আমার তৃতীয় সন্তানকে দুধ ছাড়ানোর গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others, Parenting
- Date January 15, 2024
- Comments 0 comment
আমার বড় দুইজন পিঠাপিঠি একদম। প্রেগন্যান্সিতে ব্রেস্টফিডিং করানো, এরপর দুইজনকে একসাথে ব্রেস্টফিডিং করানো, ছোটটাকে ফিডিং কন্টিনিউ করার সময় বড়টাকে দুধ ছাড়ানো এই রকম অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল সেই সময়। সেসব নিয়ে একটা লেখাও লিখেছিলাম। এখানে পাবেন কেউ পড়তে চাইলে
তাদের দুইজনকে দুই বছরেই দুধ ছাড়াতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমার তিন নাম্বার বাবুটাকে দুই বছর পার হয়ে ৪ মাস হয়ে গেল তবুও এই কাজটার জন্য চেষ্টা করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। দুই বছরের দিকে কিঞ্চিৎ চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু হার মানতে হয়েছিল। আমার বাচ্চারা সবাই দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। দুধ ছাড়াতে হলে বাচ্চাকে আগে অন্য কোন উপায়ে ঘুমানোর অভ্যাস করাতে হবে, হয় হেটে হেটে বা পায়ে নিয়ে। কিন্তু সারাদিনের ব্যস্ততার পর সত্যিই আর এটা করার জন্য এফোর্ট দিতে পারতাম না। এভাবেই পিছিয়ে যাচ্ছিল ওর দুধ ছাড়ানো।
এরপর ওর ২ বছর ৪ মাসে আমার ডেংগু হয়। সবাই জানে কতটা ডিহাইড্রেটেড লাগে ওই সময়! সে রাতে আমি হাজব্যান্ডকে বলে দিলাম আমার পক্ষে আর সম্ভব না ওকে ফিড করানো। আর এটাই সুযোগ ওর দুধ ছাড়ানোর!
তখন আমরা আমার বাবার বাসায় ছিলাম। যেহেতু বেড়াতে গিয়েছি, নিজেরা রিল্যাক্স ছিলাম তাই ওর কান্নাকাটি সামলানোর মতো এনার্জি আমার হাজব্যান্ডের ছিল, আমি তো অসুস্থই! প্রথম রাতটা সে দুধ খেতে পারবে না এটা মেনে নেয়া তার জন্য খুব কষ্টকর ছিল। প্রচুর ট্যান্ট্রাম চলে আমাদের উপর। আমি বার বার হাজব্যান্ডকে বলছিলাম দুধ ছাড়ানোর সময় বাচ্চা এমন করবে। দাতে দাত চেপে এটা ১/২ দিন সহ্য করতে হবে। প্রথম দুইজনের সময় একাই করেছিলাম কাজটা, হাজব্যান্ড সাথে ছিলেন না।
এবার একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটল। ডেংগুর কারণে আমার বমিভাব ছিল, এমনকি পানি খেলেও বমি হয়ে যাচ্ছিল। তাই আমাকে অমিডন ট্যাবলেট খেতে দেয়া হয়। এর ফলে বমিভাব তো কমে কিন্তু এদিকে আমার মিল্ক ফ্লো বেড়ে যায়! যেখানে আমি দিনের বেলা ফিডিং বন্ধ করে দিয়েছিলাম আগেই সেখানে উপয়ান্তর না পেয়ে হ্যান্ড এক্সপ্রেস করে কাপে বাবুকে দুধ খেতে দেই। সেও অবাক আর খুশি হয়ে খেয়ে নেয়। কিন্তু এভাবে দিনে একাধিকবার এক্সপ্রেস করেও যথেষ্ট বের করতে পারছিলাম না। এই শেষ বেলায় অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক বেশি মিল্ক আসতে শুরু করেছিল!
এভাবে দুই রাত দুই দিন পার হলো। প্রতি রাতেই তার প্রচন্ড কান্নাকাটি। যখন আমি বলতাম আর দুধ দেয়া যাবে না, সে তার বাবার কাছে “দু দেয় না, দু দেয় না!” বলে অভিযোগ করত। আমার ভীষণ কিউট লাগত সেটা।
দিনে ওকে হেটে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস করানো হয়েছিল। কিন্তু রাতে সে এটাও মানছিল না। তাকে ভুলানোর জন্য তার বাবা একসময় নানা রকম গল্প বানিয়ে বলত। সেসব শুনতে শুনতে এক সময় সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত।
তৃতীয় দিন আর হ্যান্ড এক্সপ্রেসের মাধ্যমে মিল্ক বের করতে চাইলাম না, কারণ সেটা খুব ফলপ্রসূ হচ্ছিল না। তাই তাকে শেষবারের মতো সরাসরি খেতে দিলাম। অমিডন খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এভাবে জমে থাকা মিল্ক ব্যবহার হয়ে গেল আবার নতুন করে বাড়তি মিল্ক আসাও বন্ধ হলো, আলহামদুলিল্লাহ!
তিন রাত পর থেকে সে মোটামুটি এই নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। ও দুধ ছাড়ানোর পর থেকে লম্বা সময় একা শুয়েও ঘুমাতে পারছে আলহামদুলিল্লাহ। আগে পাশ থেকে উঠে গেলে সে-ও একটু পর উঠে যেত।
এভাবেই শেষ হলো আমার তিন সন্তানকে মোট ৫ বছর ৯ মাস ব্রেস্টফিডিং করানোর অভিজ্ঞতা, আলহামদুলিল্লাহ! যে মা একজন বা একাধিক সন্তানকে মিলিয়ে মোট দুই বছর অন্তত ব্রেস্টফিডিং করান তার ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত হ্রাস পায়। এই তথ্য “আমানি বার্থ” বইতে আছে। আমি আল্লাহর কাছে এই ব্রেস্টফিডিং অভিজ্ঞতার বিনিময় দুনিয়া ও আখিরাতে পাওয়ার আশা রাখি।
উম্মে আমাতুল্লাহ
টিম মেম্বার, রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল কোর্স
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …