পিটোসিন ও এপিসিওটমি ছাড়া আমার ন্যাচারাল বার্থ এর গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Birth Story, Others
- Date October 18, 2023
- Comments 0 comment
আল্লাহর অশেষ রহমতে গত ৩ সেপ্টেম্বর সম্পুর্ণ ন্যাচারাল ডেলিভারির সাহায্যে ছেলে বাবুর মা হলাম, আমার প্রথম সন্তান! আলহামদুলিল্লাহ…💕
৭ ঘন্টার লেবার জার্নি!! এই ভয়ংকর রকমের সুন্দর জার্নিটা সেয়ার করছি….
আমার ডিউ ডেইট ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। ৩৯ সপ্তাহে এসে প্রতিদিন মনে হতো আজই মনে হয় বাবু হয়ে যাবে। সেই সাথে ভয় লাগতো যদি ডিউ ডেইট পার হয়ে অনেক দেরি হয়ে যায়। আল্লাহর উপর সর্বদা তাওয়াক্কুল করে ছিলাম যেনো উত্তম সময়ে উত্তম ভাবেই বাবুকে বুকে পাই।
আমি প্রতিদিন নিয়ম করে ১০-১৫ মিনিট হাঁটতাম। এটা রেগুলার ছিল। এর বেশিও হাঁটতাম। কিন্তু ১০ মিনিট অন্তত হাঁটবোই এমন রুটিন ছিল।
এছাড়া প্রেগ্ন্যাসি এক্সারসাইজ গুলো নিয়মিত করতাম, স্কোয়াট, ডাক ওয়াকিং, কেগেল, মাইলস সার্কিট, ব্রিদিং এক্সারসাইজ। এগুলো শেষের দিকে অল্প সময়ের জন্য হলেও করার চেষ্টা করতাম। শেষের সময় শরীর সবসময় ভালো থাকেনা। একদিন একটু ভালো লাগে তো আরেকদিন বিছানা থেকে উঠাই যায়না। তাই যেদিন ভালো লাগে সেদিন ভালোভাবে সময় নিয়ে এক্সারসাইজ গুলা কন্টিনিউ করছি। সাথে প্রতিদিন আজওয়া খেজুর আর জমজম এর পানি খেতাম নিয়ত করে।
বাবু হওয়ার আগের দিন মানে ২ সেপ্টেম্বর সারাদিন শরীর কেমন দূর্বল দূর্বল লাগছিল। তাই শুয়ে বসেই ছিলাম। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ১০টার দিক একটু ভালো লাগছিলো তাই ভাবলাম একটু হাঁটাহাঁটি করি। সেসময় কেনো জানিনা শরীরে খুব জোর পাচ্ছিলাম। টানা অনেকক্ষণ হাঁটলাম, ক্লান্ত লাগলে রেস্ট নিলাম, পানি খেলাম তারপর আবার শুরু। স্কোয়াটই প্রায় ৬০ বার করেছি যেখানে ১০বার করতেই হাঁপিয়ে যেতাম! ডাক ওয়াক করেছি ৫০ স্টেপ এর মতো।
এভাবে এক্সারসাইজ শেষ করে গোসল করলাম। তারপর রুমে এসে মাইলস সার্কিট এক্সারসাইজটা করলাম। ঘুম আসছিলো না কেন জানি। হাত ভর্তি করে মেহেদী পড়লাম, ছোটো বোন পড়াশুনা করছিল ওর সাথে গল্প করলাম। তারপর শুয়ে পড়লাম।
৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় দেখি পানি ভাঙছে, একসাথে অনেক পানি গড়গড় করে বের হয়ে গেলো! বাথরুমে যেয়ে চেঞ্জ করে আসার পর আবার অনেক পানি গেলো। এরপর অল্প অল্প করে যাচ্ছিলো, আস্তে আস্তে ব্যাথা শুরু, লেবার এর ফার্স্ট স্টেজ, ল্যাটেন্ট ফেইজ শুরু হলো বুঝতে পারলাম।
আহা! যা এতোদিন পড়লাম সেগুলো এখন ঘটবে আমার সাথে ভাবতেই কেমন লাগছিল! এদিকে হাসব্যান্ড,আম্মু দুজনে তো টেনশনে অস্থির। হসপিটালে যাওয়ার জন্য তারা সম্পূর্ণ রেডি। ক্লিনিক মোটামোটি কাছে ছিল, অটোতে ১০-১৫ মিনিট এর রাস্তা তাই তাড়াহুড়া করছিলাম না। আমি আস্তে ধীরে সিচুয়েশন বুঝার চেষ্টা করলাম যে কি করা উচিৎ। বেশ অনেগুলো পানি বের হওয়ায় টেনশনও লাগছিলো। কয়েকদিন আগে গ্রুপে ডঃ নুসরাত জাহান প্রমা আপুর পোষ্ট দেখেছিলাম যে লেবার এর যেকোনো স্টেজ এই পানি ভাঙুক না কেন হসপিটালে থাকা উচিত কারণ যোনিপথে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে ইনফেকশন হতে পারে। আমিও আস্তে ধীরে সময় নিলাম, এদিকে ব্যাথা বেড়েই চলছে, এ অবস্থায় গোসল করলাম, নামাজ পড়লাম, খেজুর খেলাম, জমজমের পানি খেলাম, কিছুক্ষণ লেবার পজিশন গুলো ট্রাই করলাম, স্কোয়াট করলাম।
আমি ভয় পাচ্ছিলাম ক্লিনিকে গেলে ওরা যদি এটা সেটা বলে সিজার করে দেয়, লেবার পেইনে করণীয় কাজগুলো যদি ওখানে না করতে পারি।তো এটা সেটা ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নাম করে সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম ক্লিনিকে গেলে পিভি চেক করে বলে ১ সেমি খুলছে মাত্র, সময় লাগবে। তাই হাঁটাহাঁটি শুরু করি, স্কোয়াট করি, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করি, কোমর মাসাজ করে নিই, লেবার পজিশন গুলো ট্রাই করি। এগুলো যে কি কাজে দিয়েছিলো, এখন ভালোমতো ফিল করছি। পানি খাই খেজুর খাই। এক/দেড় ঘণ্টা পর আরেকজন এসে পিভি চেক করে বলে ৪ সেমি খুলেছে। এদিকে ব্যাথা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে চলছে।
একটু শুয়ে যে আরাম করবো সেটার চান্স নাই, শুইলেই ব্যাথা আরো তিড়িং করে উঠছে। লেবার এর পুরো সময় টানা হাঁটছি, একটু পর পর স্কোয়াট করছি, প্রচুর পানি, ডাবের পানি, খেজুর খাচ্ছিলাম। অবশ্য কিছুক্ষণ পর পর বমিও করছি অনেক। উককানির চোটে ব্যাথা আরো তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছিলো।
দুপুর বারোটার দিকে মনে হয় লেবার এর এক্টিভ স্টেজ এ পৌছালাম। আগে যা একটু বসে থাকতে পারছিলাম এবার সেটারও সুযোগ নাই। আল্লাহু আকবর। একেকটা ব্যাথার কামড়, তীব্র যন্ত্রণা, তীব্র কষ্ট, দুনিয়াটা পুরো অন্ধকার লাগছিলো!! গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগলাম। এদিকে কিছুক্ষণ পর পর গড়গড় করে পানি পড়ছে তো পড়ছেই। সাথে ব্লাডি শো দেখা দিলো, আবার বমি করে তো শরীর ভিজিয়ে ফেলছি তাই দুইবার করে কাপড় চেঞ্জ করলাম।
সাথে ফুপি আর শাশুড়ি মা ছিলেন। ফুপিকে কামড় দিয়েছি অনেক, বোরখা দাত দিয়ে টেনে ধরেছি, দেয়াল এ ধাক্কা দিয়েছি, বেড এর রড ধরে টেনেছি, সোফা ধরে ধাক্কা দিয়েছি। হাসব্যান্ড এসেছিলো রুমে ওকে ধরে রেখেছিলাম, যেতে দিচ্ছিলাম না, ওকেও কামড় দিয়েছি, আগে থেকে ঠিক করেছিলাম বেশি চিৎকার করবো না, আস্তে আস্তে আওয়াজ করবো কিন্তু ওই সময় গলা ফাটায় চিৎকার আসতেছিল যতটা সম্ভব পারা যায় আস্তে আওয়াজ করার চেষ্টা করেছি।
বিশ্বাসই হচ্ছিলো না যে এতো তীব্র যন্ত্রণা হয়!! কিভাবে সম্ভব!! মৃত্যুই বুঝি অনেক সহজ এই ব্যাথার থেকে!!
বারবার ব্যাথার ওষুধ চাচ্ছিলাম যে একটু সময়ের জন্য হলেও ব্যাথা টা কমুক, একটু আরাম করি, একটু শুই, একটুখানি ঘুম দিয়ে উঠি!! কিন্তু তা কি আর হয়! এতক্ষনে ট্রানজিশন স্টেইজে চলে আসছি সম্ভবত, অনেএএএক বেশি কঠিন মুহূর্ত!!
এবার রীতিমত “সিজার সিজার”বলে চিৎকার শুরু করেছি। রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম, নার্স দের ডাকছি, আয়াদের ডাকছি, আমার শাশুড়িকে বারবার বের করে বলতেছি ডাক্তার নিয়ে আসেন এখুনি সিজার করেন আমার।
একটু পর ডক্টর আসলো পিভি চেক করবেন কিন্তু আমি তো লিটারেলি ছটফট করছি, শুয়ে যে চেক করাবো সেই অবস্থাতেও নেই, তবুও একটু সময় নিয়ে অনেক কষ্টে শুয়ে তারপর চেক করে বলেন এখনও ৪ সেমি। মানে সিরিয়াসলি!! এতো হতাশ হয়ে গেলাম, বুক ফেটে কান্না আসছিলো যে এখনও ৪ সেমি, তাহলে ফুল ডায়ালেটেড হতে হতে তো আমি পাগল হয়ে যাবো!!
ডাক্তার বললেন যে তোমার তো বেশি সময় নাই অল্প সময়েই হয়ে যাবে, তোমার labor খুব সুন্দর প্রগ্রেস করেছে, একটু ধৈর্য ধরো, অল্প সময়ে ডায়লেটেড হয়ে যাবে। আমার ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা দেখে বললেন, এই তো তুমি জানো এভাবে চালায় যাও, পা ফাঁকা করে হাঁটতে বললেন,স্কোয়াট করতে বললেন। যেগুলো আমি অলরেডি টানা করছিলাম।
আমি হাসব্যান্ডকে আগেই বলে রেখেছিলাম, এই স্টেজ এ আসলে মা-দের আর কন্ট্রোল থাকেনা, সিজার করতে চায়, সুতরাং, আমি চাইলেই তুমি ইমোশনাল হয়ে সাথে সাথে রাজি হয়ে যেওনা। বেচারা সেও কনফিউজড হয়ে গেছিলো। বারবার রুমে আসছে, অভয় দিচ্ছে,মাসাজ করে দিচ্ছে। ও আসলে আমি আর ওকে যেতে দিচ্ছিলাম না। আমার শাশুরি বলছিলেন এ সময় ছেলেদের কাছে থাকতে হয়না। তাই ও বেশিক্ষণ থাকতেও পারছিল না।
যাই হোক, দুপুর সোয়া দুইটা কি আড়াইটার দিকে বাথরুম এর চাপ লাগা শুরু হলো। আমি টয়লেট এ যেয়ে কমোড এ বসে খুব জোরে জোরে চাপ দিচ্ছিলাম বাথরুম হওয়ার জন্য আর এই চাপ দেয়ার সময় আগের ব্যাথার তুলনায় বেশ আরাম পাচ্ছিলাম তাই টয়লেটেই বসে ছিলাম। কারণ রুম থেকে বের হলেই তো সেই তীব্র ব্যাথা আবার হবে সেটা মাথায় আসছিল। এদিকে রুম থেকে ফুপি, মা চিৎকার করছিলো, বের হও, বের হও, বাবু বের হয়ে যাবে। আমি তো কোনোভাবেই বের হবো না। কারণ কিছুক্ষণ আগে ডক্টর বললো ৪ সেমি। সকাল ৮টা থেকে এতো ব্যাথায় ৪ সেমি, বাকি ৬ সেমি খুলতে আরো তো টাইম লাগবেই।
মানে আমি এক্টিভ স্টেজ এর তুলনায় পুশিং স্টেইজে আরাম পেয়েছি, তাই সব ভুলে গেছি। একটু পর বের হলাম। বের হতেই সেই ব্যাথা+চাপ দেয়ার তীব্র তাড়না। আমার মনে হচ্ছে আমার প্রচন্ড রকম বাথরুমের চাপ পাইছে আর যে করেই হোক বাথরুম সেরে আমাকে ফ্রী হতে হবে।
এবার লিটারেলি হাত ঝটকায় চিৎকার করে উঠলাম আরে তোমরা বুঝতেছনা না কেন! আমি বাথরুম করবো, এই বলে দৌড়ে আবার টয়লেটে গেলাম আর চাপ দিতে লাগলাম। হঠাৎ আল্লাহর রহমতে মনে হলো আমি কি পুশিং স্টেইজে আছি নাকি!!
জরায়ু মুখ তো অল্প সময়ে পুরোটাই খুলে যেতে পারে। Group আপুদের বার্থ স্টোরিতে পড়েছিলাম অল্প সময়ে ফুল ডায়লেটেড হয়ে গেছে অনেকের। তাই ভ্যাজাইনার কাছে হাত দিয়ে ধরে রাখলাম আর ভাবলাম দুই চারটা চাপ দিয়ে রুমে চলে যাবো। এদিকে বাইরে তো চিল্লাচিল্লি বের হও বের হও। বিছানায় শুয়ে চাপ দাও এই করো সেই করো। আমার মাথায় তখন ওগুলো কিছুই নেই। দুই তিনটা চাপ দিয়ে নিজেই ভ্যাজাইনার ভিতরে একটু হাত ঢুকালাম, দেখি হালকা নরম অংশ। তখন নিজেই দ্রুত বের হলাম, নার্স দেখে বললো চলেন দ্রুত অপারেশন রুমে।
টেবিলে এ শোয়ালো, সব ঠিকঠাক করলো তারপর শুরু হলো আবার পুশ করা। ডক্টর বললো মনে করেন আপনার কষা বাথরুম হচ্ছে এজন্য আপনি চাপ দিবেন সুতরাং সেই চাপটা দেন, তো আমি ওভাবেই চাপ দিচ্ছিলাম। ক্লাস এর যে ব্রিদ এর কথা হঠাৎ মনে পড়ল। ওভাবে নিশ্বাস নিয়ে ভ্যাজাইনা দিয়ে ছাড়ার মতো করে নিশ্বাস ছাড়ছিলাম। সাথে নার্স আয়ারা যে ছিল ওরাও বেশ সাপোর্ট করছিলো। কিভাবে কি করলে সুবিধা হবে বলে দিচ্ছিল।
এভাবে মোটামুটি ৬-৭ টা পুশ দেয়ার পরপরই আমার কলিজার টুকরাটা ছলাত করে দুনিয়াতে চলে আসলো আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ💕 দুপুর ৩টা ৩মিনিটে। সাথে সাথেই আমার যতো ব্যাথা, যতো যন্ত্রণা, যত কষ্ট নিমিষেই যেনো শেষ হয়ে গেলো। ৭ ঘণ্টার এক ভয়ংকর জার্নি। আল্লাহু আকবার। আল্লাহ্ তায়ালার অসীম দয়া ও মেহেরবান তিনি আমাকে একদম ন্যাচারাল ভাবে মা হওয়ার তাওফিক দিলেন। কোনো রকম এপিসিওটোমি লাগেনি, কোনো টিয়ার হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, বাবুর ওজন হয়েছিল ৩.৫ কেজি।
আপু যখন ক্লাসে ন্যাচারাল ডেলিভারির কথা বলছিলেন, এতো লোভ লাগছিলো ইশ আমারও যদি তাই হতো। খুব খুব করে চাইতাম আল্লাহর কাছে যে আমার রব সকল সৃষ্টির মালিক, সকল স্রষ্টার মালিক তিনি চাইলে কি না সম্ভব।💖
শেষের দিকে আল্ট্রা করার সময় আল্ট্রার ডক্টর বলেছিলো তোমার তো নরমাল ডেলিভারি হবেনা, সিজার করতে হবে কারন বাচ্চার মাথা বড়। (যদিও গাইনী ডক্টর অভয় দিয়েছেন যে আল্লাহ্ চাইলে সম্ভব) তো আমি ভেবেই রেখেছি সিজার না হোক অন্তত এপিশিওটোমি তো লাগবে সেটাও না হোক টিয়ার তো হবে হয়তো। এদিকে আল্লাহর কাছ প্রচুর প্রচুরর প্রচুরররররর চাইতাম, আল্লাহ্ গো কাটাছেঁড়ার মধ্যে নিও না। আমার রব আমার দুআ কবূল করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
কিছুক্ষণ পরে রুমে আসলাম। বাবু আল্লাহর রহমতে সাথে সাথে দুধ পেয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যেই আমরা বাসায় চলে আসি। আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
এই জার্নিটা সহজ করার জন্য মহান রব্বুল আলমিনের কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া জানাই কারন আমার রব না চাইলে এতোটা সহজ কখনোই হতো না। সেই সাথে আমার পরিবারের প্রতিটা সদস্য যারা সাথে ছিল, সমসময় দুআ করেছেন আমার জন্য। আর যেটার কথা না বললেই না, যা হয়তো মৃত্যুর আগেও কখনো ভুলবোনা সেটা হলো রৌদ্রময়ীর প্রিনেটাল কোর্স। সত্যি আল্লাহ্ তাআলা কোর্সের সবাইকে উত্তম বদলা দিক। লেবার এর প্রতিটা সময় কোর্স থেকে শিখা টিপসগুলো কাজে লাগিয়েছি যার দরুন লবার এতো সুন্দর প্রগ্রেস করেছে আলহামদুলিল্লাহ।
আমি মনে করি প্রতিটা মায়ের অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই প্রিনেটাল ক্লাস মনোযোগের সহিত করা উচিত। কতোটা হেল্পফুল, কতোটা জ্ঞানগর্ভ, কতোটা পারফেক্ট একেকটা ক্লাস। সত্যি অন্তরোস্থল থেকে অনেক অনেক দুআ।
এখন আমার অতিসামান্য অভিজ্ঞতা থেকে গর্ভবতী আপুদের কিছু বলি যদি একটু হলেও উপকার আসে-
🌸 সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ যেটা সেটা হলো প্রেগন্যান্সির প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা সিচুয়েশনে, প্রতিটা স্টেপ এ আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল করা। প্রচুর প্রচুর প্রচুর পরিমাণে দুআ করা, আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ্ খুশি হোন। সব কিছু নিয়ে চাওয়া। দুআ কবুল করার সময় গুলোতে চাওয়া, আল্লাহ দিবেনই, এটা মাথায় রেখে চাওয়া, প্রচুর জিকির করা (হাঁটার সময় তসবিহ রাখতে পারেন সাথে, হাঁটাও হবে জিকিরও হবে), কুরআন তিলাওয়াত করে করে বাবুকে শোনানো, সব ব্যাপারে পজিটিভ থাকা। খারাপ কিছু মাথায় আনারই দরকার নাই।
আমার সিজার হতে পারে যখন বলছিলো তখন প্রথম দিন একটু খারাপ লাগছিলো, কিন্তু এরপর সব ভুলে পাগলের মতো আল্লাহর কাছে চেয়েছি শুধু। নিশ্চই আমার রব দুআ কবুলকারী।
🌸অবশ্যই প্রেগন্যান্সি নিয়ে পড়াশুনা করা।
আমি প্রথম থেকেই গুগল থেকে, ফেসবুক থেকে, ইউটিউব দেখে বিভিন্ন কিছু পড়ে শুনে জানার চেস্টা করতাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আমার ৫ মাসে প্রিনেটাল কোর্স এ ভর্তি হই। বেশ সিরিয়াস হয়ে প্রতিটা ক্লাস করি, নোট করি সব ক্লাসের। কতোকিছু যে জানার আছে শিখার আছে। এক্সাম হয়েছিল সব শেষে, এক্সাম এও সিরিয়াস হয়ে অংশ নিই যার দরুন ফার্স্ট হই, পুরস্কার পাই। এটাও যেনো আমার প্রেগ্ন্যাসি জার্নিতে আরেক অনুপ্রেরণা যোগায়, আমি পারবো। আমার দ্বারা সম্ভব ইন শা আল্লাহ্।
আমার লেবারের সময় আমি নোট হাতের কাছে রেখেছিলাম। কোন স্টেইজে আছি সেটা নোট দেখে শিওর হয়েছি। আবার লেবার টাইমে করণীয় কাজগুলো বারবার পড়েছি যেনো ওইসময় এপ্লাই করতে পারি। আমার বরকে বলে রেখেছিলাম কখন কি করতে হবে। সেও সেগুলো মনে রেখেছিল, এপ্লাই করতে পেরেছিল।
🌸নিয়মিত অ্যাক্টিভ থাকা।
বিশেষ করে হাঁটাহাঁটিটা অভ্যাসে পরিনত করা। আমি প্রেগন্যান্সির আগে এমন নিয়মিত কখনোই হাঁটিনি। প্রেগন্যান্সিতে নিয়মিত হাঁটার কারণে এমন অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো, দেখা যেতো শরীর খারাপ থাকলেও ৫-৬ মিনিট অন্তত না হাঁটলে ভালো লাগতো না। আর ঘরের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতাম। এক্সারসাইজ গুলো ক্লাস এ যা শিখেছি সব করতাম। আর কেগেল এক্সারসাইজ তো মাস্ট। ব্রিদিং এক্সারসাইজ যে কি ইফেক্টিভ। এটা একদম শুরু থেকে বাবু হওয়ার আগ পর্যন্ত চালিয়ে গেছি। পেলভিল রক এক্সারসাইজ কোমর ব্যাথা কি যে প্রশমিত করে। আর খাওয়া দাওয়া করার সময়, কুরআন শরীফ পড়ার সময় বা এমনি বসে থাকতেও টেইলর সিটিং হয়ে যেত। শেষের দিকে মাইলস সার্কিট এক্সারসাইজ পুরো ম্যাজিকাল ছিল। এটা করে বেশ আরাম পেতাম আর বাবু যে নিচে নেমে আসতো সেটা ফিল করতাম। মোটামুটি সব মিলায় ৪/৫ বার করেছি শুধু, তাতেই আল্লাহর রহমতে লেবারে পৌঁছাই। আর বার্থ বল এ ব্যায়াম করার অনেক ইচ্ছা ছিল কিন্তু শেষমেশ এতবড় জিনিসটা পড়েই থাকবে ভেবে আর কেনা হয়নি।
🌸খাওয়া দাওয়ার দিকে নজর দেয়া।
প্রথমদিকে ওজন কমলেও পরে সুন্দর বেড়েছিল আমার ওজন। শাকসবজি,ডাল, মাছ,ডিম আর দুধ নিয়মিত খেতে পেরেছি সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে। কিন্তু ফার্স্ট আর থার্ড ট্রাইমেস্টার এ খেতে সমস্যা হয়েছে খুব। আর আমার প্রচুর বমি হয়েছে পুরো প্রেগন্যান্সিতে। তাও চেষ্টা করতাম পর্যাপ্ত পুষ্টি বাচ্চাটা যেনো ঠিকঠাকমতো পায়। বিশেষ করে প্রোটিন আর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই প্রতিবেলায় খেতাম। পানির বোতল সবসময় সামনে থাকতো, চোখে পড়লেই খেতাম। মাঝখানে পানি অল্প থাকায় একদিন সারাদিন বাবুর মুভমেন্ট
পাইনি। ওই ভয়ে পানি রেগুলার অবশ্যই খেতাম। আল্লাহর রহমতে শেষ সময়ে পর্যাপ্ত পানি ছিল। লাস্ট মাসে ডিম, দুধ আর খাইনি। কলার ক্রেভিং ছিলো, কলা খেয়েছি ভালোই, অন্যান্য ফল খেতে ইচ্ছা করতো না, খাইও নি। শেষের দিনগুলিতে খুব এসিড বমি হতো, তাই দেখা যেতো ভাতও খেতে পারতাম না। আমার মনে হয় সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে ভালো ভেবে খেতে পারায় পরে এটা কভার করতে পেরেছে।
এই হলো আমার প্রেগ্ন্যাসি জার্নি। আমার ছেলে “মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ”, মাশাল্লাহ আদর একটা বাচ্চা, যাকে দেখলেই কলিজা পুরো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।😍 ওর জন্য খাস করে দুআ চাই। ও যেনো ভালো থাকে, সুস্থ থাকে, দ্বীনের দায়ী হয়, মুত্তাকীদের ইমাম হয়, চক্ষু শীতলকারী হয়, দ্বীনের কাজে অটল থাকে, উত্তম আখলাকের অধিকারী হয়। আমীন!
উম্ম মুহাম্মাদ
প্রিনেটাল কোর্স, ব্যাচ ৮
Other post
You may also like
হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব: একজন মায়ের অনুপ্রেরণামূলক গল্প
আমি একজন দৌলা হিসেবে আজ একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প শেয়ার করতে চাই। আমার ক্লায়েন্ট আফরোজা আপুর ডেলিভারির অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক প্রস্তুতি ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে হাসপাতালে ন্যাচারাল বার্থ সম্ভব।আফরোজা আপু ন্যাচারাল বার্থের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। তার স্বামীও …
নরমাল ডেলিভারি: খুবই ভালো অভিজ্ঞতা
গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মত পুত্রসন্তানের মা হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। নরমাল ডেলিভারি ছিল, এক্সপেরিয়েন্স খুবই ভাল ছিল আল্লাহর রহমতে।গ্রুপের পোস্ট ফলো করতাম কনসিভ করার পর থেকেই। গ্রুপের পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। দায়িত্বশীল এবং সবার জন্য অনেক অনেক দু’আ।আমি দেশের …
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে নরমাল ডেলিভারির গল্প
সেপ্টেম্বর এর ১৪ তারিখ আলহামদুলিল্লাহ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমার প্রথম রাজকন্যার মা হলাম। আমার বার্থ স্টোরি শুরুর আগে আমি আমার কনসিভ করার আগের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই যাতে আমার মতো যারা একটু মোটা তারা কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত হোন ইনশাআল্লাহ। আমি …