আমার VBAC এর গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Birth Story, Others
- Date October 14, 2023
- Comments 0 comment
আসসালামু আলাইকুম। আমি প্রিন্যাটাল কোর্স এর প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। আমি নিয়ত করেছি আমার বেবি হওয়ার পর আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
যাই হোক, প্রথম থেকেই আলহামদুলিল্লাহ প্রতিটা ক্লাস খুব ভালো লেগেছিল, ক্লাস শেষ করে একটা রিভিউও লিখেছিলাম, যতটুকু পেরেছি।
আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রতিটা ক্লাস করার পর, স্পেশালি রাবেয়া আপুর লেবার রিলেটেড ক্লাস করার পর, আলহামদুলিল্লাহ এতটা কনফিডেন্স পেয়েছিলাম যে, প্রথম বেবি সিজার হওয়ার পরে, মনে মনে প্ল্যান করছিলাম যে, আল্লাহ যদি চায় পরের বেবিটা নরমালি ট্রাই করবো এবং আমি নিজেকে সেভাবে প্রিপেয়ার করছিলাম। এক্সারসাইজ করতাম, আপু যে ধরনের এক্সারসাইজগুলা বলেছিল, সেগুলো প্রায়ই চেষ্টা করতাম। হয়তো রেগুলার পারতামনা, কারণ সবসময় বাসার কাজের জন্য হয়ে উঠতো না, কিন্তু চেষ্টা করতাম যতটুকু পারি করার জন্য।
আলহামদুলিল্লাহ, আপুর কাছ থেকে কনফিডেন্স পেয়ে আমি নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রসেস করি। আমি দেশের বাইরে আছি। আমার প্রথম বেবির সাথে দ্বিতীয় বেবির গ্যাপ চার বছর। শেষের দিকে এসে যেটা হয়, রাবেয়া আপুর ক্লাসের নোটগুলা আবার পড়া শুরু করলাম, কিভাবে কি করতে হবে, কোন পজিশনে কি করতে হবে, আলহামদুলিল্লাহ চেষ্টা করেছি প্রতিটা স্টেপই করার জন্য। হিপ রোটেশন, পেলভিক রক এবং আরও যে ধরনের এক্সারসাইজ গুলা আপু বলেছিল, আলহামদুলিল্লাহ সবগুলোই করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি হাসপাতালে এডমিট হই এবং আমার নরমালেই ডেলিভারি হয়।
ডাক্তার এর সাথে যখন আমি কনসাল্ট করি, ডাক্তার আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করে, নরমালে করবো নাকি সিজারে করবো। আমি যেহেতু আগে থেকেই চিন্তা করে রেখেছিলাম নরমালে ট্রাই করবো যতক্ষণ না পর্যন্ত সিভিয়ার কোনো কমপ্লিকেসি না হয়, আলহামদুলিল্লাহ আমি করতে পেরেছি।
যেহেতু প্রথম বেবির ক্ষেত্রে আমার পেটে পানি কম ছিলো, আমি জানিনা কেন এমন ছিলো, এটা আল্লাহরই এক নিয়ামাহ, সেই কারণে আমাকে ইন্ডিউস করতে হয় এবং খুব দ্রুত ডেলিভারি করতে হয়। সেকেন্ড বেবির ক্ষেত্রেও ৪০ সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছিল এবং তখনও পেইন উঠছিলোনা। সেদিন আমার ডক্টর এর এপয়েন্টমেন্ট ছিলো এবং সেদিন থেকেই আমার ফলস পেইন হওয়া শুরু করে। আমি হাসপাতালের ডাক্তার এর কাছে চেকাপ করি এবং বলি যে আমি জানতে চাই আমার বাচ্চার মুভমেন্ট ঠিক আছে কিনা এবং পেটে পানি আছে কিনা। চেক করার পর দেখা গেলো, এই বেবির ক্ষেত্রেও পেটের পানি কমে গিয়েছে। তখন আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, যেহেতু ৪০ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, আমি নরমালে করবো নাকি সিজার করবো।
আমি জানাই আমি নরমালে ট্রাই করবো, তখন ওরা আমার সাথে ডিসকাস করে আমাকে সব প্রসিডিউর বলে দেয়। তখন আমার একটু একটু করে পেইন ওঠা শুরু করে, একটু উঠে আবার নেমে যায়। তখন ও-ই সময়টাতে আমি রাবেয়া আপুকে খুব জ্বালাতন করেছি, আপুর সাথে রেগুলার কথা বলেছি। যেমন, আপু আমার এই সমস্যা হচ্ছে, আমি কি করতে পারি। আপু আমাকে অনেক গাইড করেছে, অনেক কিছু বলেছে যেমন এই সময় কোন ব্যায়ামটা করতে হবে, ব্রিদিং রিলাক্সেশের ব্যায়ামগুলো করতে বলেছে, বিভিন্ন পজিশান ট্রাই করতে বলেছে, আমি সবগুলো আলহামদুলিল্লাহ ট্রাই করেছি।
প্রথমে আমাকে ইন্ডিউস করা হয়, এরপর সারভিক্স ওপেন হয়েছে কিনা চেক করে। সারভিক্স খুব একটা ওপেন হয়নি তখনও। তখন আমাকে বললো, আমরা তোমার পানি ভেঙে দিবো। এরপর এখানের প্রসেস অনুযায়ী আমাকে একটা গ্যাস দেয়া হয়, যাতে পেইনটা একটু রিলিফ হয়। এরপর আমাকে এপিডিউরাল দেয়ার কথা বলে এবং বলে দেয় যে এরপরেও না হলে সিজার করে ফেলতে হবে।
আলহামদুলিল্লাহ এরপর আমাকে এপিডিউরাল দেয়া হয়, আমি ট্রাই করতে থাকি, এবং আলহামদুলিল্লাহ শেষ পর্যন্ত নরমালেই আমার বেবি হয়।
আমার খুব ইচ্ছে ছিলো সুন্দর করে গুছিয়ে লেখার। আমি জানিনা কতটুকু গুছিয়ে বলতে পেরেছি, আমার কষ্টের কথা বা ইচ্ছার কথাগুলো কতটুকু প্রকাশ করতে পেরেছি আমি জানিনা। কিন্তু আমি রৌদ্রময়ীর আপুদের সম্পর্কে বলবো, আলহামদুলিল্লাহ প্রতিটা আপুই, নাঈমা আপু, নুসরাত আপু, রাবেয়া আপু, ফাতেমা আপু, সবাই খুবই আন্তরিক ভাবে ক্লাস নিয়েছেন, এবং প্রতিটা আপুই খুব ভালোভাবে সবকিছু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
আমি বিশেষ করে দোয়া করবো আল্লাহ যেন রৌদ্রময়ীর প্রতিটা আপুকে যেন তাদের কাজে বারাকাহ দেন, অতি উত্তম নেয়ামত দান করেন, আল্লাহ যেন উনাদের আরও বেশি বেশি ভালো কাজ করার সুযোগ দান করেন এবং এর দ্বারা যেন আমাদের মতো অনেকেই উপকৃত হতে পারে, এজন্য রৌদ্রময়ীর জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আরও ভালো ভাবে যতটুকু শিখেছি আপুদের কাছ থেকে, ততটুকু দিয়ে আরও কয়েকজনকে যেন সাহায্য করতে পারি। আল্লাহ যেন সেই তৌফিক আমাকে দান করেন। জাযাকাল্লাহু খায়ের।
উম্ম নুসাইবা
১ম ব্যাচ, প্রিনাটাল কোর্স
Other post
You may also like
হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব: একজন মায়ের অনুপ্রেরণামূলক গল্প
আমি একজন দৌলা হিসেবে আজ একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প শেয়ার করতে চাই। আমার ক্লায়েন্ট আফরোজা আপুর ডেলিভারির অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক প্রস্তুতি ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব।আফরোজা আপু ন্যাচারাল বার্থের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। তার স্বামীও …
নরমাল ডেলিভারি: খুবই ভালো অভিজ্ঞতা
গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মত পুত্রসন্তানের মা হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। নরমাল ডেলিভারি ছিল, এক্সপেরিয়েন্স খুবই ভাল ছিল আল্লাহর রহমতে।গ্রুপের পোস্ট ফলো করতাম কনসিভ করার পর থেকেই। গ্রুপের পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। দায়িত্বশীল এবং সবার জন্য অনেক অনেক দু’আ।আমি দেশের …
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে নরমাল ডেলিভারির গল্প
সেপ্টেম্বর এর ১৪ তারিখ আলহামদুলিল্লাহ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমার প্রথম রাজকন্যার মা হলাম। আমার বার্থ স্টোরি শুরুর আগে আমি আমার কনসিভ করার আগের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই যাতে আমার মতো যারা একটু মোটা তারা কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত হোন ইনশাআল্লাহ। আমি …