আমার নরমাল ডেলিভারি, প্রিনাটাল কোর্স ও দৌলা সার্ভিস
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Birth Story, Course, Doula Service, Others
- Date May 4, 2024
- Comments 0 comment
আবদুল্লাহ আমার গর্ভে এসেছে এটা আমি জেনেছি দেড়মাস পর যেহেতু আমার ইরেগুলার পিরিয়ডের হিস্ট্রি ছিলো তাই জানাটাও দেরিতে হয়। যদিও মিস যাওয়ার পর পরই টেস্ট করাতে নেগেটিভ দেখায়। তবুও কিভাবে কী হয়েছে আল্লাহু আলাম।
১.
আমি আর আমার স্বামী ঢাকায়। আমরা দুজনই শিক্ষার্থী। আব্দুল্লাহ গর্ভে এসেছে এটা সন্দেহ করছিলাম যখন আমার ৩য় বর্ষের ১ম সেমিস্টার ফাইনাল চলে এবং তখনও আমার আরও ২ টা পরীক্ষা বাকি ছিলো। যখন টেস্ট করে পজেটিভ পেলাম তখন পারিবারিক নানান কারণে ভেঙে পরলাম, নানান চিন্তায় কান্না করে ওর বাবাকে খবরটা জানালাম যখন, সেই দৃশ্য এখনো স্পষ্ট চোখে ভাসে তার দাঁত বের করা হাসি। আমি রীতিমতো বলেই বসলাম, এখন কী করবো, কিভাবে কী সামলাবো।
আমি অনেক ভেঙে পরেছিলাম আর তিনি বার বার আমাকে বলছিলেন আব্দুল্লাহকে নেয়া না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেবার আমরা কেউ না। এটাই তিনি আমাকে বার বার স্বরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন এবং বার বার বলছিলেন হয়তো আব্দুল্লাহর মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেটাই হয়েছে।
আব্দুল্লাহ গর্ভে থাকাকালীন আমাকে তেমন কষ্ট দেয় নি, আলহামদুলিল্লাহ এখনো দিচ্ছে না। গর্ভে সন্তান এলে অনেক আপুদের পোস্ট থেকে জেনেছি নানান সমস্যায় পরেন, খেতে পারেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার তেমন সিরিয়াস সমস্যা হয়নি। শুরুর দিকের ৩ মাস ওই হালকা বমিভাব, মাথা ঘোরানো ছিলো। তবে আমি পারিপার্শ্বিক নানান কারণে এই পুরো জার্নিটা একা পার করেছি এবং আল্লাহ আমাকে সে শক্তিটা দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ।
যদিও বহুবার ভেঙে পরেছি কারণ এই সময়ে যে স্পেশাল কেয়ার পায় মেয়েরা সেটা কিছু কারণবশত পাইনি আমি। কামরাঙ্গীরচর থেকে তেজগাঁ প্রতিদিন গিয়ে কিভাবে পড়াশোনা চালিয়েছি, প্রেগনেন্ট অবস্থায় কিভাবে ক্লাস করে এসে একাই সংসারের কাজ সামলানো, নরমাল ডেলিভারি ফ্রেন্ডলি ডক্টর খুঁজে পাওয়া, প্রসবের সময়ও একা থাকা হয়েছিলো তা আগামী পর্বে জানানো হবে ইন শা আল্লাহ।
২.
প্রেগনেন্সি নিয়ে ক্লাস ও একা হাতে সংসার:
প্রতিদিন আমি এবং আমার স্বামী ফজরে উঠে নাস্তা করেই বের হতাম। প্রতিদিন ক্লাস করে এসে ৬ তলা বেয়ে উঠে খাবার রান্না করে খাওয়া এই বিষয়টা কষ্টকর ছিলো। যদিও আমার স্বামী রান্নাবান্না নিয়ে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করতো আলহামদুলিল্লাহ।
এখন আসি প্রি – ন্যাটাল কোর্স করা নিয়ে এবং কিভাবে এটা ডক্টরের সাথে কনভারসেশন করতে সাহায্য করেছে।
প্রেগনেন্সির শুরু থেকেই আমাকে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন বাবু নেয়ার আগেই আমি কোর্সটা করতে চেয়েছিলাম। এখন যেহেতু হবেই সেহেতু রেজিস্ট্রেশন করতে। রেজিস্ট্রেশন করে ক্লাস শুরু করলাম এবং আলহামদুলিল্লাহ এই কোর্স যে আমাকে কতোটা আত্মবিশ্বাসী এবং সঠিক ডিসিশন নিতে সাহায্য করেছে, তা অকল্পনীয়! কোর্সটা আমার স্বামীও করেছে। আমাদের দুজনেরই আলাদা নোট ছিলো। আমরা দুজনই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
এখন আসা যাক ডক্টর দেখানো নিয়ে:
শুরু থেকেই আমার স্বামীর দিকের এক আত্মীয়ের কাছে দেখাতাম। তাকে নিয়ে আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশন ভালো ছিলো না এবং শেষমেষ তার কাছে ডেলিভারি করাইনি। তিনি প্রথম দিনই বলেছিলেন এই উচ্চতায় (৪’১০”) তো আমরা নরমালে ট্রায়ালই দিই না, খুবই রিস্কি। এরপর রুটিন চেকাপ দিলেন সেগুলো করে নেক্সট ভিজিটে গেলাম। রিপোর্ট দেখে বললেন তোমার প্লাসেন্টা এন্টেরিয়র এটাতে সমস্যা। তার কথায় আমি ঘাবড়ে যাইনি কারণ কোর্স থেকে জেনেছিলাম প্লাসেন্টা পজিশন কয়েক ধরনের হতে পারে যার মধ্যে এন্টেরিওর আমার স্বাভাবিক। এভাবে ক্লাস সংসার করে দিন যাচ্ছিলো এবং আমিও নরমাল ফ্রেন্ডলি ডক্টর খুঁজছিলাম যার সাথে কথা বলে মনটা শান্ত লাগবে। যদি ইমার্জেন্সী সিজারও লাগে সেটাও যেন তার আন্ডারে করলে শান্তি পাই। গ্রুপে দেখছিলাম ডক্টর নিপা ম্যামের নাম কয়েক বার। তবে কারোর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানতে অপেক্ষা করছিলাম।
এদিক দিয়ে আমার ফাইনাল শুরু হয়ে গেলো মার্চ মাসে। রোযা নিয়েই পরীক্ষা দিলাম, তখন দেশে দাবদাহ চলছিলো। অতিরিক্ত গরম তখন আবার বাসায়ও প্রচুর গরম সেজন্য রাতে ঘুম হতো না। রোযার আগে রুটিন চেকাপ করা হয়েছিলো তবে ডক্টরের কাছে যাওয়া হয়নি, সময় মিলে নি। ডক্টরের কাছে গেলাম, সন্দেহ করছিলাম ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে এবং সেটাই ধরা পরলো, ওষুধ দেয়া হলো। তাছাড়া, এবারও তিনি বললেন প্লাসেন্টা তো এন্টিরিয়রেই, নরমাল ট্রায়াল দেয়া যাবে না। রেস্টে থাকো, সহবাস করবে না।
তখন আর চুপ থাকতে না পেরে বলেছিলাম, এন্টেরিয়র থাকা তো নরমাল যদি না প্লাসেন্টা দিয়ে সার্ভিক্স কভার্ড থাকে (placenta previa যেটা)। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ ঠিক বলেছো। আসলে ভুল হয়েছে। হ্যাঁ, তোমাকে লাস্ট একটা আল্ট্রা একদম শেষে করে দেখতে হবে প্লাসেন্টা সার্ভিক্স থেকে কতদূরে আছে। যেহেতু আমি বাসায় থাকতেই রিপোর্টস দেখে যেতাম তাই তখনই বুঝেছিলাম Low lying placenta নিয়ে কথা আসবে তাই আমি ঘাবড়ে না গিয়ে কমিউনিকেশনের মাধ্যমে সমাধান বের করেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ।
যাইহোক বাবুর নড়াচড়া ঠিক থাকাতে রোজাগুলো রেখেই যাচ্ছিলাম। পরীক্ষা শেষ হওয়াতে কুমিল্লায় শ্বশুড় বাড়িতে চলে গেলাম। এর মাঝে ৩২ সপ্তাহে দৌলা সার্ভিস নিলাম। দৌলা আপুর ইন্সট্রাকশনে রোজা থাকাকালে হালকা ব্যয়াম করতাম। বার্থবলে হিপ রোটেশন, স্কোয়াট, ছাদে হাঁটাহাঁটি করতাম আর ইফতারের পর ৪-৫ লিটার পানি খেতাম সাহরির আগ অবদি যেনো ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যাই।
এদিকে যেহেতু সময় ঘনিয়ে আসছিলো তাই ডক্টর নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া আর আমার লেখাপড়া কিভাবে চালাবো সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত কী নিবো তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। রোজার মাসেই আল্লাহ মনের আশা পূরণ করে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকেই গ্রুপের এক পোস্টের কমেন্ট থেকে এক আপুর সাথে ইনবক্সে কথা হলো। আল্লাহুম্মা বারিক আপুর কথাগুলো খুবই উপকার করেছে। তার থেকেই শিওর হলাম নিপা ম্যাম সম্বন্ধে এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম তার কাছেই ডেলিভারি করাবো। তখন আমার ৩৬/৩৭ সপ্তাহ চলে।
আর কুমিল্লায় ছুটিতে যাওয়ার পর পরই আমার শ্বশুড় বাড়ির সব আত্মীয়রা বলতে থাকে এই অবস্থায় ঢাকায় কেন যাবে? কুমিল্লাতে কী ডেলিভারি হয় না? ঢাকা গেলে কে থাকবে আমার সাথে এই সেই নানান কথা। আমার মূল চিন্তা ছিলো আমার পর্দা মেইনটেইন নিয়ে প্লাস ডক্টর মন মতো হওয়া। আমি যখন ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি এই ২ টা জিনিসই নিপা ম্যামের থেকে পাবো তখন আর আমি কোন ভাবেই রাজি হচ্ছিলাম না কুমিল্লাতে করাতে। আপু কুমিল্লাতে করিয়েছেন এবং তিনিই বলেছিলেন সুযোগ থাকলে নিপা ম্যামের কাছেই করাতে। আলহামদুলিল্লাহ সুযোগ ছিলো এবং সেটা কাজেও লাগিয়েছি ।
এই সময়ে ঈদের ৩-৪ দিন পরই ঢাকা আসতে পারাতে আমার স্বামীর আর শ্বাশুড়ির অবদান অনেক বেশি। আমার স্বামীও বলেছে ও যেখানে চাচ্ছে সেখানেই করাবো আর আমার শ্বাশুড়িও বলেছেন রোগী যেটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেটা করাই ভালো হবে। আমার শ্বশুড়ও রাজি হয়ে গিয়েছিলো। আর এদিকে কুমিল্লা থেকে আসার আগে পড়ালেখা নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো দুধ পাম্প করে স্টোর করে বিশ্বস্ত কারোর কাছে বাবুকে রেখে ক্লাস করা হবে।
যেখানে আমার ক্লাস শুরু হবে মে মাসের ৬ তারিখ আমার edd ১৯ তারিখ। ড্রপ দেয়ার পরিকল্পনা যেহেতু ছিলো না সেহেতু ঈদ শেষ হওয়ার পরপরই ঢাকা চলে আসা হলো। এই সময়েও ভার্সিটি যাওয়া হয়েছে। গিয়ে সিআরকে নিয়ে ডিপার্টমেন্ট হেডের সাথে কথা বলা। তিনিও বেশ সাহায্য করেছে আমাকে আলহামদুলিল্লাহ। ডেলিভারির পর এপ্লিকেশন করতে হবে ডকুমেন্টসসহ তাহলে কিছুটা কন্সিডার করবে। এজন্য চিন্তা কিছুটা কমেছিলো ২টা বিষয়েরই সমাধান পাওয়াতে।
৩.
আমার edd ১৯ মে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় ফিরলাম ৬ মে। ঢাকায় এসে ভার্সিটি গেলাম ৩ দিন (৯,১০,১১ তারিখ)। ক্লাস করলাম, স্যার/ম্যামদের জানালাম। ১২ তারিখ শুক্রবার নিপা ম্যামকে এই প্রথম অফলাইনে দেখাতে গেলাম। এর আগে তার সাথে অনলাইনেই whatsapp এ কথা হতো। ১২ তারিখ ৩৮ সপ্তাহ+ এর পর করা টেস্ট রিপোর্টসগুলো দেখে ম্যাম বললেন আমার ইউরিন ইনফেকশন আছে আর বাবুর হার্টবিট মেপে দেখলেন ১৭৫ আর রিপোর্ট দেখে বললেন মাথা ৯ সে.মি হলে ভালো হয়। অনেকেই ট্রায়াল দিতে চায় না ৯ এর উপর,তবুও আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব।
আমার এখন ৯.৪ সে.মি আর প্রতিদিন নাকি এটা আস্তে আস্তে বাড়বে। আর সাজেস্ট করলেন এডমিট হলে পিটোসিন দিয়ে ব্যথা তুলে নরমালের ট্রায়াল দিবে। আর আমি যদি চাই তাহলে বাসায় গিয়ে রবিবার এসে এডমিট হতে পারি। যদি রবিবার এডমিট হই তাহলে এখন অক্সিজেন দিয়ে হার্টবিট কমিয়ে আর ক্যানোলা করে এন্টিবায়োটিক নিয়ে যেতে। তাই এন্টিবায়োটিক নিয়ে বাবুর হার্টবিট স্টেবল করে বাসায় চলে আসলাম যেহেতু আমরা হসপিটালে ভর্তি হতে যাইনি, প্রিপারেশন ছিলো না আবার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম কী করবো। উল্লেখ্য যে, ডক্টর নিপা পিভি চেক করেছেন এবং বলেছেন বাচ্চার মাথা শক্ত হয়ে গিয়েছে এবং সুইপ করে দিয়েছেন।
এন্টিবায়োটিক নেয়ার পর ডক্টর এসে খোঁজ নিলেন তখন জিজ্ঞেস করলাম ন্যাচারালি পেইন উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবো কি না? বললেন আমার সিদ্ধান্ত সেটা। বাবুর মাথা বড় হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে তো তখন সিজারে যাওয়ার সম্ভবনা বাড়বে।
বাসায় ক্যানোলা নিয়ে ফিরলাম কারণ ইনফেকশনের জন্য আরও ইনজেকশন দিতে হবে তাও দুই বেলা। এই ক্যানোলা নিয়ে আরেক বিপদে পরেছিলাম। আমার হাতে ক্যানোলা লাগে সবচেয়ে ছোটটা ২৩ জি। আমাকে মোটা ক্যানোলা দিলে তা নষ্ট হয়ে যায় সেখান দিয়ে ওষুধ পাস হয় না হাতে ব্যথা, বার বার ক্যানোলা চেঞ্জ এই নিয়ে নানান কাহিনি হয়েছে। শেষ সময়ে এসে ক্যানোলা নিয়ে কষ্টটা হয়েছিলো বেশি।
যাই হোক হসপিটাল থেকে ফিরে আসার পর সেদিন রাতেই কুমিল্লা থেকে আমার শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি ঢাকা আসেন আর আমাকে ২ বেলা ৬ তলা থেকে নেমে বাসার নিচ থেকে ক্যানোলা লাগানো আর তার মাধ্যমে ওষুধ নিতে হতো ৩০ মিনিট ধরে। ক্যানোলা নিয়েই বাসার কাজ সবকিছুই চলছিলো। এভাবে রবিবারও চলে আসলো আর সবাই জিজ্ঞেস করলো যাবো কি না হসপিটালে।
আমি আমার দৌলা হাফসা আপুর সাথে কথা বললাম। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি কী করবো আপু? আপুর সাথে কথা বলে ১৯ তারিখ অবদি ন্যাচারালি ব্যথা ওঠার জন্য অপেক্ষা করা শুরু করলাম আর পানি, আনারস, খেজুর খাওয়া, হাঁটাহাঁটি, ডাক ওয়াকিং করতে লাগলাম। প্রতিদিন রাতে ছাদে গিয়ে হাঁটার সময় দুআ করতে থাকলাম আল্লাহ যেন ব্যথা উঠিয়ে দেয়, যেটা আমার আর বাচ্চার জন্য উপকারী সেটাই যেন হয়। দিন যায়, ফলস পেইন আসে যায় রিয়েল পেইনের দেখা মিলে না।
আর সকলের দুশ্চিন্তা বাড়ছে দেখে আমারও চিন্তা লেগেই থাকে। এই চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হাফসা আপু নানান কথা বলেছে সেটা এপ্লাই করার চেষ্টা করতাম। সবাই আমার উপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছিলো। আলহামদুলিল্লাহ আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি চাপাচাপি করেননি যে হসপিটালে চলো। এভাবে ১২ তারিখ থেকে ১৭ তারিখে চলে এলাম। রিপোর্টে edd ১৯ তারিখ থাকলেও ম্যাম বলেছিলেন ১৭ তারিখ সেজন্য সকলের উৎকন্ঠা ১৭ তারিখ বুঝি হসপিটালে যাবো। সেদিনও গেলাম না ব্যথা ওঠার অপেক্ষায় রইলাম যেহেতু edd পার হওয়ার পরও ব্যথা উঠে। এদিক দিয়ে সবারই এই চিন্তা বাচ্চার মাথা তো দিন দিন বাড়ছেই। এত অপেক্ষার জন্য যদি পরে কৃত্রিমভাবে ব্যথা তুলেও করার উপায় না থাকে?
অবশেষে ১৯ তারিখও পার হয়ে গেলো। তারপর আমার খালা আর শ্বাশুড়ি বললো এরা বাচ্চা মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০ তারিখ সকালেও আমি আজকে না যাই আর একদিন দেখি এমন একটা ভাব নিয়ে ছিলাম। পরে আমার শ্বাশুড়ি ও খালার গোছগাছের জন্য যাওয়া হয় হসপিটালে আর আমার জন্যই সকাল সকাল বের হতে পারেনি বেলা ১২ টার পর পৌঁছাই মাদার কেয়ার হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে সব ফর্মালিটি সারার পর নিচের ওয়ার্ড থেকে হাতে ক্যানোলা করে পিটোসিন শুরু করে কেবিনে দিয়ে দেয়া হয়।
কেবিনে গিয়ে তো দেখি সবাই কী খুশি হই হুল্লোড় ভাব।আমাকে হালকা করতেই আমার শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি, স্বামী, খালা হাসাহাসি করছিলো। হসপিটালে বার্থবল নিয়ে গিয়েছিলাম সেটাতে ব্যায়াম শুরু করে দিলাম পিটোসিন সহই। আর নিপা ম্যাম কল দিয়েই জুনিয়র ডক্টর এবং নার্সদের বলে দিয়েছেন ঘন ঘন পিভি চেক যেন না করা হয় আর আমার সাথে কথা বলে জানালেন চিন্তা না করতে তিনি সব ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছেন পিটোসিনের ডোজ আস্তে আস্তে শুরু করছে যাতে বাচ্চার হার্টবিট স্টেবল থাকে এবং তিনি বিকেলে আসবেন আমাকে দেখতে। আলহামদুলিল্লাহ হসপিটালের নার্স, আয়া, ডক্টর সকলের ব্যবহার এত অমায়িক! আল্লাহ তাদের কাজের উত্তম বিনিময় দান করুক। পিটোসিন চলাকালেই নামাজ, ব্যায়াম সব চালিয়ে গেলাম।
অনিয়িমিত কন্ট্রাকশন আসছিলো। বিকেলের দিকে ম্যাম এসে পিভি চেক করে বললেন ৪ সে.মি খুলেছে।আর যাওয়ার আগে ইন্সট্রাকশন দিয়ে গেলেন পিটোসিনের ডোজ আরেকটু ফাস্ট করতে আর সন্ধ্যায় বন্ধ করে দিতে কারণ বাচ্চার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছিলো। আর বললেন যদি কাজ হওয়ার হয় তাহলে দুপুরের আগ থেকে সন্ধ্যা অবদি যতটুকু ওষুধ গিয়েছে তাতেই কাজ হবে। নাহলে সকালে এসে মেমব্রেন রাপচার করে দেখতে হবে পানির রং কেমন এরপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। জরায়ুমুখ নরম করতে একটা ওষুধ দিয়ে গেলেন সেটা ম্যাম যাওয়ার পর নার্সরা দিয়ে দিলেন আর বাচ্চার হার্টবিট আবার স্টেবল করতে ৩০ মিনিট অক্সিজেন নিলাম।
স্টেবল হয়েছে কি না সেটা চেক করে আমাকে হার্টবিটের রেটটা দেখালো। ওদের এই জিনিসটা খুবই ভালো লেগেছে, লুকোচুরি নেই কোনও। ওষুধের কাজ তো অনেক আগেই শুরু হয়েছিলো তবে সন্ধ্যার পর তা বেড়ে গেলো কন্ট্রাকশনের পর কন্ট্রাকশন। কন্ট্রাকশন কতক্ষণ পরপর হচ্ছে তা কাউন্ট করে দেখানোর পর ডক্টর সোমা বললেন অনেক বেশি কন্ট্রাকশন হচ্ছে প্রয়োজনের থেকে বেশি এতে তো কাজ হবে না উল্টো বাচ্চার ডিসট্রেস হতে পারে। তাই ম্যামের সাথে ফোনে কনসাল্ট করে কন্ট্রাকশন কিছুটা দেরিতে আসার জন্য ব্যবস্থা নিলেন আর এ কারণে আমিও ঘুম আসতে পারলাম।
হসপিটাল কেবিনে ২ টা বেড। এক বেডে আমি আর আমার স্বামী আরেকটা বেডে আমার খালা ছিলেন। শ্বশুড়, শ্বাশুড়িকে বাসায় যেতে বললাম অহেতুক কষ্ট করে এখানে থাকার মানে হয় না তাই। রাত যখন ২ টার কাছাকাছি তখন হুট করে প্রচন্ড হিশুর চাপে ঘুম ভাঙলো হসপিটালের বেড বেশ উঁচু হওয়াতে বেড থেকে আস্তে করে নামার সাথে সাথেই ঝপ ঝপ করে কতগুলো পানি পরে গেলো। আমি শুরুতে ভেবেছি হয়তো পেটে চাপ লেগে হিশুই বের হয়ে গেছে। যেই ওয়াশরুমের দিকে যাবো ওমনি আবার পানি আসলো তখন বুঝলাম পানি ভেঙে গিয়েছে। সাথে সাথে বাবুর বাবাকে ডাকলাম তিনি গিয়ে নার্সদের জানালেন। তারা এসে জানালেন ক্লোজ অবজারভেশনে রাখতে হবে তাই নিচে নিয়ে রাখবে এখন।
৪.
পানি ভাঙার পর নিচে ওয়ার্ডে নিয়ে গেল। ওয়ার্ডে ১ জন রোগী আর ১ জন নার্স ঘুমে, রুমের লাইট বন্ধ। কী রাত পার করেছি সেদিন এক আল্লাহ জানেন। একলা এক অন্ধকার রুমে ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলাম। পানি ভাঙার পর পাজরভাঙা ব্যথা উঠছিলো, অনবরত উঠছিলো তো উঠছিলোই, থামছিলোই না।
আমার অবস্থা দেখে জুনিয়র ডক্টর পিংকি বললেন এই ছোট মানুষটা কতটাই না কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি পিভি চেক করলেন। ব্যথা যখন উঠে তখন নাকি ভালো বোঝা যায়। আর আমি এদিকে ব্যথার মধ্যে শুয়ে পিভি চেক করতে দিবো তা সহ্যই হচ্ছিলো না। ব্যথায় ১ সেকেন্ড শুয়ে থাকতে পারছিলাম না। শুয়ে থাকলে ব্যথা আরও বেশি লাগতো।
পিভি চেক করার সময় ব্যথায় ডক্টরের হাত চেপে ভর্তা করে দিলাম তবুও টু শব্দ করলেন না বা খারাপ কিছু বললেন না। ডক্টর পিংকি সারারাত অবজারভেশনের জন্য ডিউটিতে ছিলেন আলহামদুলিল্লাহ। পিভি চেক করে জানালেন ৫ সে.মি। আমি ভাবলাম এত ব্যথায় মাত্র ১ সে.মি খুলেছে!
ইফেসমেন্ট তখনো আশানুরূপ হয়নি অনেক মোটা ছিলো নাকি জরায়ু মুখ। ডক্টর চলে যাওয়ার পর ব্যথায় কাতরালাম আর দুআ পড়লাম। ডিপ ব্রিদিং করতে পারছিলাম না। ব্যাথা থামছিলোই না। বসে থাকলে ব্যথাটা তাও সহ্য করতে পারতাম। তবে শুয়ে থাকলে অসহনীয় হয়ে উঠতো। আর ওই রুমের একটা নার্স বারবার জোর করছিলো শুয়ে থাকেন এভাবে উঠে বসলে কাজ হবে না এই সেই। তার কথায় আমার খালা উপর থেকে এসে জোরাজুরি শুরু করলো। এই একটাই বিভীষিকাময় জিনিস ছিলো পুরো লেবারে।
আমি বারবার বলছিলাম শুয়ে আমি নিতে পারছি না ব্যাথা। তাও শুয়ে থাকতে বলায় ব্যথায় আরও কাতর হয়ে যাচ্ছিলাম। আর এদিকে বসে থাকলে ব্যাথা আসলে পিঠে হালকা একটু হাত বুলালেও ভালো লাগছিলো। তবে সে কাজটা করে দেয়ারও মানুষ ছিলো না। সে সময়ের মতো এত একা আর কখনো লাগেনি। আমি ব্যাথা আসলে কেবল আম্মু আম্মু করে উঠছিলাম আর দুআ পড়ছিলাম ডিপ ব্রিদিং করছিলাম যেহেতু ব্যায়াম করতে দিচ্ছিলো না।
খেজুর, পানি বিছানায় রেখেছিলাম তা খাচ্ছিলাম কিছুক্ষণ পরপর। আর বাথরুমের চাপ এলে বাথরুমে। নিচে আসার পরও পানি অনেকটা ভেঙেছে। তাই দুপুর থেকে বিকাল অবদি করা ব্যায়ামকে দোষারোপ করছিলো ওই নার্সটা।
এভাবে রাতে ব্যথা অনবরত চলতে থাকাতে ঘুম তো দূর চোখ বোজার সময়ও পাচ্ছিলাম না। এভাবে তো শক্তি হারিয়ে ফেলবো দেখে ডক্টরকে বললাম প্যাথেডিন দিতে। আমি নিজ থেকেই বলেছিলাম। প্বার্শপ্রতিক্রিয়া জানতাম তবে বিরতিহীন ব্যথা থাকায় শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছিলো আর ব্যায়াম করতে দিচ্ছিলো না আর শুয়ে ব্রিদিং করতেও পারছিলাম না ঠিকমতো। এভাবে ব্যাথা আর পানি যাওয়া নিয়ে রাত পেরেলো ডক্টর ফজরের পর এসে পিভি চেক করে বললেন ৬ সে.মি। আমি তখন পাগলপ্রায় অবস্থায়।
সারারাত কিছুক্ষণ পর পর আয়াকে বলেছিলাম আয়া আমার খালাকে আসতে বলেন নাহলে আমার স্বামীকে একটু আসতে বলেন। আয়া নিরুপায় ছিলো তিনি বললো মা তোমার কষ্ট বুঝতেছি তোমার মতো আমারও মেয়ে আছে ওরও বাচ্চা হইছে। থাক মা আমি আছি। এই বলে বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। এই আয়াটাকেই যখন পেতাম তখন পিঠে ম্যাসাজ দিতে বলতাম আর চুল টেনে দিতে বলতাম। এভাবে সকাল হওয়ার পর আমার স্বামীকে ভেতরে আসতে দিলো।
তিনি আসার পরই তো আমি কান্না করি আর রাগও দেখাই কই ছিলেন আমি আর পারছি না। তিনি বললেন আমি সারারাত এই রুমের বাহিরেই ছিলাম। তোমার ব্যাথায় কান্নাকাটি শুনেছি, কিছু করার ছিলো না। আমাকে তো ভেতরে আসতে দিবে না এই বলে আমার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। আর রুমে এসি চালানো থাকা সত্ত্বেও ঘেমে ভিজে রয়েছি দেখে ঘাম মুছতে মুছতে বললেন এই তো আর কিছুক্ষণ। হয়ে গিয়েছে এতক্ষণ কষ্ট করেছো আর কিছুক্ষণ। ডিপ ব্রিদিং করো। তার সাথে সাথে করলাম।
নার্স এসে আবার তাকে বাহিরে পাঠিয়ে দিলেন ওষুধ আনতে। আর আমার বাচ্চার মতো অনুনয় বিনুনয় যাইয়েন না, যাইয়েন না। তিনি যাওয়ার পর নিপা ম্যাম এসে পিভি চেক করলেন বললেন, আহারে মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছে। ওদেরকে কতো করে বললাম দেরি করো না ভর্তি হয়ে যাও। এখন বাচ্চার মাথা বেড়েছে আরও কষ্ট হচ্ছে। তাও আল্লাহর রহমত বাচ্চা নিচে নামছে।
এদিক দিয়ে নার্স সাবরিনা এসে ধমকানো শুরু করলেন এই প্যাশেন্টকে কে বিছানায় শুইয়ে রেখেছে? পানি ভাঙার হলে শুয়ে থাকলে কী ভাঙবে না?এনাকে ব্যায়াম করতে দেন নাই কে? ধমকা ধমকির পর আমাকে বললেন আপনি হাঁটুন, ব্যথা আসলে বেড ধরে স্কোয়াট পজিশনে বসুন। আর তখন এত ব্যথা যে হাঁটতে পারছিলাম না।
বারবার বাথরুমের চাপ আসছিলো। আর তো বাথরুম থেকে বের হই না। চাপ আসাতে বসে আছি আর বাহির থেকে চিল্লাচিল্লি বের হন, বের হন বাচ্চা বের হয়ে যাবে। বের হওয়ার পর ধমক আপনি আর দরজা লাগাবেন না।
প্যাথেডিন রাতে ডক্টর নিপার সাথে কনসাল্ট করে অর্ধেক দিয়েছিলো। সকালে বাকি অর্ধেক দেয়া হলো।প্যাথেডিনের জন্য ঘুম ঘুমভাব চলে এসেছিলো ব্যাথাও কিছুটা গ্যাপ দিয়ে আসছিলো। খেজুর আর দুধ খাচ্ছিলাম, রাতে খেয়েছি, সকালেও। সাবরিনা নার্স ২ য় বার দেখতে এসে পিভি চেক করে বললেন ৮ সে.মি. ডায়ালেশন, মাথাও নিচে নেমে গিয়েছে। জলদি পেশেন্টকে ওটি রুমে নাও।
সবাই কী যে খুশি, আমি তো অনেকবার আলহামদুলিল্লাহ বলছিলাম। আর ভাবছিলাম অবশেষে সেই সময় এলো যার অপেক্ষা করছিলাম।
কত জলদি বাবু বের হবে সেটা ভাবতে ভাবতেই আবার ব্যাথা উঠে গেলো নিচের দিকে চাপ দিলাম। একটা হুইল চেয়ার এনে আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো। জীবনের প্রথম ওটিতে ঢুকে আজব লাগছিলো। ডক্টর সাবরিনা আমার স্বামীকে বলতে লাগলো দুধ আনেন পেশেন্টকে বমি করাতে চাচ্ছি। সে অবস্থায় বমি করলে প্রসেস নাকি তরান্বিত হয়। দুধ দিলেন খেয়েই সাথে সাথে বমি করে দিলাম।
যখন বেডে উঠতে বললো তখন সেখানে শুয়ে তো আমি ঘুমিয়েই যাচ্ছিলাম ওই যে ক্লান্তি আর প্যাথেডিনের প্রভাব। আমাকে সমস্ত শক্তি দিয়ে পুশ করতে বললেন নিপা ম্যাম। আমি একটা পুশ দিলাম আর ম্যাম বলে উঠলেন এই তো তোমার বাবুর মাথা দেখা যাচ্ছে আরেকটু পুশ করো। আমি একটা পুশ দিয়ে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না আর চোখ বুজে আসছিলো দেখে ম্যাম বলে উঠলেন আরেহ প্যাশেন্ট তো ঘুমিয়ে যাচ্ছে।
ম্যামের কথা শুনে নার্স সাবরিনা উঠে জোরে জোরে আমার পেটে চাপ দিতে লাগলো। যখন ব্যাথা উঠে তখন পুশ করতে বলছিলো আর তখনই উনিও চাপ দিচ্ছিলেন। শেষে ম্যাম একটু জোর গলায় বললেন একটা পুশ দিয়ে বাবুটাকে বের করে দাও তো। বাচ্চাটার কষ্ট হচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে যতো শক্তি আছে জোগাড় করে ব্যাথা ওঠার সাথে সাথে দিলাম একটা পুশ আর সাবরিনা নার্সও দিলো চাপ। বাবু যে কখন বের হয়ে গেলো তা তো বুঝতেই পারিনি। চোখ খুলে দেখলাম বাবু আমার পেটের ওপর মাথার চুলগুলো দেখলাম শুধু। চেহারাটা দেখার জন্য মনটা খা খা করছিলো। কিন্তু চেহারা দেখার আগেই কর্ড কেটে ওকে কান্না করাতে নিয়ে গেলো হয়তো।
আমি ম্যামকে বললাম বাবুকে দেখবো। ম্যাম তখন মমতাসহ ধমক দিয়ে বলে, তুমি কোনও কথাই বলবা না। বাচ্চাটাকে যা করলে তুমি। তারপর প্লাসেন্টা কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হয়ে গেলো প্লাসেন্টার সাইজ দেখে ম্যামের ডেলিভারি টিম বলাবলি করছিলো কত বড়! এটা শুনে আমারও দেখার আগ্রহ হলো তবে দেখতে পারিনি। ম্যাম তারপর এলেন এপিশিওটোমির সেলাই দিতে। যখন সেলাই দিচ্ছিলেন তখন পুরো সময় ম্যাম আর ম্যামের টিমমেটরা আমার সাথে গল্প করছিলেন যাতে আমার মাইন্ড ডাইভার্ট হয় তবুও ম্যাম জিজ্ঞেস করলেন ব্যাথা লাগছে কিনা।
আমি হালকা বলাতে লোকাল এনেস্থেশিয়া দিলো। তারপর কসমেটিক সেলাই দিলেন। ২টা সেলাই লেগেছিলো। আর ডেলিভারির সময় যখন এপিশিওটোমি দিলেন তখন অনুভব করলাম জায়গাটা বড় হয়ে গেলো যদিও ব্যাথা লাগেনি।
মজার কথা যেটা নরমাল ডেলিভারির অভিজ্ঞতা আছে এমন সকল মা রিলেট করতে পারবে। আব্দুল্লাহ হয়ে যাওয়ার পরপরই কোথায় গেলো সে হাড় ভাঙা ব্যাথা কোথায় গেলো সেই ঘাম। নিমিষেই সব আনন্দে পরিণত হয়ে গেলো। আমি একাই বেড থেকে উঠে নিচে নামলাম। হুইলচেয়ারে বসলাম, বাহিরে নিয়ে গেলো আমাকে। তখনও বাবুকে দেয়নি। আমি চাইলাম দেখে আরও মশকরা করলো আমার সাথে। বাহিরে আসা মাত্রই আমি দেখলাম সবার প্রথমে আমার শ্বাশুড়ি দৌড়ে আসে আমার মাথায় চুমু দিলো সেই হাসি আমার আজও মনে পরে। আর আবু আব্দুল্লাহ পেছনে ছিলেন।
আমাকে অবজারভেশন রুমে নিচেই রাখা হলো সেখানেই বাবুকে দেয়া হলো আমার শ্বাশুড়ির কোলে। সেখানে আবু আব্দুল্লাহ এসে আযান দিলেন এবং খেজুর দিয়ে তাহনিক করালেন। এরপর আমাকে একটি সাদা গোলাপ আর ২ টা বকুল ফুলের মালা দিলেন। শ্বাশুড়ি আর আশেপাশের নার্সরা সবাই সামনেই ছিলো তাই লজ্জাই লাগলো। এভাবেই আব্দুল্লাহ হওয়ার সংগ্রামের ইতি ঘটলো এবং আব্দুল্লাহর কথা চিন্তা করে ভার্সিটি ড্রপ দিলাম ১টা ইয়ার আজও ঝুলে আছে।
দুআ করবেন যেন আব্দুল্লাহর ১ বছর+ হওয়ার পর মনটাকে মানিয়ে আবার যেন শুরু করতে পারি।আপাতত আব্দুল্লাহকে নিয়ে একা হাতে সংসার বেশ ভালোই কাটছে, আলহামদুলিল্লাহ। সে আরেক সংগ্রাম যা একা হাতে বাচ্চা যারা পালছেন তারা বেশ ভালো করে জানেন। তবুও দিনশেষে একটা শান্তি কাজ করে আলহামদুলিল্লাহ।
নরমাল ডেলিভারি নিয়ে শেষ কথা বলবো যে অবশ্যই অবশ্যই প্রিনেটাল কোর্স করবেন। সঠিক জ্ঞান যে কতটা জরুরি আর কতটা শক্তি জোগায় বলে বোঝানো যাবে না।
আর অনেকে বলে ৫ ফিটের নিচে নরমালে রিস্ক হয় তাই সিজার করতে চায়। আমি ৪’১০” আমার ক্ষেত্রে সম্ভব হয়েছে এমন আরও হাজার হাজার মায়ের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়েছে। উচ্চতা ম্যাটার করে না। আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব এই তায়াক্কুল রাখবেন আর প্রচুর দুআ করবেন।
তবে নরমাল নিয়ে অবসেসড থাকা যাবে না। যখন বুঝতে পারবেন কন্ডিশন এমন যে সম্ভব হবে না নরমালে তখন অবশ্যই সিজারের সিদ্ধান্ত নিবেন। সিজার একটা লাইফ সেভিং সার্জারি, সেটা যদি আসলেই দরকার হয় তাহলে খুশি মনে মেনে নিবেন। চিন্তা করবেন আল্লাহ এতেই আপনার জন্য বরকত রেখেছেন।
উম্ম আব্দুল্লাহ
রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল কোর্স পার্টিসিপ্যান্ট, ব্যাচ ১১
Other post
You may also like
হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব: একজন মায়ের অনুপ্রেরণামূলক গল্প
আমি একজন দৌলা হিসেবে আজ একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প শেয়ার করতে চাই। আমার ক্লায়েন্ট আফরোজা আপুর ডেলিভারির অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক প্রস্তুতি ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব।আফরোজা আপু ন্যাচারাল বার্থের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। তার স্বামীও …
নরমাল ডেলিভারি: খুবই ভালো অভিজ্ঞতা
গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মত পুত্রসন্তানের মা হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। নরমাল ডেলিভারি ছিল, এক্সপেরিয়েন্স খুবই ভাল ছিল আল্লাহর রহমতে।গ্রুপের পোস্ট ফলো করতাম কনসিভ করার পর থেকেই। গ্রুপের পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। দায়িত্বশীল এবং সবার জন্য অনেক অনেক দু’আ।আমি দেশের …
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে নরমাল ডেলিভারির গল্প
সেপ্টেম্বর এর ১৪ তারিখ আলহামদুলিল্লাহ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমার প্রথম রাজকন্যার মা হলাম। আমার বার্থ স্টোরি শুরুর আগে আমি আমার কনসিভ করার আগের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই যাতে আমার মতো যারা একটু মোটা তারা কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত হোন ইনশাআল্লাহ। আমি …