আমার নরমাল ডেলিভারির গল্প ও রৌদ্রময়ী প্রিনাটাল কোর্স
১ম পর্ব
যখন আমি কনসিভ করেছি আলহামদুলিল্লাহ তখন আমি এবং আমার হাসবেন্ড আল্লাহ তা’ আলার কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করেছি।৷ প্রথমেই আমাদের মাথায় যে বিষয়টি এসেছে সেটি হচ্ছে একজন ভাল ডাক্তার এবং হাসপাতাল বেছে নেওয়া।
ডাক্তার নির্বাচন এবং ডাক্তার খোঁজ করার সময় যে যে বিষয় আমরা মাথায় রেখেছিঃ
আমি এবং আমার হাসবেন্ড গুগলে সার্চ করছিলাম বিভিন্ন হাসপাতাল এবং গাইনী ডাক্তার এর ডিটেইলস সহ সব বিষয় জানার জন্য। হঠাৎ আমার আম্মু একটি হাসপাতালের কথা বলল, আমি আর আমার হাসবেন্ড গুগলে সার্চ করে সেই হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সম্পর্কে দেখে ডাঃ ফাতেমা ইয়াসমিন ( Obstetrician and Gynecologist) ম্যামকে বেছে নেই। আমরা ডাঃ ফাতেমা ইয়াসমিন ম্যাম এর এপয়েন্টমেন্ট নেই।
সেদিন ছিল ২৬ অক্টোবর ২০২১ সাল যেদিন আমরা প্রথম ফাতেমা ম্যাম এর সাথে দেখা করেছি। ১১ সপ্তাহ প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময় ডাক্তার দেখাই প্রথম। ডাক্তার খোঁজ করার সময় যে বিষয় গুলো আমরা মাথায় রেখেছিলাম সেগুলো হচ্ছে –
আমরা প্রথম থেকেই নরমাল ডেলিভারি চাচ্ছিলাম, নরমাল ডেলিভারি সাপোর্ট করে এমন একজন ডাক্তার চাচ্ছিলাম, আমরা মন খুলে সব বিষয় আলোচনা করতে পারব বাকিটা আল্লাহ ভরসা। তারপর যখন আমরা ফাতেমা ম্যাম এর সাথে দেখা করলাম, কথা বললাম আমরা দুজন তো অনেক খুশি হয়ে গিয়েছি মনে মনে আমরা যেমন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর খোঁজ করছিলাম ফাতেমা ম্যাম তার থেকেও অনেক অনেক ভাল।
আমি ডাঃ ফাতেমা ইয়াসমিন ম্যাম এর পেশেন্ট এবং প্রিনাটাল কোর্স এর ৬ষ্ঠ ব্যাচ এর স্টুডেন্ট। ফাতেমা ম্যাম প্রিনাটাল কোর্স এর ইন্সট্রাক্টর। আমরা মনের মতন ডাক্তার পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। ম্যাম অনেক সাপোর্ট করেছেন। ফাতেমা ম্যাম এর সম্পর্কে যতই বলি না কেন কম বলা হবে। ম্যাম এত সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলেন মুগ্ধ হয়ে যাই ম্যাম এর ব্যবহারে। সেদিন ম্যাম চেকআপ করেছেন,আল্ট্রা করেছেন, কিছু টেস্ট দিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়েছেন। ম্যাম এর সাথে আমার প্রেগন্যান্সি জার্নি শুরু আলহামদুলিল্লাহ।
প্রিনাটাল কোর্স সম্পর্কে যেভাবে জানতে পেরেছিঃ
ডাঃ ফাতেমা ইয়াসমিন ম্যাম এর কাছ থেকে আমি এবং আমার হাসবেন্ড রৌদ্রময়ী স্কুল এবং প্রিনাটাল কোর্স সম্পর্কে জানতে পেরেছি। ফাতেমা ম্যাম প্রিনাটাল কোর্স এর ইন্সট্রাক্টর ছিলেন।বাসায় এসে সাথে সাথেই রেজিষ্ট্রেশন করি, প্রিনাটাল কোর্স এ ভর্তি হই।
আমি প্রিনাটাল কোর্স এর ৬ষ্ঠ ব্যাচ এর স্টুডেন্ট। প্রিনাটাল কোর্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী। আমি এবং আমার হাসবেন্ড অনেক বিষয় জানতে এবং শিখতে পেরেছি প্রিনাটাল কোর্স এর মাধ্যমে। প্রিনাটাল কোর্স আমার জীবনে প্রেগন্যান্সির মতো সুন্দর এই অধ্যায়কে আরও সুন্দরতম, মসৃণ, প্রশান্তিময় করেছে আলহামদুলিল্লাহ।
প্রিনাটাল কোর্সের ইনসট্রাক্টর আপুরা খুব সুন্দর করে ক্লাসগুলো নিয়েছেন। ডাঃ নুসরাত জাহান আপু, ডাঃ ফাতেমা ইয়াসমিন আপু, রাবেয়া রওশীন আপু, ডাক্তার নাঈমা আলমগীর আপু বিভিন্ন বিষয় এর উপর ক্লাস নিয়েছেন। বিষয় গুলো হচ্ছে-
* স্বাভাবিক প্রসবের প্রস্তুতি ও ব্যায়াম
* নরমাল ডেলিভারি ও পেইন ম্যানেজমেন্ট
* সিজারিয়ান ডেলিভারি কখন হয় ও পরবর্তী পরিচর্যা
* VBAC ( সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি) নিয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা
*গর্ভাবস্থায় সুষম ডায়েট, চেকাপ,বিপদ চিহ্ন
*নতুন শিশুকে স্বাগতম, নবজাতকের যত্ন,খাওয়া,ঘুম ও কান্না রহস্য
*ব্রেস্ট ফিডিং, মিক্সড ফিডিং
*পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন এর আদ্যপান্ত ইত্যাদি।
প্রিনাটাল কোর্স এর মাধ্যমে এই বিষয়গুলো জানার পর আমার মনোবল আরও বেড়ে গিয়েছে। আমি উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালভাবে জানতে পেরেছি, শিখতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
২য় পর্ব
২০ এপ্রিল সেহেরি খেয়ে রেস্ট নিচ্ছিলাম ৩০ মিনিট পর শরীর আস্তে আস্তে খারাপ লাগতে শুরু করে হঠাৎ বমি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে লুস মোশন শুরু হয়, বমি+বাথরুম একসাথে হতে থাকে।১০-১২ বার বমি এবং ২০-২৫ বার বাথরুম হয়ে যায় সকাল হতে হতেই সাথে পেটে অনেক ব্যাথা, হাত-পা, কোমড়ে প্রচন্ড ব্যাথা।
হাসপাতালে যাই হাসবেন্ড কে নিয়ে সাথে আমার আম্মুও যায়। ম্যাম পিভি চেক করেন,আল্ট্রা করেছেন বলেছেন আল্লাহ চাইলে ইনশাআল্লাহ তাড়াতাড়ি বেবি হয়ে যাবে, ম্যাম প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়েছেন লুস মোশন আর বমি ভাল হওয়ার জন্য। ম্যাম এডমিশন ফর্ম দিয়ে রেখেছিলেন কোন সমস্যা হলে যেন তাড়াতাড়ি ভর্তি হয়ে যেতে পারি।
আমার ইডিডি ছিল ১৩ মে ঈদের পর তাই অনেক টেনশনে পরে যাই যদি আগে আগে বেবি হওয়ার সময় চলে আসে, লেবার পেইন শুরু হলে তখন ফাতেমা ম্যাম থাকবেন কিনা কারণ ঈদের বন্ধ পড়ে যাবে।
কিন্তু ম্যাম সব সময় পজেটিভ কথা বলেছেন, আমার ডেলিভারির সময় ইনশাআল্লাহ থাকবেন আর আমি আর আমার হাসবেন্ড ও চাচ্ছিলাম ডেলিভারির সময় ফাতেমা ম্যাম যেন থাকতে পারেন, আল্লাহর কাছে আমরা দোয়া করতাম। যেহেতু সব কিছু ঠিক ছিল তাই আমরা চাচ্ছিলাম নরমালে ট্রাই করতে আর ম্যাম প্রথম থেকেই নরমাল ডেলিভারির জন্যই গাইড করেছেন।
সেদিন বাসায় চলে আসি ওষুধ খেলাম আল্লাহর রহমতে বমি+ বাথরুম ভাল হয়েছে। খেজুর খাই, রেগুলার হাটি, ব্যায়াম করি, সিড়ি দিয়ে উঠানামা করি, ম্যাম এর কাছে পরামর্শ নিয়ে আনারস ও খাই।
আমি গুগলে, ইউটিউবে সার্চ করেও দেখেছিলাম প্রেগন্যান্সির লাস্টের দিকে আনারস খাওয়া ভাল। হঠাৎ বাদামি, লাল, কালচে স্রাব যেতে থাকে ২১ তারিখ দলা দলা হয়ে, ২২ তারিখ ও এমন স্রাব গেলে ২৩ তারিখ হাসপাতালে যাই।
সেদিন ম্যাম আমার পিভি চেক করেছেন,মিউকাস প্লাগ ওপেন হওয়ার কারণে এমন স্রাব যাচ্ছিল। ম্যাম আল্ট্রা,ব্লাড,ইউরিন টেস্ট দিয়েছেন। পর পর ২ দিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও ভর্তি হইনি। ম্যাম এডমিশন ফর্ম দিলেন আবারও আর ২৫ তারিখ ভর্তি হতে বলেছেন।
খুব টেনশনে ছিলাম ডেলিভারি নিয়ে কিন্তু ম্যাম অনেক সাহস,ভরসা দিয়েছেন। ম্যাম এর কথা শুনলে মন ভাল হয়ে যায়। আমার তেমন পেইন ছিলনা ম্যাম বলেছেন ইনডাকশন দিবেন আর পুরো বিষয়টি আমাকে আর আমার হাসবেন্ড কে বুঝিয়ে বলেছেন।
আমরা বাসায় আসি আমার হাসবেন্ড ইউটিউব এবং গুগলে সার্চ করে, দুজন একসাথে বসে ইনডাকশন সম্পর্কে আরও ভাল ভাবে জেনে নেই আমিও সার্চ করে আরও বিষয় জানতে থাকি, মনে মনে ভাবতে থাকি আর মনে করতে থাকি ডেলিভারি নিয়ে, লেবার পেইন নিয়ে প্রিনাটাল কোর্সে যা যা শিখেছি, জেনেছি।
২৫ তারিখ সকালে গিয়ে ভর্তি হয়ে যাই হাসপাতালে। আমাকে অবজারভেশন রুমে রাখা হল, ম্যাম এসে আমাকে দেখে গেলেন আমার পিভি চেক করা হল। হাতে ক্যানোলা লাগানো হল আমার লাইফে প্রথম বার ক্যানোলা লাগানো হল। আগে মনে মনে ভাবতাম কেমন লাগবে ব্যাথা পাব কিনা কিন্তু ক্যানোলা লাগানোর সময় তেমন ব্যথা লাগেনি মনে মনে খুশি ছিলাম আল্লাহ চাইলে আমাদের সন্তানকে খুব শীঘ্রই দেখতে পারব।
ইনডাকশন দেওয়া হয়েছে স্যালাইন চলতে থাকে।পেইন আসে যায় আস্তে আস্তে বাড়ে পেট শক্ত হয়ে থাকে কিছু সময় তারপর আবার ঠিক হয়, কনট্রাকশন হতে থাকে। বেবির হার্টবিট রেইট ঠিক আছে কিনা চেকআপ করা হয় কিছু সময় পর পর। ম্যাম আসেন আমাকে দেখে যান। এমন করে দুপুর পর্যন্ত স্যালাইন চলেছে, দুপুরের পর স্যালাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়।অবজারভেশনে থাকার কারণে চেকআপের উপরেই ছিলাম।
সারাক্ষণ শুয়ে ছিলাম না।অবজারভেশন রুমে হাটাহাটি করেছি স্যালাইন চলা অবস্থাতেও, স্কোয়াড ব্যায়াম ও করেছি।হাসবেন্ড পাশে ছিল তাই মনটা ভাল লাগছিল যদিও সব সময় তো আমার সাথে থাকতে দেয়নি কিন্তু অবজারভেশন রুমের বাইরে বসেও অপেক্ষা করেছে। ম্যাম বাসায় গেলেও আমার খোজ খবর নিয়েছেন,ডিউটি ডাক্তার এসেছেন তিনি পিভি চেক করেছেন।
এমন ভাবেই রাত যেতে থাকল। ৪ টায় আবার পিভি চেক করা হল, কেমন অবস্থা জানতে চাইলে বললেন বাচ্চার মাথা অনেকটাই নিচে নেমে এসেছে আল্লাহ চাইলে নরমালে বাবু হবে। সারারাত তেমন ঘুম আসেনি দোয়া পড়েছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি ।
২৬ তারিখ ভোরে ঘুম ভেঙে গেল ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে,দাঁত ব্রাশ করে, বাথরুম করে,চুলে বেণী করে প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম। বেডে আসতেই ৬.৩০ এর পরে স্যালাইন দেওয়া হল। আস্তে আস্তে ব্যথা বাড়তে থাকলে তাড়াতাড়ি।
বেবির মুভমেন্ট কাউন্ট করতে বলা হল,হার্টবিট রেট চেক করা হচ্ছিল তবে এইবার ব্যাথা ২৫ তারিখ এর ব্যাথার থেকেও বেশি অনুভব করতে পারছিলাম। কনট্রাকশন হতে লাগল, পেট শক্ত হয় আবার নরমাল হয়, কত মিনিট পর পর হচ্ছে নিজ থেকেও কাউন্ট করছিলাম এবং আমাকে কাউন্ট করতে বলা হল তখনও কাউন্ট করছিলাম।
ম্যাম সকালে পিভি চেক করলেন পাশে অন্য রোগী দেখছিলেন। হঠাৎ ৯.৩০ এ আমার পানি ভেংগে গেল আমি বেড এ শুয়ে থাকা অবস্থায়ই। ম্যাম কে বলা হলে মেম আবার পিভি চেক করবেন বললেন তখন আমি হেঁটে হেঁটে বাথরুমে গেলাম প্রসাব এর বেগ ছিল তাই, পা গড়িয়ে পানি পড়ছিল তখন আমি বুঝতে পারলাম পানি ভাঙলে কেমন অনুভূতি হয়। পানি ভাংগার সাথে সাথেই ব্যাথা আরও তীব্র হতে থাকে আর অনেক বেড়ে যায়।
ব্যাথা যখন বেশি হতে থাকে তখন আমি প্রায় অস্থির হতে থাকি ।ম্যাম তখন ডীপ ব্রেথিং নিতে বললেন,নিচ্ছিলাম ও। পিভি চেক করে ম্যাম বললেন ১০ সেমি ওপেন হয়েছে তবে আর একটু সময় লাগবে। হঠাৎ অনেক ব্যাথায় মনে হল শ্বাস নিতে পারছিনা, ম্যামকে বললাম ম্যাম তখন অক্সিজেন দিতে বললেন, নার্স অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে থাকল।
ম্যাম এপিডুরাল নিবো কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন আসলে বুঝতে পারছিলাম না কি করলে ভাল হবে তাই আর নেইনি ম্যাম কে বললাম, আপনি যেটা ভাল মনে করেন সেটাই করেন। ম্যাম আমাকে চেক করে যাওয়ার পর আমার বাথরুম এর বেগ আসতে থাকে আমি আমার হাসবেন্ড কে বলি বাথরুমে যাব।
ম্যাম চলে যাওয়ার পর আমার হাসবেন্ড আমার কাছে আসে। তারপর আমি বেড থেকে যেই উঠতে যাব মনে হল ব্যাথা আরও বেড়ে গেল আমি চিৎকার করে ফেলি আর বলি তাড়াতাড়ি নার্সকে বল আমার বাথরুম চলে আসতেছে বেডেই হয়ে যাবে তখন নার্সকে আমার হাসবেন্ড বললে তিনি আমাকে বেডে বাথরুম করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
প্রিনাটাল কোর্সে লেবার পেইন সম্পর্কে ভালভাবে জানলেও তখন আমি তীব্র ব্যাথায় আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার করতে থাকি। তখনও আমাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছিল যে বুঝতেই পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হল ব্যাথার সাথে আমার পেটের ভেতর থেকে সব বের হয়ে যাবে এত বেশি বাথরুম এর বেগ হচ্ছিল কিন্তু বাথরুম হচ্ছিল না।
নার্সকে বিষয়টি জানানোর পর তাড়াতাড়ি আমাকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হল। ম্যাম এর কাছ থেকে আগেই অনুমতি নিয়েছিলাম হাসবেন্ড কে সাথে রাখা যাবে কিনা। ম্যাম অনুমতি দিয়েছেন তাই লেবার রুমে আমার হাসবেন্ড আমার সাথে ছিল। আমার পানি খেতে ইচ্ছে করছিল, গলা শুকিয়ে আসছিল তখন আমার হাসবেন্ড আমাকে পানি দিচ্ছিল। দোয়া পড়ছিল আমার মাথার কাছে ছিল মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল।
এবার আসি পুশিং স্টেইজে। ম্যাম লেবার রুমে সাথে সাথেই আসলেন আমাকে পুশ করতে বললেন আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে পুশ করে যাচ্ছিলাম তবে ব্যাথার জন্য চিৎকার করে ফেলছিলাম। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাই ম্যাম অক্সিজেন দিতে বলেছেন ।
আমাকে অক্সিজেন দেওয়া হল। ম্যাম বার বার বলে দিচ্ছিলো কিভাবে পুশ করব, সেভাবে পুশ করছিলাম কিন্তু আস্তে আস্তে মনে হচ্ছিল আমি যেন শক্তি পাচ্ছিনা। ঘুম ঘুম চলে আসতেছে, শরীর কাপুনি দিয়ে অনেক ব্যাথাও হচ্ছে। হাসবেন্ড কে বললাম মাথায় হাত না বুলাতে কারণ আমার ঘুম চলে আসছিল।ম্যাম বললেন আরও একটু টাইম লাগবে। আস্তে আস্তে আমি পুশ করতে থাকলাম। মাঝে মনে হয়েছিল এপিডুরাল নিয়ে নেই কিন্তু তখন এপিডুরাল নেওয়ার অবস্থা ছিল না।
আমার হাসবেন্ড তো আমার কষ্ট আর অবস্থা দেখে বলছিলেন সি- সেকশন করব কিনা। যদিও প্রথম থেকে আমি আর আমার হাসবেন্ড নরমাল ডেলিভারিই চাচ্ছিলাম তখন তাকে বললাম এত কষ্ট সহ্য করার পর সি-সেকশন করবনা। আমি তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছিলাম, আল্লাহকে ডাকছিলাম, দোয়া পড়ছিলাম, দোয়া ইউনুস পড়ছিলাম। লাস্টে মুখ বন্ধ করে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ১-২ মিনিট পুশ করার পরপরই আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমাদের সন্তান সকাল ১১.১৫ তে জন্মগ্রহণ করেছে।
ফাতেমা ম্যাম এবং লেবার টিম আমার মনে অনেক সাহস জুগিয়েছে, আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। ম্যাম আমাকে অনেক স্নেহ করেছেন, আমি ম্যামকে কখনও রাগ করতে দেখিনি। বাবুকে আমার বুকে দেওয়া হল কি যে শান্তি লাগছিল। আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ পুত্র সন্তানের পিতা মাতা হয়েছি আমরা।
বেবি হওয়ার সময় ২ ডিগ্রি এনাল টিয়ার হয়েছে, ফাতেমা ম্যাম খুব সুন্দর করে সেলাই করে দিয়েছেন।আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ নরমাল ডেলিভারি হয়েছে এবং আমার ডেলিভারির সময় ফাতেমা ম্যাম ছিলেন। যেদিন বেবি হয়েছে সেদিন সারারাত ঘুম হয়নি একটু পর পরই মনে হচ্ছিল বাবু কি করছে, বাবুকে একটু দেখি, আরও নানা রকম চিন্তা ভাবনা।
২৭ তারিখ আমাকে রিলিজ দেওয়া হয় বাসায় চলে আসি । প্রথম থেকেই আমি বেবির দেখাশুনা, যত্ন করেছি এবং এখনও করছি একাই আলহামদুলিল্লাহ ।হাসবেন্ড ও অনেক সাহায্য করে। কিভাবে নিজের যত্ন নিব কি কি করতে হবে সবকিছুই ম্যাম বলে দিয়েছিলেন।
প্রিনাটাল কোর্সের মাধ্যমেও প্রসব পরবর্তী শারীরিক মানসিক যত্ন, নবজাতকের যত্ন, পোস্টপার্টাম ও ব্রেস্ট ফিডিং সহ অনেক কিছু শিখতে এবং জানতে পেরেছি তাই আলহামদুলিল্লাহ কোন সমস্যা হয়নি। ফ্যামিলির সবাই খুব সাপোর্ট করেছেন এবং আমার হাসবেন্ড সবসময় আমাকে অনেক সাপোর্ট করেন আলহামদুলিল্লাহ।
আমি সবাইকে রেকমেন্ড করব প্রিনাটাল কোর্স করার জন্য। বাংলাদেশে প্রিনাটাল কোর্স করার মতন সুযোগ আছে ভাবলেই মনে শান্তি লাগে। আমি সবাই কে প্রিনাটাল কোর্স সম্পর্কে বলি। প্রিনাটাল কোর্স আমার জীবনে প্রেগন্যান্সি জার্নি সুন্দর করেছে আমি অনেক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছি কারণ ❝ যারা জানে আর যারা জানেনা তারা সমান হতে পারেনা। ❞
উম্ম ফাইয়্যাজ,
প্রিনাটাল কোর্স, ব্যাচ- ৬