আমকে ভর্তি হয়ে যেতে বলে। কিন্তু তখনো আমার তীব্র ব্যথা শুরু হয়নি। ব্যথা আসছিল আর ছেড়ে দিচ্ছিল। তাই আমি সময় চেয়ে বাসায় চলে আসি। আমি হস্পিটাল থেকে হেটে বাসায় এসেছিলাম। আনারস-খেজুর খেয়েছি। ব্যায়াম করে গোসল করে বিশ্রাম নিয়েছি। ব্যাগ গুছিয়ে রেখে রাতে ডক্টরের সাথে আবার দেখা করতে যাই রিপোর্ট নিয়ে। গলায় একটা লুজ কর্ড। ড. বললেন এতে নরমাল হতে কোন সমস্যা নেই। ৩টা প্যাচ নিয়েও নরমাল হয়। তুমি রাতেই ভর্তি হয়ে যাও।
আমি ঐ রাতটাও বাসায় থাকি। তারপর দিন সকালে আমি এনভিডির জন্য হস্পিটালে ভর্তি হই। আমাকে লেবার রুমে রাখে। পিভি চেকিং এর সময় পানি ভেঙে যায়। তখন সকাল ১০টা। আমাকে স্যালাইন দেয়। আমার বেডে একটুও কম্ফোর্ট লাগছিল না। আমি নার্সদেরকে বলে নিজের মত করে চার হাতপায়ে ভর দিয়েছি। বেবির মাথা নামার জন্য হিপ রোটেশন করেছি। বারবার ইউরিন ক্লিয়ার রেখেছি। আমার মা সর্বক্ষণ আমার কাছে ছিলেন।
বেলা ১২টার দিকে পিভি চেক করে দেখে ১০সেমি ডাইলেটেড। বেবির মাথা হাত দিয়ে ধরা যাচ্ছিল। আরো একটু নামতে হতো। ব্যথা হলে আমাকে পুশ দিতে বলছিল। দেখা গেল মাথার চামড়াটা শুধু আসছে। সম্পূর্ণ মাথা আসছেনা! নার্স বলছিল মাথা caput হয়ে আসছে! আর আপনার তো এমনিতেই তীব্র ব্যথা আছে। ব্যথার স্যালাইন খুলে দিচ্ছি।
বেশ কয়েকবারই নার্সরা ছুরিকাচি নিয়ে রেডি হয়েছিল যে এখনই ডেলিভারি হয়ে যাবে, এপিসিওটমি দিতে হবে!
বেলা সাড়ে ৩টা বাজে। মন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। ব্যথা আসছিল আর জোরে জোরে দুয়া পড়ছিলাম। আল্লাহকে বলছিলাম, আল্লাহ আমার বাচ্চাটাকে সুস্থ ভাবে দুনিয়াতে এনে দেন। আমাকে মাফ করে দেন আমি গুনাহগার, ওর তো কোন গুনাহ নেই। আপনি ওকে সুস্থ ভাবে এনে দেন, আল্লাহ।
শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি চেষ্টা করেছি। ওটি রেডি হচ্ছিল তখনো ডক্টর আমাকে বলছিল তোমার চাপ আসলে তুমি পুশ করো। সাড়ে ৪টা বাজে তখন। আমি কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
ডক্টর বললেন, আর রিস্ক নেওয়া ঠিক হবেনা। আপনারা এখন ডিসিশান নিন। আমি-আমার আম্মু দুজনেই সি-সেক এর জন্য বললাম।
আমাকে ওটি বেডে নিয়ে গেল। ক্লিন করলো। ডক্টর নার্স এনেস্থেসিস্ট সবাই কথা বলছিল, আমাকে রিল্যাক্স করছিল। ফিমেল এনেস্থেসিস্ট আমাকে রিলাক্স হতে বললো। চিংড়ি মাছের মত করে পিঠ বাকাতে বললো। ইঞ্জেকশন দেওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে পায়ে ঝি ঝি ধরে আমার কোমড়ের নিচের অংশ অবশ হয়ে গেল। যখন পেট কাটছিল আমি বুঝতে পারছিলাম, ঝাকুনি হচ্ছিল অল্প অল্প।
পৌনে ৫টায় সি-সেকশনে আমার ছেলে হয় আলহামদুলিল্লাহ। ডকটর আমাকে দেখালো যে দেখো তোমার বাচ্চার মাথা কেমন খোপা হয়ে আছে!
আমার বিশ্বাস ছিল এটা ঠিক হয়ে যাবে মিলিয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। হয়েছেও তাই। পরদিনই অনেকটা কমে গিয়েছে। তারপর একেবারেই সুন্দর গোল শেইপে চলে এসেছে মাথা।
বেবির নাড়ি আর প্লাসেন্টা আমি দেখতে চেয়েছিলাম। আমাকে দেখালো। ডকটর বললো যে, নাড়িটা ছোট ছিল আর বেবি ওর এক হাত নাড়িতে পেচিয়ে ঝুলে ছিল। নাড়ি ছোট হওয়াতে পুশিং এর সময় ও বের হয়ে আসতে পারছিল না। caput হয়ে যাচ্ছিল।
সি-সেকশনের পর মাত্র দেড় দিন আমি হাসপাতালে ছিলাম। এরপর রিলিজ নিয়ে চলে আসি। আমার খুব দ্রুত রিকভারি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থ সুন্দর একটা বাচ্চা দিয়েছেন। আমার নরমাল বা নেচারাল ডেলিভারি হয়নি ঠিকই। কিন্তু আমি নিজেকে প্রচণ্ড ভাবে empowered হিসেবে feel করেছি। আমি খুব করে চাই আমার পেইন শুরু হওয়া থেকে নিয়ে ডেলিভারি হওয়া পর্যন্ত একটা মুহূর্তও যেন আমার স্মৃতি থেকে মুছে না যায়। I want to recall every single moment of my child delivery journey every single day… to remind me that “I CAN, I CAN in sha Allah.”
উম্মে উমার,
প্রিনাটাল কোর্স, ৩য় ব্যাচ