পেলভিক ফ্লোর ব্যয়ামঃ গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও আজীবনের জন্য
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Rabeya Rowshin
- Date November 28, 2023
- Comments 0 comment
গর্ভকালীন, প্রসবকালীন, প্রসবোত্তর পেলভিক ফ্লোর (Pelvic Floor) ব্যয়াম নিয়ে আলোচনা হতে কমই শোনা যায়। কিন্তু গর্ভাবস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়াম এটি। গর্ভাবস্থা পরবর্তী সময়েও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই ব্যয়াম ব্লাডার, স্ত্রীজননেন্দ্রিয় বা পুংজননেন্দ্রিয় এবং পশ্চাদ্দিককে ঘিরে থাকা পেশীর দৃঢ়তা বাড়ায়। নারী ও পুরুষ উভয়েই এই ব্যয়াম থেকে উপকৃত হতে পারেন। মূলত, এই ব্যয়াম থেকে সারাজীবন উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
পেলভিক ফ্লোর পেশীকে কেগেল (Kegel) পেশীও বলা হয়। ১৯৪০ সালে ডাঃ আর্নল্ড কেজেল এই পেশী ও এর দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য ব্যয়ামের গুরুত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। এই পেশী একটি দোলনার মতো যা সব অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে ধরে রাখে, এমনকি গর্ভাবস্থায় শিশুকেও ধরে রাখে।
দুর্বল কেগেল পেশীর কারণে হওয়া সমস্যাসমূহ
গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের সময় এই পেশীর দৃঢ়তা কমে যায়। ফলে মা হওয়ার পর অনেক নারীই সামান্য হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় বা হাসার সময় প্রস্রাব বের হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। বিবাহিত অন্তরঙ্গ মূহুর্তগুলোও ভালোভাবে উপভোগ করা যায় না। দুর্বল কেজেল পেশীর কারণে অর্শ্বরোগ, ইউটেরাইন প্রোলাপ্স (জরায়ু আক্ষরিক অর্থে মায়ের শরীর থেকে বের হয়ে আসা) হতে পারে। প্রসবের সময় শিশুকে এই পেশীর ভেতর দিয়ে যেতে হয় এবং এর দৃঢ়তা না থাকলে বাচ্চা এর ভেতর দিয়ে সহজে বের হয়ে না এসে হেঁচড়ে বের হবে।
পেলভিক ফ্লোর ব্যয়ামের উপকারিতা
- মূত্রথলি (Bladder) ও অন্ত্র (Bowel) এর ক্রিয়ার ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়
- অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর স্থানচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি কমায়
- (নারীদের জন্য) সন্তানপ্রসব ও অস্ত্রোপচারের পর সহজে সেরে ওঠা যায়
- প্রোস্টেট সার্জারির পর সহজে সেরে ওঠা যায়
- যৌন অনুভূতি ও উত্তেজনার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- সামাজিক আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ও জীবনের মানোন্নয়ন ঘটায়
মজবুত কেগেল পেশী প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা না এসে মুখ আগে আসা (Face Presentation) রোধ করে, অর্শ্বরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে বা এই রোগ হয়ে থাকলে সেটা সারতে সাহায্য করে। এই পেশী টানটান হলে প্রসবের সময় বাচ্চার থুতনি বুকের সাথে লেগে থাকবে। ফলশ্রুতিতে তার মাথার সবচেয়ে ছোট অংশ আগে বের হবে। এর কারণে মায়ের ছড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম হবে এবং প্রসবের পর সেলাইয়ের প্রয়োজন কমে যাবে।
কিভাবে এই পেশী খুঁজে পাবেন
আপনি যখন পরের বার বাথরুমে যাবেন প্রস্রাব করার জন্য তখন ইচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাবের ধারা থামিয়ে দিন। যে পেশী ব্যবহার করে আপনি এটা থামাবেন সেটাই কেগেল পেশী। এই পেশী ব্যবহার করেই মলত্যাগ করা হয় এবং প্রসবের সময় চাপ দিয়ে বাচ্চাকে বের করা হয়। তবে, পূর্ণ ব্লাডারে কখনো কেজেল ব্যয়াম করবেন না কারণ এতে ব্লাডারে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পেলভিক ফ্লোর ব্যয়াম যেভাবে করবেন
পেলভিক ফ্লোর পেশী ব্যয়ামের প্রতি বেশ দ্রুত সাড়া দেয়। এই ব্যয়ামটা আপনি দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে যেকোনভাবেই করতে পারবেন। ধীরে ধীরে একে সংকুচিত করে আনুন এবং এরপর ছেড়ে দিন। একবারে ১০-১৫ বার করুন। ব্যয়াম করার সময় শ্বাস বন্ধ করে রাখবেন না বা এই পেশী সংকোচন করার সময় একই সাথে পেট, নিতম্ব বা উরুর পেশীও টান করে ফেলবেন না। যখন এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন প্রতিটা সংকোচন ছেড়ে দেয়ার আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখুন। প্রতি সপ্তাহে সংকোচনের পরিমাণ বাড়ান তবে অত্যধিক করবেন না এবং একেক প্রস্ত করার আগে সবসময় বিশ্রাম নিয়ে নিবেন।
আপনি যদি গর্ভবতী হন বা গর্ভধারণের কথা ভাবছেন এমন কেউ হন তাহলে এখন থেকেই এই ব্যয়াম শুরু করতে পারেন। আস্তে আস্তে এর পরিমাণ বাড়ান। শুরুতে দিনে ৫০ বার থেকে ধীরে বাড়িয়ে ২০০ বার পর্যন্ত করতে চেষ্টা করুন। উন্নত জীবনের লক্ষ্যে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই এই ব্যয়াম জানা প্রয়োজন। বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত এর চর্চা করে গেলে আপনি উপকৃত হবেন।
তথ্যসূত্রঃ বই AMANI Birth লিখেছেন Aisha Al Hajjar
What are pelvic floor exercises? https://www.nhs.uk/common-health-questions/womens-health/what-are-pelvic-floor-exercises/
Pelvic floor muscle exercises https://www.continence.org.au/about-continence/continence-health/pelvic-floor#exercises
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডা: ফাতেমা ইয়াসমিন
এফসিপিএস(অবস্টেট্রিক্স ও গাইনোকোলজি) কনসালট্যান্ট,
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল
Other post
Next post
প্রসব ব্যথা বা লেবার পেইন সহজ ও সংক্ষিপ্ত করার ২টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টিপস
You may also like
রংধনু রঙের খেলনাগুলো
ছোটবেলায় আমাদের নিকট প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বস্তুটি ছিলো, তা হলো সাত রঙের রংধনু। কারণ অধিকাংশ সময় বৃষ্টির দেখা মিললেও, বৃষ্টির পরের রংধনুর দেখা মিলতো খুবই কম। তাই যে জিনিস খুব কম দেখা যায়, সে জিনিসের প্রতি আকর্ষণও থাকে সবচেয়ে …
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …