ভিব্যাক সাফল্যের গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Doula Service, Others
- Date January 28, 2024
- Comments 0 comment
অনেক দিন ধরে দৌলা ডায়রি লেখা হয় না। লেখার মত অনেক কিছু জমে যাচ্ছে, কত রকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ভাবলাম টুকটাক করে কিছু কিছু লিখি। সবার সাথে শেয়ার করি আমার এই অভিজ্ঞতার ঝুলি।
আমার ক্লায়েন্ট মৌসুমী আপু ভিব্যাক প্রত্যাশী। উনার বড় বাবু সি সেকশনে হয়েছিল, ৩.৫ বছর বয়সের। এরপর উনার এটোপিক প্রেগ্ন্যাসি হয়েছিল যার কারনে ল্যাপারোটমি করা হয়।
আপু প্রিনেটাল কোর্স করেছেন এবং ৩২ সপ্তাহ থেকে দৌলা সার্ভিস নিয়েছেন। আপুকে ডাক্তার সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ভিব্যাকের চেস্টা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ডাক্তার এটাও বলেছেন সিসেকশন আরেকটা অপারেশনও আছে, রিস্ক হতে পারে৷ আপু আল্লাহর কাছে দোআ করেছেন এবং সব ঠিক থাকলে লেবার পেইনের জন্য অপেক্ষা করতে চেয়েছেন। আপু রেগুলার এক্সারসাইজ, হাঁটাহাটি করতেন। এসব ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস ছিলেন। খাওয়া দাওয়া প্রেগ্ন্যাসির প্রথম থেকে মেনটেইন করেছিল। একবার ব্লাড টেস্টে সুগার কিছুটা বেশি আসে। আপু খাওয়া দাওয়া ও এক্সারসাইজ করে কন্ট্রোলে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে সুগার নরমাল রেন্জে ছিল।
৩৭ সপ্তাহ পুর্ণ হওয়ার পর, কয়েকদিন ধরে আপুর হালকা হালকা পেইন হত। আপু জানিয়েছিল অদ্ভুত একধরনের ব্যাথা, আগে কখনও এমন হয় নি। আমি আপুকে ফলস পেইনের ব্যাপারগুলো বলেছিলাম। ব্যাথা টা পুরাপুরি চলে যায় নি অনিয়মিত ভাবে আসা যাওয়া করতে থাকে৷
আপু আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছিলেন। ব্যাথা ম্যানেজ করার জন্য এক্সারসাইজ করছিলেন। আপুর হাসবেন্ড ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন কখন হাসপাতালে যেতে হবে। বলেছিলাম নিদিষ্ট সময় পর পর ব্যাথা আসলে এরপর হাসপাতালে নিয়ে যেতে৷ কিছুসময় পর ভাই ফোন দিয়ে জানালেন আপুর নরমালে ডেলিভারি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
পরে আপুর মুখে শুনলাম উনার অভিজ্ঞতার কথা। আপু যখন হাসপাতালে ভর্তি হয় তখন আপুর ৬ সেমি পর্যন্ত ডায়ালেশন হয়ে গিয়েছিল। উনাকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ডাক্তার চেক করে দেখেন ৮ সেমি ডায়ালেশন হয়ে গিয়েছে। আর বেশি সময় লাগেনি। আপুর পুশ করতে একটু কষ্ট হচ্ছিল দেখে ডাক্তার অল্প পরিমানে এপিসিওটমি দিয়েছিলেন।
আপু ন্যাচরাল ডেলিভারির জন্য ডাক্তারকে দেরীতে কর্ড কাটা, সাথে সাথে স্কীন টু স্কীন কন্টাক্ট করানোর কথা বলে রেখেছিলেন। ডেলিভারির সময় দেখা যায় বাবুর গলায় কর্ড পেচানো ছিল, তাই সাথে সাথেই ডাক্তার কর্ড কেটে দিয়েছেন এবং হওয়ার পর বাবুকে ক্লিন করে পরে আপুর কাছে দেওয়া হয়। ডেলিভারির সময় হাসপাতালের আয়ারা খুব একটা সহযোগী মনোভাবের ছিল না৷ বিশেষ করে আপু যেহেতু এক্সারসাইজের মাধ্যমে পেইন ম্যানেজ করছিল এই বিষয়গুলো তাদের কাছে নতুন। আমি আশাবাদী হয়ত সামনে ডেলিভারি রুমে অবস্থার পরিবর্তন হবে, সবাই লেবারে থাকা মাকে সব ধরনের সহযোগীতা করবে।
যাই হোক আপু নিজের এই অভিজ্ঞতার জন্য অনেক বেশি খুশী আলহামদুলিল্লাহ । আপু আমাকে বলেছেন তার গতবারের সি সেকশন ডেলিভারী আর এখন ডেলিভারীর কস্টের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
ভিব্যাক আমাদের সমাজে খুব একটা প্রচলিত না। একবার কোন কারনে সি সেকশন হয়ে গেলে কেউ আর ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির কথা চিন্তাই করে না। সবকিছু ঠিক থাকার পরও সি সেকশনে হয়। এমন ডাক্তারের সংখ্যাও হাতে গোনা কয়েকজন যারা ভিব্যাক করাতে রাজী হন৷ সব কিছু যদি স্বাভাবিক থাকে তখন সি সেকশন করাটা সম্পুর্ন ঝুঁকি মুক্ত ব্যাপারটা কিন্তু এমন না।
সি সেকশন জীবন বাঁচানোর জটিল অপারেশন, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, তারচেয়েও বড় কথা মায়ের শরীরকে অনেক বেশি কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সুস্থ হতেও অনেক সময় লাগে। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে বাবুটা বের হয়ে গেলেই কষ্ট অনেক কমে যায়। আপু বলেছেন যে সবাইকে বলবেন কোন সমস্যা না থাকলে লেবারের কষ্টটা ভয় পেয়ে কেউ যাতে সি সেকশনের দিকে না যায়, যেহেতু উনার দুধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আমাদের সমাজে মা হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব কষ্টের, ব্যাথার হিসাবে শেয়ার করা হয়। একজন মা যদি প্রেগ্ন্যাসির প্রথম থেকে সচেতন থাকেন, সঠিক খাদ্যভ্যাস, ব্যায়ামগুলো করেন, বিভিন্ন ঝুঁকির ব্যাপারগুলো মাথায় রাখেন এবং ডেলিভারির সময় নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটিভ ভাবে অংশগ্রহণ করেন যেমন: লেবার পেইন ম্যানেজ করা, পজিশন নিজে পছন্দ করা এবং পুশিং টেকনিক অবলম্বন করা, যদি এপিসিওটমি বা সি সেকশনের প্রয়োজন হয় তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া। তখন আর অভিজ্ঞতা ব্যাথার থাকে না, হয়ে যায় একটি সাফল্যের অভিজ্ঞতা। সব ডেলিভারির সাথে অবশ্যই কষ্ট থাকে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেছেন অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে, আবার এটাও বলেছেন তিনি কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। নিজের সন্তান, আল্লাহর আমানত এবং একজন আশরাফুল মাখলুকাতের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য এই কষ্ট করাটা আসলেই সার্থক।
ফারইয়াব হাসান
নিউট্রিশনিস্ট
দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
রংধনু রঙের খেলনাগুলো
ছোটবেলায় আমাদের নিকট প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বস্তুটি ছিলো, তা হলো সাত রঙের রংধনু। কারণ অধিকাংশ সময় বৃষ্টির দেখা মিললেও, বৃষ্টির পরের রংধনুর দেখা মিলতো খুবই কম। তাই যে জিনিস খুব কম দেখা যায়, সে জিনিসের প্রতি আকর্ষণও থাকে সবচেয়ে …
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …