ভিব্যাকের জন্য সর্বাত্বক প্রচেস্টার গল্প
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Doula Service, Others
- Date October 20, 2023
- Comments 0 comment
তানজিদা আপু ঢাকায় থাকেন। তিনি ডিউ ডেইটের বেশ আগে থেকেই দৌলা সার্ভিস নেন ও বেশ সচেতন ছিলেন। আপু মূলত ডিসেম্বর, জানুয়ারি মিলিয়ে বেশ কিছুদিন দৌলা সার্ভিস পান। আপুর প্রায় আড়াই বছর আগে সিজার ছিল, বাচ্চার মাথা বড় বলে ৩৭ সপ্তাহেই সিজার হয়। আপুও নরমালের জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন, কোর্স করেছিলেন এবং নিয়মিত এক্সারসাইজ করতেন। আপুর আগের বারের অভিজ্ঞতা থেকে যে সমস্ত ভয় ছিল সেসব কাটিয়ে উঠতে আপুকে কিছু পরামর্শ দেই।
এই দীর্ঘসময় কখনো এক্সারসাইজ নিয়ে, কখনো খাওয়া নিয়ে আপুকে রেগুলার গাইড করার চেষ্টা করি। আপুর সাথে বার্থ প্ল্যান রেডি করা ও ডাক্তারের সাথে ভিব্যাকের ব্যাপারে যা যা সাপোর্ট ও শর্ত লাগবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয় ও উনি উনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে পজিটিভ ফিল করেন। মূলত ডাক্তার উনাকে ডেটের পর আরও বেশ কিছুদিন ওয়েট করার আশ্বাস দেন ও ব্যাথা উঠলে যেতে বলেন। তাছাড়া ঐ হাসপাতালে কিছুদিন আগে একজনের ভিব্যাক হয়েছিল দেখে উনি আশ্বস্ত হন।
ডেটের দুইদিন আগেই আপুর হালকা হালকা ব্যাথা শুরু হয়। লেবারের লেটেন্ট ফেইজ বুঝে আপুকে বাসায় ওয়েট করার পরামর্শ দেই। এছাড়াও খাবার, পানি ও রেস্ট এই তিন জিনিস যেন পর্যাপ্ত নেন তা মনে করিয়ে দেই।
পরদিন আপু ডাক্তারের চেকাপে যান ও ভর্তি হয়ে যান। মূলত হাসপাতালের নিয়মই ছিল ভর্তি না হলে রোগীকে দেখা হয়না। আপুকে ব্যাথা বাড়ানোর জন্য মেডিসিন সাজেস্ট করা হয় কিন্তু আপু স্বাভাবিক প্রসব চাচ্ছিলেন ও আমার পরামর্শে আপু মেডিসিন নেন নাই। আপুকে স্যালাইন দেয়া হয় কিন্তু ব্যাথা বাড়ছিল না দেখে আপু হাটতে যেতে চান, তখন আমি স্যালাইন খুলে হাটতে যাওয়ার পরামর্শ দেই। বিকেলের দিকে একবার হাটতে গেলে পরে ব্যাথা বাড়ে। খুবই দুঃখজনক যে আপু ন্যাচারাল বার্থ, এমনকি নরমাল ডেলিভারির জন্যও তেমন কোন সাপোর্ট পাচ্ছিলেন না। আপুকে বারবার হাসপাতাল থেকে সিজারের কথা বলা হচ্ছিল এবং বলা হচ্ছিল যে বাচ্চার হার্টবিট কমে যাচ্ছে। যদিও এর কোন প্রমাণ ছিল না এবং আপু বাবুর মুভমেন্ট ভালই পাচ্ছিলেন। যেহেতু আপু কন্টিনিউয়াস মুভমেন্ট করছিলেন ও হার্টবিট চেক করার সময় চিত হয়ে শুয়ে চেক করা হচ্ছিল তাই আপুও বুঝতে পারছিলেন যে বাবু ভালই আছে। তখন আপুর হাজবেন্ড এই হাসপাতাল চেইঞ্জ করার কথা বলেন। যদিও হাসপাতাল চেইঞ্জ করা হয়নি। আমি আপুকে এক্সারসাইজগুলো করার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে থাকি।
এদিকে আপুকে ব্যাথা বাড়ানোর কথা বলে রাত সাড়ে ১১ টায় হাতে একটা মেডিসিন দেয়া হয় ও কোমরে একটা ইঞ্জেকশন দেয়া হয়। এতে করে আপুর ব্যাথা চলে যায়। আমি আপুকে ঘুমানোর ও রিলাক্স থাকার পরামর্শ দেই। রাত আড়াইটার দিকে হসপিটাল থেকে চেক করতে এসে বলে যে আপনার কোন ব্যাথা নাই, সিজার করতে হবে। আপু ও তার হাজবেন্ড তখন হসপিটাল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত আপু প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন ও সম্ভবত উনার এড্রেনালিন রাশ হয়েছিল। উনি রাতে ঘুমাতে পারেননি, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয়নি ও এনার্জি লস হয়ে যাচ্ছিলো খুব। সকালে ডাক্তার এসে বলেন জরায়ুমুখ খুলেছে কিন্তু বাচ্চা নিচে নামছে না। উনাকে হাটাহাটি করতে বলেন ডাক্তার। উনি প্রায় দেড় ঘন্টা হাটেন, স্কোয়াট করেন। কিন্তু উনার কোমর ছিড়ে যাচ্ছিল বলেন। পরে দুপুর দুইটার দিকে আমি উনাকে একটা ব্রেক নেয়ার পরামর্শ দেই ও গোসল করতে বলি। কিন্তু ততক্ষণে উনার ডাক্তার ও ফ্যামিলি ডিসিশন নিচ্ছেন সিজারের জন্য। আমি আপুকে ইস্তিখারা করে, লাভ-লোকসান মাথায় রেখে ডিসিশন নিতে উৎসাহ দেই ও খায়েরের দুয়া করতে পরামর্শ দেই।
আপুর বাচ্চার ওজন কিছু বেশি হয়েছিল। ডেলিভারির পর আপু ব্যাথায় খুব কষ্ট পেয়েছেন একদিকে নরমালের ট্রায়ালের ব্যাথা, অন্যদিকে সিজারের ব্যাথা, অন্যদিকে অপ্রত্যাশিত সিজারের মনোকষ্ট।
ডেলিভারির পরও আপুর মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছে কিন্তু আমি আপুকে বাবুর দিকে মনোযোগ দিতে ও বাবুর সুস্থতা, সৌন্দর্য ও নিজের রিকভারির দিকে ফোকাস করার পরামর্শ দেই। শুকরিয়া করার ও বড় বাবুর সাথে বন্ডিং এর পরামর্শ দেই। আল্লাহ সহজ করুন। আপুর ও তার সন্তানের জন্য ব্রেস্টফিডিং ও পোস্টপার্টাম জার্নিতে আল্লাহ খায়ের, বারাকাহ ও সহজতা দান করুন।
আয়েশা সিদ্দিকা হোমায়রা
দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …